র্যাবের অন্যতম স্লোগান হচ্ছে ‘War Against Terrorism.’ কিন্তু তারাই ‘Crossfire’ ‘Extrajudicial Killing’ ‘State Terrorism’ নামের নেগেটিভ তকমাগুলো নিজেদের আত্মার সাথে জড়িয়ে নিয়েছে। নির্দ্বিধায় খুন করেছে মানুষকে। সে যতো বড় সন্ত্রাসীই হোক বাংলাদেশের সংবিধান কখনোই বিচার বহির্ভূত এসব ক্রসফায়ার নামক হত্যাকে সমর্থন করে না।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে বলা হয়েছে-
• আইনানুযায়ী ব্যতীত জীবন ও ব্যক্তি-স্বাধীনতা হইতে কোন ব্যক্তিকে বঞ্চিত করা যাইবে না। (অনুচ্ছেদ ৩২)
• ফৌজদারী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত প্রত্যেক ব্যক্তি আইনের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন ও নিরপেক্ষ আদালত বা ট্রাইব্যুনালে দ্রুত ও প্রকাশ্য বিচারলাভের অধিকারী হইবেন। (অনুচ্ছেদ ৩৫ এর গ)
জামায়াত-শিবির ও বিএনপি নেতাকর্মীদের পরে এবার খোদ আওয়ামীলিগেই ‘নিরুদ্দেশ’ হওয়ার পর বিভিন্ন স্থান থেকে তাদের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধারের ঘটনায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। পরিস্থিতি এতটাই উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, পরিবারের কাউকে দু-চারদিন পাওয়া না গেলেই স্বজনরা তাকে জীবিত ফেরত পাওয়ার আশা প্রায় হারিয়ে ফেলছেন। হাসপাতাল মর্গ কিংবা নির্জন কোনো স্থানে অজ্ঞাত কারো লাশ উদ্ধারের খবর পেলেই উৎকণ্ঠিত স্বজনরা সেখানেই ছুটে যাচ্ছেন। আবার অনেকেই ‘নিখোঁজ’ সন্তানের প্রাণভিক্ষা চেয়ে র্যাব-পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন সংস্থা ও সরকারের উচ্চপর্যায়ে আবেদন-নিবেদন করছেন।
মার্চ ২০১০ সালে এক ব্রিফিংয়ে র্যাব স্বীকার করে তাদের হাতে ক্রসফায়ারে মারা গেছে ৬২২ জন। এর একবছর পর ২০১১ সালে অধিকার নামক একটি সংগঠণ র্যাবের খুন সংখ্যাকে ৭৩২ জন বলে প্রকাশ করে। গড়ে প্রায় প্রতিবছর র্যাবের হাতে খুন হয় বাংলাদেশের ৮৭ জন নাগরিক। এ সংখ্যাটা তো তাদের স্বীকার্য্য শুধুমাত্র। আর যেটা অন্তরালে থেকে যায় তার হিসেব রাখার লোক কোথায়?
'অন্ধকার দিয়ে অন্ধকার তাড়ানো যায়না'- বন্দুকযুদ্ধের নামে ক্রসফায়ার, নাশকতার ধোঁয়া তুলে গ্রেপ্তারের পর গুম সবকিছুর পেছনেই ৫ জানুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচন রয়েছে। জনগণের অবাধ ও সুষ্ঠু অংশগ্রহণের মাধ্যমে ওই নির্বাচন হলে ক্রসফায়ারের নামে মানুষ হত্যা যেমন হতো না, তেমনি দেশব্যাপী অস্থিতিশীল পরিস্থিতিও সৃষ্টি হতো না।
দল মত নির্বিশেষে বিচারবহির্ভুত হত্যাকান্ড ( ক্রসফায়ার ) বন্ধে সকলের সোচ্চার হওয়া এখন সময়ের দাবি ।