somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছোট গল্পঃ জনম জনম।

২০ শে মার্চ, ২০১৫ রাত ১১:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঘড়িটা ঠিক সাড়ে সাত মিনিট স্লো। এখন দেখাচ্ছে রাত একটা পঞ্চান্ন, তারমানে দুইটা বেজে আড়াই মিনিট। শিমুল বই বন্ধ করে একটা সিগারেট ধরালো। দুই টাকা দামের সস্তা হলিউড সিগারেট। স্বাদ, কটু গন্ধ, আর ফুসফুস নিংড়ে নেয়া কাশির কথা ছেড়ে দিলে, বিড়ির সাথে পার্থক্য একটাই, দয়া করে প্রত্যেকটা সিগারেটের পশ্চাদে নামমাত্র একটা ফিল্টার জুড়ে দেয়া আছে।

আজকাল পয়সা খরচের ব্যপারে শিমুল মাত্রাতিরিক্ত সচেতন হয়ে উঠেছে। মোবাইলে মেগাবাইট কেনা বাদ দিয়েছে একেবারেই। প্রতিমাসে ভ্যাট সহ শ'তিনেক টাকা বেঁচে যায় তাতে। ইন্টারনেট ব্যবহার করবার নেহায়েত দরকার পড়লে, জুতো মোজা পায়ে গলিয়ে রেডি হয়ে যায় সে। বেরিয়ে পড়ে, সতেরো মিনিট হাঁটলেই বেইলি রোডে পৌঁছানো যায়। ওখানের নামজাদা শপিং মল গুলোর থেকে আগের মতোন কিছু কেনার ক্ষমতা না থাকলেও, গম্ভীর মুখে এসি দোকান গুলোতে ঘোরাফেরা করে। উদ্দেশ্য আর কিছুই না, ফ্রি ওয়াইফাই।

দশটাকা দামের বেনসন লাইট ছাড়া অন্য কিছু শিমুলের মুখে রুচতো না এককালে। মাঝে মাঝে স্বাদবদলের জন্য মেনথল দেয়া বেনসন সুইচ। বন্ধুদের আড্ডায় পকেটের আস্ত প্যাকেট উৎসর্গ করতেও দুবার ভাবে নি সে কখনো। এখন বেনসনের বদলে হলিউড ফোঁকা হয়। জীবনে ফোনের ব্যালেন্স চেক করার প্রয়োজন বোধ করে নি। সেই ছেলেটা এখন প্রতিদিন গুনে গুনে এগারো টাকা টপআপ করে। নয় টাকা দিয়ে ছত্রিশ মিনিট টকটাইম কেনে এয়ারটেল থেকে, আর দেড় টাকা ভ্যাট বাবদ যায়, পঞ্চাশ পয়সা বাকী থাকে, সেটা দিয়ে একটা এসএমএস করা যায় - সব হিসেব করা !

কফি খাওয়া বাদ দিয়েছে ম্যালা দিন। চায়ের সাথে চিনিও বাদ, কেউ জিজ্ঞেস করলে বলে চিনি ছাড়া চায়ে জীবন দীর্ঘায়িত হয়। রোজ বিকালে ভেজিটেবল নুডুলস বা একপিস ফ্রায়েড চিকেন চেনা জিভটা, নিদেন পক্ষে পুরি- পেঁয়াজুর গন্ধ ভালোবাসা মানুষটা, আজকাল পেঁয়াজ, কাঁচামরিচ আর জবজবে শর্ষের তেলে মেখে নেয়া মুড়িতেই সন্তুষ্ট হয়ে যায়।

মগবাজার থেকে উত্তরা আজমপুর ঠিক কুড়ি টাকা বাস ভাড়া। সপ্তাহের ছ'টা দিন, পাষাণের মতো পয়সা বাঁচিয়ে শিমুল অপেক্ষায় থাকে সপ্তম দিনটার। স্টুডেন্ট ভাড়া নিয়ে কন্ডাকটরের সাথে ছ্যাঁচড়ার মতো ঝগড়া করে প্রতি শুক্রবারে। নুসরাতের সেদিন স্কুল ছুটি। একগাদা বাচ্চাকাচ্চার মধ্যে থাকতে ভালোবাসে বলে শিমুলই বলেছে চাকরিটা নিয়ে নিতে। বাস স্টান্ড থেকে ওর বাসা আবার প্রায় চল্লিশটাকা ভাড়া, রিকশাওয়ালাকে পঁয়ত্রিশে রাজি করাতে শিমুল প্রাণান্তকর চেষ্টা করতে থাকে। রিকশায় উঠেই দ্রুত একবার মানিব্যাগে চোখ বুলিয়ে নেয় সে, আবার ফিরতেও হবে একই পথে। পঞ্চান্ন নাম্বার বিল্ডিং এর সামনে এসে একটা এয়ারটেল নাম্বারে মিসডকল দেয় সে। বাসায় কিছু একটা বলে মেয়েটা বের হয়, চোখে গাঢ় করে কাজল দেয়া থাকে, মুখে হালকা প্রসাধন। দমবন্ধ হয়ে আসে মেয়েটাকে দেখলেই। এতো রূপ ! শিমুল পলক ফেলতে ভুলে যায়।

পাছে কেউ দেখে ফেলে, এই ভয়ে বড়ো রাস্তা পর্যন্ত ওরা আলাদা হেঁটে আসে, একজন আরেকজনের থেকে একটু দুরত্বে। এরপর রিকশা নিয়ে নেয় দুজনে। হুড তুলে দেবার কথা বলে শিমুল কিছুক্ষণ খ্যাপায় মেয়েটাকে। নুসরাতের ফরসা গালে রক্ত জমে, লজ্জায় সে আরেকদিকে তাকিয়ে থাকে। ঘন্টাখানেক মুক্ত বাতাস আর দুটা আইসক্রীম খাওয়া শেষে, রিকশা যখন গলির সামনে থামে, তখন নুসরাতের পার্স বের করা দেখে কাঁচুমাচু মুখে শিমুল বলে, চাকরীটা হুট করে চলে গেলো বলে...। দেখো, সামনের মাসে কিছু একটা ঠিক ঠিক পেয়ে যাবো। নুসরাত হেসে উত্তর দেয়, ফাইনাল পরীক্ষাটা ভালো করে দাও বাবু, তারপর চাকরী খুঁজো, এখন না।

রাত দুটা বেজে একত্রিশ। শিমুলের খেয়াল হলো, সে বইয়ের ওপরে রাখা পাসপোর্ট সাইজের ছবিটার দিকে তাকিয়ে আছে। ভার্সিটির ফর্ম ফিলআপের সময় তোলা নুসরাতের ছবি। মোবাইলটা হাতে নিলো সে, ওয়ালপেপারে বেড়ালের মতো গাল ফুলিয়ে দুষ্টুমি করছে মেয়েটা। শিমুলের প্রচন্ড ইচ্ছে হলো একটু ফোন দেয়, একবার কন্ঠটা শোনে। কিন্তু সে ডায়াল করলো না, জানে লাভ নেই। সেই ছত্রিশ মিনিট তো ফুরিয়েছে সন্ধ্যেবেলাতেই।

চোখ বন্ধ করে শিমুল, কল্পনায় দেখে ঢোলা পাজামা আর কাঁচাপাতা রঙ টিশার্ট গায়ে নুসরাত শুয়ে আছে, একটা হাত মাথার নিচে। নিয়মিত ধীর নিশ্বাসপ্রশ্বাস এর সাথে ওঠা নামা করছে সুগঠিত বুক। দীঘল চুল এলিয়ে এসে ঢেকে দিয়েছে চোখ আর গালের খানিকটা। আঙুল কথা শুনতে চায় না, একটা দুর্দমনীয় ইচ্ছে চলে আসে চুলগুলো সরিয়ে মুখটা একবার দেখার।

শিমুল চোখ মেলে, হাসে। সকালে পরীক্ষা। বইটা চোখের সামনে মেলে ধরে।


পাগলী আমার ঘুমিয়ে পড়েছে
মুঠোফোন তাই শান্ত,
আমি রাত জেগে দিচ্ছি পাহারা
মুঠোফোনের এই প্রান্ত ।
এ কথা যদি সে জানতো ?
আমিও দিই না জানতে,
কবির প্রেম তো এরকমই হয় -
পান্তা ফুরায় নুন আনতে ।
হে চির-অধরা আমার,
তুমি তো সে'কথা জানতে ।
১০টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৩:০৬

অবশেষে মিল্টন সমাদ্দারকে গ্রেফতার করেছে ডিবি। এবং প্রেস ব্রিফিংয়ে ডিবি জানিয়েছে সে ছোটবেলা থেকেই বদমাইশ ছিল। নিজের বাপকে পিটিয়েছে, এবং যে ওষুধের দোকানে কাজ করতো, সেখানেই ওষুধ চুরি করে ধরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×