আমাদের মত ক্রিকেট-পাগল জাতি পৃথিবীর বুকে খুজে পাওয়া যাবে না! ক্রিকেট এদেশের মানুষের সবকিছুই বলা চলে, শত সমস্যার মধ্যে এই এক ক্রিকেটারদের দিকে তাকিয়ে বাংলাদেশিরা হাসতে জানে! ক্রিকেটাররাও তাদের সমর্থকদের চাহিদা বুঝেন। তাই এদেশের ক্রিকেটে বিপথী হবার ঘটনা কম। কিন্তু যতগুলোই ঘটেছে সেগুলোও ক্রিকেট প্রেমিদের মনে একরকম ক্ষত হয়ে টিকে আছে!
এদেশের মানুষের বুকে প্রথম আঘাত আসে ২০০৮ সালে একঝাক ক্রিকেটার আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিলে, কারন ছিল আইসিএল খেলা। অন্য কথায় টাকার ঝনঝনানি! এই দলে ছিলেন শাহরিয়ার নাফিস,অলক কাপালি, আফতাব আহমেদ এর মত তখনের দলের ভরষা রা!
২০০৮ সালে জাতি হঠাত হতবাক হয়ে পরে ১৩ জন ক্রিকেটারের অবসরের ঘটনায়! আইসিএল ছিল আইসিসি কর্তৃক নিষিদ্ধ এক টুর্নামেন্ট, তাই এই টুর্নামেন্ট এ অংশগ্রহন করার আগে প্রত্যেক ক্রিকেটারকেই দেশের মায়া ত্যাগ করতে হত! টাকার কাছে সেই মায়া বিক্রি করে ১৩ জন ক্রিকেটার অংশ নেয় ইন্ডিয়ান ক্রিকেট লিগে! বাংলাদেশ কে এই টুর্নামেন্ট এ যুক্ত করার উদ্যোগতা ছিলে তখন পর্যন্ত বাংলাদেশের ইতিহাসের সেরা অধিনায়ক হাবিবুল বাশার! মোহাম্মদ রফিক ও ছিলেন সেই দলে। কিন্ত তাদের ক্যারিয়ার তখন শেষ, তাদের দেয়া প্রলোভনেই জাতীয় দল ছাড়ে তরুন ক্রিকেটাররা!
শাহরিয়ার নাফিস তখন বিশ্বের অন্যতম সেরা ওপেনার, অলক কাপালি বাংলাদেশ দলের অন্যতম ভরষা, আফতাব আহমেদ এর মারকাটারি ব্যাটিং সকলের প্রিয় ছিল, মোশাররফ রুবেল হয়ে উঠছিলেন অন্যতম সেরা বাহাতি স্পিনার, ফরহাদ রেজার মত পেস বোলিং অলরাউন্ডার কমই ছিল আমাদের দেশে..... কিন্তু তারা কেউ টাকার ঝনঝনানি কে হার মানাতে পারেনি! শাস্তি-স্বরুপ তাদেরকে আন্তর্জাতিক এবং ঘড়োয়া ক্রিকেটে ১০ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়। কিন্তু পরবর্তিতে নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে সকলেই ক্রিকেটে ফিরেছেন, কিন্তু একটি সমৃদ্ধ আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার আর কেউ গড়তে পারেননি।
আমাদের ক্রিকেট যে একটা সময় একটু একটু করে উঠসে শুরু করেছিল তখনই আমাদের উপর আসে এই আঘাত, এর পেছনে ইন্ডিয়ার একটি হাত যে আছে সেটা উড়িয়ে দেয়া যায় না! কিন্তু দেশের প্রতি সর্বোচ্চ ভালবাসা থাকলে হয়ত এরকম আঘাত উড়িয়ে দেয়া ব্যাপার ছিল না
ভারতের বরাবরই আমাদের উপর কুনজর ছিল। আমাদের কোন ভালো তারা মেনে নিতে পারেনি কখনো! এরকমই একটি আঘাত আসে ২০১৩ সালে, মোহাম্মদ আশরাফুল এর সাথে ঢাকা গ্ল্যাডিয়াটর্স এর অনেক প্ল্যায়ার এর জড়িত থাকার খবর আসে ম্যাচ ফিক্সিং এ! ভারত কে দোষ দিচ্ছি এই কারনে, যে ঢাকা ফ্র্যাঞ্চাইজি'র অন্যতম বড় কর্মকর্তা ছিলেন ভারতী। যার প্রত্যক্ষ সহযোগিতা ছাড়া এইসব কাজ করা সম্ভব ছিল না। কিন্তু আমাদের জাতী'র গর্ব আশরাফুল ধরা খেয়ে যান, ঐদিকের ঐ ভারতীয়'র কোন খবর কারো কাছে আছে? নেই!
২০১৩ সালে আকসু'র তদন্তে উঠে আসে মোহাম্মদ আশরাফুল সহ আরো কয়েকজন ক্রিকেটার ম্যাচ ফিক্সিং এ জড়িত! শুধু তাই নয়, তদন্তে প্রমানিত হবার পর টেস্ট ক্রিকেটের সর্বকনিষ্ঠ সেঞ্চুরিয়ান আশরাফুল অতীতের আরো অপকর্ম করার কথাও স্বীকার করে নেন! ৮ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করা হয় তাকে।
কিন্তু আপনি যদি বিপরীত দিকে তাকান, আশরাফুল উঠে এসেছেন একটি নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে, তিনি ক্রিকেট খেলা শুরু করেন যখন, সেই বয়সের অনেক ছেলে-পেলে মায়ের আচলে থাকে! সেই বয়সে ভাল-মন্দ যাচাই করার বুদ্ধি কতজনের থাকে? সেইসাথে যদি পরিবারের সকলের অন্নের চিন্তাও যুক্ত হয় তাহলে কে এই পথে পা দিবেন না? আমার মতে আশরাফুল এর এই পথে পা দেবার পেছনে অন্য কোন হাত রয়েছে, এটা হতে পারে এদেশের-ই ততকালীন কোন সিনিয়র ক্রিকেটার!
আমরা আশরাফুলের বীরের বেশে ফেরার অপেক্ষায় আছি
আশরাফুলের সাথেই একই অপকর্মের দায়ে অভিযুক্ত হন মোশাররফ হোসেন রুবেল এবং ব্রিটিশ ড্যারেন ইয়ান স্টিভেনস! আরো কিছু খেলোয়ার এর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হলেও তারা কেউ শাস্তির আওতায় আসেনি। কিন্তু মূল কালপ্রিট ঢাকা গ্ল্যাডিয়াটর্স কর্তৃপক্ষ নিষিদ্ধ হয়!
এরপর আরেকটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা ছিল আন্তর্জাতিক আম্পায়ার নাদির শাহ'র নিষিদ্ধ হবার ঘটনা! তাকেও নিষিদ্ধ করা হয় বুকিদের সাথে হাত মিলিয়ে ক্রিকেট মাঠে প্রভাব বিস্তারে সহযোগিতার জন্য!
বাংলাদেশের ক্রিকেট যে কালো থাবার আওতার বাইরে তা নয়! কিন্তু আমাদের ক্রিকেটাররা সৎ হবার কারনে ঘটনা অনেক কম ঘটে থাকে। আমাদের কাপ্তান মাশরাফি বেশ কয়েকবার ম্যাচ পাতানোর অফার পেয়ে ফিরিয়ে দিয়েছেন, সাকিব এবং তামিম ইকবালের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে! কিন্তু আমাদের দেশ কালো থাবার বাইরে নয়। এই বিপিএল নিয়ে খোলা চোখেই দেখা যায় অনেক সমস্যা রয়েছে। ফাইনালের টস ক্যালেঙ্কারি তো পুরো টুর্নামেন্ট এর প্রতিমূর্তি বলেই ধরে নেয়া হয়! আমাদের দেশে ক্রিকেট একটি আবেগের জায়গা, দেশবাসির আবেগ নিয়ে যেন কেউ খেলা না করতে পারে তার জন্য বিসিবি কে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করার মানসিকতা থাকতে হবে। কিন্তু দিনের শেষ আমরা গর্বিত যে আমরা আমাদের কাপ্তানের মত সৎ এবং সাকিব তামিমের মত সাহসী ক্রিকেটার পেয়েছি
ক্রিকেটের কুলাঙ্গার সমাজ : প্রথম পত্র(পাকিস্তান)
ক্রিকেটের কুলাঙ্গার সমাজ : দ্বিতীয় পত্র(ভারত)
ক্রিকেটের কুলাঙ্গার সমাজ : তৃতীয় পত্র(দক্ষিণ আফ্রিকা এবং অন্যান্য)
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৫১