জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বলেছেন, জামায়াতে ইসলামীর আমীর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী ও সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদরা যুদ্ধাপরাধী নয়। যুদ্ধাপরাধের দায়ে তাদেরকে বিচার করা হলে তারা খুব সহজে জামিন পেয়ে যাবে। কেননা আইন অনুযায়ী যারা যুদ্ধ করেছে তারাই যুদ্ধাপরাধী। সে হিসেবে সেনাবাহিনীর সদস্যরা যুদ্ধাপরাধী।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর কাকরাইলস্থ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউটের সেমিনার কক্ষে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) ৩৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত ‘যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়া' বিষয়ক জাতীয় সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু এমপির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের আহবায়ক অজয় রায়, শাহ জিকরুল আহমেদ এমপি, মুক্তিযুদ্ধ কমান্ড কাউন্সিলের মহাসচিব মনিরুল হক, বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ডা. এম এ করিম, জাসদের সাধারণ সম্পাদক শরীফ নূরুল আম্বিয়া, এডভোকেট আবিদুর রহমান, শিরিনা আক্তার প্রমুখ।
অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বলেন, নিজামী মুজাহিদরা ১৯৭১ সালে সংঘটিত মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছে এ দায়ে অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধের বাইরে। যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত করে বিচারের সম্মুখিন করে তাদেরকে শাস্তি দেয়া যাবে না। খুব সহজেই তারা জেল থেকে বের হয়ে আসতে পারবে। যদি মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন অবস্থায় সংঘটিত অপরাধের জন্য তাদেরকে দায়ী করা হয় তাহলেই কেবল তাদের বিচার করা যেতে পারে। তবে তার সংখ্যা হবে অনেক বেশি। দু'একজনের বিচার করলে চলবে না। এ দায়ে অভিযুক্ত সকলকে বিচার করতে হবে তার সংখ্যা যত বেশিই হোক না কেন। '৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে একজনের বাবা নিহত হয়েছে তার বিচার যদি করা হয় তবে অন্যজনের ছেলে নিহত হয়েছে তার বিচারও করতে হবে। শুধুমাত্র কয়েকজনকে বিচার করা হবে এমন প্রতিকী বিচার নয়, সকলের বিচার না করতে পারলে ট্রাইব্যুনাল গঠনের উদ্দেশ্য হাসিল হবে না। তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের বিচারকদের শুধু দেশীয় আইন নয়, আন্তর্জাতিক আইন বিষয়েও পারদর্শী হতে হবে। আন্তর্জাতিক আইন সম্পর্কে অভিজ্ঞ না হলে ট্রাইব্যুনাল ব্যর্থ হবে। আর একটি মাত্র ট্রাইব্যুনালে যুদ্ধকালীন সময়ে সংঘটিত অপরাধের দায়ে অভিযুক্তদের বিচার পরিচালনা করা সম্ভব নয়। যারা আইন সম্পর্কে জানেন তারা সহজেই বুঝতে পারেন এটা একটা খেলা। জাতি এ খেলা খেলতে চায় না। তিনি আরও বলেন, যুদ্ধাপরাধ বিষয়ে ১৯৭৩ সালে গঠিত বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বৈধতা নিয়ে আমেরিকাসহ অন্য দেশের নালিশ করার অধিকার নেই। কেননা তাদের নিজ দেশে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন ট্রাইব্যুনাল আন্তর্জাতিক মানদন্ডের যোগ্যতা হারিয়েছে।
অজয় রায় বলেন, যুদ্ধাপরাধের দায়ে যাদেরকে বিচার করার কথা বলা হচ্ছে দেশে এখনো তাদের ভোটার সংখ্যা শতকরা ৩০ ভাগের মতো। লিবারেল ইসলামী দল হিসেবে এককভাবে জামায়াতে ইসলামীরও অনেক শক্তি রয়েছে। এ জন্য তাদের অবহেলা করলে চলবে না। আমেরিকা যুদ্ধাপরাধের বিচারের পক্ষে যাবে কি-না সে বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। আমাদের সতর্কতার সাথে অগ্রসর হতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে হাসানুল হক ইনু বলেন, সামরিক হস্তক্ষেপের কারণে আমাদের দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হয়নি। বার বার সেনা অভূত্থানের মাধ্যমে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করা হয়েছে। সরকারকে মনে রাখতে হবে সামরিক শক্তির পক্ষে উকালতি করা যাবে না। মুক্তিযুদ্ধের ঘটনায় ৫৩ ধরনের অপরাধ চিহ্নিত করা হয়েছে। যারা '৭১ সালে ভাষণের মাধ্যমে হত্যাকান্ড ঘটাতে সহায়তা করেছিল তারাও যুদ্ধাপরাধী হিসেবে চিহ্নিত হবে।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




