somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমিয়াখুম বিজয়ের গল্প - বান্দরবান ভ্রমণ শেষ পর্ব

২৫ শে জুন, ২০১৩ বিকাল ৪:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শেষপর্বটি লিখব লিখব করেও লিখা হচ্ছিল না, অবশেষে লিখতে বসেই পড়লাম। জীবনে প্রথম অভিযান হিসেবে এই বান্দরবান অভিযান মোটামুটি শ্বাসরুদ্ধকরই বলা চলে। অভিজ্ঞদের কাছে অবশ্য এটা তেমন বিশেষ কিছু না হতেই পারে। অভিযানের দীর্ঘ পাঁচদিন অতিবাহিত হয়ে গেছে। প্রকৃতি এবং মানুষের থেকে এই কয়দিনে অনেককিছু দেখেছি, অনেককিছু শিখেছি। শুরুর দিকে এই অভিযান অহেতুক পীড়া মনে হলেও শেষ পর্যায়ে ঐ সময় গুলিকেই বার বার মনে পড়ছিল। যাই হোক শেষ দিনে ফিরে যাওয়া যাক।

ষষ্ঠ দিনের শুরুতেই একটা চরম মিস করে ফেললাম, কেওক্রাডং থেকে সূর্যোদয় দেখা। অতিরিক্ত ক্লান্তির জন্য আমি বরাবরের মতই সকালে ঘুম থেকে উঠতে ব্যর্থ। ঘুম থেকে উঠে দেখি ৭ টা বেজে গেছে। বাইরে পুরো ফর্সা হয়ে গেছে। আজকে তাড়াহুড়া একটু কম। ধীরেসুস্থে খাওয়া দাওয়া সেরে রওনা হতে হতে ৮ টার বেশি বেজে গেল। লক্ষ্য বগালেক হয়ে বান্দরবান শহর।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে দেখতে আমরা বেশ দ্রুত গতিতেই নামছিলাম। পথে পড়ল দার্জিলিং পাড়া, চিংড়ি ঝর্ণা ইত্যাদি। বেশ কিছু ট্যুরিস্ট দলের ও দেখা পেলাম যাদের মাঝে বিদেশিও ছিল। আমাদের ভ্রমণ বৃত্তান্ত শুনে তারা বেশ ইম্প্রেসড ও হল। যতই নামছিলাম মনে হচ্ছিল পেছনে খুব মূল্যবান কিছু ফেলে এসেছি।

নামার পথে বলার মত তেমন কিছুই ঘটেনি। বিনোদন বলতে ছিল কেবল অস্থিরচিত্ত প্রিয় বন্ধু সালভির আছাড় খাওয়া। বেশ বড় একটি ঢালে সাবধান করা সত্ত্বেও দৌড় দিতে গিয়ে ডিগবাজি খাওয়ার দৃশ্যটা দুঃখজনক হলেও মনমুগ্ধকর ছিল। B-) B-)

রওনা হওয়ার দু ঘণ্টা পাঁচ মিনিটের মাঝে আমরা বগালেক পৌঁছে গেলাম। সত্যি বলতে কি বগালেক দেখে আমরা সবাই কিঞ্চিত হতাশ হয়েছি। উপলব্ধি একটাই, তথাকথিত আধুনিক সভ্যতাই প্রকৃতিকে ধ্বংসের মুখে ফেলে দিচ্ছে। চারদিকে প্যাকেট, ঠোঙ্গা, বোতলের ছড়াছড়ি। বগালেক থেকে প্রস্থানের সময় আর্মি ক্যাম্পে নাম লিখাতে গিয়ে শুনি বান্দরবান শহরে নাকি আমরা নিখোঁজ হয়ে গেছি এই খবর ছড়িয়ে পড়েছে। চারদিন নেটওয়ার্ক এর বাইরে থাকায় বিভিন্ন জনের পরিবার থেকে উচ্চমহলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে থানচির পর আমরা উধাও।

বগালেক থেকে নামতে বেশি সময় লাগল না। নিচে হালকা নাস্তা করতে করতেই চান্দের গাড়ির ব্যবস্থা হয়ে গেল। অতঃপর চান্দের গাড়িতে চেপে সোজা বান্দরবান শহরে হাজির হলাম। আসতে আসতে বিকাল হয়ে গিয়েছিল। বন্ধু সালভির স্বর্ণমন্দির দেখার সাধ জাগলেও আমরা কেউ তেমন উৎসাহী হলাম না। প্রকৃতির চেয়ে ভাল কিছু আর কি হতে পারে। যা দেখেছি মনের সাধ মিটে গেছে। সন্ধ্যার বাস ধরে কামিং হোম গান শুনতে শুনতে অবশেষে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়ে গেলাম।

শেষকথাঃ

যারা আগেও গিয়েছেন বান্দরবান তারাতো জানেনই, যারা এখনও যাননি তাদের জন্য বলতে চাই জীবনে একবার হলেও দেশের এই জেলাটিতে যাবেন। শারীরিক ও মানসিক দুই ধরনের উন্নতিই সাধিত হবে নিঃসন্দেহে। এমনকি জীবনদর্শনের ও পরিবর্তন ঘটতে পারে।

সঙ্গী নির্বাচনে সতর্ক হবেন। হাইকিং এর জন্য গেলে দুর্বল চিত্তের লোক না নেয়াই ভাল। সঙ্গী এমন হলে ভাল যারা নিজের কথা না ভেবে পুরো দলের কথা ভাবে। বান্দরবান আপনাকে পুরান মানুষ নতুন করে চিনতেও সহায়তা করবে।

বান্দরবানের উপজাতীয়রা মানুষ হিসেবে অসাধারণ। তাদের প্রতি আন্তরিক হবেন।

বগালেক দিয়ে ঢুকুন বা থানচি দিয়ে ঢুকুন চেষ্টা করবেন বাস এ না গিয়ে খরচ একটু বেশি হলেও চান্দের গাড়ি নেয়ার। নাহলে কি মিস করবেন সেটা সময়ই বলে দিবে।

বিঃদ্রঃ পূর্ববর্তী পর্ব গুলোতে ভ্রমণের ছবি রয়েছে।

পূর্ববর্তী পর্ব সমূহের লিঙ্কঃ
প্রথম পর্ব ঃ Click This Link
দ্বিতীয় পর্ব ঃ Click This Link
তৃতীয় পর্ব ঃ Click This Link
চতুর্থ পর্ব ঃ Click This Link
পঞ্চম পর্ব ঃ Click This Link


৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×