[ অস্ট্রেলিয়ার সাথে কার্ডিফে ম্যাচ টা জিতার পর দৌড় টা খেয়াল আছে? আমাদের আফতাব ভাই এর দৌড় ছিল কিন্তু ঐটা। মার-মার কাট-কাট স্বভাবের বাংলাদেশীদের কাছে উনি খুবই জনপ্রিয় ক্রিকেটার ছিলেন। দুর্দান্ত মেধাবী এই ক্রিকেটারের যাওয়ার কথা ছিল অনেকদূর। কিন্তু নানা কারনে তা হয়ে ওঠেনি। ]
ছোট বেলা থেকেই একটু খামখেয়ালী স্বভাবের ছিলেন আফতাব। খেলার দিক তার মন খুব একটা ছিলনা চট্টগ্রামে জন্ম নেয়া এই ক্রিকেটারের। কিন্তু বাবার ইচ্ছা ছিল ছেলে হবে খেলোয়ার। বাবা'র ইচ্ছাতেই অনেকটা, ক্রিকেটে আসেন ২০০১-০২ সালে! জাতীয় দলে ডাক পান ২০০৪ সালে।
মাত্র তৃতীয় আন্তর্জাতিক ম্যাচেই বাংলাদেশের পক্ষে ওয়ানডে তে প্রথম ৫-উইকেট পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেন তিনি। তখনকার বাংলাদেশ দলে বোলার নিয়ে ছিল টানাটানি, ১০ ওভার শেষ করানোর মত বোলার কমই ছিল। তাই আফতাব কে ডাকা হয় নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে সেই ম্যাচে। তিনিও সুযোগ টা কাজে লাগিয়ে মিডিয়াম পেসে তুলে নেন দেশের হয়ে ওয়ানডে তে প্রথম ৫-উইকেট।
সব মিলিয়ে ৮৫টি ওয়ানডে খেলা আফতাব এর সংগৃহিত রান ১৯৫৪। পঞ্চাশোর্ধ্ব ইনিংস ছিল ১৪টি, ক্যারিয়ারে উইকেট সংখ্যা মোট ১৪টি। ব্যাক্তি হিসেবে দারুন নাছোরবান্দা স্বভাবের ছিলেন তিনি। টেস্ট ক্রিকেটের জন্য তাকে অপরিনত বলা হচ্ছিল অনেক জায়গায়। তিনি সেই প্রসঙ্গে তার বক্তব্য ছিল এরকম, "টেস্ট না খেললেও চলবে, আমি আমার ব্যাটিং স্টাইল বদলাবো না।"
এর জন্য টেস্ট টাও খুব একটা খেলা হয়নি। ১৬ টেস্টে ১ ফিফটিতে মোট রান ৫৮২।
মিডল অর্ডারে দলের অন্যতম ভরসার প্রতিক হয়ে ঊঠেছিলেন ওয়ানডে তে। কিন্তু সমস্যা টা বাদে ২০০৮ সালে, আইসিএল এ খেলার জন্যে অবসর নেন জাতীয় দল থেকে। অনেকে হতভম্ব হয়ে পরেন এতে। অনেকে কষ্ট পান এই ভেবে, যে ব্যক্তি দেশের পতাকা মাথায় না বেধে মাঠে নামতেন না, সে কিভাবে টাকার জন্য দেশের প্রতিনিধিত্ব ত্যাগ করছেন?
ব্যাপারটা দুঃখজনক ই ছিল বটে। আফতাব কখনই দেশের পতাকা মাথায় না বেধে নামতেন না ব্যাট করতে। তিনি-ই টাকার জন্য দেশ কে ছেড়ে যাবেন, এটা ভাবাও কষ্টকর। এমন তো নয় যে আমাদের দেশের জিম্বাবুয়ের মত অবস্থা ছিল! হয়ত অন্য কোন কারন ছিল এর পেছনে, যা আমরা জানিনা। জানলেও, এমন কিছু থাকতে পারে বলে মনে হয়না যা দেশের প্রতিনিধিত্বের চেয়ে বড়।
আইসিএল এ খেলা ক্রিকেটারদের উপর থেকে বিসিবি নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেয়ার পর আফতাব আবার খেলার সুযোগ পান ঘড়োয়া ক্রিকেটে। কিন্তু পারফর্মেন্স টা আগের মত হয়ে উঠছিল না কোনভাবেই। কিন্তু তা সত্ত্বেও তার জাত খেলা টি-২০ এর ঘড়োয়া আসর বিপিএল এর প্রথম আসরে ঢাকা গ্ল্যাডিয়াটর্স, পরের আসরেও চিটাগং কিংস দলে নিয়েছিল তাকে। খেলার মোটামুটি সুযোগ পেলেও তেমন একটা ভাল করতে পারেননি।
২০১৪-১৫ ঘড়োয়া মৌসুম শেষ করে ক্রিকেট খেলা থেকে অবসরে চলে যান এই ক্রিকেটার। কারন হিসেবে দেখান, কোচিং এর মনোযোগ দেয়ার কথা। বর্তমানে তিনি তা-ই করছেন, ক্রিকেট কোচিং এ মন দিয়েছেন।
বয়স তার মাত্র ৩০ বছর, এই বয়সেও অনেক ক্রিকেটার দাপটে খেলে বেড়ান। তারও এরকম ভাবেই খেলার কথা ছিল। কিন্তু মাঝের আইসিএল এর উন্থান-পতন তাকে অনেক নিচে নিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও তাকে বেশ সুযোগ দেয়া হয়েছিল, তিনি সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি। তাই তার দেশের কাছে দাবি থাকার কথা না। কিন্তু আফতাব ভক্তদের দাবি অনেক থাকবে, আমরা আফতাব কে এভাবে ক্রিকেট থেকে সরে যেতে দেখতে চাইনি।
আল্লাহ আফতাব ভাই কে ভাল রাখুক