উত্তরঃ প্রেম দুটি নারী পুরুষের ভালবাসাময় সম্পর্কের একটি রূপ। অন্যভাবে বলতে গেলে, শরীরবৃত্তিয় চাহিদার মনস্তাত্ত্বিক প্রকাশকে প্রেম বলে। কবি বলেছেন,
'স্বর্গ থেকে আসে প্রেম
স্বর্গে যায় চলে!"
এই আসা যাওয়ার মাঝে রেখে যায় নানান স্মৃতি। যে স্মৃতি কারো জন্যে আনন্দের, আবার কারো জন্যে বেদনা বা যন্ত্রণার স্মৃতিরেখা।
প্রেমের যুগ বিবর্তনঃ
একসময় প্রেম হতো চিঠিতে। তখন প্রেমিক-প্রেমিকারা লম্বা লম্বা চিঠি লিখে জবাবের প্রতিক্ষায় বসে থাকতো! সেই চিঠি পৌঁছানোও ছিল অনেক ঝামেলা! আর মুরুব্বীদের কাছে ধরা পড়ে গেলে তো খবরই আছে। তবে চিঠি যুগের প্রেম গুলোর স্থায়ীত্বকাল ছিলো অনেক বেশী। কারন চিঠি লিখে দুজন মানুষ দুজনের কথা আর কতটুকু জানতো পারতো! বেশীর ভাগ কথাই থেকে যেত অজানা। তাই পরস্পরকে জানার জন্যই সম্পর্কের স্থায়ীত্ব বেশী হতো।
এরপর এলো টিএন্ডটি যুগ। ফোনে কথা শুরু হলো গুটুর গুটুর করে। কিন্তু ফোনের সহজলভ্যতা এবং প্রাইভেসী সমস্যার কারনে ফোনে বেশী কথা বলা যেত না। তবে ফোন যুগে প্রেমের স্থায়ীত্ব চিঠি যুগের চেয়ে কমে যায়। কারন সারাদিন ফোনে টুকটাক কথা হওয়ায় ভালবাসার সাথে সাথে ঝগড়া বিবাদও বেড়ে গেছিলো।
মোবাইল যুগকে আধুনিক প্রেম কমিউনিকেশন সিস্টেমের পথিকৃত বলা যায়। হাতে হাতে মুঠোফোন প্রেমিক প্রেমিকাদের মধ্যে যোগাযোগ বাড়িয়ে দেয়। খুব সহজেই তারা একে অপরের সঙ্গে নিজেদের কথা গুলো শেয়ার করতে পারে। যার ফলে তারা যখন একটা পরিণয়ের দিকে আগায় তখন সমস্যার শুরু হয়। সবাই সেই ফোনের প্রেমিক বা প্রেমিকাকে খোঁজে বাস্তবের মধ্যে। এসময় প্রেমের স্থায়ীত্বকাল কমতে থাকে। হুটহাট প্রেম শুরু হয়, হুটহাট আবার ভেঙে যায়!
মোবাইল যুগের অন্যতম একটা সময়কাল ডিজুস এবং একটেল জয় যুগ! এসময়েই মুলত বাংলার দামাল ছেলেমেয়েরা রাতের পর রাত জেগে পরস্পরের সব কথা, গল্প, মাণ-অভিমান, ভালবাসা শেয়ার করা শুরু করে। এ যুগের অন্যতম অবদান “নিশাচর প্রজন্ম তৈরী!” এ যুগে প্রেমের স্থায়ীত্বকাল আশঙ্কাজনক হারে কমে যায়। যার ফলে এখনো স্বল্প স্থায়ীত্বের প্রেমকে অনেকে ডিজুস প্রেম বলে!
বর্তমানে চলছে ফেসবুক, স্কাইপি, হোয়াটঅ্যাপ, ভাইবার এর জয় জয়কার! এখন ছেলেমেয়েরা সারাদিন পুটুর পুটুর, গুটুর গুটুর করে মোবাইলে, পিসিতে, ল্যাপিতে চ্যাট করতে পারে। এখন আর ভাব বিণিময়ের জন্য কথা বলার দরকার হয় না। বোতাম টিপে বার্তা পাঠিয়ে দিলেই হয়। যোগাযোগ মাধ্যমের সহজলভ্যতার কারনে প্রেমিক-প্রেমিকারা পরস্পরের সাথে সহজেই সব কথা শেয়ার করতে থাকে। ফলে খুব দ্রুতই দেখা যায় পরস্পরকে জানার আর কিছু থাকে না। এছাড়াও অধিক কথা বলার সুযোগ পাওয়ােয় যেটা বলা উচিত না সেটাও বলা হয়ে থাকে বা যেটা না সেটাও বলা হয়ে থাকে। ফলে একসময় দেখা যায় দুজনের মধ্যে কারনে অকারনে মনমালিন্য। এ যুগে প্রেম এগিয়েছে না পিছিয়েছে সেটা যার যার দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী বুঝে নিতে হবে। তবে প্রেমে বহুগামিতার সংখ্যা বেড়েছে। একই স্ক্রিনে একই সাথে জেরিন, জরিনা এবং জয়িতা হয়ে প্রেম করা করার সুবিধার কারনে প্রেমের গতিবিধি পালটে যাচ্ছে! এযুগের প্রেমের স্থায়ীত্বকাল সম্পর্কে বলা মুষ্কিল! কখন কিভাবে কে কার প্রেমে পড়ে যায় সেটা ঈশ্বরই ভালো বলতে পারবেন।
বিভিন্ন যুগের প্রেম পর্যালোচনা করলে দেখা যায় পূর্বের চেয়ে প্রেমের প্রকাশ, ব্যাপ্তি এবং হাউকাউ বেড়ে গেলেও বর্তমানে প্রেমের স্থায়ীত্ব কমে গেছে।
মোরালঃ প্রেমে আবদ্ধ দুটি মানুষ পরস্পরের বিষয়ে যত দ্রুত জানতে থাকে প্রেমের স্থায়ীত্বকাল ততই কমতে থাকে।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৩:৫২