ফেলানী
মাহফুজুল হক জগলুল
ফেলানী,
বোন আমার,
কন্যা আমার,
নাকি মা বলে ডাকবো তোমাকে!
ক্রুশবিদ্ধ তৈলচিত্রে এখন যিশু নয়
ফেলানী, তুমিই ঝুলছো যেন কাঁটার মুকুট পরা
রাজকন্যা এক।
বাইবেলে পড়েছি শেষ মুহুর্তে অসহায় যিশু নাকি হাহাকার করেছিলেন:
"হে ঈশ্বর আমায় ছেড়ে তুমি কোথায় গেলে"
দীর্ঘতম চার ঘন্টা বুলেটবিদ্ধ তুমি আশ্চর্য ভঙ্গিমায় যখন ঝুলেছিলে নির্মম উঁচু কাঁটাতারে
তখন যিশুর মত তুমিও কি করুণাময়কে কিছু বলেছিলে?
মৃত্যুকালে মানুষ ঊর্ধ্বাকাশে তাকিয়ে পরম স্রষ্টাকে খোঁজে
শেষ বারের মত তাকে কিছু বলতে চায় তার চোখ,
তুমি লটকে ছিলে মাটির দিকে তাকিয়ে
তুমি আকাশ দেখতে পাওনি,
তোমার চোখ ছিল তোমার মাতৃভূমির ঘাসে
ভেবোনা বোন, করুণাময় তিনি ঘাসেও আছেন আকাশেও আছেন।
শীলা গর্ভে কী আছে তিনি তাও জানেন।
আমি নিশ্চিত তোমার কথা তিনি শুনেছেন।
তুমি কি আমাকে ডেকেছিলে শব্দে, নিঃশব্দে কিংবা গোঙ্গাতে গোঙ্গাতে?
ভেবেছিলে কি দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য তোমার ভাই জীবন বাজি রেখে ছুটে আসবে
সোহাগি বোনের জন্য?
বোকা বোন আমার,
মানুষের সম্পর্কের হিসাব-নিকাশ
তুমি কিছুই বোঝ না,
আমাদের অনেক তন্ত্র মন্ত্র
লগ্ন তীথি মেনে চলতে হয়।
শোন মেয়ে,
সাবধান,
তুমি আমার দিকে তাকিওনা
আত্মীয়তার দারদিয়া কোন চোখে
আমি তোমার ভাই কিংবা পিতা নই
আমি বাঙ্গালী কিংবা বাংলাদেশী এক
অক্ষম অসম্পূর্ণ মানুষ।
বরং আমাকে তুমি অভিশাপ দাও
আমার দিকে তুমি ছুঁড়ে দাও তোমার যত আছে ঘৃণা।
না, না,
ওতেও হবেনা,
তারচেয়ে
আমার মুখে তুমি থুথু দাও,
থুথু দাও,
থুথু।
তোমার ক্ষত-বিক্ষত মুখগহ্বর থেকে বের হয়ে আসা
টকটকে লাল তাজা থুথু।
দেখি, সবেগে নিক্ষিপ্ত তোমার ঐ থুথু
আমার নিষ্কর্মা নির্বিষ এই মুখমণ্ডলে এবার নতুন কোন মানচিত্র এঁকে দেয় কিনা ।
আমি কবিতা লিখতে পারি না।
আমার বন্ধু জগলুল একজন বহুমাত্রিক মানুষ। পাঠক হিসাবে এই তার লেখা এই কবিতাটির আবেগ আর প্রাসঙ্গিকতা কি উপেক্ষা করা যায়?