somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বুয়েটের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের শিক্ষক নিয়োগে অনিয়মের শ্বেতপত্র!

০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১২:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজকের লেখার বিষয় হল, বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা (ইউআরপি) বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের নিয়োগ নিয়ে। আসলে এখানে বুয়েটের ইউআরপি বিভাগের শিক্ষক নিয়োগের রীতিনীতি এবং সংশ্লিষ্ট অনিয়ম নিয়ে কিছু কথা বলা হবে।

সবার প্রথমে জানতে হবে, শিক্ষক নিয়োগে বুয়েটের নিয়ম আর ঐতিহ্য নিয়ে। সাধারণত বুয়েটে প্রভাষক হিসাবে ক্লাসের সবচেয়ে মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদেরকেই বেছে নেয়া হয়। এই মেধা নির্ণয় করা হয় 'সিজিপিএ'-র ভিত্তিতে। স্নাতকে যার 'সিজিপিএ' সবচেয়ে বেশি থাকে, তাকেই শিক্ষক (প্রভাষক) হিসাবে নিয়োগ দেয়া হয়। আবার ক্ষেত্র-বিশেষে মেরিট পজিশনকেও গুরুত্ব দেয়া হয়।

আপনারা হয়তবা জানেন যে, বুয়েটের প্রভাষক নিয়োগের জন্য শুধুমাত্র ৫-৭ মিনিটের একটা মৌখিক পরীক্ষা হয়। এই পরীক্ষায় আপনার স্নাতকে 'সিজিপিএ' কত, কবে পাস করেছেন এবং আপনি কোন ব্যাচ তা জিজ্ঞেস করা হয়। আর নিদেনপক্ষে ২/১ টা অন্য প্রশ্ন। এইবার তাহলে মূল-পর্বে চলে যাই।

বুয়েটের ইউআরপি স্নাতক ব্যাচ শুরু হয়েছে ১৯৯৫ সাল থেকে, তাই আমাদের প্রথম ব্যাচ হল ৯৫। আসেন তাহলে, আমরা দেখি প্রথম ব্যাচের ২ জন প্রভাষক নিয়োগ কিভাবে হল। নিচে ১৯৯৫ সালের শিক্ষক নিয়োগের বিস্তারিত দেয়া হলঃ

১৯৯৫ ব্যাচ
প্রভাষক নিয়োগের সাক্ষাৎকারঃ ইউআরপি (পদসংখ্যাঃ ২)
তারিখঃ ১৫/০৫/২০০২ ইং
বিভাগীয় প্রধান- ডঃ সরওয়ার জাহান

টেবিল ১: মৌখিক পরীক্ষায় উপস্থিত প্রার্থীদের বিবরণ



উপরের টেবিল ১ থেকে দেখা গেল যে, বুয়েটের ইউআরপি ৯৫ ব্যাচের সর্বোচ্চ সিজিপিএ-ধারী ২ জনকেই নেয়া হল। এইখানে দেখা যাচ্ছে যে, ওইদিন মৌখিক পরীক্ষায় ৩ জন প্রার্থী উপস্থিত ছিলেন। এদের মধ্যে একজন ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক সিনিয়র একজন। কিন্তু পরিশেষে নিয়োগ দেয়া হল বুয়েট থেকে সদ্য পাস করা এবং চলমান ব্যাচের সর্বোচ্চ সিজিপিএ-ধারীদেরকেই (নিচের সংযুক্ত ছবি)।




** সত্যতা প্রমাণের জন্য কেবলমাত্র ১৯৯৫ ব্যাচের উপরের ফাইলগুলো সংযুক্ত করা হল।

ঐতিহ্য- উপরের টেবিল থেকে এটাই প্রতীয়মান হয় যে বুয়েট-ইউআরপি বিভাগ থেকে পাস করা প্রার্থীকে শিক্ষক নিয়োগে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। অন্য বিভাগ অথবা অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের থেকে স্নাতক করা প্রার্থীদেরকে বিবেচনায় নেওয়া হয়না। এই নিয়োগে বুয়েটের ঐতিহ্য রক্ষা হয়েছে। এইবার আমরা বুয়েটের ইউআরপি বিভাগের দ্বিতীয় মানে ১৯৯৬ ব্যাচের কাহিনী দেখার চেষ্টা করিঃ

১৯৯৬ ব্যাচ
প্রভাষক নিয়োগের সাক্ষাৎকারঃ ইউআরপি (পদসংখ্যাঃ ৩)
তারিখঃ ১২/০৩/২০০৩ ইং
অনুষদের ডীন- অধ্যাপক মাহবুব-উন-নবী
বিভাগীয় প্রধান- ডঃ সরওয়ার জাহান

টেবিল ২: মৌখিক পরীক্ষায় উপস্থিত প্রার্থীদের বিবরণ



** (---) এই চিহ্ন মানে হল, তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হয় নাই।
এই নিয়োগ নিয়েও আমাদের কোন আপত্তি নেই, কেননা এইখানে ৯৬ ব্যাচের সর্বোচ্চ সিজিপিএ-ধারী প্রথম ৩ জনকেই নেয়া হয়েছে। খুবই ভাল কথা! এখানেও খেয়াল করলে দেখা যাবে যে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একজন অধিক সিনিয়র আবেদন করলেও, উনাকে নেয়া হয় নাই। কেননা উনার সিজিপিএ কম। এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, বুয়েটে অভিজ্ঞতার চেয়ে সিজিপিএ-কে অধিক গুরুত্ব দেয়া হয়।

ঐতিহ্য- উপরের টেবিল ২ থেকে এটাই প্রতীয়মান হয় যে বুয়েট-ইউআরপি বিভাগ থেকে পাস করা স্নাতকে অর্জিত সর্বোচ্চ সিজিপিএ-ধারী প্রার্থীকে শিক্ষক নিয়োগে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
১৯৯৭ ব্যাচ
প্রভাষক নিয়োগের সাক্ষাৎকারঃ ইউআরপি (পদসংখ্যাঃ ২)
তারিখঃ ০৬/০৪/২০০৪ ইং
বিভাগীয় প্রধান- ডঃ সরওয়ার জাহান

টেবিল ৩: মৌখিক পরীক্ষায় উপস্থিত প্রার্থীদের বিবরণ



১৯৯৭ ব্যাচের সময় ২ জন প্রভাষক নিয়োগের বিপরীতে মৌখিক পরীক্ষা দিতে এসেছিলেন মোট ১২ জন (টেবিল ৩)। এই নিয়োগটি খুবই রহস্যময়! এই ১২ জনের বিস্তারিত আমরা সংগ্রহ করতে পারি নাই। যতটুকু পেরেছি ততটুকুই দেয়া হল। টেবিল ৩ সিজিপিএ-এর ভিত্তিতেই সাজানো হয়েছে। টেবিল ৩ বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে যেঃ

১. যদিও ওইদিনের সর্বোচ্চ সিজিপিএ-ধারী বুয়েটের আগের ব্যাচের (৯৬) চতুর্থ অবস্থানের একজন ছাত্র, তবুও তাকে নেয়া হল। এর মানে হল প্রভাষক নিয়োগে ব্যাচ কোন ব্যাপার না, সিজিপিএ প্রধান!!!

২. দ্বিতীয় অবস্থানে যিনি আছেন, তাকে না নিয়ে নেয়া হল তৃতীয় অবস্থানের একজনকে। এর কারণ হতে পারে যে, চলমান বিভাগের (Running Department) ক্ষেত্রে বুয়েটে সাধারণত বুয়েটের বাইরের কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ডিগ্রীধারীকে নেয়া হয় না। এইটা হল বুয়েটের ঐতিহ্য!

৩. তৃতীয় অবস্থানরত তিনজনই একই সিজিপিএ অর্জন করেছেন। কিন্তু জনাব মামুন মুনতাসির রহমানকে নেয়া হল, কারণ উনি হলেন ১৯৯৭ ব্যাচের প্রথম স্থান অধিকারী।

বিশ্লেষণঃ হিসাব মতে, ১৯৯৭ ব্যাচের দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা মিস শাম্মী আক্তার সেতুকে (ক্লাসে দ্বিতীয়) নেয়া উচিত ছিল; ১৯৯৬ ব্যাচের মোঃ শাহাদত হোসেনের (ক্লাসে চতুর্থ) জায়গায়। যদিও মোঃ শাহাদত হোসেনের সিজিপিএ বেশি ছিল, কিন্তু ক্লাস পজিশন আরও গুরুত্বপূর্ণ! ক্লাস পজিশন এবং সদ্য পাস করা ব্যাচ হিসাবে মিস শাম্মী আক্তার সেতু ছিলেন অধিক যোগ্য। একটা বিষয় মনে রাখতে হবে যে, বুয়েটের একটি ব্যাচের সাথে অন্য ব্যাচের তুলনা কখনই সিজিপিএ দিয়ে হয় না; ইহা ক্লাস পজিশন দিয়ে হতে থাকে। তাই মোঃ শাহাদত হোসেনের এই নিয়োগ নিয়ে আজও প্রশ্ন থেকে যায়!

অনেকেই এই ক্ষেত্রে যুক্তি দিয়ে থাকেন যে মিস শাম্মী আক্তার সেতুর সিজিপিএ (৩.৭৩) ছিল ৩.৭৫ এর কম; তাই উনাকে নিয়োগ দেয়া হয় নাই। কিন্তু ইহা সম্পূর্ণ একটি ভুল যুক্তি। কেননা বুয়েটের শিক্ষক নিয়োগের কোন রীতিনীতিতেই বলা নাই যে, কারও সিজিপিএ ৩.৭৫ এর কম হলে তাঁকে শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ দেয়া যাবে না। বুয়েটের বিভিন্ন বিভাগ এবং ইন্সটিটিউটে ৩.৭৫ এর অনেক কম সিজিপিএ-ধারী অনেক শিক্ষক নিয়োগ প্রাপ্ত হয়েছেন এবং এখনও বহাল তবিয়তেই আছেন! যেমন - মনজুর মোরশেদ মাসুম (৩.৫৭), তাজিন নাহার আলী (৩.৫০), সোনিয়া বিনতে মোরশেদ (৩.২৯); মোঃ মাহবুবুজ্জামান (৩.৬৮), মোঃ শামসুর রহমান (৩.৫১), মোঃ আসিফ রায়হান (৩.৫৪), কাজী মোঃ সাইফুন নেওয়াজ (৩.৪৬); এস এম সোহেল মাহমুদ (৩.৩৭) এবং মিস আরমানা সাবিহা হক (৩.৫৪) ইত্যাদি! ইনারা সকলেই বুয়েটের প্রভাষক হিসাবে যোগদান করেছেন! এরকম আরও উদাহরণ আছে।

যাই হোক, এরপর ইউআরপি বিভাগে যোগদান করলেন ‘জনাব মোঃ শাহাদত হোসেন’ এবং ‘জনাব মামুন মুনতাসির রহমান’। তো কাহিনী এইখানেই শেষ নয়। যোগদানের ঠিক ৩ মাসের মাথায় জনাব মোঃ শাহাদত হোসেন “DAAD Scholarship” অর্জন করেন এবং বুয়েট ইউআরপির চাকরি ছেড়ে চলে যান।

এমতাবস্থায় বুয়েটের ইউআরপি বিভাগের তৎকালীন প্রধান ডঃ সরওয়ার জাহান বুয়েটের সিভিল-এর স্নাতক ডিগ্রিধারী একজনকে, মোঃ আফতাবুজ্জামান (টেবিল ৩ এর ৫ম অবস্থানে), এই শূন্যস্থান পূরণ করার জন্য আহবান করেন (সংযুক্ত ফাইল)।



কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়, এইটা কিভাবে সম্ভব। আপনারা হয়তবা জানেন, বুয়েটের আরও একটি ঐতিহ্য হল যে বুয়েটের কোন চলমান বিভাগে বুয়েটেরই অন্য কোন বিভাগ থেকে প্রভাষক নিয়োগ দেয়া হয় না!

এই কাহিনীর প্রেক্ষিতে একটু বলে রাখি, বুয়েট ইউআরপিতে ১৯৯৫-এর আগে যখন নিয়মিত স্নাতক ব্যাচ ছিল না, তখন কিন্তু বুয়েটের বিভিন্ন বিভাগ থেকে এমনকি বুয়েটের বাইরের বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হত/হয়েছে। যেমনঃ ডঃ সরওয়ার জাহান কিন্তু নিজেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক করা। কিন্তু যখন বুয়েটের একটি বিভাগে নিয়মিত স্নাতক ডিগ্রীধারী ছাত্র-ছাত্রী পাস করে বের হতে থাকেন, তখন কিন্তু বুয়েটের বাইরের বিভাগ কিংবা অন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আর শিক্ষক নেয়ার কোন রেওয়াজ বুয়েটে নেই।

কিন্তু ওইদিন সিভিল-এর জনাব মোঃ আফতাবুজ্জামানের (সিজিপিএ = ৩.৭৭) পরিবর্তে সম্ভাব্য প্রার্থী ছিলেন, বুয়েটের ইউআরপি বিভাগের ৯৬ ব্যাচের জনাব সোহেল মোঃ আনোয়ার পাশা (সিজিপিএ = ৩.৭৬)। এইভাবে বুয়েটের ইউআরপি বিভাগের অবশিষ্ট ৫ জন ছাত্র-ছাত্রীকে পাশ কাটিয়ে বুয়েটের সিভিল এর একজনকে প্রভাষক হিসাবে ইউআরপি বিভাগে নিয়োগ দেয়া আসলেই আমাদের কাছে রহস্যময় এবং জটিল। এমন তো না যে, বুয়েট ইউআরপি-এর আর কোন প্রার্থী ছিল না? ১৯৯৭ ব্যাচের দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা মিস শাম্মী আক্তার সেতুও ছিলেন অন্যতম যোগ্য প্রার্থী।

ইউআরপি বিভাগে সিভিল-এর অনেকগুলো কোর্স আছে, কিন্তু এই কোর্সগুলো বুয়েটের সিভিল-এর শিক্ষকরাই পড়িয়ে থাকেন। এর জন্য আলাদা করে সিভিল থেকে শিক্ষক নেয়ার কারণ দর্শানো হাস্যকর! তাহলে তো ইউআরপি বিভাগে এখন থেকে আলাদাভাবে গণিত, স্থাপত্যবিদ্যা, ইংলিশ, অর্থনীতি এবং সমাজ বিজ্ঞানেরও শিক্ষক নেয়া উচিত। এই বিষয়ের কোর্সগুলো পড়ানোর জন্য বাইরে থেকে শিক্ষক আনার কি দরকার?

পরিশেষে বলা যায়, ১৯৯৭ সালের মোঃ শাহাদত হোসেন এবং মোঃ আফতাবুজ্জামানের নিয়োগ নিয়ে সকলের মনেই প্রশ্ন আছে!

১৯৯৮ ব্যাচ
প্রভাষক নিয়োগের সাক্ষাৎকারঃ ইউআরপি (পদসংখ্যাঃ ২)
তারিখঃ ২২/১২/২০০৪ ইং
অনুষদের ডীন- অধ্যাপক মাহবুব-উন-নবী
বিভাগীয় প্রধান- ডঃ খ. ম. মনিরুজ্জামান

টেবিল ৪: মৌখিক পরীক্ষায় উপস্থিত প্রার্থীদের বিবরণ



১৯৯৮ ব্যাচের শিক্ষক নিয়োগ নিয়েও আমাদের কোন মন্তব্য নেই। কেননা এইখানে ৯৮ ব্যাচের সর্বোচ্চ সিজিপিএ-ধারী ২ জনকেই প্রভাষক হিসাবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

কিন্তু একটা ব্যাপার লক্ষণীয় যে (টেবিল ৪), একজন প্রার্থীর (মোহাম্মদ আজিজুর রহমান) ২ টি স্নাতকোত্তর ডিগ্রী আছে, কিন্তু তাকে নেয়া হয় নাই। এর মানে হল প্রভাষক নিয়োগে স্নাতকোত্তর ডিগ্রীর কোন মূল্য নেই! এই তথ্যটা আমাদের জেনে রাখা ভাল।

১৯৯৯ ব্যাচ
প্রভাষক নিয়োগের সাক্ষাৎকারঃ ইউআরপি (পদসংখ্যাঃ ২)
তারিখঃ ১৮/০৭/২০০৫ ইং
বিভাগীয় প্রধান- ডঃ খ. ম. মনিরুজ্জামান

টেবিল ৫: মৌখিক পরীক্ষায় উপস্থিত প্রার্থীদের বিবরণ



১৯৯৯ ব্যাচের শিক্ষক নিয়োগও সঠিক ছিল বলে আমরা মনে করি। কেননা এইখানে ৯৯ ব্যাচের সর্বোচ্চ সিজিপিএ-ধারী ২ জনকেই প্রভাষক হিসাবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

লক্ষণীয় যে (টেবিল ৫), দুইজন প্রার্থীর (মুঃ মোসলেহ উদ্দীন হাসান এবং মোঃ মঞ্জুরে আলম প্রামাণিক) বুয়েটের স্নাতকোত্তর ডিগ্রী আছে, কিন্তু তাদেরকেও নেয়া হয় নাই। এর ফলে আবারও প্রমাণিত হল যে, বুয়েটে প্রভাষক নিয়োগে স্নাতকোত্তর ডিগ্রীর চেয়ে সিজিপিএ-কেই বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়!

২০০০ ব্যাচ
প্রভাষক নিয়োগের সাক্ষাৎকারঃ ইউআরপি (পদসংখ্যাঃ ২)
তারিখঃ ২১/১১/২০০৬ ইং
বিভাগীয় প্রধান- ডঃ রোকসানা হাফিজ

টেবিল ৬: মৌখিক পরীক্ষায় উপস্থিত প্রার্থীদের বিবরণ



২০০০ ব্যাচের শিক্ষক নিয়োগেও দেখা যাচ্ছে যে, ২০০০ ব্যাচের সর্বোচ্চ সিজিপিএ-ধারী ২ জনকেই প্রভাষক হিসাবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

এইখানে লক্ষণীয় যে, দ্বিতীয় (ফারহানা ইয়াসমিন) এবং তৃতীয় (সাদিয়া নিশু) অবস্থানে থাকা ২ জনেরই সিজিপিএ কিন্তু একই। কিন্তু বুয়েট কর্তৃপক্ষ তাদের সিজিপিএ-কে দশমিকের পর তৃতীয় ঘর পর্যন্ত বিবেচনা করেছেন।

যদিও বুয়েটের নম্বরপত্রে এই ২ জনের ক্লাসে অবস্থান একই (দ্বিতীয়), কিন্তু বুয়েটের দশমিকের পর তৃতীয় ঘরের বিবেচনায় একজনকে দ্বিতীয় আর অপরজনকে তৃতীয় বলে অভিহিত করা হয়েছে। এই কারণেই আমরা, উনাদের একজনকে দ্বিতীয় এবং অপর জনকে তৃতীয় হিসাবে উল্লেখ করেছি। 'টেবিল ৫'-এও একই ঘটনা।

২০০১ ব্যাচ
প্রভাষক নিয়োগের সাক্ষাৎকারঃ ইউআরপি (পদসংখ্যাঃ ১)
তারিখঃ ১৭/০৬/২০০৭ ইং
অনুষদ ডীন- ডঃ সরওয়ার জাহান
বিভাগীয় প্রধান- ডঃ রোকসানা হাফিজ

টেবিল ৭: মৌখিক পরীক্ষায় উপস্থিত প্রার্থীদের বিবরণ



২০০১ এর কাহিনী ২০০০ ব্যাচের মতো। এইখানেও প্রথম এবং দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ২ জনেরই সিজিপিএ একই। বুয়েটের ট্রান্সক্রিপট অনুযায়ী একই সিজিপিএ থাকায় এই দুজনেরই ক্লাসে অবস্থান “প্রথম”। ইহাকে ‘মেরিট পজিশন’ বলা হয়ে থাকে। কিন্তু শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে, বুয়েট কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনে তাদের সিজিপিএ-কে দশমিকের পর তৃতীয় ঘর পর্যন্ত বিবেচনা করেছেন। তাই আমরা ‘ক্লাসে অবস্থান’ কলামের মাধ্যমে উনাদেরকে যথাক্রমে প্রথম এবং দ্বিতীয় বলছি। এই লেখায় ‘ক্লাসে অবস্থান’ কলামটি আসলে কোন ব্যাচের জন্য দশমিকের পর তিন ঘর পর্যন্ত ধরে ক্রম সাজানো হয়েছে। ইহাকে মেরিট পজিশন হিসাবে ভুল ধারণা পোষণ করার কোনও অবকাশ নাই।

এরপর সার্বিক বিবেচনায় মিস অন্যা চন্দ্র সিমিকে প্রভাষক হিসাবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

২০০২, ২০০৩ এবং ২০০৪ ব্যাচ
২০০১ ব্যাচের পর দীর্ঘ ২৬ মাস পর ২০০২, ২০০৩ এবং ২০০৪ ব্যাচের প্রভাষক নিয়োগের মৌখিক পরীক্ষা একসাথে অনুস্থিত হয়। কেন এই ২ বছরেরও অধিক সময় ধরে প্রভাষক নিয়োগ দেয়া হল না, তার সঠিক জবাব ইউআরপি বিভাগ আজও দিতে পারেনি।

এর মাঝে ১/২ বার বুয়েটের অন্যান্য সব বিভাগে প্রভাষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে, কিন্তু ইউআরপিতে দেয়া হয় নাই। এই নিয়ে কথা বলতে গেলেই ইউআরপি বিভাগের শিক্ষকরা বলেন যে, তাদের শিক্ষক-কোটা পূর্ণ হয়ে গেছে। কিন্তু বিভাগে তখন আবার শিক্ষক শঙ্কট ছিল প্রকট, কেননা বেশিরভাগ শিক্ষকরাই ছিলেন শিক্ষা-ছুটি নিয়ে বাংলাদেশের বাইরে। আমাদের জানা মতে, একটা বিভাগে ৪০% এর বেশি সংখ্যক শিক্ষকদেরকে একসাথে শিক্ষা-ছুটি দেয়া যায় না। কিন্তু এই বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তা মেনে চলেন না। এর ফলে বিভাগে পর্যাপ্ত শিক্ষক নেই, আবার নতুন শিক্ষক নেয়াও যাচ্ছে না। এই হল ইউআরপি বিভাগ কর্তৃক সৃষ্ট কৃত্রিম শিক্ষক শঙ্কটের কারণ।

আপনারা জানেন যে, ইউআরপি ২০০২ ব্যাচ ২০০৮ সালের জানুয়ারী মাসে পাস করেন। আর প্রভাষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয় ২০০৯ সালের অক্টোবর মাসে, অর্থাৎ প্রায় ২১ মাস পর। তো এর মাঝে ২০০২ ব্যাচের প্রথম (সিজিপিএ ৩.৮৪) এবং দ্বিতীয় (সিজিপিএ ৩.৮৩) স্থান-অধিকারী ২ জনাই উচ্চ শিক্ষার জন্য বিদেশে চলে যান। ভাল কথা, ওইদিন মৌখিক পরীক্ষা দিতে উপস্থিত হন ২০০২ ব্যাচের শুধুমাত্র ১ জন, যার সিজিপিএ ৩.৮৩ (দ্বিতীয় স্থান অধিকারীর সমান)। এইবার মূল কাহিনী শুরু করা যাকঃ

প্রভাষক নিয়োগের সাক্ষাৎকারঃ ইউআরপি (পদসংখ্যাঃ ৩)
তারিখঃ ২১/১০/২০০৯ ইং
বিভাগীয় প্রধান- ডঃ সরওয়ার জাহান

টেবিল ৮: মৌখিক পরীক্ষায় উপস্থিত প্রার্থীদের বিবরণ




টেবিল ৮ থেকে দেখা যাচ্ছে যে; ২০০২, ২০০৩ এবং ২০০৪ ব্যাচের প্রভাষক নিয়োগের মৌখিক পরীক্ষায় মোট ৯ জন প্রার্থী উপস্থিত ছিলেন ৩ টি পদের বিপরীতে। তো প্রথমেই বুয়েটের ঐতিহ্য অনুযায়ী সকল প্রার্থীদেরকে ক্রমানুযায়ী সাজানো হল। দেখা যাচ্ছে যে প্রথম জনকে ঠিকই নেয়া হল, কিন্তু এর পরের ৩ জনকে বাদ দিয়ে নেয়া হল টেবিলের পঞ্চম এবং ষষ্ঠ অবস্থানের ২ জনকে। খুবই অবাক করা বিষয়! এইবার তাহলে কারণ অনুসন্ধান করা যাকঃ

যুক্তি ১- জেবুন নেসা বুশরাকে নেয়া হয়েছে, কেননা উনি ০৩ ব্যাচের প্রথম। আর উনার সিজিপিএ আজকের দিনে সবচেয়ে বেশি। ইহা ১০০% ঠিক আছে।

যুক্তি ২- ফারজানা খাতুনকে নেয়া হয়েছে, কেননা উনি ০৪ ব্যাচের প্রথম। যদিও উনার চেয়ে আরও ৫ জনের সিজিপিএ ওইদিন বেশি ছিল, কিন্তু উনাকে ব্যাচ হিসাবে অগ্রাধিকার দিয়ে নেয়া হয়েছে। ইহাও ঠিক হয়েছে।

যুক্তি ৩- রেজওয়ানা রফিককে (২০০১ ব্যাচ) নেয়া হয়েছে, কেননা বুয়েটের ট্রান্সক্রিপট অনুযায়ী উনার মেরিট পজিশন প্রথম ছিল। যদিও এর আগে হুবহু একই সিজিপিএ থাকায়, উনার ব্যাচের মিস অন্যা চন্দ্র সিমিকে প্রভাষক নিয়োগ দেয়া হয়েছিল।

বিশ্লেষণঃ যদি সিজিপিএ-এর ক্রম অনুযায়ী নেয়া হয়, তাহলে ফারজানা খাতুন এবং রেজওয়ানা রফিক কারোরই এইদিন প্রভাষক হবার কথা নয়। কিন্তু মিস রেজওয়ানা রফিকের সিজিপিএ তো এইদিন পঞ্চম অবস্থানে। আবার মনে আছে কিনা, মিস রেজওয়ানা রফিক কিন্তু ২০০১ ব্যাচের সময় প্রভাষক হতে পারেননি। কেননা মিস অন্যা চন্দ্র সিমির সিজিপিএ উনার চেয়ে হালকা বেশি ছিল। এই ২ জনের সিজিপিএ সমান হলেও বুয়েটের চোখে মিস মিস রেজওয়ানা রফিকের অবস্থান ২০০১ ব্যাচে দ্বিতীয় (টেবিল ৬ এবং ৭)।

আর এই নিয়োগে ব্যাচ অগ্রাধিকার দিলে নিতে হত ২০০২ ব্যাচের মিস মনসুরা শারমিনকে। ব্যাচ অগ্রাধিকার দিয়ে মিস ফারজানা খাতুনকে নেয়া হল, কিন্তু মিস মনসুরা শারমিনের সুযোগ হল না। এই নিয়োগে না মানা হল সিজিপিএ-এর ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগ, না মানা হল ব্যাচ হিসাবে শিক্ষক নিয়োগ। এই নিয়োগে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হল মেরিট পজিশনকে!

আমাদেরকে মনে রাখতে হবে যে বুয়েটের একটি বিভাগে শিক্ষক নিয়োগে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন; বিভাগীয় প্রধান। উনার অনুমতি ব্যতিত কোনভাবেই প্রভাষক নেয়া সম্ভব নয়। তাই সকলের প্রতি অনুরোধ থাকবে, ছাত্র-ছাত্রীদেরকে দোষারোপ না করার জন্য। যদি কোন অনিয়মের দায়ভার নিতে হয়, তবে তা তৎকালীন বিভাগীয় প্রধানকেই নিতে হবে!

একটি বিষয় খেয়াল করলে দেখা যাবে যে ‘১৯৯৭’ (টেবিল ৩) এবং ‘২০০২-২০০৪’ (টেবিল ৮) ব্যাচের নিয়োগের সময় বিভাগীয় প্রধান ছিলেন ডঃ সরওয়ার জাহান। আর উনি ১৯৯৭ ব্যাচের নিয়োগের সময় সিজিপিএ-কে প্রাধান্য দিয়ে নিয়োগ দিলেন মোঃ শাহাদত হোসেনকে; আবার সেই উনিই ‘২০০২-২০০৪’ ব্যাচের নিয়োগের সময় সিজিপিএ-কে প্রাধান্য না দিয়ে “মেরিট পজিশন”কে প্রাধান্য দিয়ে নিয়োগ দিলেন মিস রেজওয়ানা রফিককে। একই ব্যক্তি প্রভাষক নিয়োগে দুই ক্ষেত্রে দুইটি ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করলেন। আবার উনি নিজেই সিভিলের একজনকে (মোঃ আফতাবুজ্জামান) চলমান ইউআরপি বিভাগে প্রভাষক নিয়োগ দিয়েছিলেন। তাই ডঃ সরওয়ার জাহান কর্তৃক এই তিনটি নিয়োগ নিয়েই সকলের মনে প্রশ্ন রয়েছে!

২০০৫ ব্যাচ
প্রভাষক নিয়োগের সাক্ষাৎকারঃ ইউআরপি (পদসংখ্যাঃ ২)
তারিখঃ ১৫/০৩/২০১১ ইং
বিভাগীয় প্রধান- ডঃ রোকসানা হাফিজ

টেবিল ৯: মৌখিক পরীক্ষায় উপস্থিত প্রার্থীদের বিবরণ



এই নিয়োগের ক্ষেত্রেও বিভাগীয় প্রধানকে একটি কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। আপনাদের মনে আছে কিনা, ১৯৯৭ ব্যাচের নিয়োগের সময় মোঃ শাহাদত হোসেনকে অন্য ব্যাচ (৯৬) থেকে নেয়া হয়েছিল (টেবিল ৩)। কেননা উনার সিজিপিএ ওইদিন সবচেয়ে বেশি ছিল। কিন্তু আজকের দিনে প্রভাষক নিয়োগের সময় ব্যাচের ‘মেরিট পজিশন’কেই অগ্রাধিকার দেয়া হল। ২০০৫ ব্যাচ থেকেই ২ জনকে নেয়া হল, যদিও অন্য ব্যাচের একজনের অনেক বেশি সিজিপিএ আছে। তাই বলা যায়; ২০০৫ ব্যাচের নিয়োগ সঠিক হলে, ১৯৯৭ ব্যাচের নিয়োগ ভুল ছিল।
২০০৬ ব্যাচ
প্রভাষক নিয়োগের সাক্ষাৎকারঃ ইউআরপি (পদসংখ্যাঃ ২)
তারিখঃ ২০/০৫/২০১২ ইং
বিভাগীয় প্রধান- ডঃ সরওয়ার জাহান (ডঃ রোকসানা হাফিজের অনুপস্থিতিতে)

টেবিল ১০: মৌখিক পরীক্ষায় উপস্থিত প্রার্থীদের বিবরণ



২০০৬ ব্যাচের প্রভাষক নিয়োগ নিয়ে কোন অভিযোগ নেই। কেন, তা আশা করি আপনারা ইতিমধ্যে বুঝতে পেরেছেন!
এছাড়া ২০০৭ ব্যাচের নিয়োগে প্রভাষক হয়েছেন নুসরাত শারমিন এবং মোঃ তানভীর হোসেন শুভ। উনাদেরকে ব্যাচের সিজিপিএ দেখেই নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

এইবার আমরা বুয়েটের ১৯৯৫-২০০৬ ব্যাচের প্রভাষক নিয়োগের বাইরে আরও ২টি নিয়োগ নিয়ে কথা বলব। এর একটা হল ১৯৯৮ সালের জনাব মোঃ শাকিল আখতারের নিয়োগ। এই নিয়োগের সময় বুয়েটের ইউআরপি বিভাগের কোন স্নাতক ব্যাচ বের হয় নাই। তাই শিক্ষক নেয়া হয়েছিল বুয়েট স্নাতকের বাইরে থেকে।

বিশেষ(!) প্রভাষক নিয়োগ
প্রভাষক নিয়োগের সাক্ষাৎকারঃ ইউআরপি (পদসংখ্যাঃ ২)
তারিখঃ ২৭/০৭/১৯৯৮ ইং
বিভাগীয় প্রধান- আবদুল কাইয়ুম

টেবিল ১১: মৌখিক পরীক্ষায় উপস্থিত প্রার্থীদের বিবরণ



টেবিল ১১ সাজানো হয়েছে বুয়েটের ঐতিহ্য অনুযায়ী (মেধানুসারে)। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে তখন সিজিপিএ পদ্ধতি ছিল না। তাই ক্লাসে অবস্থান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এইদিনের নিয়োগে মোঃ মোস্তফা সারওয়ার (দ্বিতীয়) এবং মোহাম্মদ আখতার মাহমুদকে (তৃতীয়) পাশ কাটিয়ে নেয়া হল জনাব মোঃ শাকিল আখতারকে (চতুর্থ)।

মোঃ মোস্তফা সারওয়ার (দ্বিতীয়) এবং মোঃ শাকিল আখতার (চতুর্থ) কিন্তু আবার একই ব্যাচের ছাত্র। মোহাম্মদ আখতার মাহমুদ (তৃতীয়) এই দুইজনের এক ব্যাচ জুনিয়র।
এই নিয়োগেও বুয়েটের ঐতিহ্য ভঙ্গ হয়েছে বলে মনে করা হয়।
___________________________________________________________________
এইবার আমরা এই ইউআরপি বিভাগে (২০০৭ সালে) একজন সহকারী-অধ্যাপক নিয়োগে বুয়েটের ঐতিহ্য কিভাবে ভঙ্গ হল তা নিয়ে আলোচনা করব। এর প্রথমেই আমাদেরকে জানতে হবে, বুয়েটের একজন সহকারী-অধ্যাপক কিভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন।
বুয়েটের ঐতিহ্য হল, চলমান বিভাগের একজন প্রভাষক পদন্নোতি পেয়ে সহকারী-অধ্যাপক হয়ে থাকেন। একটি চলমান বিভাগের ক্ষেত্রে, কখনই সরাসরি সহকারী-অধ্যাপক নিয়োগ দেয়া হয় না।

আর যদি এমন অবস্থার উদ্ভব হয়, সহকারী-অধ্যাপক নিয়োগের জন্য বিভাগে পদ এসেছে কিন্তু ঐ বিভাগে তখন কোন প্রভাষক যোগ্যতাসম্পন্ন নাই (সহকারী-অধ্যাপক হওয়ার জন্য) তখন ঐ পদের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয় না। এইটাকে বলা হয় ‘Post Freeze’ করা। এরপর যখন কোন প্রভাষক যোগ্য হন (Internal Candidate) তখন ঐ পদের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।

এইভাবে কোন চলমান বিভাগে যদি বাইরে থেকে সরাসরি সহকারী-অধ্যাপক নিয়োগ দেয়া হয়, তাহলে তা বিভাগের বর্তমান প্রভাষক এবং অন্যান্য শিক্ষকদের মাঝে অসন্তোষের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আরও কিছু জেনে রাখা দরকার। সহকারী প্রভাষক নিয়োগের নিয়ম একটু ব্যতিক্রম ছিল। ইহা প্রভাষক নিয়োগের মত সকল ২০/২২ সেট কাগজপত্র নিয়ে সরাসরি ভাইভার প্রক্রিয়া নয়। বুয়েটে সহকারী প্রভাষক নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রথমে আগ্রহী প্রার্থীদেরকে আবেদন করতে হয়। এরপর তাদের সকলকে ভাইভা দিতে অন্য একটি দিনে ডাকা হয়। তারপর ঐ নির্ধারিত মৌখিক পরীক্ষার দিনে উপস্থিত প্রার্থীদের মধ্য থেকে সহকারী প্রভাষক নিয়োগ দেয়া হয়ে থাকে। আবারও বলে রাখি, এক্ষেত্রে বিভাগের ‘Internal Candidate’কেই প্রাধান্য দেয়া হয়ে থাকে।

তো বুয়েটের এই সহকারী প্রভাষক পদে বিজ্ঞপ্তি হলে মোট ৫ জন আবেদনপত্র জমা দেন (সংযুক্ত ফাইল)। এর মধ্যে দুইজন ছিলেন ‘Internal Candidate’ = মিস আফসানা হক (১৭/০৩/২০০৩ থেকে বুয়েটে প্রভাষক) এবং মামুন মুনতাসির রহমান (১৭/০৪/২০০৪ থেকে বুয়েটে প্রভাষক)। আর তিনজন ছিলেন ‘External Candidate’ = মুঃ মোসলেহ উদ্দীন হাসান, মিসেস শেখ রুবাইয়া সুলতানা মুন্নি এবং জনাব মুস্তাফা সারওয়ার।

এখানে আরও বলে রাখা ভাল যে মিস আফসানা হক; ‘২ রা অক্টোবর ২০০৫’ সাল থেকে বুয়েটের শিক্ষা ছুটিতে ছিলেন। উনি তখন জাপানে ‘PhD’ করছিলেন। উনি জাপানে চলে যাওয়ার পরে এই সহকারী প্রভাষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি হয়েছিল। কিন্তু জাপানে থাকা অবস্থাতেও উনি এই পদের জন্য আবেদনও করেছিলেন। বুয়েটে এরকম প্রায়ই ঘটে থাকে। বিদেশে অধ্যয়নকালে চাকরিতে পদোন্নতির বিজ্ঞপ্তি আসে; তখন ঐ অবস্থায় আবেদন করে সবাই এবং ভাইভার দিন ছুটি নিয়ে এসে পরীক্ষা দিয়ে আবারও নিজের ‘PhD’ করতে চলে যায়। একইভাবে মিস আফসানা হকও আবেদন করেছিলেন (সংযুক্ত ছবির ক্রম ৩)।





জমাকৃত আবেদনপত্রগুলো প্রথমে মূল্যায়ন করা হয়েছিল ১৪ই ডিসেম্বর ২০০৫ সালে। কিন্তু তখন এই নিয়োগ কোন এক অজ্ঞাত কারণে পিছিয়ে নিয়ে গিয়ে ১০ই ডিসেম্বর ২০০৬ সালের হিসাবে মূল্যায়ন করা হয়। এরপর অবশেষে ২৮শে জানুয়ারি ২০০৭ সালে সেই কাঙ্ক্ষিত মৌখিক পরীক্ষাটি অনুষ্ঠিত হয়। এইবার ২০০৭ সালের সেই কাহিনী দেখিঃ

বিশেষ(!) সহকারী-অধ্যাপক নিয়োগ
ইউআরপি (পদসংখ্যাঃ ২)
তারিখঃ ২৮/০১/২০০৭ ইং
বিভাগীয় প্রধান- ডঃ রোকসানা হাফিজ

টেবিল ১২: মৌখিক পরীক্ষায় উপস্থিত প্রার্থীদের বিবরণ



টেবিল ১২ থেকে দুইটি জিনিস লক্ষণীয়ঃ

[১] ঐদিন তিন জন প্রার্থী উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু ঐদিনের সবচেয়ে যোগ্য প্রার্থী, ১৯৯৬ ব্যাচের আফসানা হক অনুপস্থিত ছিলেন।

[২] জনাব মুঃ মোসলেহ উদ্দীন হাসান খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী-অধ্যাপক থেকে সরাসরি বুয়েটের সহকারী-অধ্যাপক হিসাবে যোগদান করার সুযোগ পেলেন।

আসলে জনাব মুঃ মোসলেহ উদ্দীন হাসানকে নিয়োগ দেয়ার জন্য এইটা একটি সাজানো নাটক ছিল! আপনারা হয়তবা খেয়াল করেছেন, জনাব মুঃ মোসলেহ উদ্দীন হাসান কিন্তু নিজের ব্যাচের (৯৬) প্রভাষক নিয়োগের সময় মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেননি (টেবিল ২)। কেননা উনার ক্লাসে অবস্থান ছিল ষষ্ঠ, এই অবস্থান থেকে কোনভাবেই প্রভাষক হওয়া সম্ভব নয়। এরপর জনাব মুঃ মোসলেহ উদ্দীন হাসান আরও দুইবার বুয়েটের প্রভাষক হবার জন্য চেষ্টা করেন যথাক্রমে ১৯৯৭ ব্যাচ (টেবিল ৩) এবং ১৯৯৯ ব্যাচের (টেবিল ৫) সাথে। কিন্তু এই দুইবারও উনি ব্যর্থ হন। কেননা আপনারা বুঝতেই পারছেন যে বুয়েটের ঐতিহ্য অনুযায়ী এত কম সিজিপিএ নিয়ে প্রভাষক হওয়া সম্ভব নয়, আর সহকারী-অধ্যাপক হওয়া তো পরের কথা।

এই সহকারী-অধ্যাপকের পদটিতে তৎকালীন ইউআরপি বিভাগের প্রভাষক, ১৯৯৬ ব্যাচের আফসানা হকের যোগদান করার কথা ছিল। কিন্তু আফসানা হককে উচ্চশিক্ষার্থে জাপানে অবস্থান করা দেখিয়ে, এই সুযোগে জনাব মুঃ মোসলেহ উদ্দীন হাসানকে বিভাগে ঢুকিয়ে নেয়ার পথ সুগম করে দেন ইউআরপি বিভাগের কিছু নেতৃ-স্থানীয় সিনিয়র শিক্ষকেরা। বুয়েটের অনেক শিক্ষকই পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটি নিয়ে এসে নিজের চাকুরীর পদোন্নতির ভাইভা দিয়ে থাকেন। আর আফসানা হক আবেদন করেও শেষ মুহূর্তে নিজেকে ভাইভা থেকে বিরত রাখেন। আর এই সুযোগে জনাব মুঃ মোসলেহ উদ্দীন হাসান নিয়োগপ্রাপ্ত হন। ইহার ফলে দুইটি বিব্রতকর অবস্থার সৃষ্টি হয়ঃ

[১] ২৮/০১/২০০৭ ইং তারিখে আফসানা হকের পদোন্নতি হলে তৎকালীন ইউআরপি বিভাগে একটি প্রভাষকের পদ খালি হয়ে যেত। এর ফলে ২০০১ ব্যাচের দুইজন প্রভাষক হিসাবে নিয়োগ পেতে পারতেন ১৭/০৬/২০০৭ ইং তারিখে; অথবা ২০০১ ব্যাচ থেকে একজন এবং ২০০২ ব্যাচ (এপ্রিল ২০০৮ সালে) থেকে একজন করে প্রভাষক নিয়োগ পেতে পারতেন। কিন্তু মিস আফসানা হক নিজের পদটিকে ছেড়ে দিলেন, জনাব মুঃ মোসলেহ উদ্দীন হাসানকে। পরিশেষে বিভাগে একটি প্রভাষকের পদ নষ্ট হল এবং অনেকটা সূক্ষ্ম কারচুপির মাধ্যমে অবৈধভাবে জনাব মুঃ মোসলেহ উদ্দীন হাসান সরাসরি সহকারী প্রভাষক পদে নিয়োগ পেলেন!

[২] এভাবে তীব্র শিক্ষক সংকটের মধ্যেও একটা প্রভাষকের পদ নষ্ট করা কতটা যৌক্তিক তা বিচারের দায়িত্ব পাঠকের। আপনাদেরকে আবারও মনে করিয়ে দিতে চাই যে, ২০০২ ব্যাচ ২০০৮ সালের জানুয়ারি মাসে পাস করেন। এর পরেই ২০০৮ সালের এপ্রিল মাসে ইউআরপি বিভাগ বাদে বুয়েটের আর সকল বিভাগে প্রভাষক নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। ইউআরপি বিভাগের তৎকালীন সিনিয়র শিক্ষকেরা বলেছিলেন যে প্রভাষকের কোন পদ খালি ছিল না, তাই প্রভাষক নিয়োগ দেয়া হই নাই। আসলে উনারা ২০০৭ সালেই একটি প্রভাষকের পদ নষ্ট করেছেন। এই একটি প্রভাষকের পদ নষ্ট না হলে; ২০০৮ সালের এপ্রিল মাসে ২০০২ ব্যাচ থেকে একজন প্রভাষক নিয়োগে কোনই বাঁধা ছিল না। এই কারচুপির কারণে ২০০১ ব্যাচের পর দীর্ঘ ২৬ মাস পর ২০০২, ২০০৩ এবং ২০০৪ ব্যাচের প্রভাষক নিয়োগের মৌখিক পরীক্ষা একসাথে অনুস্থিত হয়। তাই ২০০২ ব্যাচের প্রভাষক নিয়োগের ক্ষেত্রে এই কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টির দায়ভার তৎকালীন ইউআরপি বিভাগের দুর্নীতিবাজ শিক্ষকদেরকেই নিতে হবে।

** এই দীর্ঘ গবেষণার মাধ্যমে আমরা নিম্নলিখিত ৫ টি অবিচার/অন্যায় খুঁজে পেয়েছি যা বুয়েটের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্যের পরিপন্থীঃ

[১] ১৯৯৮ সালে জনাব মোঃ শাকিল আখতারের নিয়োগ।
[২] ২০০৪ সালের সিভিল-এর জনাব মোঃ আফতাবুজ্জামানকে নিয়োগ।
[৩] ২০০৭ সালে জনাব মুঃ মোসলেহ উদ্দীন হাসানের নিয়োগ।
[৪] ২০০৮ সালে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে ২০০২ ব্যাচকে বঞ্চিত করা।
[৫] ১৯৯৭ (টেবিল ৩), ২০০২-২০০৪ (টেবিল ৮) এবং ২০০৫ (টেবিল ৯)-ব্যাচের প্রভাষক নিয়োগে পরিপূর্ণ সঙ্গতি নাই।

** এরও পূর্বে এই বিভাগে আরও অনেক শিক্ষক নিয়োগ হয়েছে। কিন্তু তাঁদের তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হয় নাই। সংগৃহীত তথ্যগুলোর মাঝেই উপরোক্ত অনিয়মগুলো দৃষ্টিগোচর হয়েছে!

বুয়েট ইউআরপি বিভাগের সাম্প্রতিক অবস্থাঃ

এভাবে অতীতের শিক্ষক নিয়োগের অন্যায়গুলোকে ধামাচাপা দিতে দিতে বিভাগের বর্তমান কিছু শিক্ষক আজকে নিজেরাই নিজেদের ফাঁদে পা দিয়েছেন। এর একটি উদাহরণ হল, ২৬শে জুন ২০১৪ সালে এই বিভাগের কোন একজন শিক্ষক বেনামে বুয়েট প্ল্যানারসের সকল এলুম্নিদেরকে নিম্নের ই-মেইলটি করেছেনঃ

প্রিয় নগর পরিকল্পনাবিদ,

সকলকে শুভেচ্ছা। একটি বিষয় সকলের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে আমাদের প্রানপ্রিয় URP Department এ কিছু দিন আগে অধ্যাপক এবং সহযোগী অধ্যাপক পদ এর জন্য আবেদন চাওয়া হয়। এই আবেদন এর পরিপেক্ষিত এ Khulna University এর URP একজন অধ্যাপক (Dr. Mustafa Saroar) ২ টি পদেই আবেদন করে। যেহেতু আমরা যারা BUET থেকে পাস করেছি তারা জানি যে এই ধরনের আবেদন শুধু সৌজন্যটা মাত্র/ যার জন্য আমদের অনেক বড় ভাই এবং বোনেরা আবেদন করেন না। এই সুজগে এবং একটি বিশেষ মহলের সহায়তাই Khulna University এর এই অধ্যাপক যিনি আমাদের বর্তমান একজন স্যার এর বন্ধু আমাদের শিক্ষক হওয়ার দ্বারপ্রান্তে। যেহেতু কোন ধরনের viva এই সব নিয়োগ এর ক্ষেত্রে হয় না সেই জন্য Expertise এর মতামত নেওয়া হয় যার মধ্যে আমাদের বিভাগ এর একজন বিশেষ শিক্ষক আছেন যিনি তাকে সহায়তা করছেন বলে জানা যায়। এই ধারা আমাদের বুয়েট এর প্রথা পরিপন্থী। এই ধরনের ঘটনা যদি এইবার ঘটে থাকে তাহলে ভবিষ্যতে আর ও কতজন এই বিভাগ এ যোগদান করবে তা সহজেই উনুমেয়। এই বিভাগ এর বর্তমান শিক্ষক কেও এই বিষয় নিয়ে কথা বলতেসে না তার কারন তারা অনেক জুনিওর এবং সিনিওর বেশিরভাগ শিক্ষক দেশ এর বাহিরে। আমার আকুল আবেদন আসুন আমরা এই বিষয়টি নিয়ে যথাযথ ভাবে তুলে ধরি। আসুন আমরা আমাদের URP Department কে বাঁচাই।

এইখানে আবেদন করা সেই শিক্ষক এই লিঙ্ক দেওয়া হল
http://www.kuurp.ac.bd/mustafa.html

** এর প্রতিক্রিয়ায় বেশ কিছু এলুম্নি ই-মেইল চালাচালি করেন। এর পরেই ২৮শে জুন ২০১৪ সালে বেনামে আরেকটি ই-মেইল আসে। ই-মেইলটি নিম্নরুপঃ

Dear Planners,

To know clearly about the matter among ourselves though I took me whole day today: After receiving one unknown mail and three follow-up comments, with curiosity so far I came to know (from a senior-most professor) that an advertisement for professor/associate/assistant professor position is generally made at any Department in BUET when a faculty (in BUET) holding Associate/Assistant Professor/lecturer position fulfil the requirements for respective position for promotion (which is due then) and there is a vacancy for such position in the Dept.

a) Musleh sir has fulfilled the requirement for promotion to Assoc Professor and Neema mam has fulfilled the requirement for promotion to Professor (so their promotions are due). Therefore, an advertisement has been made for one Professor and one Associate Professor at URP, dept, BUET. Neema mam has applied for professor position and Musleh sir has applied for Assoc professor position.

A person (holding already professor position) at Khulna University has also applied for both professor and associate prof positions. cv of the applicant’s (Khulna University) in indicated link and online sources shows his academic credentials are as (SSC: 71.4 %, HSC: 70.8 %, BURP (Khulna Univ): 66.4 %, MSc: GPA Y-2: 1.25, GPA Y-1: 1.92 (in 5-point reverse scale, see website of University of the Philippines, Manila). Moreover, with holding professor position how he applied for both professor and associate prof position. He even cannot justify his qualification/quality himself for position. In this type of key position (professor and associate professor), without having any green signal (from someone) from respective department, nobody is generally interested to submit application. Who is behind the scene in promoting a professor (already) from other university to compete with own faculty members (holding position of Assistant Prof and Assoc professor with promotion due for higher positions) to compete with the post for Assoc Prof and Professor position?

If there is dire need of more teachers at URP, BUET, many BUET planners among us are far better academic quality than the person (from Khunla university) they are trying to promote. Dept of URP, BUET can recruit us and with great practical experience even we can support URP, BUET with part-time teaching too.

Some useful Information for us that I gathered:

b) For professor/associate professor position, it is only required only to get expert opinion (no interview is required). Experts' names are proposed by the Department and finally selected by the supreme authority. So, if Dept of URP thinks that they want to prove through favouring a person already holding professor position is better quality with his/her fellow internal candidate holding currently Assistant Prof/Assoc Prof, it would be totally injustice.

c) For assistant professor/lecturer position, interview is only held and no expert opinion is required.

d) Total number of positions for faculty members (professor + assoc professor + assist professor + lecturer) in any Dept at BUET is fixed. If a faculty member did not get chance for promotion and any other person got position, basically the post becomes frozen. Then, it becomes problematic for all posts (professor/assoc professor/assistant prof/lecturer). Lecturer and assistant professor (of the Dept) face difficulty for promotion. Even, recently passed graduates holding good merit positions also face problem (less vacant position due to frozen post because all positions are interlinked if a lecturer becomes assistant professor, then only a lecturer post is vacant etc).

e) However, it is common practice and ethical trend in BUET, when there is any internal candidate (applicant from own Dept) in BUET, no other candidate is entertained (if not exercised through an exceptional malpractice). Therefore, lateral entry in such faculty position is not allowed in BUET. If there is no internal candidate, then it is open position due to reason of scarcity of teacher (any qualified person can apply). Even in such case, applicant first talk to the Head of the Dept to express his willingness to apply.

f) If we allow it, then any faculty member from any other university with higher position/equivalent will be encouraged to apply (respective teacher of department (now URP) will be deprived of and demoralized). We should not promote and entertain such applications.

g) It is also our (planners) moral obligation supporting to uphold the dignity of Department (URP) establishing justice. sorry for long mail......
________________________________________________
বলে রাখা ভাল যে এই জনাব মোঃ মোস্তফা সারওয়ার অনেকদিন থেকেই বুয়েটে ঢুকার চেষ্টা করছেন। উনি ২৭/০৭/১৯৯৮ ইং তারিখে প্রভাষক নিয়োগের সময় মৌখিক পরীক্ষা দিয়েছিলেন (টেবিল ১১)। এছাড়া উনি ২৮/০১/২০০৭ ইং তারিখের সহকারী প্রভাষক নিয়োগের জন্য আবেদনও করেছিলেন (সংযুক্ত ফাইল); কিন্তু উনি ভাইভার দিন অনুপস্থিত ছিলেন। এইবার উনি উনার ক্লাসমেট বন্ধু, যিনি বর্তমানে বুয়েট ইউআরপি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান, ডঃ শাকিল আখতারের সহায়তায় সরাসরি সহযোগী অধ্যাপক/ অধ্যাপক পদে ঢুকার চেষ্টা চালাচ্ছেন। কিন্তু মজার কথা হল, ২৭/০৭/১৯৯৮ ইং তারিখে কিন্তু সঠিকভাবে নিয়োগ হলে জনাব মোঃ মোস্তফা সারওয়ারই বুয়েটে প্রভাষক হিসাবে নিয়োগ পেতেন। কিন্তু অন্যায়ভাবে জনাব শাকিল আখতার তখন নিয়োগ পেয়ে যান।

তবে ডঃ মোঃ মোস্তফা সারওয়ারের আবেদনপত্র জমা দেয়ায় এবং উনার বন্ধু বর্তমানে বিভাগের প্রধান হওয়ায়; একই সাথে অধ্যাপক পদপ্রার্থী ডঃ মেহের নিগার নীমা এবং সহযোগী অধ্যাপক পদপ্রার্থী ডঃ মুঃ মোসলেহ উদ্দীন হাসান এখন একটু ভয়ে ভয়েই আছেন! তাইতো উনাদের পক্ষ থেকে কেউ একজন বেনামে ই-মেইল দিয়ে এলুম্নিদের কাছে সাহায্য চাইছেন!

* এছাড়া আরও কয়েকটি দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে, যা নিয়ে শীঘ্রই এই পোস্টেই আপডেট প্রকাশ করা হবে। ইহা হল বুয়েট ইউআরপি বিভাগের বর্তমান শোচনীয় অবস্থা!!
_________________________________________________
ভালভাবে লক্ষ্য করলে দেখবেন যে, বুয়েটের ইউআরপি বিভাগে শিক্ষক নিয়োগে যথাযথ কোন নিয়ম মেনে চলা হয় না। কতিপয় সিনিয়র শিক্ষকদের যখন যা মন চায়, উনারা তাই করছেন অনেকটা একনায়কতন্ত্রের মত। আজ আমাদেরকে এই ধরণের দুর্নীতিবাজ শিক্ষকদের বিরুদ্ধে কথা বলতে হবে। কেননা অন্যায় হল অন্যায়; অন্যায়কারী একজন শিক্ষক হলেও এর বিরুদ্ধে আমাদেরকে প্রতিবাদ করতে হবে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদ আমাদের কর্তব্য!

আরেকটি কথা, এই লেখাটি পড়ে মনে হতে পারে যে বুয়েট ইউআরপি বিভাগের সকল শিক্ষক দুর্নীতি বা অনিয়মের সাথে জড়িত। কিন্তু আসলে তা নয়। এই বিভাগের কিছু শিক্ষক সরাসরি দুর্নীতি করেছেন, কেউ কেউ সেই দুর্নীতিতে প্রত্যক্ষভাবে সহায়তা করেছেন, কেউ কেউ সেই দুর্নীতি দেখেও না দেখার ভান করে নীরব ছিলেন; কেউ কেউ এইসব দুর্নীতির প্রতিবাদ করতে চেয়েও সিনিয়র ও প্রভাবশালী শিক্ষকদের ভয়ে গুঁটিয়ে ছিলেন; অনেকেই চাকরি ছেড়ে বিদেশে গিয়ে দায়ভার মুক্ত হয়েছেন, এবং কেউ কেউ নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছেন! তাই একচেটিয়াভাবে সবাইকে একই কাতারে ফেলে দোষারোপ করাও সমীচীন হবে না!

সবশেষে আমরা বলতে চাই, কারো প্রতি আমাদের কোন পর্যায়ের ব্যক্তিগত ক্ষোভ নেই। আসলে আমরা বুয়েটের ইউআরপি বিভাগ নিয়ে সোচ্চার। এইটা আমাদের বিভাগ এবং আমরা চাই না যে একদল কলুষিত-দুর্নীতিবাজ শিক্ষকদের কাছে আমরা জিম্মি হয়ে থাকি। সামনের দিনগুলোতে আরও অনেক নতুন নতুন ব্যাচ আসবে এবং বের হবে এই বিভাগ থেকে। আমরা চাই না, আমাদের ছোট ভাই-বোনেরাও যেন আমাদের মতো অধিকার-বঞ্চিত হোক।

এটি একটি গণ-সচেতনতামূলক পোস্ট, আশা করি এই লেখা পড়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা নিবেন। আমরা বুয়েট ইউআরপি বিভাগের প্রাক্তন এবং বর্তমান সকল ছাত্র-ছাত্রীরা এই বিষয়ে ন্যায় বিচার প্রত্যাশা করছি। আশা করি, আজ না হোক কাল; ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হবেই। আমরা সেদিনের প্রতীক্ষায় রইলাম!

আমাদের এইসব টেবিলের উৎস হল বুয়েটের অরিজিনাল অফিসিয়াল কাগজপত্র। দরকারি ফাইলগুলো আমরা আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম। আমাদের কথা যে মিথ্যা নয় এইগুলা তার প্রমাণ। আর আমাদের কাছে সবার বিস্তারিত CV আছে, কিন্তু উদাহরণস্বরূপ একজনের স্নাতকের সনদ বাদে (সংযুক্ত ফাইল) বাকিগুলা আর প্রকাশ করা হল না। কেননা আমরা ব্যক্তিগত তথ্য-অধিকার সংরক্ষণে সচেতন।



আর অনেকেরই 'সিজিপিএ' আমরা তুলে ধরতে বাধ্য হয়েছি শুধুমাত্র এই গবেষণাধর্মী লেখার প্রয়োজনে। এই কারণে সংশ্লিষ্ট সকলের কাছেই আমরা ক্ষমাপ্রার্থী। আশা করি, বুয়েট ইউআরপি বিভাগের বৃহত্তর স্বার্থে আপনারা আমাদেরকে ক্ষমা-সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আর এর পরেও যদি নিতান্তই অনিচ্ছা সত্ত্বেও কোন শব্দ/বাক্য যদি কাউকে আঘাত করে থাকে, তবে দয়া করে কমেন্টে আমাদেরকে জানাবেন। আমরা অবশ্যই পোস্টের ঐ লেখা সংশোধন করব।
______________________________________________________
খুবই অবাক লাগে, যখন দেখি এইসব দুর্নীতিবাজ শিক্ষকরাই নিয়মিত বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় বাংলাদেশ সরকারের দুর্নীতি এবং বাংলাদেশের পরিকল্পনার বেহাল দশা নিয়ে লিখেন এবং টেলিভিশনের ‘টক-শো’গুলোতে বড় বড় কথা বলেন। দেশটা আজ এভাবেই চলছে; দুর্নীতিবাজদের মুখ থেকে সুনীতির কথা শুনতে হচ্ছে। যারা নিজেরাই দুর্নীতি করেন এবং যাদের নিজেদের অবস্থাই বেহাল; তারা কিভাবে দেশের সমস্যা দূর করবেন তা কারো কাছেই বোধগম্য নয়। এরকম মুখোশধারীদের কালো-থাবা থেকে বাংলাদেশ মুক্ত হউক। এই প্রত্যশা রইল।

অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশ হয়তবা একইসাথে একটি সৎ পরিকল্পনাবিদ, যোগ্য শিক্ষক এবং ন্যায়পরায়ণ নাগরিক খুঁজে পাবেন; সেই আশায় রইলাম। হয়তবা সেইদিন বাংলাদেশের পথ পরিবর্তিত হবে; সেইদিন বাংলাদেশ একটি দুর্নীতিমুক্ত জাতি হিসাবে পৃথিবীর মানচিত্রে মাথা তুলে দাঁড়াবে। অন্যায় এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর আন্দোলন আজকে থেকেই শুরু হউক; সবাই ভাল থাকবেন এবং দেশকে দুর্নীতিমুক্ত রাখবেন!!
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই আগস্ট, ২০১৪ সকাল ১১:৫২
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×