দোকানের নাম "কামালের খাবার হোটেল"! 'কা' অংশ টুকু এখন প্রায় ঝাপসা হয়ে গেছে, আল্লাই জানে বাকিটুকু কেন হয়নি; আমি আর নিপুন আঙ্কেল দূর থেকেই পড়ছি মালের খাবার হোটেল। বাংলাদেশে নাস্তিক আর ছাগুর মতন মালও যে এতো সহজলভ্য কিভাবে হল তাই নিয়ে তখন আমরা যারপরনাই বিস্মিত!
যাই হোক কাছে গিয়ে বুঝতে পারলাম আসলে ওটা "মালের" না, "কামালের" হোটেল। পরানে যেন পানি আসলো, সাথে খানিকটা জিহ্বায়ও ফ্রি! কারন মগবাজারে অবস্থিত আমার নতুন বাসায় ওঠার সমস্ত ওপেনিংই শুভ হলেও রাতে খাওয়ার খোজ নিতে গিয়ে জানলাম বুয়া আজ অনিবার্য কারনবশত আসেননি! রাত তখন ১০:১৫ ।
আমাদের পেটে আবার ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা! একে ঘরের কেনাকাটা আর ঘর গুছাতে গিয়ে অবস্থা খারাপ আর রাতের শান্তির খাওয়া খেতে গিয়ে এই অবস্থা! তাড়াতাড়ি বাসা থেকে ছুটে বের হলাম। আবাসিক এলাকায় খাবারের হোটেলের দুষ্প্রাপ্যতা সম্পর্কে কাররই অজানা থাকার কথা নয়। খুজেও পাচ্ছিলাম না, কিন্তু শেষে হারাধনের শেষ সন্তানের মতন আমাদের হাতে এসে ধরা দিলো "কামালের খাবার হোটেল"
হোটেল না বলে আসলে ছাপড়া বলাই ভালো। পেটের মরুভুমি হাল না থাকলে আমি অবশ্যই ঢুকতাম না সেখানে। যারা খাচ্ছিলেন দেখেই বোঝা যাচ্ছিল আসলে এরা সারাদিনের খাওয়া খেতেই এসেছেন। আসল খেটে খাওয়া মানুষ। তাদের কাছে আমরা দুজনই মনে হয় ছিলাম বিলিওনেয়ার! সবাই কেমন যেন অবাক চোখে তাকাচ্ছে। আমি এক বিঘত সাইজের যে মাছ অর্ডার করলাম তার দাম ২৫ টাকা, আঙ্কেলের গরুর মাংসের দাম ৪০ টাকা, কিন্তু যা খেলাম তা আসলে হাজার টাকার স্বাদেও কম বলা হবে!
আমরা যখনই কিছু চাচ্ছিলাম তখন দোকানদারের কথায় বারবার "ইস্পিশাল" চলে আসছিল। মাছ চাইলে আমাদের জন্য সে আনছে ইস্পিশাল মাছ, মাংস চাইলে আনছে ইস্পিশাল মাংস। আমার পাশে বসে তৃপ্তি করে যে ব্যাক্তিটি খাচ্ছিল সে হয়তো হবে কোন রিকশাওয়ালা, নাহয় একজন শ্রমিক! কিন্তু পাশে বসা সেই মানুষটাই মনে হচ্ছে কতো আপন, আমরা দুজনই তৃপ্তি করে খাচ্ছি! দুজনই আসলে একই সমান, ভেদাভেদহীন!
মনটাই ভালো হয়ে গেল

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



