somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চল যাবো তোকে নিয়ে...

০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১০ দুপুর ১২:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শিরোনামটা কি হবে ভাবছিলাম। শেষমেষ একটা গানের শিরোনামকেই বেছে নিলাম...

আগে একটা গল্প বলি!
ক্লাস শেষ করে আসার পথেই খবর পেলাম আমার সহধর্মীনির লেবার পেইন উঠেছে! এমন একটা সময়...কোথাও গাড়ী পাচ্ছি না! রাত বাড়ছে...ব্যাথাও বাড়ছে। জোর করে একটা ট্যাক্সিক্যাবকে থামালাম। আমি তখন রেকলেস...ডেসপারেট! আমি যখন গাড়ী ঠিক করছি তখন দেখি আরও তিনজন লোক গুটি গুটি পায়ে আমার চারপাশে ভীড় করেছে। আমি ভড়কে গেলাম। উনারা যেতে চান গাবতলী। গাড়ী পাচ্ছেন না বিধায় শেয়ার করে যাবেন। আমার কপালে তখন দুশ্চিন্তার ভাঁজ!

মনে মনে বললাম...ঠিক আছে দেখি কি হয়! অনেক জ্যাম ঠেলে গাড়ী যাচ্ছে। এরই মধ্যে ঘন ঘন আপডেট আসছে। আমার জন্য সবাই বসে আছে। সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে সবাই। আমার সাথে বাকী তিনজন বেশ আরাম করে বসেই যাচ্ছে...আর গল্প করছে। সেল ফোনে আমার কথা শুনে একজন বললেন..."ডেলিভারী কেস নাকি ভাই?" গম্ভীরভাবে ইতিবাচক ভঙ্গি করলাম। তারপর দেখি আমার হয়ে উনারাই চালককে বকা দিয়ে গাইড করছে। এমনকি নামার সময় উনারা আমাকে ভাড়া শেয়ার করে দিলেন না। বললেন..."খরচতো ভাই মাত্র শুরু হল! এখন থাকুক...আমরা চলে যাই!"

২. হসপিটালের সিঁড়ির উপর বই নিয়ে বসে আছি। পরদিন আমার MIS পরীক্ষা। শীতে কাঁপছি। টেনশনে আর শীতে বইয়ের লেখাগুলিকে ঝাপসা দেখাচ্ছে। সে রাতে আর কিছু হয় নি। কিন্তু ঘটনা ঘটলো ঠিক যখন আমি পরীক্ষা দিতে বসেছি তখন! মোবাইল বন্ধ করে রাখার নিয়ম ছিল...কিন্তু আমারটা ছিল সাইলেন্ট। পর পর দুইবার বাথরুমে যাওয়ার নাম করে ফোনে কথা বললাম। এরপর সারেন্ডার করে খাতা জমা দিয়ে আধাঘন্টা আগেই পরীক্ষা শেষ করলাম। রওনা দিলাম আল্লাহর নাম নিয়ে। ঠিক দুবছর আগের কথা! মনে হয় এইতো সেদিন!

৩. যাকে নিয়ে বা যার জন্য এত কথা সে আমার কোলে এখন। ঠিক দুই বছর আগে আমার কোলে এসেছিল। এখনও আমার কোল ছাড়তে চায় না আমার ছেলে। সে, তার মা আর আমাকে জন্মের সময়তো বটেই...তারও আগে থেকেই জ্বালাচ্ছে। এখনও মুখ বুজে তার সমস্ত অত্যাচার সহ্য করি। অত্যাচারের নমুনা দেই...
.... আমার অনেক খাটুনির ফসল দুই দুইটা টার্ম পেপার তার পেশাবের তোড়ে ভেসে গিয়েছে!
.... সে মন চাইলেই বমি করতে পারে। বমি লাগানো শার্টের উপর ব্লেজার চাপিয়ে আমি গোটা একটা দিন ওয়ার্কশপ এটেন্ড করেছি!
.... তিনবার আমার টিভির রিমোট ড্রেনে ফেলে দিয়েছে।
.... মাথা দিয়ে গুতো দিয়ে আমার নাক ভেঙেছে। প্রচুর রক্তপাত হয়েছিল।

৪. কিন্তু তারপরেও আমি ওর নেশায় আসক্ত। আমি যেন আমার ছায়া দেখতে পাই ওর মাঝে। ও হাঁটা শেখার আগে দৌড়াতে শিখেছিল, কথা বলতে শেখার আগে গান গাইতে শিখেছিল! সংস্কৃতির উপর ওর অনেক ঝোঁক!

.... ও প্রথম শোনে রবীন্দ্র সঙ্গীত! "ফুলে ফুলে ঢোলে"! শাহানা বাজপেয়ীর গাওয়া। এটাই ওর ঘুম পাড়ানী গান।
.... এরপর শোনে সনু নিগাম! ও হয়ে পড়ে সুর প্রচন্ড রকম সুর আর মেলোডি ভক্ত। টেষ্ট করার জন্য ছাড়লাম Subraminum আর Steffen Grappili। ভালমত হজম করে আবারও শুনতে চায়! ত্যাঁদড়! এরপর ছাড়লাম জেমস, সেকি তার কান্না। আজম খানে আর হাত দিতেই পারলাম না। (আল্লাই জানে ইভা রহমানরে সামনে পাইলে কি করবো?)
.... ইংলিশ গানে রিয়্যাকশন কেমন হয় এটা দেখার জন্য আমার তর সইছিল না। ভয়ে ভয়ে ছাড়লাম Jenny's gotta gun! কিছু বলেনা হাসে। বুঝলাম এই গানের groove তার পছন্দ হয়েছে। এরপর ছাড়লাম Twisted Sister...মুখ বাঁকা করে ফেললো। চিন্তায় পড়লাম! এরপর দিলাম Creed...মাউস দিয়ে মাথার মধ্যে ধাঁই করে এক ঘা! আমি দেখতে পাইনি কারন আমি তখন গানের ভিতর ডুবে গিয়ে চোখ বন্ধ করে মজা নিচ্ছিলাম!
চিন্তায় পড়ে গেলাম কম্বিনেশান কি করে বানানো যায়। groove, melody, rock, quantization, mystery...
দিলাম "Falling into Infinity"!!! অভাবনীয় সাড়া পেলাম! সব কিছুই আছে এক এলবামে। ফানও কম নেই। চলুক তাহলে...

দেখা যাক ওর প্রিয় তালিকাঃ

প্রিয় গানঃ
তালিকাটা ক্রমশঃ দীর্ঘ হচ্ছে। খুব সাবধানে চরতে হবে এখন থেকে। সুর আর কোয়ালিটির সাথে কোন আপোষ করা যাবে না।

ফুলে ফুলে ঢোলেঃ শাহানা বাজপেয়ী
'নিথুয়া পাথারে' ও 'আমার সোনার ময়না পাখি'
দ্বিধাঃ হাবিব ফিচারিং ন্যান্সি
'গজনী'
Falling into Infinity: Dream Theater
Jennys gotta gun: Aerosmith
Summer of 69: Brayan Adams
তবে ওর প্রথম শোনা প্রিয় এ্যালবাম হলো Rock On!

PINK Floyd শোনে কিন্তু সম্ভবত ও বোঝে না। তবে ওর কাছে যেটা ভাল লেগেছে বলে মনে হল সেটা 'Young Lust'। এটা ভাল লাগার একটা কারন হতে পারে বেজ লাইন নিখুঁত বলে। খুবই গ্রুভি।

প্রিয় মুভিঃ
এই তালিকাটাও ধীরে ধীরে দীর্ঘ হচ্ছে! ও প্রথম দেখেছিল 'Ratatouille'!
'লিংগুইনি' ওর প্রিয় চরিত্র। এছাড়াও আছে Kunfu Panda, Rock On, Gajhini.

PINK Floyd মুভিটি ও দেখতে চায় না কোনো এক অজানা কারনে। কেবল একটি দৃশ্য মনে হয় ওর চিত্ত চাঞ্চল্য ঘটায়! সেটা হল ভুরু শেভ করার দৃশ্যটি। ও বলে ...হাঁওমাঁও!!!


প্রিয় খাবারঃ
সমুচার চামড়া, লেইস চিপসের উপরে থাকা মশলা (চেটে খায়), রুই মাছ ভাজা, বেগুন ভাজা, লেবু, যে কোন আচার, যে কোন সস!

প্রিয় কার্যক্রমঃ
দৌড়ানো, বাংলা চ্যানেলের এ্যাডের সাথে নাচা, কামড় দেয়া, লাঠি হাতে পেলে দৌড়ানী দেয়া।

প্রিয় মানুষ /প্রানী/ চরিত্রঃ
বেলুনওয়ালা, মুড়িওয়ালা, কাক, কুকুর, হাঁস, হাতী!

প্রিয় বইঃ
রসালো (ছিড়তো পারে তাড়াতাড়ি)

প্রিয় বিনোদনঃ
এ্যাড দেখা এবং সাথে মুড়ি খাওয়া, আমার কাঁধে ওঠা, মাকে চুমু দিয়ে ভিজিয়ে দেয়া, মেঝে ঝাড়ু দেয়া ও মোছা!

৫. আমি আসলে দারুন ভীতির মধ্যে আছি ওকে নিয়ে। অনেক Sensitive একটা মানুষ হয়ে উঠবে না তো আবার! আসলে আমিই তৈরী নই।

এখনকার জমানা বড় কঠিক জমানা। ঠেকে ঠেকে শিখবে হয়তো!

আপনারা সবাই দোয়া করবেন যেন ওকে নিয়ে বহুদুর যেতে পারি।

আজই ওর জন্মদিন!!!







HAPPY BIRTHDAY to my son AARAB
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১০ দুপুর ২:৩৩
৬১টি মন্তব্য ৩৯টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদী নামের এই ছেলেটিকে কি আমরা সহযোগীতা করতে পারি?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১০:০৪


আজ সন্ধ্যায় ইফতার শেষ করে অফিসের কাজ নিয়ে বসেছি। হঠাৎ করেই গিন্নি আমার রুমে এসে একটি ভিডিও দেখালো। খুলনার একটি পরিবার, ভ্যান চালক বাবা তার সন্তানের চিকিৎসা করাতে গিয়ে হিমশিম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভালোবাসা নয় খাবার চাই ------

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:০৬


ভালোবাসা নয় স্নেহ নয় আদর নয় একটু খাবার চাই । এত ক্ষুধা পেটে যে কাঁদতেও কষ্ট হচ্ছে , ইফতারিতে যে খাবার ফেলে দেবে তাই ই দাও , ওতেই হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতীয় ইউনিভার্সিটি শেষ করার পর, ৮০ ভাগই চাকুরী পায় না।

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৭



জাতীয় ইউনিভার্সিটি থেকে পড়ালেখা শেষ করে, ২/৩ বছর গড়াগড়ি দিয়ে শতকরা ২০/৩০ ভাগ চাকুরী পেয়ে থাকেন; এরা পরিচিত লোকদের মাধ্যমে কিংবা ঘুষ দিয়ে চাকুরী পেয়ে থাকেন। এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×