somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প: অসম

২০ শে ডিসেম্বর, ২০২১ বিকাল ৩:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



শুক্রবার সকাল দশটার পরপর খেলা দেখানো হবে বলে মাইকে ঘোষণা করে ঠাকুরগাঁও এইচ কিউ-এ লোকজন ডাকা হয়। দুপুর বারোটা নাগাদ শ’খানেক মানুষের ভিড় জমে যায়, যদিও কী খেলা দেখানো হবে সে বিষয়ে জমায়েতের বেশিরভাগেরি কোনো ধারণা নেই কিংবা কারো কারো হয়তো সামান্য ধারণা আছে। তবে যারা এসেছে তাদের মধ্যে শিশু বা মহিলা খুব একটা দেখা গেল না, কারণ মানুষ ইদানীং বাসা-বাড়ি থেকে বের হতে ভয় পায়, বিশেষভাবে মহিলা ও শিশুদের সাথে নিয়ে। সালাহ্উদ্দিনও খাঁচাটার দিকে এগিয়ে আসতে থাকে, যদিও তার পায়ে কিছু পেরেক ঢুকেছে এবং সেসব স্থান হতে রক্তও বের হচ্ছে কিংবা রক্ত বের হতে হতে থেমে গেছে। ছেলেবেলায় একবার খেজুরের রস চুরি করতে গিয়ে পায়ের পাতায় খেজুরের কাঁটা ঢুকেছিল। তারপর অনেক চেষ্টার পর খানিকটা অংশ বের হয়ে আসে আর বাকিটা ভেঙ্গে ভেতরে থেকে যায়। তখন সে শুনেছিল যে খেজুরের কাঁটা একবার শরীরের কোনো স্থানে ঢুকলে সেখানে আর স্থির থাকে না, রক্তের ভেতর দিয়ে সারা শরীর ঘুরে বেড়ায়। ব্যাপারটা সে হয়তো বিশ্বাস করতো কিংবা করতো না, তবে বহু চেষ্টা করেও আর ভাঙ্গা অংশ বের করতে পারেনি। হয়তো খুঁজে পায়নি। আজ কি তার এসব কথা মনে পড়ছে? সম্ভবত এসব মনে পড়ছে না। শুধু একবার মনে হলো, সংবাদটা সঠিক ছিল না।

হ্যাঁ, সংবাদটা সঠিক ছিল না। গতকাল জবরহাট ক্যাম্পে থাকাকালীন সে সংবাদটা পায়। যদিও আকতার ভাই তাকে সতর্ক করার চেষ্টা করেছিল এই বলে যে, ‘তুই এলা যাইন্ না, সংবাদখান তো মিছাও হবা পারে।’ কিন্তু সালাহ্উদ্দিনের অষ্টাদশী মন কোনোরকম সতর্কবার্তা শুনতে নারাজ। বারবার বাবা-মার কথা মনে পড়ছিল। ওর আর কোনো ভাইবোন ছিল না যে বাবা-মার দায়িত্ব নেবে। মাঝরাতের দিকে কোষারাণীগঞ্জে যাবার সিদ্ধান্ত নেয় সে। ব্যাপারটা ঘটাতে হবে খুব সাবধানে আর লুকিয়ে যেন তেমন কারো চোখে না পড়ে। এমনিতেই ওর বাবা বিপদে পড়েছে কাজেই কোনোভাবেই বিপদ আর বাড়ানো চলবে না। ক্যাম্পের কেউ তার এ যাওয়াটা সমর্থন না করলেও রাত বারোটা বাজার সাথে সাথেই সে বেরিয়ে পড়েছিল কোষারাণীগঞ্জের উদ্দেশ্যে। আসার আগে অবশ্য তার থ্রি নট থ্রি রাইফেলটা জমা দিয়ে আসে কমান্ডারের কাছে।

মাঝরাতে দরজায় কড়া নাড়ার শব্দটা মৃদু হয়, তবুও সালাহ্উদ্দিনের মা আমেনা বেগম কড়া নাড়ার সাথে সাথেই ঘুম থেকে উঠে পড়েন এবং বুঝতে পারেন ছেলে ফিরে এসেছে। সালাহ্উদ্দিনের বাবা আফাজউদ্দিনেরও ঘুম ভাঙ্গে কিংবা তিনি শরীরের ব্যথায় সারারাতই ঘুমাতে পারেননি। তবে তিনি বিছানা ছাড়েন না, হয়তো কখন আমেনা বেগম দরজা খুলবেন সেজন্য অপেক্ষা করেন, যদিও একবারের বেশি কড়া নাড়ার শব্দ হয় না। শীঘ্রই আফাজউদ্দিনের অপেক্ষা শেষ হয় আর তার কয়েক মুহূর্ত পরই সালাহ্উদ্দিন বুঝতে পারে যে সংবাদটা সঠিক ছিল না। আমেনা বেগম দরজা সামান্য খুলে উঁকি দিতেই ছেলেকে দেখেন আর সাথে সাথেই পুরো দরজা খুলে ভেতরে ঢুকিয়ে নেন। তাঁর চোখে মুখে তখন হয়তো ছেলে ফিরে আসার আনন্দ ছিল কিংবা ছেলে ধরা পড়ে যেতে পারে-এ নিয়ে শঙ্কা ছিল। গতকাল ওরা এসে ছেলের খোঁজ জানতে চেয়ে ওর বাবাকে নির্যাতন করেছে। মানুষটাকে গরুছাগলের মতো মেরেছে। দিন মজুরের কাজ করা আফাজউদ্দিনের ক্ষয়ে যাওয়া শরীরে তাই রাতভর যন্ত্রণা হতে থাকে।

সালাহ্উদ্দিন দ্রুতই ঘরের ভেতরে ঢুকে পড়ে আর বলে, ‘বাবাক কত্থোন ধরি নিগাইছে?’ ঠিক তখনি বিছানায় বাবাকে দেখতে পায় সে। এতে দুশ্চিন্তা কমে না বাড়ে ঠিক বুঝতে পারে না সে। বাবাকে ওরা ধরে নিয়ে যায়নি, তাহলে কি ইচ্ছা করেই মিথ্যা সংবাদ ছড়িয়েছে যাতে সে বাড়ি ফিরে আসে? জবরহাট ক্যাম্পের যাদের কথা সে পাত্তা দেয়নি তারা তাহলে ঠিক কথাই বলছিল। খানিকটা চিন্তাগ্রস্থ হয় আর মনে মনে সিদ্ধান্ত নেয় যে সুবহে সাদিকের আগেই কোষারাণীগঞ্জ ত্যাগ করবে। আফাজউদ্দিনের পাশে গিয়ে বসে। সবে মাত্র জেগে ওঠা কিংবা মোটেও না ঘুমানো বাবার পা ছুঁয়ে সালাম করে। এর মাঝেই আমেনা বেগম ঘরের ভেতরে রাখা মাটির চুলায় বিরোই চালের ভাতের হাঁড়িটা চাপিয়ে দেয়, তবে কাজটা তাঁকে করতে হয় খুব সাবধানে যাতে বাইরে থেকে কেউ বুঝতে না পারে। হয়তো অনেকদিন ছেলেকে নিজের হাতে ভাত খাওয়াতে না পারার যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে চান কিংবা থ্রি নট থ্রি রাইফেল কাঁধে বীরগঞ্জ, বালিয়াডাঙ্গি, ঠাকুরগাঁও-র বিভিন্ন রণক্ষেত্রে লড়ে যাওয়া গেরিলার শারীরিক অবনতি চোখে পড়ে তাঁর। তবে পশ্চিমা ক্যাপ্টেন জামান যে সদলবলে ছেলের খোঁজে এসে বাবাকে নির্যাতন করেছে, অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেছে সে খবরটা দিতেও ভোলে না। ওর খবর যে বাড়ির কেউ জানে না, এটা বুঝতে পারার পর ক্যাপ্টেন জামান আর রাজাকারেরা চলে যায়; যদিও যাবার সময় বলে যায় যে, সালাহ্উদ্দিন এলে যেন নিজে থেকে ধরা দেয়- তাহলে শাস্তি কম হবে। শাস্তি কমা বা বাড়ার ব্যাপারে আমেনা বেগম কিছু ভাবে না, শুধু ভাবে, সালাহ্উদ্দিন যাতে কোনোভাবেই ধরা না দেয়।

স্বাভাবিকভাবে সালাহ্উদ্দিন নিজেও ধরা দিতে চায়নি, তাই হয়তো খুবই সাবধানে রাতের অন্ধকারে সে গ্রামে প্রবেশ করেছিল। তবে সবার চোখকে ফাঁকি দেয়া সম্ভব হয়নি, কেউ হয়তো রাতভর পাহারা দিচ্ছিল এমন কোনো মুক্তিসেনার অপেক্ষায়। কারণ সদ্য রান্না করা বিরোই চালের ভাত আমেনা বেগম যখন ওর মাটির সানকিতে তুলে দিচ্ছিলো ঠিক তখনি বাইরে একদল শকুন ওকে ধরার জন্য ফাঁদ পাতছিল। সালাহ্উদ্দিন ভাত খাওয়া শুরু করতে পেরেছিল কিংবা পারেনি, তবে সানকিতে অবশিষ্টাংশ রেখেই তাকে উঠে যেতে হয়েছিল শকুনগুলোর বন্দুকের নলের ইশারায়। মায়ের অশ্রু কিংবা বিলাপ কোনো কিছুই তাকে ধরে নিয়ে যাওয়া থেকে আটকাতে পারেনি। আফাজউদ্দিনও শুধু চেয়ে চেয়ে দেখেছিল অর্ধ-বসা কিংবা অর্ধ-শুয়ে থাকা অবস্থায়।

ক্যাপ্টেন জামানের সাথে জনাতিনেক জওয়ান আর আব্দুল মজিদকে দেখে সালাহ্উদ্দিন। পালাবার পথ নেই কিংবা লড়বারও উপায় নেই। তবে সমবয়সী আব্দুল মজিদকে দেখে ওর হয়তো মনে পড়ে যায় ছেলেবেলার কিছু স্মৃতি। আব্দুল মজিদেরও কি মনে পড়ে একসাথে দাঁড়িয়াবান্দা, গোল্লাছুট খেলার কথা? হয়তো পড়ে না। উত্তেজনায় আব্দুল মজিদের চোখ চকচক করে ওঠে। ফাঁদ পেতে এরকম একটা শিকার ধরার যে আনন্দ তা থেকে সে এক মুহূর্তের জন্যও নিজেকে বঞ্চিত করতে চায় না। ক্যাপ্টেন জামানের কাছে সে অনুরোধ করে যেন আজ রাতটা সালাহ্উদ্দিনকে ওর জিম্মায় দেয়া হয় তাহলে সে নিশ্চিতভাবে আরো কিছু মুক্তির ঠিকানা-খোঁজ বের করে ফেলবে। ক্যাপ্টেন জামান এতে রাজী হয় না। ঠাকুরগাঁও এইচ কিউ-এ অবস্থান করছেন মেজর মাহমুদ বেগ। তাঁর কাছে বাহবা নেয়ার সুযোগটা সেও হাতছাড়া করতে চায় না। তবে এত ভাবনা ছাপিয়ে সালাহ্উদ্দিনের একটা ভাবনাই প্রাধান্য পাচ্ছিলো তখন। সে খুবই ক্ষীণ স্বরে ছেলেবেলার খেলার সাথী আব্দুল মজিদকে বলেছিল, ‘মোর মা-বাপের সামনত মোক মারিন না, ওত্তি নিগাই মারেন।’

সালাহ্উদ্দিনের বাবা-মায়ের সামনে ওরা মারেনি। হাতে দড়ি বেঁধে নিয়ে যায় কাছাকাছি লুকিয়ে রাখা জলপাই রঙের জিপে। সালাহ্উদ্দিন ওঠার পরে ওর পাশে বসে জওয়ানরা, আব্দুল মজিদের স্থান হয় না জিপে। প্রায় পরিকল্পনা মতো সুবহে সাদিকের আগেই কোষারাণীগঞ্জ ত্যাগ করে সালাহ্উদ্দিন, যদিও উদ্দেশ্য হবার কথা ছিল জবরহাট ক্যাম্প, ঠাকুরগাঁও এইচ কিউ নয়!

‘অওর মুক্তি কিধার?’ এই লাইনটা কতবার শুনলো হিসাব করেনি সে। অবশ্য হিসাব করতে চাইলেও হিসাব রাখা যায় না সবসময়। তাছাড়া বরাবরই অংকে কাঁচা সে। ক্ষেত থেকে তুলে আনা ধানের আঁটিগুলোর হিসাবও ঠিক মতো রাখতে পারতো না, এমনকি মাঝে মাঝে মহাজনের উঠানে ধান মাড়াই করার পর পরিমাপ করতেও হিসাবে গড়বড় করে ফেলতো। এক পাল্লায় পাঁচ সের হলে এক বস্তায় কত পাল্লা ধান দিলে দুই মণ হবে, এই অংকটা বারবার সে ভুল করতো। আফাজউদ্দিন মাঝে মাঝে বলতেন, ‘টাকা পাইসার হিসাব না বুঝিলে কেমুন করি চলিবে, তুই তো সংসার চালেবা পারিবু নাই!’ গতকাল পর্যন্ত এসব কথা ভাবতে গিয়ে হাসি পেত সালাহ্উদ্দিনের। সংসারে কি সে কখনো ফিরতে পারবে? কখনো কি এই যুদ্ধ শেষ হবে? তবে এরই মাঝে অংকটা সে শিখতে শুরু করেছে। বিশেষ করে কোন অপারেশনে কে কয়টা লাশ ফেলেছে- সে হিসাব তো গর্বের হিসাব। কাজেই এই হিসাব ঠিক মতো না রাখলে চলবে কী করে! সে রাতে পাঞ্জাবী ক্যাপ্টেনের প্রশ্নের হিসাব সে রাখতে পারেনি, তবে উত্তরও দেয়নি। টর্চারসেলে ক্রমাগত বুটের লাথি আর চাবুকের আঘাতে সে বারবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলছিলো। ঠাণ্ডা পানির বালতিতে মাথা ডুবিয়ে দিচ্ছিলো কিছুক্ষণ পরপরই। নিঃশ্বাস নিতে না পেরে হাঁপড়ের মতো বুক উঠানামা করছিল। তখন কি একবারের জন্যও সালাহ্উদ্দিনের মনে পড়ছিল, দল বেঁধে বিলে পদ্ম ফুল তুলতে গিয়ে একবার অনেক দূরে চলে গিলেছিল- সে কথা? সেবার ফিরে আসার মতো দম না পেয়ে অনেকক্ষণ ভেসে ছিল। বারবার ওর মনে হচ্ছিল, আর বুঝি ফিরতে পারবে না। কিন্তু সে ডুবেও যেতে চায়নি। দলেরই একজন ওর অবস্থা বুঝতে পেরে কাছে গিয়ে ফিরিয়ে এনেছিল। সেদিন সালাহ্উদ্দিন হয়তো খুব ভয় পেয়েছিল কিন্তু বেঁচে ফিরতে পেরেছিল। বালতিতে মাথা ডুবিয়ে দেয়ার সময় হয়তো এসব কথা ওর মনে পড়ে না। কেবলি মনে হতে থাকে, মরে গেলেও কোনো গোপন কথা বলা যাবে না, ক্যাম্পের অবস্থান জানানো যাবে না। না, সে রাতে ওরা ওকে মারেনি। তবে মারতে কিছু বাকিও রাখেনি। হাতের-পায়ের আঙ্গুলে পেরেক গেঁথেছে গোটা দশেক, ধাঁরালো অস্ত্র দিয়ে বাম হাতের তর্জনীটাও কর্তন করেছিল। ইলেকট্রিক শক দিয়েছিল কি? ঠাকুরগাঁও এইচ কিউ-এ রাখা ইলেকট্রিক শক দেবার যন্ত্রটা ইদানীং খুব ডিসটার্ব করছিল। মাঝে মাঝে উল্টো আচরণ করছিল। মানে যাকে শক দেবার কথা তাকে তো শক দিচ্ছিল না, বরং যে অপারেট করছিল তাকেই কয়েকবার শক খেতে হয়েছে। তাই যন্ত্রের অপারেটর জামশেদ প্রায়ই যন্ত্র নষ্ট বলে চালিয়ে দেয়। কাজেই সে রাতে ঐ যন্ত্রটার ব্যবহার হয়েছিল কি না তা সঠিক বলা যাচ্ছে না। তবে ভোর রাতে ঘুম ভাঙ্গানোর ফলে চটে যাওয়া মেজর মাহমুদ বেগ টানা পাঁচ ঘন্টা টর্চার করার পরেও যখন কোনো তথ্য বের করতে পারলো না তখন অর্ডার দিল মাইকিং করে লোক জড়ো করার। তারপর হয়তো গোঁফে তা দিতে দিতে একটা অসম লড়াইয়ের কথা ভেবে উত্তেজিত হয়ে উঠলো।

বারোই নভেম্বর, শুক্রবারের সকালটা তাই অন্যরকম। ঠাকুরগাঁও ইপিআর এইচ কিউ-এ একটি খাঁচায় দুটি চিতাবাঘ পোষা হতো দীর্ঘদিন ধরে। হয়তো যুদ্ধ শুরুর আগে থেকেই বাঘ দুটি ছিল। সেখানে আজ খেলা দেখানো হবে জানার পরে যে শ’খানেক মানুষ জড়ো হয়েছিল তারা খুবই অবাক হয়ে দেখলো যে, ঠিক মতো হাঁটতে না পেরে মাটিতে পা ঘষটে ঘষটে কোনোরকম ঐ খাঁচার দিকে হেঁটে আসছে কোমরে দড়ি বাঁধা এক যুবক। এরকম অবস্থায় একটা মানুষের কোমরে দড়ি বাঁধার কারণটা কেউ বুঝতে পারে না, তবে এটুকু বুঝতে পারে যে, এই অবস্থা সে পালাতে পারবে না। উপস্থিত জনতার মধ্যে বিস্ময় ছেয়ে যায় যখন তারা দেখে যে, ঐ যুবকটিকে বাঘের খাঁচার পাশে দাঁড় করিয়ে আরেক দফা হাত-পা বাঁধা হলো যেন সে কোনোভাবেই নড়াচড়া করতে না পারে। তবে হয়তো যেন সে চিৎকার করতে পারে তাই মুখটা বাঁধা হলো না। উপস্থিত জনতার কারো কারো মনে হলো, যুবকটিকে মিলিটারীদের কেউ একজন কিছু একটা জিজ্ঞেস করে কিন্তু সে না-সূচক মাথা নাড়ে এবং পিচ করে এক দলা থুথু ফেলে মাটিতে। থুথুটা কেমন যেন লালচে রঙ্গের, সম্ভবত লালার সাথে খানিকটা রক্ত মিশে গেছে। হঠাৎই যুবকের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা জওয়ানেরা তৎপর হয়ে ওঠে এবং খাঁচার দরজা খুলে যুবকটিকে চ্যাংদোলা করে ছুঁড়ে ফেলে ভেতরে। এতে দর্শকরা কেউ কেউ অবাক হয়, কেউ কেউ হয়তো হয় না। কারণ ওদের মধ্যে একটা অংশ খুবই আনন্দ দিয়ে দেখতে থাকে। দেখতে থাকে একটি চিতাবাঘ যুবকটির পায়ের কাছে এসে ঘ্রাণ নেয়, তারপর পুরো খাঁচায় একটা চক্কর দেয়। হাত-পা বাঁধা যুবকটি পূর্বদিকের গ্রিল ধরে উঠে বসার চেষ্টা করে। কোমরসহ শরীরের ওপরের অংশ একটু উঁচু করতেই অপর চিতাবাঘটি অসম্ভব ক্ষীপ্রতায় থাবা বসিয়ে দেয় যুবকটির বুকে। প্রায় সাথে সাথেই আসরে যোগ দেয় প্রথম চিতাবাঘটি, হয়তো নিজের ভাগটা ঠিক মতো আদায় করার জন্য তাকে খানিকটা শ্রম দিতে হয় বা লড়াই করতে হয়। তবে উপস্থিত জনতার অনেকেই হয়তো এরকম একটা খেলার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না, তাদের মধ্যে একজন বা দুজন জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। আবার কেউ হয়তো বাঘদের খাবার বন্টন প্রক্রিয়ায় উৎসাহ দিতে থাকে। যুবকটি সম্ভবত শেষ মুহূর্তে খুব অস্পষ্টভাবে একবার ‘মা’ বলে ডেকে উঠেছিল।

***
(সত্য ঘটনা অবলম্বনে)

বি.দ্র. শব্দঘর, ডিসেম্বর ২০২০ সংখ্যায় প্রকাশিত।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২১ বিকাল ৩:২৬
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×