somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছোটগল্প: একদিন প্রতিদিন

২৩ শে আগস্ট, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একটা সময় ছিল যখন ইত্তেফাকটা হাতে নিলেই প্রথম চোখ পড়তো টারজানের উপর। তারপর একটা সময় এলো যখন টারজানের প্রতি আগ্রহ খানিকটা ফিকে হতে লাগলো, বরং আগ্রহ বাড়তে লাগলো খেলার পাতার আর সিনেমার বিজ্ঞাপনের প্রতি। এখন অবশ্য সিনেমার বিজ্ঞাপন খুব বেশি একটা দেখা যায় না। তবে সিনেমার বিজ্ঞাপন কিংবা খেলার খবরের প্রতিও এখন আর মনোযোগ নেই বাবুর। এখন সব মনোযোগ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির প্রতি স্থির; এরপর সুযোগ পেলে হেডলাইন গুলোতে চোখ বোলানো হয়। আবার, হয়তো একটা সময় আসবে, যখন পত্রিকার প্রথম থেকে শেষ লাইন পর্যন্ত পড়বে আর ভাববে, দেশটা চুড়ান্ত পতনের দিকে যাচ্ছে। আসলে সময় না, বয়সটাই বোধহয় সবকিছুর জন্য দায়ী। এখনো হয়তো কোন একটা নির্দিষ্ট বয়সের পাঠক বাড়িতে পত্রিকা আসার সাথে সাথেই টারজান, ন্যান্সি অথবা বেসিক আলী পড়ার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ছে। অথচ বাবুকে এসব আর আগের মতো টানছে না।

বয়সটা খুব দ্রুতই বেড়ে যাচ্ছে। অথচ কেউ সেটা তেমন গুরুত্ব দিচ্ছে না। আজ সকালের ঘটনাই ভাবা যাক। সকালে নাস্তার টেবিলে সে বাবাকে গত কয়েকদিনের চিন্তা প্রসূত একটা আইডিয়ার কথা জানালো, অথচ কেউ কোন গুরুত্বই দিল না। খাবার টেবিলে বাবু প্রায় কোন কথাই বলে না, তবুও আজ না বলে থাকতে পারলো না। গত কয়েকদিন ধরে চিন্তাটা মাথার মধ্যে এমনভাবে ঘুরপাক খাচ্ছে যে আজ না বললে পেট ফুলে মারা যাবে। বললো, “বাবা, গত কয়েকদিন ধরে অনেক ভেবে চিন্তে আমি একটা আইডিয়া বের করেছি। আসলে বেকার বসে থাকি তো!”
“যা বলবি সরাসরি বলে ফেল।”
“আমাদের বাড়িটা অনেক সুন্দর তবে পুরোনো, যদিও ঘরগুলো অনেক বড় বড়, সামনে একটা বাগান, রেলিং দেয়া ছাদ। ববি’রও মনে হয় অনেক পছন্দ, তাই না ববি?” ববির দিকে তাকালো বাবু।
উদ্দেশ্য বুঝতে না পেরে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে ভাইয়ের দিকে তাকালো ববি। নাজির উদ্দীন বললেন, “হুম, বাড়িটা আমাদের সবার অনেক পছন্দ।”
“আমিও সেটাই বলছিলাম”, বললো বাবু। “ কিন্তু তুমিও রিটায়ার্ড করেছো, আমিও ফাইনাল দিয়ে বসে আছি। চাকরী পাচ্ছি না। যা একটা টিউশনী ছিল, সেটাও গতমাসে চলে গেল। ববিটারও তো পাশ করতে বছর দুয়েক লাগবে। কাজেই আমি সোর্স অফ ইনকাম বাড়ানোর কথা ভাবছিলাম।”
“কিন্তু বাড়িটা কি দোষ করলো তা তো বুঝলাম না।” বললো ববি।
“পুরোটা আগে শুন তাহলেই বুঝবি। এখনো অনেক ছোট তুই। আমি বরং আগে শেষ করি।”
ববি ভাইয়ের কথার পিঠে কথা চালাতে যাচ্ছিলো, কিন্তু তাকে থামিয়ে দিয়ে নাজির উদ্দীন বললেন, তুই তো নিজেও অনেক ছোট বাবু! যা বলার স্পষ্ট করে বল, আমি মনোযোগ দিয়ে শুনছি।”
“হ্যাঁ, বাবা, মানে, আমরা একটা প্রমোটারের সাথে চুক্তিতে আসতে পারি। এসো আমাদের এই বাড়িটা ভেঙ্গে একটা এ্যাপার্টমেন্ট বানিয়ে ফেলি। আট দশ তলা একটা বাড়ি হবে, লিফটওয়ালা। প্রমোটাররা হয়তো আমাদের তিন-চারটা ফ্ল্যাট দেবে আর নগদ টাকা। দিব্যি তিনটা ফ্ল্যাটের ভাড়ার টাকা পাওয়া যাবে। শুনেছি, প্রমোটররা নাকি ইদানিং এক বছরের বেশি সময় নেয় না। একটা বছর আমাদের কষ্ট হবে আর কি। এখন তুমি যদি রাজি থাকো তাহলে আমি কয়েকটা প্রমোটারের সাথে কথা-”
কথা শেষ করতে পারে না বাবু। হাত তুলে তাকে থামিয়ে দেন নাজির উদ্দীন। “আমি অনেক কষ্ট করে, তিলে তিলে টাকা জমিয়ে বাড়িটা বানিয়েছি। তাছাড়া দোতলা ফাউন্ডেশন দিতে গিয়েও অনেকগুলো টাকা বেরিয়ে গেছে। তুই একদিন বড় হবি, অনেক কামাই রোজগার করবি, বাড়িটা দোতলা করবি। আমরা বাবা-মা তো সেই স্বপ্নই দেখি। তা না; কোথা থেকে বাড়ি ভাঙ্গার প্ল্যান মাথায় ঢুকেছে! আর ঢাকার বুকে এক টুকরা জমির দাম জানিস?”
“তুমি আরেকটু ভেবে দেখো বাবা। অনেকেই তো আজকাল পুরোনো বাড়ি ভেঙ্গে নতুন বাড়ি বানাচ্ছে। আর তোমার ঐ মধ্যবিত্ত সেন্টিমেন্টটা ছাড়ো বাবা। দেখো, কবে পরীক্ষা দিলাম, রেজাল্টের খবর নেই। চাকরী-বাকরী তো দূরের কথা। তারপর কবে হবে টাকা পয়সা, কবে হবে বাড়ি দোতলা! আবার, ববি বড় হচ্ছে, ওর বিয়ে দিতে হবে। তোমারো তো বয়স হচ্ছে, এ বয়সে তুমি আর মা একটু সুখে শান্তিতে থাকবে, তাইনা?”
বেবী এতক্ষণ কোনও কথা না বললেও এবার মুখ খুললেন, “ঠিক করে বল তো, কারো সাথে তোর এই বিষয়ে আলাপ হয়েছে? তোর কথা শুনে মনে হচ্ছে, সব কিছু ঠিকঠাক, শুধু বিল পাশ করানো বাকী।”
“না মা, কারো সাথে আলাপ হয়নি।”
“শোন, তোর বাবা যা ভাল মনে করেন- তাই করবেন। তুই এখনো অনেক ছোট। এসব নিয়ে মাথা ঘামানোর বয়স তোর এখনো হয়নি। ফাইনার দিয়েছিস, রেজাল্ট হোক, পড়াশোনা কর, বিসিএস পরীক্ষা দে। আর তাছাড়া তোর বাবার জমানো টাকা, পেনশনে তো খারাপ চলছে না। তুই কিছু ভাবিস না, চালিয়ে যা আরো কিছু দিন। তারপর কোনও গতি না হলে তখন দেখা যাবে।”

মা যা বললেন তারপর আসলে বলার মতো আর কিছু থাকে না। তাছাড়া ক্রমাগত বিরূপ প্রতিক্রিয়ার পর কিছু বলার মতো ইচ্ছেও আর ছিল না। তবে ববির মুচকি হাসিময মুখের দিকে তাকিয়ে মনে হল, পরাজয়টা শুধু আইডিয়ার ক্ষেত্রেই নয় বরং বয়সটাও একধাপে অনেক কমে গেছে।

আজকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিগুলো অনেক বেশি হতাশাজনক। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করা সমাজ বিজ্ঞানের ছাত্ররা শুধু যেন পত্রিকার পাতা উল্টাতেই থাকবে আর পত্রিকার পাতাগুলো যেন শুধু বিবিএ, এমবিএ-কেই খুঁজতে থাকবে; মাঝে মাঝে আবার সেখানেও আইবিএ কিংবা নর্থ সাউথের মতো উল্লেখযোগ্য কয়েকটা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম উল্লেখ থাকবে।

নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি বাদ দিয়ে খেলার পাতার দিকে চোখ চলে গেল। দেশীয় খেলার কোনও খবর নেই, প্রায় সবই বিদেশীদের। “শচীন কবে সেঞ্চুরীর হাপ-সেঞ্চুরী করবে কিংবা হাফ-সেঞ্চুরীর সেঞ্চুরী করবে”, “ইউএস ওপেন: শারাপোভা-হিংঙ্গিস বাদ পড়ল”, “আবারো হারলো রিয়েল মাদ্রিদ” ইত্যাদি ইত্যাদি। ভাল লাগল না। হঠাৎ মনে হল, টারজানটা অনেকদিন পড়া হয় না। আজ যেহেতু বয়সটা খানিকটা কমে গেছে, কাজেই পুরোনো পত্রিকার ¯তূপ থেকে গত একমাসের পত্রিকা বের করে টারজান পড়া যেতে পারে। ভাল কথা, একবার সিনেমার বিজ্ঞাপন খুঁজে দেখা যেতে পারে।

পত্রিকা রেখে যখন বাড়ির সামনে রাস্তায় নেমে এল, তখন ঘড়ির কাঁটা এগারোটার খুব কাছাকাছি। মাথার ওপর কড়া রোদ। বুদ্ধি করে ক্রিকেটাররা পড়ে এমন একটা ক্যাপ মাথায় চড়িয়েছে কিন্তু ক্যাপের রং কালো হওয়ায় বিশেষ সুবিধা করতে পারছে না। তবে গন্তব্য যেহেতু কয়েক শো গজ দূরের তুফানের দোকান, কাজেই এ নিয়ে বিশেষ মাথা ঘামালো না।

তুফান বাবুর ক্লাশমেট। স্কুল-কলেজে ওরা একসাথে পড়েছে। নাম তুফাল হওয়া সত্ত্বেও তার গতি যে তুফানের মতো নয় বরং বিপরীত এটা প্রমাণ করার জন্যই হয়তো ইন্টারমিডিয়েট পাশের পর সবাই যখন ইউনিভার্সিটিতে নিদেনপক্ষে একটা ভাল কলেজে ভর্তির জন্য ঝড়ের গতিতে দৌড়াচ্ছে, তখন সে পড়াশোর পাট চুকিয়ে পাড়ার মোড়ে “হলিউড ভিডিও” নামে একটা ভিডিও ক্লাব খুলে স্থির হয়ে বসলো। প্রথমে কয়েক শো ভিসিডি ছিল, তারপর এলো ডিভিডি এবং শুরু থেকে আজ অব্দি বন্ধুদের জন্য ফিফটি পার্সেন্ট ডিসকাউন্ট অফার চলছে।

ইদানিংকার ডেইলী রুটিন অনুযায়ী সকালটা হলিউড ভিডিওতেই কাটায় বাবু। আজ গিয়ে দেখলো বন্ধুদের কেউ আসেনি। দোকানের এককোণে রাখা টিএন্ডটি ফোনটার দিকে চোখ পড়লো। এই ফোন থেকে বন্ধুদের জন্য লোকাল কল ফ্রি।

শুভেচ্ছা মিডিয়া সেন্টারের সুমন ভাইর সাথে আলাপ করা যেতে পারে। অনেকদিন যোগাযোগ নেই। নতুন টিউশনী দরকার, সুমন ভাই হলো একটা শক্তিশালী ভরসা। নাম্বার ডায়াল করতেই ওপাশ থেকে একটা মেয়েলী কন্ঠ স্বাগতমের পাশাপাশি শুভেচ্ছা মিডিয়া সেন্টারের অস্তিত্ব জানালো। বাবু একটু অবাক হয়ে বললো, “সুমন ভাইকে পাওয়া যাবে? আমি মিরপুর থেকে বাবু বলছি।”
সুমন ভাইকে লাইনে পেতে তেমন সমস্যা হলো না। দু’একটা কথার পরেই সুমন জিজ্ঞেস করলো, “তারপর, টিউশনী কেমন চলছে?”
বাবু ভাবল, লাইনের লোক, চট করে কাজের কথা পেড়ে ফেললো। বললো, “খুব খারাপ ভাই। কোন মতে একটা টিকে ছিল, সেটাও গত মাসে চলে গেছে। ওরা ইংরেজির ছাত্র খুঁজছে, ইংরেজি পড়ানোর জন্য। আচ্ছা ভাই, ইংরেজির ছাত্ররাই কি সবসময় ভাল ইংরেজি জানবে? আর বাকীরা কি কিছুই জানে না?”
“বাদ দাও এসব কথা। গার্ডিয়ানরা বরাবরই একরোখা। আমি বহুদিন এই লাইনে অথচ কোন ভাল টিচারের ডেফিনেশনটা যে কী- তা আজও বুঝতে পারলাম না।”
ঠিক বলেছেন ভাই। আপনার তো মনে হয় দিনকাল ভালই যাচ্ছে। অফিসে ফোন করলে ইদানিং লেডিস টোন শোনা যায়! নতুন রিসিপশনিষ্ট নাকি ভাই?”
“যা বলেছো আর বোলো না। ওটা তোমার হবু ভাবী। ফাজলামো করে ফোন রিসিভ করেছে।”
“ও হো। একটা মহিলা রিসিপশনিষ্ট রেখে দিলেই তো পারেন। ভাবী অবশ্য আপাতত কাজ চালাতে পারে।”
“কাজের কথা বল। টিউশনী লাগবে? কি পড়াবে, ইংরেজি?”
“আমার একটা হলেই হবে, হাত খরচটা তুলবো আর কি।”
“ঠিক আছে। আজ তো মাসের মাঝ-তারিখ, নতুন মাস থেকেই বরং শুরু কোরো, ২৫-২৬ তারিখে একটা ফোন দিও। দেখি, কিছু একটা ফাইনাল করে রাখবো।”

খানিকটা আশার বাণীতে খানিকটা ভাললাগা নিয়ে ফোনটা রাখতেই তুফান বললো, “সেদিন যে এতগুলো সিভি দিলি, কয়েকটা রিটেন দিলি- খবর কি? চাকরী হবে না?”
“কয়েকটা না, একটাই মাত্র রিটেন টেষ্ট দিয়েছি। রেজাল্ট ভাল। ওটার ভাইভাও দিয়ে এসেছি। সেও তো প্রায় একমাস হয়ে আসছে।”
“তাহলে এবার চাকরী হবে?”
নিজের অজান্তেই বুক চিরে একটা দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে এলো। বললো, “কোনো সম্ভাবনা নেই। ইন্টারভিউ বোর্ডে যেসব প্রশ্ন করেছিল! “সুর্যের উত্তাপ কত?”- জাতীয় প্রশ্ন! তাছাড়া ছোটবেলা থেকে তেমন কোন মামা-কাকার সাথে উঠাবসাও করিনি; আর মেধাতেও মধ্যবিত্ত। চাকরি-বাকরি হবে না রে দোস্ত, সারাজীবন বোধহয় টিউশনী করেই কাটাতে হবে। সকালে বাবাকে একটা প্রস্তাব দিলাম, রাজী হলো না।”
“কি প্রস্তাব? বিয়ে করবি নাকি?”
“আরে নাহ। বাড়ীটা ভেঙ্গে অ্যাপার্টমেন্ট বানাতে চাইলাম।”
“তা, আংকেল কী বললেন?”
“গতানুগতিক কথাবার্তা। পড়াশোনা কর, চাকরী খোঁজ, এখনো এসব নিয়ে ভাবার সময় হয়নি ইত্যাদি ইত্যাদি। আহারে, কত স্বপ্নই যে এভাবে মাঠে মারা যায়।”
“মাঠে না, বল স্বপ্নেই মারা যায়; বাস্তবে আসে না। চা খাবি নাকি?”
“না।”
“বিড়ি খাবি?”
বাবু খুব অদ্ভুত চোখে তাকায় তুফানের দিকে। তুফান খুব ভাল করেই জানে, বাবু সিগারেট খায় না। তবুও প্রতিদিনই এই প্রশ্নটা করে। তারপর দার্শনিকের মতো বলে, “যারা বিড়ি-সিগারেট খায় না, বেকার অবস্থায় তারা বেশ নিঃসঙ্গ হয়ে পড়ে। বেকারত্ব জাঁকিয়ে ধরে।”

কোনও উত্তর দিল না বাবু। পকেট থেকে নোকিয়া ফোনটা বের করে স্ন্যাক খেলতে শুরু করলো। একবার চোরা চোখে তাকিয়ে দেখলো, তুফাল সিগারেট জ্বালিয়েছে; ধোঁয়ার কুন্ডলী বের করার চেষ্টা করছে। দার্শনিক তুফানের হাত থেকে বাঁচার জন্য মোবাইল গেম শুরু করলেও ভাল লাগছে না; বরং কারো সাথে কথা বলতে পারলে ভাল হতো। কিন্তু সমস্যা হলো, অকারণে-অপ্রয়োজনে-অসময়ে সে কাকে ফোন করবে? যে দু’য়েকজন বন্ধু আছে, তারা কিছুক্ষণের মধ্যেই হলিউড ভিডিও’তে এসে হাজির হবে। আর বান্ধবী বলতে গত দু’তিন মাস কারো সাথে যোগাযোগ নেই। এমন কি মিসকল মিসকল খেলাও এখন বন্ধ।

কারো নাম মনে করতে না পেরে ফোন বুকটা ওপেন করে একটার পর একটা নাম পড়তে থাকলো। হঠাৎ রু-১, রু-২, রু-৩-এ এসে চোখ আটকে গেল। চোখ না বলে বলা যায়, বুড়ো আঙ্গুলটা আটকে গেল। নামগুলো নিঃসন্দেহে রুবা, রুপা, রুমা। কলেজে একই সাথে পড়তো, তবে ওরা অন্য সাবজেক্টে। সারাক্ষণ তিনজন একসাথে থাকতো বরে বেশির ভাগ সময় ওদের নাম গুলিয়ে যেত। মনে হতো, এদের নাম সমস্যাটা হয়তো কখনো মিটবে না। অবশ্য কখনো মেটাতেও চায়নি। সেজন্যই হয়তো নাম্বার সেইভ করার সময় পুরো নাম না লিখে ‘রু’ এর পরে ১,২,৩ সিরিয়াল দিয়েছিল। মনে হত, নামের সাথে যেখানে ফেস মনে রাখা যাচ্ছে না, সেখানে নাম্বারের সাথে নামের কী দরকার? তবে রু-২ যে রূপা এ নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। বাকী ১ আর ৩ এর মধ্যে যে কোনটা রুবা আর কোনটা রুমা বলা মুশকিল।

দুটো নাম্বারেই একটা করে মিসকল দিল। ভাবলো, যে আগে রেসপন্স করবে, তাকে কলব্যাক করবে, খানিকক্ষণ কথা বলে কৌশনে নামটা বের করার চেষ্টা করবে।

সূর্য দেবতা পশ্চিমের দিকে যাত্রা শুরু করেছে। বাড়ি ফেরার জন্য একে একে সবাই উঠতে শুরু করেছে। বাবুও উঠি উঠি করছে। আজকের আড্ডাটাও খুব একটা জমেনি। কেমন যেন হতাশ হতাশ লাগছে। বুকের মাঝে একটা কাঁটা অনেকক্ষণ ধরেই খচখচ করছিল। হঠাৎ মনে হতেই হতাশাটা যেন একটা বেড়ে গেল, দুটো মিসকর দেয়ার প্রায় দেড়ঘন্টা পেরিয়ে গেলেও কেউই রেসপন্স করলো না!
হলিউড ভিডিও ছেড়ে রাস্তায় নামার উপক্রম করতেই পেছন থেকে তুফানের গলা ভেসে এলো, “যারা বিড়ি-সিগারেট খায় না, বেকার অবস্থায় তারা খুব নিঃসঙ্গ বোধ করে।”
দার্শনিক তুফানের জন্য কিছু কথা রেডি করা ছিল। কিন্তু বলার আগেই পকেটে রাখা মোবাইল ফোনটা অদ্ভূত শব্দে বেজে উঠলো। ফোনটা পকেট থেকে বের করে তাকাতেই খুব অবাক হলো বাবু। স্ক্রীণে লেখা, “ইনকামিং রু-২”।


-------------------------------------------------------------------



অন্য গল্প গুলো:
- বৃষ্টিস্নান
- কথপোকথন
- ভয়
- অনেক আনন্দ
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে আগস্ট, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:৪৪
৭টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×