প্রথম পর্ব আছিলো এই লিংকে। ক্লিক মাইরা পইড়া আসতে পারেন।
তো এই পোস্টে বরাবরের মতোই নিজের মুখ বন, কোনো মতামত দিমু না। খাড়ার ওপর রেফারেন্স থাকবে। রেফারেন্স ভিন্ন কোনো কথা বলা হবে না। যেহেতু তারা মানুষ, তাদেরও দোষ গুন থাকতেই পারে কিন্তু সে আলোচনাও বিতর্ক সাপেক্ষ।
*তাবারীর দ্যা হিস্টোরী অব আল তাবারী বইয়ের লিংক।
বরাবরের মতো এই পোস্টেও আমি কোনো ধর্মকে গালি বা কোনো ব্যাক্তিত্বকে খাটো বা কুৎসা রটনা করবো না। সীরাত তাফসীর, স হী হাদিসের বইয়ে যা আছে তা আনকাট তুলে ধরবো। পোস্ট বড় হতে পারে, কিন্তু আয়রন ক্লাড পোস্ট এবং সুষ্ঠু আলোচনা ও সঠিক তথ্যের প্রবাহ বজায় রাখার জন্য সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে। তারপরও কেউ যদি মনোঃক্ষুন্ন হয়ে থাকেন, কমেন্টে সুনির্দিস্ট করে লাইন বা প্যারাগ্রাফ তুলে ধরে নিজের মতামত জানাবেন। আলোচনা সাপেক্ষে সেটা অবশ্যই বিবেচনা করা হবে। প্রাসঙ্গিক আলোচনা অবশ্যই কাম্য। সময়ের দাম সবারই আছে। ব্লগে টাইম পাস করতে আসা মানে এই না যে সেসময়েরও দাম নেই।
এই পোস্ট পড়ার আগে একটা মেটাল শুনে মাথাটা ঠান্ডা করে নিতে পারেন
ঘাদিরে খুদুমের ঘটনা
জিলহাজ্ব মাসের ১৮ তারিখ নবী মোহাম্মদ তার সর্বশেষ হজ্ব শেষ করে মদিনার উদ্দেশ্যে মক্কা ছাড়ার প্রাক্কালে ঘাদিরে খুম নামের একটা জায়গায়, বর্তমানে যেটা জুহফা নামে পরিচিত, সেখানে গিয়ে দলসমেত থামলেন। এই জায়গাটা বিশেষ কারনে গুরুত্বপূর্ণ ভৌগলিক দিক থেকে যে হজ্ব শেষ করে তীর্থযাত্রীরা সবাই এখানে এসে সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে যে যার পথে ভাগ হয়ে যেতেন। সেদিন প্রচন্ড গরম ছিলো এবং এই স্থানে একটা পুকুর ছিলো। তখন নবী মোহাম্মদ সেখানে সবাইকে থামিয়ে ঘোষনা দেন যে আমার সময় কাছিয়ে এসেছে। আল্লাহর ডাক এসে পড়েছে এবং আমি তার ডাকে সাড়া দিতে বাধ্য। আমি তোমাদের জন্য দুটো মূল্যবান জিনিস রেখে যাচ্ছি এবং যদি তোমরা এই দুটো জিনিসকে ধরে রাখতে পারো, তাহলে তোমরা আমার পথ হতে বিচ্যুত হবে না। তার মধ্যে একটা হলো কোরান আরেকটা হলো আমার বংশধর বা আহ লুল বাঈত। এই দুটো জিনিস একে অপর হতে কখনোই বিচ্ছিন্ন হতে পারবে না যতক্ষন না তারা আমার কাছে বেহেশতের পুল সীরাত পর্যন্ত পৌছুবে।
তারপর নবী মোহাম্মদ বলতে থাকলেন," বিশ্বাসীদের ওপর আমার কি অধিকতর অধিকার নেই তাদের নিজেদের চেয়ে?" মানুষ জন কাঁদতে থাকলো এবং প্রত্যুত্তরে বললো অবশ্যই। তখন আলির হাত ধরে উপ্রে উঠিয়ে বললেন,"আমি যাদের মওলা, আলি তাদেরই মাওলা। হে ঈশ্বর! তোমরা তাদেরকে ভালোবাসো যে তাকে ভালোবাসে এবং তাদের প্রতি বিরূপ হও যে তার প্রতি বিরূপ হবে"।
এই হাদিসটি পাওয়া যাবে জামির আল তিরমিজি যেখানে সহী বলে উল্লেখ আছে।
মিশকাত আল মাশাবাহ যাকে আমরা বাংলায় মিশকাত শরীফ বলি তার ৫৫৭ নম্বর পেজে এর উল্লেখ আছে আল আলবানী তার আল সিলসিলাহ আল শাহীহাহ এর ১৭৫০ নম্বর হাদীসে এটিকে সহী হিসেবে উল্লেখ করেছে। ইবনে মাজাতে একে সহী হিসেবে উল্লেখ করলেও আবার অনেক প্রখ্যাত মুসলিম স্কলার যেমন বুখারী, ইব্রাহিম আল হারবী এটিকে আহাদীস বলে বর্ননা করেছেন। ইবনে তাহমীয়া তার মুনহাজে একে জঈফ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। অন্যদিকে আল জাজারী, আল শাফায়ী এই হাদিসটির অস্তিত্ব মেনে নিলেও মাওলার অর্থ শুধু বন্ধু হিসেবে দেখতে ইচ্ছুক। তবে এতে করে ঘাদিরে খুমের এই ঘটনার সত্যতা সম্পর্কে যতগুলো বইয়ের নাম পাওয়া যায় তেমনি তাতে অস্বীকার করার উপায় নেই যে নবী মোহাম্মদ আলীকে তার পরবর্তী বায়াতের হক দিয়ে গেছেন।
এই হাদিসের পরিপূর্ন অংশ থেকে এটাও জানতে পারি যে এই ঘোষনার পর আবু বক্বর, ওসমান, ওমর স হ সবাই আলিকে হাত নেড়ে অভিনন্দন জানান। এর দলিল পাওয়া যাবে মুসনাদ আহমাদ ইবনে হানবাল, ভলিউম৪, পৃষ্ঠা ২৮১; তাফসীর আল কাবীরে পৃষ্ঠা ৪৯-৫০, মিশকাত শরীফের ৫৫৭ পৃষ্ঠা, ইবনে জারীর আল তাবারীর কিতাবুল উইলিয়াহতে, ইবনে আবি শায়দার আল মুশানাফে। মুসনাদ ইবনে হানবালের বইয়ের পেজের ছবি দিলাম:
তবে এই ঘটনা যে ঘটেছে তার সবচেয়ে বড় রেফারেন্স হলো ইবনে কাথীরের এই তাফসীর। লিংকে ক্লিক করলেই জানতে পারবেন আলীকে কারা কারা সম্ভাষন করেছিলো।
এই ঘটনার কিছুদিন পরই নবী মোহাম্মদ ইন্তেকাল ফরমান।
ফাতিমা ও ফাদাকাহ
খন্দকের যুদ্ধে প্রায় বিনা কসরতে হস্তগত হওয়া খাদাক নামের বিশাল এক মরুদ্যান নবী মোহাম্মদের হস্তঘত হয় যা তিনি তার মৃত্যুর পর ফাতিমার কাছে দিয়ে যায় যাতে করে সে সেখান থেকে প্রাপ্ত সম্পদ দিয়ে তার জীবন ধারন করতে পারে।
সহী মুসলিমের ৪৩৫২ নম্বর হাদিস অনুসারে (হাদিসটি সুবিশাল বলে সংক্ষিপ্ত আকারে বর্ননা করলাম) উরওয়া বিন জুবাইর বর্নিত আয়শা থেকে জেনেছেন যে নবী কন্য ফাতিমা আবু বকরের কাছে ম্যাসেজ পাঠায় যে মদিনা ও ফাদাক হতে প্রাপ্ত অংশ এবং খাইবারের যুদ্ধ হতে প্রাপ্ত এক পঞ্চমাংশ যুদ্ধের মাল তাকে যেন ফেরত দেয়া হয়। আবু বকর বলেন যে নবী মোহাম্মদ বলেছেন যে নবীদের কোনো সম্পত্তি থাকতে নেই, আমরা সবই সদকা হিসেবে দান কে যাই। নবী মোহাম্মদের বংশধর এসব সম্পত্তি থেকে একটা অংশ দিয়ে জীবন নির্বাহ করবে কিন্তু আল্লাহ জানে, আমি নবী মোহাম্মদের নিজ হাতে করা সদকার মালিকানা বদল করতে পারবো না। আমি তাই করবো যা নবী মোহাম্মদ জীবিত থাকতে করে গেছেন। তাই আবু বক্কর ফাতেমাকে কিছু দিতে অস্বীকার করেন এবং ফাতিমা তাতে রাগান্বিত হন। ফাতিমা আবু বকরের মুখ আর দেখেননি এবং তার মৃত্যু পর্যন্ত বক্করের সাথে কথা বলেননি। যখন তিনি মারা যান, তার স্বামী আলি তাকে রাতের আধারে কবর দেন। তিনি আবু বকরকে খবরও দেননি এবং তার জানাজা নিজে সম্পন্ন করেন।
স হী বুখারীর ৩২৫ নম্বর হাদিসে আছে: উক্ত হাদিসেও একই বর্ননা তবে যেসব তথ্য উল্লেখিত "নবীর মৃত্যুর ৬ মাস পর্যন্ত ফাতিমা জীবিত ছিলেন। তিনি আবুবক্করকে নবী মোহাম্মদের খাইবার এবং ফাদাকে রেখে যাওয়া সম্পত্তি ও মদিনার সম্পত্তির ব্যাপারে জিজ্ঞেস করতেন। আবু বক্কর তাকে দিতে অস্বীকার করতেন এবং বলতেন যে আমি নবী মোহাম্মদের রেখে যাওয়া কোনো কিছুই সে দিতে পারবে না কারন সে ভয় পায় যে এতে করে মোহাম্মদের নিয়ম ভঙ্গ করা হবে এবং তাতে করে সে তার পথ থেকে বিচ্যুত হবে। পরে উমর মদীনার সদকা করা সম্পত্তি আলি ও আব্বাসকে দেয়, কিন্তু খাইবার ও ফাদাক নিজের জিম্মায় রাখে এবং বলে এই দুই সম্পত্তি সাদকার অংশ যা কিনা নবী মোহাম্মদ তার নিজস্ব চাহিদায় ব্যায় করতেন এবং যুদ্ধের প্রয়োজনে ব্যাবহার করতেন। এখন এসবের দায় দায়িত্ব শাসকের ওপর বর্তায় (আজ জুহরী বলেন সেগুলো ওভাবেই রক্ষনাবেক্ষন করা হতো আজকে পর্যন্ত)
তার মানে উপরোক্ত স হী হাদিস থেকে প্রতীয়মান যে ওমর পরে মদীনার সদকা করা কিছু সম্পত্তী আলির কাছে ছেড়ে দিলেও ফাদাক কখনো ছাড়েননি। তার ওপর ওমরের বক্তব্য আর বক্করের বক্তব্যে বিশাল একটা ফাঁক আছে যেখানে ওমর বলছেন যে ফাদাক থেকে অর্জিত সম্পত্তি দিয়ে নবী মোহাম্মদ তার পারিবারিক ব্যায়ভার মেটাতো সেখানে বক্কর বলছেন যে নবী মোহাম্মদের সব সম্পত্তির তার ওপর বর্তায় যে কিনা মোহাম্মদের স্থলাভিসিক্ত হবে এবং তিনিই ভোগ করার অধিকার রাখে। তিনি নিজেকে মোহাম্মদের স্থলাভিষিক্ত বলেই ভাবতেন।
সমস্যা হলো ফাদাক কোনো মালে ঘনিমাহ নয় কারন খন্দকের যুদ্ধে ইহা বিনা লড়াইয়ে হস্তগত হয়, বরংচ বিনা যুদ্ধে অন্যান্য গোত্রের পারস্পরিক সমঝোতায় এটা মোহাম্মদের অধিকারে আসে বলে এটা হলো ফাই। এই ফাই এর ব্যাপারটা সুনানে নাসাঈ এর ৪১৫৩ নম্বর হাদিসে পাওয়া যায়।
এদিকে নবী মোহাম্মদ জীবিত থাকতে ফাতিমা সম্পর্কে বলে গেছেন যে ফাতিমা আমারি অংশ এবং ফাতিমাকে যে রাগাবে সে আমাকে রাগাবে। এই স হী হাদিসটি বুখারীর ৬১ নম্বর
অনেকেই ফাতিমার অসুস্থতার সময় আবু বক্কর দেখতে আসার হাদিসটি নিয়ে কথা বলবেন যেটা কিনা বর্নিত সুনানে বায়হাক্বীর ৩০১ নম্বর হাদিস এবং সুনান আল কুবরা, দালাইল আল নুবুয়া ও দাহাবীতে বর্নিত। এখানে একজন শুধু একে মুরসাদ সহী মানে কারন এর চেইন তাবেঈ পর্যন্ত পাওয়া যায়, সাহাবী নয়। বাকী সবাই একে হাসান বলে অভিহিত করছে।
সাকীফা
নবী মোহাম্মদ যখন মৃত্যু শয্যায় তখন ১৮ বছর বয়সী উসামা বিন জায়েদকে সেনাপতি বানিয়ে তাকে মুতাহর যুদ্ধে পাঠানোর হুকুম দেন। স হী বুখারীতে বর্নিত সালিমের পিতা বলেন যে নবী মোহাম্মদ উসামাকে সেনাপতি নিযুক্ত করেন সিরিয়া পাঠানোর জন্য। মুসলমানরা তার বিপক্ষে কথা বলে উঠলো। নবী মোহাম্মদ বললেন যে আমাকে বলা হয়েছে তোমরা উসামার সম্বন্ধে কথা বলছো। এটা জেনে রাখো যে সকল মানুষের মধ্যে সে আমার সবচেয়ে ভালোবাসার মানুষ।
স হী বুখারীর আরেক হাদিসেবর্নিত আব্দুল্লাহ বিন উমার হতে, নবী মোহাম্মদ উসামাকে সেনাপ্রধান হিসেবে নিযুক্ত করলেন। সবাই এর সমালোচনা করা শুরু করলো। নবী মোহাম্মদ উঠে দাড়ালেন এবং বললেন যে যারা তোমরা ওর সমালোচনা করো , তোমরা তো ওর বাবার নেতৃত্বেরও সমালোচনা করতে। আল্লাহর কসম, উসামা এই নেতৃত্বের যোগ্য এবং সে আমার খুব পছন্দের একজন এবং এর পরে তার পুত্র আমার খুব পছন্দের একজন মানুষ।
এখন এই সময়টার ব্যাপারে সুন্নী স্কলার বা থিওলোজিয়ানদের কোনো উচ্চবাচ্য না থাকলেও শাফী মাযহাবের স্কলার মোহাম্মদ শারিস্তানির লেখা কিতাবাল মিলাল আন নিহাল বইতে বর্নিত যে নবী মোহাম্মদ বলেন যে উসামার বাহিনীকে এখনই বেরুতে হবে। আল্লাহ যেন তাদেরঅভিশাপ বর্ষন করে যারা এর বরখেলাপ করবে।
এখন প্রশ্ন আসতে পারে এই বিরোধীতাকারীরা কারা ছিলো? দুটো বইতে আবু বকর ও ওমরের নাম যুক্ত আছে যারা এই বিরোধিতাকারীদের মধ্যে ছিলো এবং উসামা তাদের ছাড়াই তার অভিযান চালু করেছিলো। বই দুটোর একটি হলো মোহাম্মদ শারিস্তানির লেখা কিতাবাল মিলাল আন নিহাল আরেকটি হলো আল জুরজানির শার আল মাওয়াকীফের ভলিউম ৮। সমস্যা হলো বই গুলো আরবীতে। ইংলিশ ভার্সন পাওয়া যায়নি কিন্তু তাদের রেফারেন্স শিয়াদের বিভিন্ন বইতে পাওয়া যায়। আবার শিয়ারা যে মিথ্যাচার করছে সে বিষয়ে সুন্নী স্কলারদের তেমন কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। বরংচ যে বক্তব্য পাওয়া গেছে সেটা হলো আবু বকর যেতে রাজী হয়নি কারন নবী মোহাম্মদ অসুস্থ বিধায় পুরো মদিনা নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়বে এই ছুতোতে।
আবু বক্কর ও ওমর স হ অন্যান্য সাহাবীদের উসামার নেতৃত্বে না যাওয়ার কারনে নবী মোহাম্মদ বলেন যে হে আরববাসী! তোমরা এতটাই নিষ্ঠুর কারন আমি ওসামাকে তোমাদের জেনারেল নিযুক্ত করেছি এবং তোমরা তার যুদ্ধের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছো। আমি জানি যে তোমরা সেই একই লোকজন যারা কিনা তার বাবার সম্পর্কেও প্রশ্ন তুলেছো। খোদার কসম, যে ওসামা তার বাবার মতো জেনারেল হবার জন্য যোগ্যতা সম্পন্ন। উল্লেখ্য উসামার বয়স ছিলো মাত্র ১৮ এবং তার বাবা একজন মুক্ত দাস ছিলো।
এর একদিন পরই নবী মোহাম্মদ মারা যান,তারিখ নিয়ে শিয়া সুন্নী উভয় স্কলারদের মধ্যে মতভেদ থাকলেও দিনটি ছিলো সোমবার। তার মরার খবর খুব দ্রুত মদিনায় ছড়িয়ে পড়ে। তো নবী মোহাম্মদের লাশ সৎকারের জন্য আলী তার স্ত্রী এবং কিয়দ সাহাবী তার দাফনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন অপরদিকে মদিনার আনসার, খাজরাজ ও আউস গোত্র সাক্বীফা বানু নামক জায়গায় মিলিত হয়ে ভবিষ্যত নেতৃত্ব নিয়ে বাতচিত করতেছিলেন।
তাবারীর তারীখ আল তাবারীর ১০ নম্বর ভলিউমের পৃষ্ঠা নম্বর ৩ এ গেলে পাবেন," উমর নবী মোহাম্মদের ঘরের দরজার সামনে এসে ভেতরে না ঢুকে আবু বক্করের কাছে একটা ম্যাসেজ পাঠালেন,"দ্রূত আসেন, আপনার সাথে জরূরি কাজ আছে।" আবু বক্কর তাকে উত্তরে জানালেন তার সময় নাই। উমর আবার ম্যাসেজ দিলেন যে আমরা একটা জটিল সমস্যার সম্মুখীন হইছি, আপনার উপস্থিতি জরুরী।"
এছাড়া ইবনে হিশামের বইতে আছে যে যখন ওমার আর বক্কর জানতে পারলো নবী মারা গেছে, ওমার বক্করকে বললো যে চলেন যাই এবং দেখে আসি আনসাররা কি করেতেছে দেখে আসি? নবীর লাশ ঘরেই পড়েছিলো এবং তাবারী অনুসারে ওমার আর বক্কর আলিকে তার শয্যার পাশে রেখে চলে গেলো এবং সাকিফার উদ্দেশ্যে যাত্রা করলো। রাস্তায় তারা আবু উবায়দা জর্রার সাথে দেখা করলো এবং একসাথে সবাই সাকীফার উদ্দেশ্যে রওনা হলো। আবু ধোয়াইব হোদাইবী বর্নিত তিনি যখন মদিনা পৌছালেন তখন দেখলেন সবাই মোহাম্মদের মৃত্যুতে বিলাপ পারছে। তখন জিজ্ঞেস করলেন বাকি সবাই কোথায় উত্তরে আসলো সবাই নাকি সাকীফায় জড়ো হয়েছেন। তিনি যখন তার ঘরে পৌছান তখন তার ঘরের দরজা বন্ধ ছিলো এবং জানানো হলো তার লাশের পাশে পরিবার পরিজন ঘিরে আছে। পরিবারের মধ্যে ছিলেন তার চাচা আব্বাস, আলি, ফাদল বিন আব্বাস, কাথম বিন আব্বাস, ওসামা বিন হারীথ তার দাস সালেহ। মোহাম্মদ তাকে শুধু একটা শার্ট পড়িয়ে লাথল, ফাদল ও আব্বাসের সাহায্যে তুলে পাশ ফিরিয়ে গোসল করালেন।ওসামা আর সালেহ পানি ঢাললেন এবং আলি নিজ হাতে তাকে ধৌত করালেন। আউস বিন খাওয়ালী আনসারী পাশে দাড়িয়ে শুধু দেখছিলেন।
স হী বুখারীর এই হাদিস অনুসারে জানা যায় ওমর কিভাবে বক্করের খলিফা হওয়াকে জনসম্মুখে পেশ করে তার জন্য সবাইকে উদ্বুধ্ব করেন এবং বক্কর তার ভাষনে কি বলে নিজের খলিফার দাবীকে হালাল করেন। হাদিসটি বিশাল হওয়ায় তর্জমায় গেলাম না।
ফাতিমার ঘরে ওমরের আক্রমন
সাক্বিফা চলাকালীন সময়ে সহী বুখারীর এই হাদিস অনুসারে উমার বলেন যে এবং কোনো সন্দেহ নাই যে নবির মৃত্যুর পর আমরা জানতে পারি যে আনসারেরা আমাদের সাথে মতপার্থক্যে অবতীর্ণ হয়েছে এবং বানি সা'দা ছাদের নীচে জড়ো হয়েছে। আলি এবং জুবাইর এবং যারা তার সাথে আছে, আমাদের বিরুদ্ধাচারন করেছে যেখানে হিজরতকারীরা আবু বক্করের সাথে রয়েছে। এই ঘটনার বর্ননা তাবারীর ভলিউম ৯ এ ১৯২ নম্বর পেজে আছে। হিশামের সীরাতের ৩০৯ নম্বর পেজে আছে। উমার ফাতিমার ঘরের দরজার সামনে যায় এবং বলে যে আল্লাহর কসম, আমি এই ঘর তোমার ওপর জ্বালিয়ে দেবো যদি না তোমরা ঘর থেকে বেরিয়ে আসো এবং আমাদের জোটে অন্তর্ভুক্ত না হও। তাবারীর ভলিউম ১ পৃষ্ঠা নম্বর ১১১৮-১১২০, কুতায়বার এই বইয়ের পৃষ্ঠা ৩ এ এই বর্ননা আছে। তাবারীর ভলিউম ৯ পৃষ্ঠা নম্বর ১৮৬-১৮৭ অনুসারে জুবাইর ইবনে আল আওয়াম যে কিনা আলীর ঘরে ছিলো, সে উন্মুক্ত তরবারী নিয়ে ছুটে আসলো কিন্তু লেকিন বাট কিছু একটার সাথে গুতো খেয়ে পড়ে গেলো। পরে উমরের সাথে থাকা সাথীরা তার ওপর ঝাপিয়ে পড়ে উত্তম মধ্যম দিলো। জুবাইর যখন তলোয়ার নিয়ে ছুটে আসছিলো তখন তার মুখের ডায়লগ ছিলো আমি আমার তলোয়ার খাপবন্দি করবো না যতক্ষননা এই জোটের নেতৃত্বে আলি থাকবে। যখন বক্কর আর ওমর তা শুনতে পেলো, সবাইকে বললো ওকে পাথর দিয়ে আঘাত করো এবং তলোয়ার কেড়ে নাও। এরপর বর্নিত আছে যে উমার ফাতিমার ঘরের দরজার দিকে দৌড়ে গিয়ে তাদের ওপর জোর করে বলতে লাগলো হয় জোটে শরীক হও নাইলে পালাও।
আবার ইবনে কুতায়বার আল ইমামাহ ওয়াহ আল সিয়াসাহ এর পৃষ্ঠা ৩ ও ১৯-২০ অনুসারে ওমর ফাতেমার দরজার সামনে দাড়িয়ে বলতে থাকলো যে আমি জানি আল্লাহর নবী তোমার চেয়ে অন্য কাউকে বেশী ভালোবাসেনি, কিন্তু এটা একান্তই আমার সিদ্ধান্ত যেটা থেকে কেউ টলাতে পারবে না। যদি এই মানুষগুলো তোমার ঘরে অবস্থান করে তাহলে আমি এই ঘর জ্বালিয়ে দেবো। এরপর ওমার একটা কাঠ হাতে নেয়, এবং তারপর ঘরের ভেতর যারা আছে তাদের উদ্দেশ্য করে বলে আল্লাহর দোহাই যার হাতে আমার আত্মা, তোমরা যদি ঘর হতে বের না হও, আমি ঘরে আগুন দেবো। তারপর ওমরকে জানানো হলো ফাতিমা ঘরের ভেতর তখন সে বলে যে তাতে কি? ঘরের মধ্যে কে আছে এটা আমি পরোয়া করি না।
আল শাহারাস্তানীর আল মিলাল ওয়া আল নীহালের বর্নিত এরপর উমর ও তার সঙ্গি সাথী তাদের ঘরে আগুন লাগিয়ে দেয় এবং তারা ফাতেমাকে দরজা ও ওয়ালের চীপায় ফেলে চাপা দেয় এবং তার পেটের বাচ্চা মহসীনের মিসক্যারেজ ঘটায় ফেলায়। এ অবস্থায় উন্মত্ত ওমার বলতে থাকে ফাতিমার ঘর জ্বালিয়ে দাও এবং যারা এর ভেতর আছে তাদেরকেও। এই ঘরের ভেতর আলি, তার পুত্র হুসেন ও ফাতেমা ছিলো। পরে আলি বের হলে তার গলায় দড়ি দিয়ে টেনে আনা হয়। সুন্নী ইতিহাস বিদ আল সাফাদী, সালাাউদ্দিন খলিলের ওয়াফি আল ওয়াফিয়াত বইতেও ফাতিমার মিসক্যারেজের কথা উল্লেখ আছে।আরেক সুন্নী ইতিহাসবিদ আবুল হাসান আলি ইবনে আল হুসাইন আল মাসুদীর ইসবাত আল ওয়াসিয়াতেও একই ঘটনার উল্লেখ আছে।
ঘরের বাইরে কি হয় এ নিয়ে সুন্নী স্কলার ও ইতিহাসবিদরা রহস্যজনকভাবে নিশ্চুপ এবং ক্ষেত্রবিশেষে প্রথিতযশা ইসলামিস্টরা পুরো ঘটনাই অস্বীকার করে। আমি নীচে সংক্ষেপে যে ঘটনাগুলো বর্ননা করলাম এগুলো সব শিয়াদের বই থেকে পাওয়া। আমি সেসব কিছু বইয়ের নাম ও পৃষ্ঠা নম্বর দিয়ে দিচ্ছি। যোগাড় করে পড়া বা বিশ্বাস করা বা না করা সম্পূর্ন পাঠকের ওপর।
ইলমুল ইয়াকীন লিখেছেন আল ফায়েদ ভলিউম ২ পৃষ্ঠা নম্বর ৬৭৭, সীরাতুল আইম্মাহ ইসনা আশার ভলিউম ১ পৃষ্ঠা ১৪৫, ওয়াহী মুদ্রাক পৃষ্ঠা ১৭৮/১৭৯ ও পৃষ্ঠা ৪০৭, বাহারুল আনওয়ার ভলিউম ৫৩, পৃষ্ঠা ১৩। তাফসীরুল আইয়াশি ভলিউম ২ পৃষ্ঠা ৬৭। ইলমুল ইয়াকিনে বিস্তারিত পাওয়া যাবে তাকে কিভাবে দরজার চীপায় ফেলে এবং এক পেরেকের আঘাত বুকে লাগে পরে কুনফুজের আঘাতে বুকের পাজড়ের হাড় ভেঙ্গে যায়। তার চোক আর হাত কিভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয় সেটারও বর্ননা পাওয়া যায়। আরও বর্ননা পাওয়া যাবে আল হিজাজ পৃষ্ঠা ২৭, দালায়েলুল ইমামাহ ভলিউম ২, বাহারুল আনওয়ার ভলিউম ৩০ পৃষ্ঠা ২৯৪ স হ অসংখ্য বইতে এই বর্বরতার কাহিনী বলা আছে। কিন্তু আবারও বলছি এগুলো সব শিয়াদের বই।
ওমর আর তার স হযোগীরা আলীকে গলায় দড়ি দিয়ে টানতে টানতে নিয়ে যাবার সময় ফাতেমা তাদের কাছে হাতজোড় করে বলে আমি আলিকে এভাবে নিয়ে যেতে দেবো না কারন এটা নিষ্ঠুরতা এবং অন্যায়। তোমাদের ওপর ঘৃনা বর্ষিত হোক, হে মানুষেরা! কিভাবে তোমরা এত দ্রুত আল্লাহ ও তার নবীর সাথে সম্পর্কের কথা ভুলে গেলে! ওমর তারপর কুনফুজকে ফাতিমাকে চাবুক মারা নির্দেশ দেন। কুনফুজ ফাতিমাকে এমন জোরে ধাক্কা দেয় যে তার বুকের হাড় ভেঙ্গে যায় তারপর কুনফুজ তার পিঠে ও হাতে চাবুক মারে। খালিদ বিন ওয়ালিদ ফাতেমাকে তরবারী দিয়ে আঘাত করে। মোঘায়রাহ ইবনে শোবানও তাে তলোয়ার দিয়ে আঘাত করে।
ফাতিমার মৃত্যু ও কিছু হাদীস:
এর ৬ মাস পর ফাতিমার মৃত্যু ঘটে এবং সহী বুখারীর এই হাদিস অনুসারে ফাতিমার এই রাগ ছিলো তার মৃতুর আগ পর্যন্ত এবং আলি সে কারনে তাকে রাতের বেলা দাফন করে।তাবারী বর্নিত ফাতেমার শেষ ইচ্ছা ছিলো এটাই। পরে আলি সব রাগ ভুলে গিয়ে আবু বক্করের সাথে সমঝোতা করে এবং তার জোটের সাথে যোগ দিতে সম্মত হয়।
তাবারীর ভলিউম ৩ এর ৪২৯ পৃষ্ঠায় বর্নিত আবু বক্করের মৃত্যুর সময় তিনটি ব্যাপারে অনুশোচনা করেন সে তিনটি কাজের মধ্যে একটি হলো ফাতিমার ঘরের অসম্মান ও ফাতেমাকে যদি সে অবস্থায় ছেড়ে দেয়া হতো।
উক্ত ঘটনার বর্ননা তারিখ ইয়াকুবীর ভলিউম ৩ পৃষ্ঠা নম্বর ১৩৭ এ আছে।
প্রশ্ন: যদি আলী ও ফাতিমার সাথে এত বড় অন্যায় হয় তাহলে কুলসুমের সাথে উমরের বিয়ে দেয় কিভাবে?
এ ব্যাপারে ইবনে সা'দের আল তাবাকাত আল কুবরার ভলিউম ৮ পৃষ্ঠা নম্বর ৩৩৮ এ যে বর্ননা পাওয়া যায় সেখানে দেখা যায় আলী তার মেয়ের ব্যাপারে জাফরের সন্তানের সাথে আগেই কথা দিয়ে রেখেছিলেন সেখানে উমরের মুখের কথায় সে ওয়াদা ভঙ্গ করাটা আশ্চর্য্য দেখায়। তবে এই হাদীসের রেয়াত তাবেঈ পর্যন্ত সমস্যা এখানেই।
সেক্ষেত্রে কিতাবাল আল কাফির কিতাবান নিকাহতে বর্নিত
আলি ইবনে ইব্রাহিম> তার বাবা ইবনে আবি উমাঈর হতে> হিশাম ইবনে সালিম এবং হাম্মাদ> জুরারাহ থেকে বর্নিত ইমাম জাফর আস সাদিক কুলসুমের বিয়ের ব্যাপারে বলে যে ঐ মহিলাকে আমাদের থেকে জোর করে নিয়ে যায় (ফুরু আল কাফি। ভলিউম ৫ পৃষ্ঠা ৩৪৭, দার আল আদওয়া)
মুহাম্মদ ইবনে আবি উমাঈর> হিশাম ইবনে সালিম বর্নিত যে ইমাম জাফর আস সাদিক বলেন যখন উমর আমিরুল মুমিনের কাছে প্রস্তাব করেন সে বলে কুলসুম একটা শিশু। তারপর সে আব্বাসের সাথে দেখা করে এবং বে যে আমার কি সমস্যা? আমার সাথে কি কোনো সমস্যা আছে? আব্বাস জিজ্ঞেস করে কেন? উমার উত্তরে বলে যে আমি তোমার ভাস্তির জন্য প্রস্তাব করেছিলাম বিয়ের জন্য কিন্তু আলি প্রত্যাখ্যান করে। ওহ, খোদার কসম, আমি পৃথিবীতে জমজমের পানি দিয়ে ভরে ফেলবো, আমি তোমার প্রতিটা সম্মান ধ্বংস করে ফেলবো এবং আমি দুজন সাক্ষী দাড়া করবো যে তুমি চুরি করেছো যার জন্য আমি তার ডান হাত কেটে ফেলতে পারি। আব্বাস এটা শুনে আলির কাছে এসে এর পরিনতি সম্পর্কে বে। সে আলিকে এই ব্যাপারটা তার হাতে ছেড়ে দিতে বলে এবং আলি তাতে রাজী হয়। (ফুরু আল কাফি, ভলিউম ৫, পৃষ্ঠা ৩৪৮)
যদিও উমার মারা যাবার সাথে সাথে কুলসুম সে বাসায় তার ইদ্দত পালন করতে পারেনি। আলি এসে তাকে সাথে সাথে তার বাসায় নিয়ে যায়।
প্রশ্ন: কেন আলি তার সন্তানের নাম উমর রেখেছিলেন?
এটা যে খলিফা ওমরের নামেই রেখেছিলেন তা নাও হতে পারে। তখন ওমর নামে ২৩ জন সাহাবী ছিলেন যার মধ্যে একজন ছিলেন ওমার বিন সালমা আল কুরাশি যে কিনা উম্মে সালমার পুত্র যাকে স্বয়ং নবী মোহাম্মদ কোলেপিঠে করেই মানুষ করেছিলেন এবং উটের যুদ্ধে তিনি আলির পাশাপাশি লড়েছিলেন। এছাড়া কোথাও উল্লেখ নেই আলির বয়ানে যে তার সন্তানের নাম উমার খলিফার নামেই রেখেছিলেন। এখন হয়তো পাল্টা প্রশ্ন হতে পারে তাহলে আরেক সন্তানের নাম উসমান রাখা হলো না কেন? সেক্ষেত্রে আলির বয়ান ছিলো উসমান নামটা সে নিয়েছে উসমান বিন মাজুনের কাছ থেকে। তো এখানে আসলে যুক্তির শেষ নেই বলে এটাও কোনো শক্ত কারন হতে পারে না।
***পোস্টে ভুল ভ্রান্তি বা রেফারেন্স নিয় সংশয় থাকলে অবশ্যই আলোচনা করা যেতে পারে। পোস্টে আমি নিজের মতামত প্রদানে বিরত থাকার চেষ্টা করেছি। চেস্টা করেছি দু পক্ষের যুক্তি তুলে ধরতে। এখানে দু পক্ষ বলতে শিয়া এবং সুন্নী।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই মার্চ, ২০১৯ ভোর ৫:১৫