somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কল্পকাহিনী: স্মৃতি (২)

০৮ ই ডিসেম্বর, ২০০৯ রাত ১০:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আগের পর্ব

প্রযুক্তি মেলায় যে ব্যাপারটা ঘটল, সেটা নি:সন্দেহে চমকপ্রদ। কিন্তু আমি এই ব্যাপারটা আর রিয়ানাকে জানাতে কেন জানি সাহস পাচ্ছিলাম না। কেমন জানি অস্বস্তি লাগছিলো একটা। মাথাভর্তি একরাশ প্রশ্ন নিয়ে আমি সেদিন পুরো বিকেলটা প্রযুক্তি মেলায় পড়ে থাকলাম। রোবট স্টলটার লোকগুলো আমাকে ঘাটানোর আগেই সেখান থেকে সড়ে পড়েছি, কেন জানি মনে হচ্ছিলো কৌতুহল প্রকাশ করার জন্য এটা উপযুক্ত জায়গা নয়।

পরের দিন সকালে টেবিলে বসে খাবার গুলো চামচ দিয়ে ইতস্তত: নাড়াচাড়া করছিলাম। রিয়ানা বিষয়টা খেয়াল করে আমার কাছে এসে বলল, তোমাকে এরকম অস্থির লাগছে কেন? কাল মেলায় গিয়েছিলে, সেখানে কোন কিছু হয়েছে?

আমি এড়িয়ে গিয়ে বললাম, না রিয়ানা সেরকম কোন ব্যাপার না। হয়েছে কি, গ্রামে পুরোই হাপিয়ে উঠছি। শহর থেকে একটু ঘুরে এলে কেমন হয়?

রিয়ানা আমাকে শহরে যেতে দেওয়ার ব্যাপারে ১০০টা আপত্তি তুললো। কারণটা হল, সে আমাকে কখনোই শহরে যেতে দেখিনি। অনেক কষ্টে তাকে রাজি করিয়ে বেশকিছু ইউনিট ধার করে ফেললাম। গ্রাম থেকে শহরে যাওয়া যাবে পাবলিক ভার্বালে, সময়ও বেশি একটা লাগলো না। শহরে এসেই সোজা চলে এলাম সেন্ট্রাল লাইব্রেরীতে।

লাইব্রেরীতে ঢোকার পর হার্টবিট খুব দ্রুত বেড়ে গেল। নির্জন এক কোনায় বসে লাইব্রেরীর পাবলিক চ্যানেলে একশোটা বইখুলে এর মাঝে ডুবে গেলাম। উত্তেজনায় বুক ধকধক করছে, রবোটিক্স এর গভীরে ঢুকছি যত, মাথার ভেতরে যেন একের পর এক দরজা খুলে যাচ্ছে। বিকেলের মধ্যে আমি কপোট্রনের রিকিভ সার্কিট শেষ করে ফেললাম। এরপরই দেখাগেল সমস্যা... এডভান্সড লেভেলের টপিকগুলো পাবলিক চ্যানেলে পাওয়া যাবে না।

লাইব্রেরী থেকে বেড়িয়ে আসলাম যখন তখন দিনের আলোর বদলে রেডনের আলোয় শহর ঝকঝক করছে। আশ্চর্যের সাথে খেয়াল করলাম, এই আলো আমার পরিচিত। শহরের এই ব্যস্ততা আমি আগে কোথাও দেখেছি। হতে পারে কল্পনায়। কিন্তু আসলেই কি তাই? নাকি স্মৃতির সাথে লুকোচুরি খেলায় আমার মস্তিষ্ক বিভ্রান্ত?

লাইব্রেরীর সামনে অনেকক্ষণ ইতস্তত: ঘোরাঘোরির পর কাজের কাজটি হল, পুলিশ এসে জেরা করা শুরু করলো। ট্রাকিওশান টা চেক করে পাশের মহিলা পুলিশটিকে বললো, গ্রাম থেকে নতুন আসলে যেমন হয়, পলিমারের চিংড়ি খোসা সুদ্ধো খেয়ে ফেলে... হাহাহা।

মহিলা পুলিশটির চোখে মুখে একধরণের কাঠিন্য এসে পড়েছে, সে রসিকতায় মজা পেল না। পুলিশগুলো চলে যেতেই আমি লাইব্রেরীর কাছে চলে এলাম। চুরাশি তলায় রবোআর্কাইভের লাইব্রেরীয়ান আমাকে আটকাটেই পকেট থেকে ব্যাজ টা বের করে দেখিয়ে বললাম স্পেশাল সিকিউরিটি এজেন্ট। ব্যস্ত হবার কিছু নেই, লগ পরীক্ষা করবো, তোমাদের আর্কাইভ নেটওয়ার্কে নাকি আজকাল গাও-গেরামের ছেলেপেলেরাও অবৈধভাবে ঢুকে পড়ছে!

লাইব্রেরীয়ান আমার ব্যাজটা দেখে ভ্রু কুচকে তাকালো, তবে ঝামেলা না করে আমাকে লগ টেবিলে এক্সেস দিয়ে দিলো। নেটওয়ার্কের লগ টেবিলটা দেখতে দেখতে তাল হারিয়ে ফেলছিলাম, হঠাৎ দেখলাম কোনায় সার্চবার আছে। সায়েন্টিটস লিখে সার্চ দিতেই আমাকে নিয়ে গেলো সায়েন্টিস্টদের লগ টেবিলে। আমি খেয়াল করছিলাম রবোটিক্স নিয়ে কাজ করা বিজ্ঞানীদের চ্যানেলগুলো। কিন্তু সবই গতবাধা সাধারণ চ্যানেল। আমি খুব তাড়াতাড়ি বিরক্ত হয়ে গেলাম। এসবতো বিকেলেই আমি শেষ করে এসেছি আধা ঘন্টায়! ইতস্তত: সার্চ দিতে থাকলাম। হঠাৎ কি মনে হল, বিড়বিড় করে বললাম, কপোট্রয়েড।

ম্যাজিক ঘটলো। নেটওয়ার্কে মুহূর্তেই চলে এলো নতুন একটি চ্যানেল, স্বয়ংক্রিয় রবোট কন্ঠে সুকন্ঠী বিড়বিড় করে বললো, কপোট্রয়েড চ্যানেলে আপনাকে স্বাগতম।
সর্বোচ্চ বিজ্ঞান কাউন্সিলের মাত্রাতিরিক্ত জিনিয়াসদের সখ করে কপোট্রয়েড বলা হত, আশ্চর্যজনক ভাবে আমার মনে পড়েছে।

চ্যানেল খুলে যেতেই আমি ঝাপিয়ে পড়লাম হলোগ্রাফিক স্ক্রীনটার ওপরে। স্রীনের সামনে আঙ্গুল এতো দ্রুত চলছিল যে লেজার ট্র‌্যাকার গুলো সিগনাল ধরতে পারছিলনা ঠিকমত। কিন্তু কপোট্রন নিয়ে আরেকটু সামনে এগুতেই কেমন জানি মাথা তালগোল পাকিয়ে গেল। কিছুই বুঝতে পারছি না। হঠাৎ মনে হল, কপোট্রন নিয়ে আর বেশি পড়াশোনা হয়তো আমার করা হয়নি। তাহলে? আমি কি অন্য কিছু নিয়ে গবেষণা করছিলাম? মজার ব্যাপার হল, আমি এখন পুরোপুরি নি:সন্দেহ আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েটদের থেকেও বেশি জ্ঞান রাখি। কিভাবে জানি না। কিন্তু সামহাউ- আই জাস্ট নো। স্মৃতি আমার সাথে খুব হাস্যকর রকমের খেলা শুরু করেছে। সেই খেলার বড় একজন খেলোয়ার হল রিয়ানা। যার সাথে আমার এতদিনের সম্পর্ক শুধু অবিশ্বাসের।

হটাৎ কি খেয়াল হল, রবোটের মাথা থেকে মানুষের মাথা নিয়ে পড়াশোনা শুরু করলাম। নিউরাল নেটওয়ার্ক নিয়ে একটু এগতেই আমার আর কোন সন্দেহের অবকাশ রইলো না যে, এটিই ছিল আমার গবেষণার বিষয়বস্তু। আর্কাইভ ঘরে বসে স্ম্বতির হাতড়ে বেড়ানো এই যুবকের সাথে ভাগ্যের এত নির্মম পরিহাস কেন? আমার আজ থাকার কথা কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান কাউন্সিলের সর্বোচ্চ কমিটিতে। আর আমি কোথায়? হাজার বছরের পুরোনো সেই গ্রামে! পড়ন্ত বিকেলে পাতা কুড়োতে। রিয়ানার সাথে আমি কত আবেগ ভাগাভাগি করেছি ভাবতেই অন্ধ একটা আক্রোশ আমার মাথায় রক্ত উঠিয়ে দিল। কে এই রিয়ানা? আমি অজপাড়াগায়ের এক মূর্খ যুবক এই বিশ্বাস দিতে যে ব্যস্ত ছিল এক যুগ ধরে।

ভোরের আলো এর মাঝেই ফুটে উঠতে শুরু করেছে। আমার শরীর জুড়ে এক ফোটাও শক্তি নেই কিন্তু মাথাটা আশ্চর্য রকমের সতেজ। শরীরের পজিশনের সাথে ফ্লেক্সিবল চেয়ারটা থেকে কোন মতে উঠে দাড়াতে গিয়েই ধপ করে আবার বসে পড়লাম। আধাস্বচ্ছ লিট্রিয়ামের দরজার ওপাশে দুটো আলো খেলা করছে। আমি চেয়ার ছেড়ে উঠে দাড়াতে দাড়াতেই দরজা খুলে গেল।

সন্ধ্যার সেই পুলিশটা হাতের আলোটা আমার দিকে ছুড়ে দিয়ে পুরো বোকা হয়ে গেল। পাশের কঠিন চেহারার মহিলা পুলিশটার মুখে তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে সহকর্মীর দিকে ফিরে বললো, এ পলিমারের চিংড়ি খেতে আসা চিড়িয়া নয়।

চলবে।

পরের পর্ব
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ডিসেম্বর, ২০০৯ বিকাল ৩:৩৮
১২টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×