somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার প্রিয় বাবা ‘মাওলানা আব্দুল খালেক (র.)

২৩ শে মার্চ, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যেসব আদ্ধাত্মিক ব্যক্তি পার্থিব সকল লোভ-লালসা, অর্থ মোহের ঊর্ধ্বে থেকে মানব সেবা করে গেছেন তারাই যুগে যুগে মহা মানব হয়ে মানুষের হৃদয়ে চির স্মরণীয় হয়ে আছেন। দলমত নির্বিশেষে সকলেই তাদের শ্রদ্ধা করে ও ভালবাসে। সৎ কর্ম ও মানুষের সন্তুষ্টির মধ্য দিয়েই একজন মানুষ আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারে। আর এই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে যারা মানব সেবা ও সৎ কর্ম করে তারাই প্রকৃত মানুষ তারাই মহা মানব। একজন মহা মানব সদা সর্বদা দয়া, দক্ষিণ্যা, ক্ষমা, বিনয়, সরলতা, সাধুতা, শিষ্টাচার, আত্মসংযমসহ সৎ গুণাবলীর অধিকারী হয়ে থাকেন। তেমনি একজন পরোপকারী, ন্যায়পরায়ণ, সময়ের সুসন্তান, শিক্ষানুরাগী, প্রকৃত শ্রদ্ধা ও ভালবাসার পাত্র, আদ্ধাত্মিক পুরুষ মাওলানা আব্দুল খালেক (র)। প্রতিদিন সকাল ভোরে তাঁর বাড়িতে আসলেই দেখা যেতো লোকজনের ভিড়। কারো প্রতি অবিচার, অন্যায়, অত্যাচার করা হয়েছে অথবা অভিযোগ শুনা গেছে- আমার গরুতে লাথি মারে, দুধ দেয়না, স্বপ্নে শাপে কাঁটছে, জিনে ধরছে, মেয়ে/ছেলে হয়না, পরিক্ষায় পাশ করেনা, স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়া, স্ত্রী তালাক দিয়েছে ইত্যাদি ইত্যাদি সমস্যার আদ্ধাত্মিক সমাধান চেয়ে বসে থাকার কথা। এই সুসন্তান ১৩৪৭ সালের পোষ মাসের ২২ তারিখে কমলাপুর গ্রামের সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতা আবদুল হাই মাতা তছিরুন নেছা। তিঁনি সোনা হাজরা মাদ্রাসা থেকে ১৯৫৯ সালে দাখিল ও ১৯৬৩ সালে আলিম পাস করেন। ঢাকা আলিয়া মাদরাসা থেকে ১৯৬৫ সালে ফাজিল ও ১৯৬৭ (কামিল পরীক্ষায় ৩ নাম্বার বোর্ড স্ট্যান্ড করেন) সালে কামিল পাস করেন। তার শিক্ষদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন শাইখুল হাদিস মাওলানা আজিজুল হক (র)। লেখা পড়া শেষ করে পাইকপাড়া মসজিদে ইমামতির মাধ্যমে তিনি কর্ম জীবন শুরু করেন। এরি মাঝে টঙ্গিবাড়ির পীর আব্দুল মজিদ খন্দকারের মেয়ে হাসিনা বেগমের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তারপর তিনি নিমতলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে চাকুরি শুরু করেন। কিছুদিন সেখানে চাকুরি করার পর গাদিঘাট দাখিল মাদ্রাসার প্রধান হিসেবে যোগদান করেন। সেখান থেকে আবার নিমতলায় এসে তার সমস্ত জীবন পার করে দেন। চাকুরি থেকে রিটায়ারড করে কিছু দিনের মধ্যে নিজ বাসায় ২০০১ সালের ফেব্রুয়ারী মাসের ১৫ তারিখ রাত ১ টায় তার প্রিয় অনন্ত বিশ্বপ্রকৃতির বুকে চিরদিনের জন্য হারিয়ে গেলেন। বাংলায় ১৪০৭ সালের ৩ ফাল্গুন। নিমতলা কবরস্থানের বিশাল মাঠে অশংখ্য লোকের অংশগ্রহণের মধ্যে মরহুমের জানাজার নামাজের ইমামতি করেন তারই বড় ভাইয়ের মেজু ছেলে মাওলানা আব্দুল আলী। বেলা ৩ টায় ‘মাওলানা সাহেব’র বাড়ির উত্তর দিকে নিমতলার কবরস্থানে সমাধিস্থ করা হয়। মৃত্যুর সময় ৬ ছেলে ৩ মেয়েসহ অসংখ্য সুভাকাঙ্খি রেখে যান।

এই আদ্ধাত্মিক পুরুষকে এলাকার সমস্ত আলেম ওলামারা আল্লার ওলি বলে আখ্যা দিয়েছে। উল্লেখ্য সিরাজদিখানের নিমতলা গ্রামের আবুল কাশেমের কাছে থেকে জানা গেছে একদিন নিমতলা স্কুল থেকে তার সন্তান মাওলানা মনিরকে নিয়ে বাড়ি ফিরার পথে প্রবল বর্ষণের মুখে দোয়া পড়ার পর তা থেমে যায়। তার ছোট ভাই আবদুল্লার কাছ থেকে জানা যায়, স্বাধিনতা যুদ্ধের সময় তিঁনি দিনের বেলা একটি বালুর বস্তা সামনে রেখে দোয়া পড়ে হাতে তিনবার জোড়ে তালি দিতেন, আর এতে বাড়িতে কোনো অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটতনা। এছাড়া তাদের বাড়িতে হানাদার বাহিনীর কোনো বোমা না পড়ে বাড়ির পিছনে গোরস্থানে পড়ত। সিরাজদিখান বাজারের ফল ব্যবসায়ী ইনতাজ উদ্দিন থেকে জানা যায়, একবার বাজারের এক লোক বাশের কঞ্চি দিয়ে নাকের হাড় সহ কেটে গেছে তখন তাকে ডেকে তিনি তার মোখের লালা দিয়ে দেন এতেই তার রক্ত বন্ধ হয়ে যায় ও তা জোড়া লেগে যায়। ষর্শিনার মাহফিলে যান আবুবকর সিদ্দিক (র.) এর নিকট বায়আত হতে। তিনি ৪ টি প্রশ্ন করবেন যদি তার উত্তর পান তাহলে মুরিদ হবেন। মাহফিলের আওয়াজ শুনছেন সাথে একে একে তার ৪ টি উত্তরই পেয়ে যান। একবার ইসলামপুর কামিল মাদরাসার ভাইস প্রিন্সিপালের সাথে বাহাস করেন এতে প্রিন্সিপাল পরাজিত হয়ে তার কিতাবাদি নিয়ে মাদরাসা থেকে আজিবনের জন্য চলে যান। তিনি কামেল পাশ করার পর অনেক দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ তাকে দেখতে আসত। কেউ জটিল সমস্যায় পরলে তার কাছে মাসলা ও ফতওয়ার জন্য চলে আসত। আর যদি কোনো আলেম জানত যে এটি তিনি দিয়েছেন তাহলে কেউ ভুলেও দুঃসাহস করতনা যে এটি পরিবর্তন করবে। তিনি এলাকার ইসলামপুর কামিল মাদরাসা, মোস্তফাগঞ্জ মাদরাসা, নেছারাবাদ নূরিয়া দাখিল মাদরাসা, ভাষাণচর মাদরাসাসহ এলাকার প্রায় মাদরাসারই অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। যা অশিকার করার জো নেই। এমনকি তিনি মাদরাসা প্রতিষ্ঠার জন্য নিজ মাথায় মাটির বোঝাও বইছিলেন। মাওলানা সাহেবের কাছ থেকে জানা যায়, একদিন তাঁর বন্ধু মাওলানা সামসুদ্দিনকে একটি চিঠি লেখার পড় শিক্ষকরা সেটি পড়ে তার জ্ঞানের পরিধি উপলব্দি করতে পারেন। তার অক্লান্ত আদ্ধাত্মিক পরিশ্রমের জন্যই মানুষের ও আল্লার কাছে প্রিয় হয়ে আছেন। ইনতিকালের পূর্বে ইয়াছিন সূরা সহ সমস্ত কালিমা পাঠ করেন। ওই দিনের আকাশটি ছিল মেঘলা যা আল্লাহর ওলির নিদর্শন। তার কবরের উপর চিল উড়তে দেখা গেছে এটিও অলি হওয়ার নিদর্শণ। আমৃত্যু তিনি কারো সাথে ঝগড়ায় লিপ্ত হননি। কারো সাথে রাগ করে একদিন কথা বন্ধ রাখছেন এমন নজির নেই। তার কারণে এলাকার বিবাহে মাইক বাজানো বন্ধ হওয়া শুরু হয়েছে যা বাস্তবায়ন করছেন মাওলানা নূর মোহাম্মদ সিরাজী। তার ভয়ে কেউ বাড়ির কাছ দিয়ে গানের মাইক বাজাতে সাহস পেতনা। তার নেতৃত্বে আমাদের এলাকা থেকে মিথ্যা নবুওয়াত দাবিদারকে শায়েস্তা করার জন্য শয়তানের আস্তানায় গিয়েছিল। তার পৃষ্ঠপোষকতায় এলাকায় আলেমের সৃষ্টি হয়েছে। তার জন্য এলাকার ভক্তবৃন্দ ইছালে ছওয়াবের আয়োজন করে থাকে। তার সাথে ব্যক্তিগতভাবে ষর্শিণার পীর আবু বকর সিদ্দিক, চর মোনাইর পীর ফজলুল করীম, জৈনপুরের পীর আফজাল আহমেদের সাথে সম্পর্ক ছিল ও তাকে ভালভাবেই চিনত। তাই তার মাহফিলে সব দরবারের পীর অংশ গ্রহণ করেছেন। তার বড় ছেলে চরমোনাইর বর্তমান পীরের ভাগ্নি বিবাহ করেছেন।
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×