এই পোস্ট পড়ার পর আপনারা যা যা শিখবেন -
*
*
*
*
*
*
....... হৈছে, কিছু শিখতে পারলে আপনারাই ওপরের খালি জায়গায় বসায়া দিয়েন। ক্যাম্পাস বন্ধ হৈয়া যাওয়ার পর আমি কি কি করলাম এই কয়দিন এইটা কই আগে! মিলার নতুন এলবামের সবগুলা গান শুনছি,

, মিলার পোস্টার দেখার জন্য ক্যাম্পাসে গিয়া ধরা খাইছি (আকাশ_পাগলারে মাইনাস, হেয় কৈলো স্পিশাল কিছু ভার্সিটিতে নাকি মিলার বিশেষ পোজের পোস্টার লাগানো হৈছে, যেখানে তার জুতোর ওপরের কিছু ওপর থেকে বাকি অংশ নাকি তৎশহডফড (সেন্সর্ড)

)। বুঝলাম আমাগো ভার্সিটি এখনো জাতে উঠে নাই

এই পোস্ট পড়লে যা শিখতে পারবেন না সেইটা হৈল - কিভাবে পুরো রোজা "সংযমের" পর অবশেষে ঈদের দিন গার্লফ্রেন্ড নিয়া ধানমন্ডী লেকে ঈদ "সেলিব্রেট" করবেন, কিভাবে দেশের সর্বাধিক প্রচারিত প্রথম আলুর নকশা পাতায় ঈদ স্পেশাল "চিকেন ফ্রায়েড ইন সলিড সয়েবিন-ওয়েল সার্ভড উইথ চাক চাক খিরাই" রান্না করে ঈদের দিন স্যালাইন কোম্পানির কাটতি বাড়াবেন। এই পোস্টটি পড়লে আপুরা আরো জানতে পারবেন না কিভাবে ঈদের জন্য শপিং করা সাত সেট ড্রেসে ঈদের চব্বিশ ঘন্টায় সুষমভাবে নিজেকে উপস্থাপন করা যায়, ঈদের দিনটা ড্রয়িংরুমে মাটি না করে বান্ধবীদের সাথে চুটিয়ে পার্টি করা যায় (যেই যুগ আসছে বান্ধবী শ্রেয়

) ছেলেদের আফসুস খাবার লিস্ট আরো বড়, তাই ঐদিকে আর ট্রাই মারতেছিনা!
অনেকদিন ধরে ব্লগে আসা হয়না, সুখ দুখের কিছু আলাপ করতে মঞ্চাইলো, তাই ভাবলাম একটা টাইমপাস ছাইপাশ লিখি! দু:খের আলাপ অবশ্য শিরোনামেই - নিজের কামাই করা টাকা পানিতে গেলে কেমন লাগে! বাপের দেওয়া হাজার টাকা আকামে নষ্ট করার পরও এমন হয়না, কিন্তু যখন নিজের টাকা পুরাই আকামে নষ্ট হয় - তখন বুঝি টাকার মায়া কি! যাই হোক, বিস্তারিত পরে, প্রথমে কিছু পার্সোনাল বাৎচিত করি! গত পরশুদিন ভাইয়া ফোনে কনফার্ম করলো ঈদের জন্য মাসের আগেই পেয়মেন্ট (বোনাস নাই

), আমার খুশি আর দেখে কে! লাইফের প্রথম কাজ করে পয়সা পাচ্ছি (আগে অবশ্য দুই একটা সাইটে গাধার খাটনি খাটার পর নামমাত্র কিছু পকেটে আসছিল)। গতকাল ছিল পেয়মেন্টের দিন, দুপুরে হেভি বৃষ্টিতে কাকভেজা হয়ে অবশেষে টাকা হাতে পাওয়ার পর ভালৈ লাগছিল! কয়েকজন ক্লোজ ফ্রেন্ডরে না খাওয়ালে ওদের অভিশাপে ভস্ম হয়ে যাওয়ার চান্স আছে, তাই ভার্সিটির হলে গেলাম। এক ফ্রেন্ড এখনও বাড়ি যায়নাই, তার রুমে। আরেক ফ্রেন্ড আসলো একটু পরে হিন্দী একটা ছবি নিয়া, ছবির নাম "সিকান্দার"। হেভি পচানি দেওয়ার পরও ছবিটা কিন্তু দেখেই ফেলছি, আর একটা মজার ব্যাপার আছে। ছবির এক দৃশ্যে, বাচ্চা-নায়ক পিস্তল পেয়ে যায় একটা। সেটা পাওয়ার পর সে জীবনে প্রথমবারের মত অনুভব করে ক্ষমতা কি জিনিশ। ক্ষমতার স্বাদ কেমন। হাতে হাতিয়ার থাকলে একেবারে নিরীহের বুকেও যে গরিলার সাহস এসে ভর করে - এটাই থিম এখানকার, নায়কের কর্মকান্ড দেখার পর তার বান্ধবী বাচ্চা মেয়ে (এ-ই নায়িকা) হিন্দীতে কঠিন একটা ডায়ালোগ দেয়, যার সরল বাংলা হল - "এসব মেয়েদের বিষয় নয়।" কাহিনী আরেকটু এগুলো, নায়ক তার চাচাকে বলে, "চাচা, মেয়েদের মাথায় কেন এই জিনিশটা ঢুকে না যে Sometimes you need to fight for peace?" আর প্যাচাবো না, ব্লগের আপুদের দৌড়ানি খেতে চাইনা। সিনেমার ডায়ালোগ শোনার পর আমার ফ্রেন্ড কইলো, কপাল ভালো এই পোলা আমাগো লগে পড়ে না আর আমাদের "
নেত্রী" এই ছবি দেখে নাই, তাইলে তারে নিয়া আরেকখান ব্লগ লিখতে হৈত।
আরেকটা রিসেন্ট কাহিনী। ক্লাসের পোলাপানের মধ্যে ব্লগানোর স্বভাব একেবারেই নাই। তবে আমি কিছু লিখলে অনুরোধে ঢেকি গিলে সেটা তারা পড়ে (টাইম নষ্ট করার জন্য কয়বার যে গালি দেয় সেটা আর কইলাম না)। আমার ফ্রেন্ড নক কইরা বলে নসুদের কাহিনী নিয়া ব্লগ লিখ। (দ্রষ্টব্য: নসু মানে যারা বুঝেন না, তারা একটু কষ্ট কইরা উত্তর-দক্ষিণে তাকান

)। নসু এর কাহিনীর সাথে আমি জড়িত না, জড়িত হৈলে আমিই আরেকটা পাবলিক-প্রাইভেট ক্যাচাল উত্থাপন করতাম। নসুরা এই সেদিন একটা প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতার এরেন্জ করছিল, যেটার অংশগ্রহন ফি ছিল ২ হাজার টাকা! (নসু বৈলা কথা

)। অন্য সব জায়গার কনটেস্টের চাইতে নসুদের ফি হচ্ছে প্রায় ডবল। আবারো - বুঝতে হবে নসু! টাকা থাকলে আসেন, নাইলে রাস্তা মাপেন। এত ফি দেবার পর আমার ফ্রেন্ডরা পুরস্কার হিসেবে নাকি অশ্বডিম্ব পেয়েছে! সব ভার্সিটির কনটেস্টেই যারা টপ টেনে থাকে তাদের জন্য কিছু না কিছু প্রাইজ মানি থাকে, এটলিস্ট ফার্স্ট সেকেন্ড থার্ডের জন্য তো থাকেই। সেখানে নসুরা চ্যাম্পিয়নদেরও কিছু দেয়নাই, এটা শোনার পর অবশ্য আমি ফ্রেন্ডের সাথে একমত হতে পারলাম না, তোদের বুক ভরা ভালবাসা তো দিছে। অভিজাত পাড়ায় গেছোস, সৌন্দর্য্য দেখছস, আবার কি চাস!

ফ্রেন্ড আমার কথা শোনার পর পারলে আমারে মাইরা বসে, শুক্রবার দেইখা শালারা প্রোগ্রাম ফালাইছে, পুরা ক্যাম্পাসে কোন সৌন্দর্য্য নাই!
ইফতারের আধাঘন্টা আগে ধানমন্ডির দিকে গেলাম, উদ্দেশ্য ইফতার করা। সেটা পলাশীতে করলেই হোত, ধানমন্ডিতে কেন? পলাশীর মোড়ে করলে ছয়জনে খরচ হত সর্বোচ্চ দুশো টাকা, এখানে খাওয়ানোর জন্য আরেকটা শূন্য বেড়ে গেল খরচের অঙ্কে (হার্ট এটাকের ইমো) আমি একা খাওয়ালে আসলেই হার্টএটাক হোত, ইনজামও আমার মত পাপী তাই অর্ধেক তাকেও দিতে হল, আর আমিও হার্টএটাক থেকে বেচে গেলাম!

ইফতার করতে গিয়া টাসকি, কোথাও তিল ধারণের জায়গা নেই। লোকে লোকে গিজগিজ অভিজাত সব ফুডশপগুলো। এতদিন আমার ধারণা ছিল যারা বাড়ি ফিরতে পারে না তারাই ঠেকায় পড়ে বাইরে ইফতার করে, বা অফিশিয়াল কোন দাওয়াত থাকলে। এখানে দেখি ফ্যামিলি নিয়ে অনেকে টেবিল দখল করে রেখেছে। টাইট টিশার্ট থ্রি-কোয়ার্টার পড়া ডিজুস রমণী আর তাদের ইয়ো-ইয়ো বয়ফ্রেন্ডের সংখ্যাও কম না, এখানে বেশিক্ষণ থেকে শখের রোজা মাকরূহ করার কোন ইচ্ছা আমার নাই, তাই তারাতারি বার হয়ে পড়লাম। রোজা রাখতে আগে ছোটবেলায় বেশ কষ্ট হত, এখন আর হয়না। ডেইলি ২টায় ঘুম থেকে উঠলে কষ্ট কিভাবে হবে? এটা নিয়ে আগে প্রথম দিকে খানিকটা গ্লানিবোধও ছিল - পড়ে অবশ্য জানলাম রোজাদারের ঘুম ইবাদতের সমান।
"কড়াই গোস্ত" থেকে মোটামোটি দৌড়ের ওপ্রে বেড়িয়ে রাস্তার উল্টাপাশে আরেকটা দোকানে ঢুকলাম - আর কিছুক্ষণ থাকলে মানুষের চাপে আমিও কড়াইয়ে চলে যেতাম কিনা সন্দেহ । এই দোকানে কেউ নাই, শুধু মাঝের টেবিলে এক ডিজুস ললনা ছাড়া

। আর যাই হোক লুলামি জিনিশটা আমার মাঝে মোটেও নাই, সেটা বুঝতে পারলাম ললনা দোকান থেকে বেড়িয়ে যাওয়ার পরেই যখন আমিও ফ্রেন্ডদের দোকান থেকে বার করে নিয়ে গেলাম, এইখানে ইফতার না

। ছোলা পিয়াজু বেগুনি এইসবএই শালারা নিবে ৭০ টাকা। কোনো দরকার নাই। (আর দেখার মত যা ছিল সেও তো চইলা গেল

) ফাকা রাস্তা ধরে বেশ খানিকক্ষণ গরুখোজার পর জনশূন্য একটা রেস্টুরেন্ট পেলাম - নাম Fried King। কোন রাজাকে এখানে ভাজা হয়েছিল সেটা জানার সময় নাই, ইফতারের আর মাত্র মিনিট বাকি। ভেতরটা মোটামোটি ছিমছাম, আর আশার কথা হল একটা ফ্যামিলি ছাড়া আর কেউ নেই। আড্ডা মারার জন্য পারফেক্ট! পরের এক ঘন্টা অবশ্য কাটলো জটিল। অনেকদিন পর সিরিয়াস রকমের মজা হল, আর আড্ডাও সেইরাম! অনেকদিন পর পুরা কুউউউল একটা আড্ডা, বিল নিয়ে আসার পর হার্টফেইল ঠেকানোর পিছে এরও অবদান কম না!
নিজের খাওয়ার পেছনে তো বহুত ঢাললাম, এবার আমার সারাদিনের সংগী কম্পুটাকে কিছু না খাওয়ালে ঈদটাই মাটি! ঈদে কম্পুর জন্য নতুন জামা থুক্কু হার্ডডিস্ক কিনা দরকার - মুভি আর সিরিয়ালের ঠেলায় পুরোন হার্ডডিস্ক পুরো ভর্তি। ৩২০ গিগা হার্ডডিস্ক ৩২০০ টাকায় প্রায় কিনে ফেলছিলাম, শেষ মুহুর্তে যদি না জানতে পারতাম ৫০০ গিগার দাম ৪০০০! মানে মাত্র ৮০০ টাকা ভরলে ১৮০ গিগা এক্সট্রা! আর পায় কে! ৫০০ গিগা একটা কিনে ফেললাম, এবার একটা সাটা-টু-ইউ.এস.বি কনভার্টর কেনার কথা, তাইলে এক্সটার্নাল পাওয়ার দিয়ে আমার দুটো কম্পিউটারেই লাগাতে পারবো (দুইজনেরই ঈদ হয়ে যাবে - এক জামাতেই, খারাপ কি!) । ৫০০ টাকা দিয়ে কনভার্টর আর এডাপটার কিনলাম, ওয়ারেন্টি নাই। বাসায় এসে নতুন কেনা হার্ডডিস্ক কনভার্টর দিয়ে ল্যাপটপে লাগিয়ে কপি করা শুর করলাম। হঠাৎ ফুট্টুস, আর পোড়া গন্ধ। এডাপ্টর তো জ্বলে নাই, আমার সাধের পাচশো টাকার নোটটা যেন জ্বলছে। কপাল ভালো হার্ডডিস্কটারেও জ্বালায় দেয়নাই, এই সান্তনা দিতে দিতে ডেস্কটপ-কম্পিউটারটার কেসিং খুলে মাদারবোর্ডের সাথে হার্ডডিস্ক লাগিয়ে দিলাম। ল্যাপটপের জন্য খারাপই লাগছিল, বেচারার এইবার আর ঈদ করা হল না।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৯ দুপুর ২:৪৫