: ড্যাড, কি কিউট টেডি! প্লিজ।
: ড্যুড, এইটা পিংকিশ। সো লেডিস! ঐ দেখো কি সুন্দর জেড আই সোর্ড! তাও ব্লাক! আমি ডার্ক ভেডার!
: ড্যুড, আই এম লেডিস। আমার টেডি লাগবে।
শাহেদ মুখ ঘুরিয়ে আছে।৬ বছরের পিচ্চি সিন্থিয়া বাবার হাত ধরে গাল ফুলিয়ে বললো,"ওকে, আমাকে দুটোই দাও!" এই বলেই সিন্থিয়া নিজের দু গাল হাত দিয়ে ঢেকে বলতে থাকলো,"নো ড্যুড, নো কুচি কু!" কিন্তু শাহেদ শুনলো না। সিন্থিয়ার ছোট হাত দুটো গলিয়ে ঠিকই গালে চিমটি কেটে পুরো মুখ লাল করে দিয়ে পুরো একটা মিনিট কুচি কু করতে থাকলো। আর সিন্থিয়া লজ্জায় লাল টুকটুক,"ড্যাড, ইটস সো এমব্যারেসিং!"
সিন্থিয়ার হাতে টেডি ধরিয়ে শাহেদ নিজেই প্লাস্টিকের জেড আই তলোয়াড় নিয়ে বাতাসে উঠিয়ে বললো,"মে দ্যা ফোর্স বি উইথ ইউ"। সিন্থিয়ার মাথায় কাজ করতেছে না। বাবার সাথে ঘোরার মজা আছে। তার যেটা পছন্দ সে তার উল্টোটা বলবে। বাবা দুটোই কিনবে কিন্তু তার পরে একটা সারপ্রাইজ। সবসময় সারপ্রাইজ অবশ্য তার পছন্দমতো হয় না। যেমন এখন তারা রোলার কোস্টারের লাইনে দাড়িয়ে আছে কিন্তু ওর রোলারকোস্টার মোটেই পছন্দ না। মাথার নীচে যখন হুট করে মাটি এসে পড়বে আর তার মুহুর্তেই আকাশে আছড়ে পড়াটা যে কি ভয়ংকর, সেটা সিন্থিয়া ছাড়া কেউ বুঝবে না। আর ড্যাডের সাথে পর পর দু বার চড়তে হবে। ড্যাডের ভাষায়,"পুরো মজা লুটেপুটে খাও!" এখানে খাবার কি আছে? মনে হচ্ছে ওর শরীরের ভেতরের সবকিছু বাইরে এসে পড়বে এক্ষনই। কি ভয়ংকর। লাইন যত ছোট হয় তত ওর বুকের ধুকফুকানি বাড়ে, এমন না যে লাইনে আর কোনো শিশু নেই। বরংচ পুরো লাইনে ওর বাবাই সবচেয়ে বয়স্ক ড্যুড। আর সবাই হয় তার মা বা বোন ছোট ভাইদের সাথে দাড়িয়ে আছে। একটা পিচকি শিশুর মুখে নিপল নিয়ে চুক চুক করে ঘুরছে। গায়ের পোষাকটাও পিংকিস। একটা পিচ্চি ড্যুড কিভাবে পিংকিস পরে ওর মাথাতেই ঢুকে না। নিশ্চয়ই ওর মা এর পছন্দ।
ওহ মা! গত বছরও মা ছিলো ওদের পাশে। মাকে জড়িয়ে ধরলে ভুড় ভুড় করে ল্যাভেন্ডারের সুগন্ধি। মা দাড়াতে পারছিলো না, তবু তার রোলারকোস্টারে ওঠা চাই। সেদিন ও শেষবারের মতো পিংকিশ প্রিন্সেস ফ্রক পড়েছিলো। তার ৬ মাস পরে ওর মা মারা যায়। ডাক্তার ড্যুড বলেছিলো মা এর বুকে একটা কিউট ফুটো হয়েছিলো। সেই কিউট ফুটোর জন্য মা ঘুমিয়ে পড়ে। তারপর থেকেই বাবা অন্যরকম হয়ে যায়। সব চুল সাদা হয়ে যায়। রাতের বেলা চিৎকার করে কাদতে থাকে। সিন্থিয়া জানে তাকে শক্ত হতে হবে। ও আর পিংকিশ পছন্দ করে না। টেডিটা ও নিজের জন্য কেনেনি। বাবাকে দেবে। রাতে বাবা সেটা জড়িয়ে ধরে ঘুমাবে আর ও ফেইরীটেলস বলবে। যদিও ও কোনো ফেইরী টেলস শেষ করতে পারে না। মাঝপথে বাবা হাইজ্যাক করে নিয়ে যায় গল্পটা আর ও তার আগেই ঘুমিয়ে যায়।
সিন্থিয়া অপেক্ষা করছে একদিন ও বড় হবে, বাবাকে পুরো ফেইরীটেলস শোনাবে। বাবা ড্যুডকে আর কাঁদতে দেবে না। বাবা এখন যেমন হাসছে তেমনি ও বড় হয়ে তাকে এমন হাসাবে। সিন্থিয়া হাতের মুঠো বন্ধ করে, চোখ দুটো বুজে শক্ত চোয়ালে বিড়বিড় করতে থাকে,"ইয়েস আই ক্যান..আমি পারি। আমিও পারি!" লাইনটা ক্রমশ শেষ হতে থাকে। আর দুজন পরেই সিন্থিয়া আর শাহেদের পালা রোলারকোস্টারে ওঠার!
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৫:১৬