আজকে ওয়েবে বাংলার যে রূপটা দেখা যায় সেটা মোটা দাগে বললে ওপেন সোর্সভিত্তিক। মোস্তফা জব্বারের প্রোপ্রাইটারি বিজয় সফটওয়্যার পাবলিকেশনের কাজের বাইরে আর কোন ব্যবহার হয়না বললেই চলে। কম্পিউটারে বাংলা প্রচলনের এই কর্মযজ্ঞের একটা অংশ হলো বিভিন্ন ওয়েবসাইট, সফটওয়্যারের বাংলা অনুবাদ। এই প্রচেষ্টার ফল হিসেবে আজকে আমরা সফটওয়্যার থেকে শুরু করে অপারেটিং সিস্টেম পর্যন্ত বাংলায় পাচ্ছি। এইসব অনুবাদ প্রচেষ্টার সিংহভাগ হয়েছে ক্রাউড সোর্সিঙের মাধ্যমে [১]। মানুষ স্বউদ্যোগে এই কাজগুলো করেছে এবং করছে। এখানে কোন কর্পোরেট সাপোর্ট বা অর্থউপার্জনের বিষয় নেই। এরকম একটা অনুবাদ প্রচেষ্টা চলছে ফেইসবুকে।
জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুক এরকম স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে অনুদিত হয়ে আসছে গত প্রায় আড়াই বছর ধরে। এই কাজটা করতে যেকোন ফেইসবুক ব্যবহারকারি যেকোন স্থান থেকে ফেইসুবুকের ট্রান্সলেট এ্যাপ্লিকেশনটা ব্যবহার করে অনুবাদে অবদান রাখতে পারেন। মোট ৫শত অনুবাদক একটু একটু করে ফেইসবুকের অর্ধেকের বেশী বঙ্গানুবাদ এর মধ্যেই শেষ করে ফেলেছেন।
তো গতকাল ২৫শে ফেব্রুয়ারি, ২০১১ তারিখে গ্রামীণ ফোন প্রথম আলোয় ফেইসবুক অনুবাদ সংক্রান্ত একটি বিজ্ঞাপন দিয়েছে। কোন কারণে আমার চোখ এড়িয়ে গিয়েছিলো। বিনোদন খুঁজতে আজকে ২৬শে ফেব্রুয়ারি, ২০১১ [২] প্রথম আলোর আইটি পাতায় গিয়ে দেখি সেখানের এ সংক্রান্ত গ্রামীণের প্রেস রিলিজ নিয়ে তারা নিউজ করেছে। সেটার সূত্র ধরে একদিন আগের পত্রিকায় একটা বিজ্ঞাপণ পেলাম। সেখানে লেখা হয়েছে -
এবার অনলাইনে কাছে থাকার সবচেয়ে বড় মাধ্যম ফেসবুক হবে পরিপূর্ণ বাংলায়। সেই লক্ষ্যে গ্রামীণফোন ও ফেসবুক যৌথভাবে এমন একটি উদ্যোগ নিয়েছে, যাতে আপনি চাইলেই হতে পারেন এর সফল অনুবাদক। তাই আজই বসে যান অনুবাদে, আর বিশ্বকে জানিয়ে দিন বাংলা ভাষার অপার সৌন্দর্য।
আমি অবাক হয়ে ভাবছি এরকম একটা ডাহা মিথ্যা কথা কীভাবে একটা জাতীয় দৈনিক কোন বিজ্ঞাপণে প্রকাশিত হতে পারে। ফেইসবুক ব্যবহারকারিরা চাইলেই অনুবাদ করতে পারেন এটা অন্তত আড়াই বছরের পুরনো কথা। এবং সেখানে গ্রামীণের কোন ভূমিকার কোন প্রশ্ন নেই। ফেইসবুকের অনুবাদের উদ্যোগে গ্রামীণ ফোনের অংশের সত্যতা ফার্মগেটে বিলি করা সর্বরোগহরক ঔষুধের লিফলেটের দাবিগুলোর মতোই অসত্য। স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে কাজ করা একশত অনুবাদকের কৃতিত্ব হাইজ্যাক করা ছাড়া অন্য উদ্দেশ্য ভেবে বের করা এখানে কষ্টকর।
প্রথম আলোয় প্রকাশিত নিউজে অবশ্য গ্রামীণ বেশ কিছু উত্সাহী ফেসবুক ব্যবহারকারীর অবদানের কথা কথা স্বীকার করা হয়েছে। তবে সেখানে বলা হয়েছে "আর এবার বাংলাদেশের "ফেসবুক ব্যবহারকারীরা ওয়েবসাইটটি বাংলা ভাষায় রূপান্তরের কাজে অংশ নিতে পারবেন।" এবার মানে কী? আগে বাংলাদেশের ব্যবহারকারিরা বাংলায় অনুবাদ করতে পারতো না? "গ্রামীণের উদ্যোগের" ফলেই এটা সম্ভব হলো?
গ্রামীণের এই পুরো ক্যাম্পেইনে অসত উদ্দেশ্যের পাশাপাশি হোমওয়ার্কের সুস্পষ্ট অভাব রয়েছে। ২৫শে ফ্রেব্রুয়ারি, ২০১১তে প্রথম আলোর রাজধানী পাতায় প্রকাশিত বিজ্ঞাপণে দেখা যায় সেখানে বলা হয়েছে "অনুবাদ করতে আপনার পিসিতে বাংলা ফন্ট থাকতে হবে"। একইরকম কথা পরদিন প্রথম আলোতেও পাই আমরা। বাংলা লিখতে যে ফন্টের অতিরিক্ত একটা কিবোর্ড লেআউটও থাকতে হয় এটা মনে হয় উনারা ঠাওর করতে পারেননি। ওয়েবে বাংলা বিষয়ে উনাদের জ্ঞানগম্যি প্রকাশ পায় এভাবে -
ফেসবুকের মতো একটি বৃহত্ যোগাযোগ মাধ্যম বাংলা ভাষায় অনূদিত হলে তা অন্যান্য ওয়েবসাইটকেও বাংলায় রূপান্তরে উত্সাহিত করবে। এর ফলে বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারের অন্যতম প্রধান বাধা ভাষাগত সমস্যা অনেকাংশে দূর হবে। এ ছাড়া ইন্টারনেট ব্যবহার বাড়লে বর্তমান সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার উদ্যোগ অনেকখানি এগিয়ে যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়।
প্রিয় গ্রামীণ ফোন, দেশে বহুদিন ধরে দেশে একটা কৌতুক চালু রয়েছে। কৌতুকটা গরু রচনা বিষয়ে। কৌতুকটা এরকম - ছাত্র মুখস্ত করে গিয়েছে নদী রচনা। কিন্তু পরীক্ষায় এসেছে গরু রচনা। চতুর ছাত্র গরুর চারপা, দুই শিং দিয়ে শুরু করে গরু নদীতে গোসল করে লেখার পর পুরো পাতা ভরে দিয়েছে নদীর বর্ণনা! আপনাদের ফেইসবুক অনুবাদের সাথে ডিজিটাল বাংলাদেশের কানেকশনটা এরকম একটা গরু রচনা হয়েছে। গেল বছর এই সময়ে দুনিয়া কাপিয়ে ঘৃণার পাত্র হয়েছিলেন। এবার হলেন কৌতুক, উপহাসের উৎস। ঘৃণা, পরিহাস, উপহাস সমস্ত নেতিবাচক দিকে আপনাদের নাম জুড়তে হবে এরকম দিব্যি কেউ দেয়নি। এবার থামুন দয়া করে। বাংলায় যারা স্বেচ্ছাশ্রমে অবদান রেখে চলেছেন তাদেরকে তাদের কাজ করতে দিন।
লিখেছেনঃ হাসিব।
Read more hot news here.
ফেইসবুক অনুবাদের কৃতিত্ব হাইজ্যাকে গ্রামীণ ফোনের চেষ্ট!
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
৮টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
জামাত কি দেশটাকে আবার পূর্ব পাকিস্তান বানাতে চায়? পারবে?
অন্য যে কোন সময়ে জামাতকে নিয়ে মানুষ যতটা চিন্তিত ছিলো, বর্তমানে তার থেকে অনেক বেশী চিন্তিত বলেই মনে করি।

১৯৭১ এ জামাতের যে অবস্থান, তা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন
১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন
ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন
=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?
যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!
যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন
আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।