somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

Mission Impossible 4...

২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১০ দুপুর ১:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

'এই যে ভাই, যাবেন?'
'কই?' - পিচিক করে একদলা থুথু ফেলে গম্ভীরমুখে সিএনজিওয়ালা জবাব দিল। আমি ব্যাটার সাইকোলজি বোঝার চেষ্টা করছিলাম মনে মনে জপ করছিলাম এই ব্যাটা যেন একটু সদয় হয়।
'প্রেসক্লাব।'
এবার ঘাড়টা একটু এদিক ওদিক ঝাকিয়ে মটকে নিয়ে বলল, '২০০ টাকা।'
মনে মনে খুশি হলাম, কারন এ লোক তো অন্তত যেতে চেয়েছে। কিন্তু ভাড়া হওয়া উচিত ১০০টাকা। কারন এটাই ওদের অলিখিত ফিক্সড ভাড়া।

আমি ততোধিক গম্ভীর হয়ে সিরিয়াস মুখে বললাম, 'ভাই আমি যাবো, কিন্তু ২০০টাকার ব্যাখ্যা আমাকে দিতে হবে।' একটা আব্দার করেছি যেন আরকি!

লোকটা সরু চোখে আমাকে মাপতে মাপতে বলল, 'বেশী কথা বাড়ামু না, ঘন্টা চুক্তিতে যাইবেন?'
শর্তটা আমার চোয়াল বরাবর ঝেড়ে দিয়ে নিশ্চিন্তে সামনের প্যাসেন্জারের (একজন সুন্দরী ২৫ উর্দ্ধ নারী) দিকে তাকিয়ে এবার তাকে মাপতে লাগলো। উনিও বোধহয় এই সিএনজিই টার্গেট করেছিলেন।

আমি তখন বেপরোয়া, 'যাবো! বলেন রেট কত?' এভাবে রাজী হয়ে যাবো সে কিন্তু ভাবেনি। ব্যাটা বোধহয় ওই মেয়েটিকে নিতে চাচ্ছিল। কারন এদেরকে হয়রানি করা সহজ।
'১৫০টাকা!' অপর প্যাসেঞ্জার শ্বাসরূদ্ধ করে আমাদের খেলা দেখছে। এবার আমার দিকে তাকিয়ে আছে। মনে হয়তো আশা এইবার আমার আশাভঙ্গ হবে। আমি তখন মনে মনে হিসাব কষায় ব্যস্ত। হালকা একটু আলোর আভাস পেলাম।

'যদি আধাঘন্টায় যেতে পারি তাহলে আপনি কত রাখবেন? ৭৫টাকা?' মেয়েটির চোয়াল ঝুলে পড়তে দেখে কৌতুক অনুভব করলাম।
হা হা করে হাসতে গিয়ে বিষম খেল ব্যাটা। 'আলবৎ', জবাব দিল সে। মনে মনে হিসাব তার ২০০ না পেলেও অন্তত চোখ বন্ধ করে ১৭৫ টাকা বিল করা যাবে।
'ভাই, তাইলে আমি যে যে রাস্তা দিয়া যাইতে কমু ঠিক সেই সেই রাস্তা দিয়া যাইবেন, কেমন?' মুহূর্তে গলার টোন চেঞ্জ। এই সুযোগ হেলায় হারানো ঠিক হবে না।

ব্যাটা আবারো গা জ্বালানো একটা হাসি দিয়ে বলল, 'কুন সিএনজি'র আগে যাইতে হইবো খালি হেইডা কন, আমার কুন সমস্যা নাই। আমিও দেখমু আপনি কেমুন রাস্তা চিনেন!' বলে তাচ্ছিল্যসূচক একটা হাসি দিয়ে মেয়েটির দিকে তাকালো। ;)

আল্লাহর নাম আগে থেকেই জপ করছিলাম কারন অফিসে যেতে এত লেট ভাবাই যায় না। এবার জিকির শুরু হলো। তাড়াতাড়ি করে খাঁচার ভিতর ঢুকলাম। মেয়েটির অসহায় চোখের সামনে দিয়ে গর্বিত ভঙ্গিতে হয়তো বেড়িয়ে গেলাম কিন্তু মনে মনে টেনশন ঠিকই করছি। ব্যাটাকে চ্যালেঞ্জ দিয়ে এবার যদি ধরা খাই!!!X( আজকেই বোধহয় সবোর্চ্চ জ্যাম পড়েছে।

চাকা বোধহয় সর্বোচ্চ ৬মিনিট পর্যন্ত চলেছে। তারপর 'চারোচাক্কা জ্যাম'। মনে মনে একটু দমে গেলাম। ব্যাটা আবার একটু ঘাড় ঘুড়িয়ে দেখলো আমাকে। তরপরই আবার গর্বিত ভঙ্গিতে জ্যামের দিকে তাকালো।

ঢাকা শহরের জ্যাম যে কোন মানুষকে আনন্দ দিতে পারে তা এই প্রথম জানলাম। আমি মরিয়া হয়ে বললাম, 'ওই রিকশার পিছন পিছন চালাতে থাকেন।'
'দ্যাহেন ভাই, এইডা ঠিক যে আপনেরে আপনের মনের মত রাস্তা দিয়া নিয়া যামু। কিন্তুক ভাঙ্গা রাস্তা দিয়া যাইতে পারুম না।' খেদের সাথে বলল ড্রাইভার।
'গুষ্টি মারি...যান তো! আপনের টাকা পাওন দিয়া কথা, আর আমার টাইম বাঁচান দিয়া কথা!' আমার এরকম চেহারা বোধহয় আমি নিজেই দেখিনি কখনো।

এগলি ওগলি করে বড় রাস্তায় আসলাম। কিন্তু জ্যামের 'জ' যেখানেই দেখেছি তখনই বিকল্প রাস্তা বেছে নিয়েছি। এই স্বাধীনতাটাযে কতটা উপভোগ্য তা বলে বোঝানো যাবে না। ড্রাইভার ব্যাটাও আর তেড়িবেড়ি করার সাহস পায়নি। এক পর্যায়ে আমার ঘড়ি দেখা বন্ধ হয়ে গেল, আর তার ঘন ঘন ঘড়ি দেখা শুরু হলে।

গন্তব্য যখন কাছাকাছি ব্যাটা তখন ঘড়ি দেখে বার বার। আমি অফিসের গেটে নেমে গিয়ে বলি 'ভাই, ডরাইছিলেন নাকি?' জ্যামেরে এত ভয় পান আপনেরা! '

'মিয়া আপনের কপাল আইজকা খুবই ভালো। এই রকম তো দেখিনাই। মোহাম্মদপুর থিকা এই পর্যন্ত এত তাড়াতাড়ি ক্যামনে আইলাম?' আসলেও তাই। এরকারন বোধহয় যে গাড়ীগুলি এখানে এসে জ্যাম সৃষ্টি করতো তা নিশ্চয়ই অন্য রাস্তাতে জ্যামে বসে আছে।

'ধুরও মিয়া! কপাল আপনের ভালো। এহন উল্টা একটা খ্যাপ নিয়া যাইতে পারবেন আবার আগের জায়গায়। এহন ঝটপট কন দেখি আপনেরে আমি কত দিমু?'

মাথা চুলকায়। 'দ্যান, ১০০ টাকা দ্যান!'

'আমার হিসাবে কয় ৮০টাকা। যাউগ্গা। এই লন ১০০। ২০টাকা বেশিই দিলাম।'

সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১০ সকাল ১০:৪৩
২৯টি মন্তব্য ২০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×