রায়হান চৌধুরি।
ছোটবেলা থেকেই নামটা অপছন্দ রায়হানের। নাম শুনলেই যেন মনে হয় নামটা বাংলা সিনেমার নায়ক-নায়িকার বড়লোক বাবার নাম। তার চেয়ে বড় কথা, ছোটবেলা থেকেই তার ক্লাসের অন্যেরা তাকে খেপাতো রায় চৌধুরি নামে। মুসলমান মানুষ হয়ে হিন্দু নামের ডাক শুনলে ছোটবেলা থেকেই রাগে রায়হানের মাথা খারাপ হয়ে যেত।
রাগ। এই রাগই আজ তাকে এখানে টেনে এনেছে। সে এখন উবু হয়ে শুয়ে আছে নির্মাণাধীন একটি ভবনের তিন তলার উপরে। তার হাতে অত্যাধুনিক স্নাইপার রাইফেল। এক চোখে তাকিয়ে আছে রাইফেলের দুরবীনের মধ্য দিয়ে। এখন দেশের সেরা শ্যুটার সে। দ্যা বেস্ট কিলার! দেশের অনেক বড় বড় গডফাদারও আসে তার কাছে টাকার বিনিময়ে খুনের কন্ট্র্যাক্ট নিয়ে। মানুষ বুঝে খুনের রেট। এখন যাকে খুন করতে এসেছে সে কে এটাও জানেনা রায়হান। শুধু জানে, মন্ত্রীর বাসা থেকে বের হবে সাদা জামা পরা একটি লোক। কে দেখার দরকার নেই। শুধু যার জামার রঙ সাদা তার মাথা বরাবর একটি বুলেট ঢুকিয়ে দিতে হবে।
কিন্তু কেউ বের হচ্ছে না বাড়ি থেকে। প্রায় দেড় ঘন্টা হতে চলল এখানে শুয়ে আছে রায়হান। কোন কাজ না থাকলেই তার মাথার মধ্যে বাসার কথা ঘুরতে থাকে। ইশ! কতদিন মায়ের সাথে দেখা নেই। কতদিন মায়ের হাতের রান্না খাইনা। রায়হানকে শেষ যেবার মা মুখে তুলে খাইয়ে দিতে চেয়েছিল সেবার অবশ্য খেতে পারে নি। ভাত মুখে দেবার আগেই তার বাবা ছুড়ে ফেলেছিল মায়ের হাত থেকে খাবারগুলো। রায়হানের বাবা, লোকমান চৌধুরি। বিশিষ্ট নীতিবান দুর্নীতি দমন কমিশনের অফিসার। হুহ! আর যায় নি বাসায় রায়হান। সে আরো এক বছর আগের কথা।
শুরুটা অবশ্য আরো তিন বছর আগে। ইন্টারমিডিয়েট ফেল করার পর থেকেই। বাবা সারাক্ষন বকাঝকা করতো। সেই রাগেই বাসা থেকে বেরিয়ে এসেছিল। এক বন্ধুর মাধ্যমেই পরিচয় হয় এলাকার সবচেয়ে বড় গুন্ডার সাথে। সেইই শুরু। প্রথম খুনটা সে করেছিল এর তিন মাসের মধ্যেই। পিস্তল দিয়ে গুলি করেছিল মানুষটাকে। তাও বুকে ঠেকিয়ে। এরপর একের পর এক খুন করতে করতে আজ সে এখানে। সে ইন্টারপোল রেডলিস্টেড কিলার। তার নামে কথিত আছে যে, নিশানার ব্যাপারে তার সবচেয়ে পছন্দের জায়গা হচ্ছে ঠিক দুই ভ্রুর মাঝখানের জায়গাটা। কথাটা মিথ্যা না। তার এই স্নাইপার রাইফেল দিয়ে শেষ যে ১৫/১৬ টা খুন সে করেছে তার সবই ছিল দুই ভ্রুর মাঝখানে। কিন্তু সবই সামনে থেকে গুলি করা। তার ইচ্ছা, মাথার পেছন থেকে গুলি করবে কিন্তু বুলেটটা বের হবে দুই ভ্রুর মাঝখান থেকে। দ্যা বেস্ট কিলারের দ্যা পারফেক্ট শট! ভাবতেই কেমন ভালো লাগছে।
কিন্তু শালার সাদা জামাওয়ালা বের হয় না কেন? অধৈর্য হয়ে যাচ্ছে সে। অধৈর্য হবার অবশ্য কারন আছে। অনেকদিন পর আজ বাসায় যেতে ইচ্ছা করছে। রায়হান ঠিক করেছে বাসায় যেয়ে প্রথমে মাকে জড়িয়ে ধরবে, তারপর বাবাকে। বাবা অবশ্য তাকে চড় থাবা মেরে বসতে পারেন। কিন্তু তাতে কি? বাপে ২/১ টা থাবা দিলে কিছু হয়না। অনেকদিন নীতিবান রাগী লোকটাকে দেখা হয় না।
হঠাতই রায়হান লক্ষ্য করে, মন্ত্রীর বাসা থেকে সাদা জামাওয়ায়ালা বের হয়েছে। একদম ক্লিয়ার শট। ধীর পায়ে হাটছে লোকটা। মাথার পেছন দিকটা খুব ভালোভাবে নিশানা ঠিক করলো রায়হান। আজকের শটটা পারফেক্ট হওয়াই চাই। বড় করে একটা নিঃশ্বাস নিয়ে সে চাপ দিল ট্রিগারে। সাইলেন্সার লাগানো থাকায় দুপ করে একটা শব্দ হল শুধু। দুরবীন দিয়ে দেখল লোকটা হুট করে পড়ে গেল রাস্তার পাশে। মনে হয় পারফেক্ট শট হয়েছে। কালকের পত্রিকার ছবিতেই অবশ্য দেখা যাবে পারফেক্ট কিনা!
এর তিন ঘন্টা পরের কথা। তার ফ্ল্যাটে পৌঁছে সে চমৎকার একটা গোসল দিয়ে ফ্রেশ হল। কেমন যেন উত্তেজনা কাজ করছে মনের মধ্যে। অনেকদিন পর বাড়ি গেলে যেমনটি লাগে ঠিক তেমন। মনে হচ্ছে যেন সে সেই আগের কলেজ জীবনের রায়হান। বাবা-মা দাঁড়িয়ে থাকবে গেট খুলে রাস্তার পাশে তার অপেক্ষায়। একটি পাঞ্জাবি পরেই রওনা হল বাসার দিকে।
বের হবার সময় আজ গাড়ি নিল না রায়হান । রিকশা করে পৌছুলো বাসায়। দরজা দিয়ে ঢোকার সাথে সাথে মা চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে ছুটে এসে জড়িয়ে ধরল রায়হানকে। মনে হয় অনেকদিন পরে দেখে আবেগ ধরে রাখতে পারেনি। কিন্তু ঘরে এতো লোক কেন? আর মেঝেতে আবার কাকে শোয়ানো। কাছে গিয়ে রায়হান দেখতে পেল, তার নীতিবান রাগী বাবাটা চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে ঘরের মেঝেতে। তার ভ্রু দুটোর ঠিক মাঝ বরাবর একটি গর্ত। কে যেন পেছন থেকে গুলি করেছে তার নীতিবান বাবাটাকে!
দ্যা বেস্ট কিলারের দ্যা পারফেক্ট শট!

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



