বাবা এখন নেই।যখন ছিলেন তাঁর সামনে ধূম পান করিনি কখনও।মায়ের সামনে করেছি।এখন করিনা অন্য কারণে।মা-র হাঁপানী আছে, তাঁর অসুবিধে যেন না হয় তাই সেই ঘরে বসে ধূম পান করিনা।
আমাদের চলতি বাংলায় তো পান নেই।সবই আমরা খাই। জল, সিগারেট সবই।মা-র সামনে সিগারেট খেতে মা-ই নিজে অনুমতি দিয়েছিল।সেটার একটা গল্প আছে।আমার পরের বোনের সবে তখন বিয়ে হয়েছে।নতুন জামাই শ্বশুর বাড়িতে এসে জমিয়ে সিগারেট ফুঁকছে আর আলমারীর গায়ে লাগানো লম্বা আয়নায় তার বিবাহোত্তর চেহারার চেকনাই নিরীক্ষণ করছে।ঘরের দরজা দিয়ে হঠাৎ আমার মা অর্থাৎ তার শশ্রুমাতার প্রবেশ।জামাই তো দেখেছে আয়নায়।ম্যাজিক রিফ্লেক্সে সিগারেট সমেত হাত চলে এসেছে তার পেছনে।কিন্তু সেদিকেই যে মা, আয়নার ভেতরে তো নয়।মা ঘর ছেড়ে চলে যেতে গিয়েও ঘুরে দাঁড়ালো।শোনো তোমরা আমার সামনেই সিগারেট টেট খাওতো, নাহলে তোমাদের সাথে আমার কথাই বলা হবে না।এই আমাদের বড় জামাইয়ের হাত ধরে মা-র সামনে সিগারেট খাওয়া শুরু।
আমি নিয়মিত সিগারেট খাওয়া শুরু করেছি অনেক পরে, প্রায় গ্রাজুয়েশনেরও পরে।ইদানিং মা অনেকবার বলেছে, সিগারেট খাওয়াটা ছেড়ে দে।মেয়েরাও ইঙ্গিত দিয়েছে ছেড়ে দিলে তারা খুশী হবে।ভালো চেয়েই অনেক স্বজনেরা বলেছে একই কথা।
নিজে থেকে সিগারেট ছেড়ে দেবার কথা তেমন করে কোনোদিন ভাবিনি।বাধ্য হয়ে একবার জন ডিস্এ আক্রান্ত হয়ে সিগারেট খাওয়া বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছিলাম দীর্ঘ ছ’মাস।আবার শুরু হয়ে গেছে অজান্তেই।সকলের কথা শুনে মনে হয়েছে, ছেড়ে দিলে মন্দ হয় না।একবার চেষ্টা করে তিন মাস খাইনি।তারপর যে কে সেই।
আসলে সিগারেট ছেড়ে দেবার উপযুক্ত কারণ খুঁজে পাইনি তেমন।একমাত্র কারণ, বেশীদিন বাঁচতে পারব হয়তো।বেশীদিন বাঁচার সাধ আমার নেই।ভালোবাসাহীন প্রাণ যত বাঁচবে, কষ্টের পরমাণও তো তত বাড়বে।তাই না?এই যেমন পক্ষে বিপক্ষে দুদিকেই যুক্তি দেখালাম, এমনই মোক্ষম দুটি যুক্তি এতদিনে আমি দু দিকে দাঁড় করাতে পেরেছি।এক, এক প্যাকেট সিগারেটের বদলে এক কিলো চাল হয়ে যায়।সংসারী মানুষেরা এই কথাটার মানে বুঝবেন।আর উলটো দিকে, এখনও বড় টাকার নোট ভাঙানোর সবচেয়ে সহজ উপায় এক প্যাকেট সিগারেট কেনা।এই জরুরী ব্যাপারটা এড়ানো খুব মুশকিল।যারা মোকাবিলা করেন, অসুবিধেটা বুঝবেন।দেখা যাক কে জেতে।