রাজাকার ফাসির দাবীতে সোচ্চার শাহবাগ সহ দেশ বিদেশের বিভিন্ন জায়গার চলমান আন্দোলনের খবর শুনছিলাম অপেক্ষা করছিলাম লন্ডনেও এমন কিছু হয় কিনা। অবশেষে গতকাল রাতে হঠাৎ করেই ফেসবুকে একটি ইভেন্ট থেকে জানতে পারি শাহবাগের আন্দোলনের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করতে শুক্রবার আলতাব আলী পার্কে থাকার ডাক দেয়া হয়েছে। সাথে সাথেই টেক্সট মেসেজে বন্ধু বান্ধবকে ব্যাপারটা জানিয়ে দেই। সবাই তখন চরম উৎসাহ দেখালেও শেষ পর্যন্ত একজন আমার দাওয়াত কবুল করেছে সে যাইহোক একজনই বা কম কিসে?
দুপুর ২টা থেকে শুরুর হওয়ার কথা থাকলেও আমার সেখানে পৌছতে একটু দেরি হয়ে যায়। ততক্ষনে দাবী আদায়ের স্লোগান পুরো দমে শুরু হয়ে গেছে। এত মানুষ দেখে মন ভরে উঠল। বেশ কয়েক জায়গা থেকে স্লোগান দেয়া হচ্ছিল।
আমি প্রথম যেই দলের ভিতর ঢুকে গলা ছাড়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম হঠাৎ লক্ষকরলাম সেইখান থেকে আওয়ামী বিরোধী এবং রাজাকারদের পক্ষে স্লোগন দেয়া হচ্ছে। ভেবে পাচ্ছিলাম না কি হচ্ছে। কিছুক্ষন পর পাশে থাকা বন্ধু বলে ঐপাশের মানুষগুলির হাতে রাজাকার বিরোধী ব্যানার দেখা যাচ্ছে আর দেখেন মাঝখানে পুলিশের ব্যারিকেড। বুঝলাম যে জামাত-শিবিরও এইখানে অবস্থান নিয়েছে। আর একই জায়গায় দুই দলের সমাবেশ হওয়ায় ঝামেলা এড়াতে পুলিশ মাঝে ব্যারিকেড হয়ে আছে।
দ্রুত সেখান থেকে সরে এসে মূল আন্দোলন কারীদের সাথে মিশে গলা মেলানো শুরুকরলাম এবং প্রায় শেষ পর্যন্ত সেখানেই ছিলাম।
আন্দোলনরত সবাই বেশ স্বতঃস্ফূর্ত ছিল। যারা ছিলেন কেউই এক মুহূর্তের জন্য থেমে পড়েন নি। কখনো রক্ত গরম করা স্লোগান তো আবার কখনো চির সবুজ বাংলার গন সঙ্গীত।
চিন্তা করে বেশ ভালো লাগছিল যে কোন রকম স্বার্থ চিন্তা ছাড়াই উইকডেতে এতগুলি মানুষ এসে জড়ো হয়েছে শুধু মাত্র দেশ মাতৃকার টানে।
শুক্রবার এবং পাশেই ইস্ট লন্ডন মসজিদ হওয়ায় জামাত শিবিরের লোকজন জুম্মার পর পরই এসে পার্কের শহীদ মিনার দখলে নিয়ে রাখে এবং আন্দোলন চলাকালীন ডিম ছুড়ে মারা সহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বাধা প্রদানের চেষ্টা করতে থাকে। কিন্তু তবুও কোনরুপ পালটা আক্রমনত্মক বক্তব্য ছাড়াই আমাদের ছিল পুরোপুরি অর্থবহ এবং শান্তিপূর্ণ অবস্থান। সন্ধ্যা ৮টার দিকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় পুলিশের সাহায্যে শহীদ মিনারে পুস্পস্তাবক অর্পণ ও জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে আজকের কর্মসূচীর সমাপ্তি হবে।
সাড়ে আটটায় পুলিশ শহীদ মিনার থেকে জামাত-শিবির কর্মীদের শহীদ মিনার থেকে নামিয়ে দিয়ে পুস্পস্তাবক অর্পণের জন্য খালি করে দেয়- এবং জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মাধ্যমে আজকের কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘোসনা করা হয় এবং শহীদ মিনার ত্যাগ করা হয়।
অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাঃ- যদিও আমরা, পার্সোনাল্লি আমি কোন দল বা সংগঠনের পক্ষ থেকে সেখানে যাইনি তারপরও পুরো সময় জুড়েই জামাত-শিবির কর্মীরা আমাদের লক্ষ করে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগকে নানান উস্কানিমূলক বক্তব্য দিতে থাকে। এবং ডিম ছুড়ে মারে। পাল্টা জবাব দেয়ার মত সুযোগ থাকলেও সবাই তা সহ্য করে নিয়ছে।
এবং সর্বশেষ শহীদ মিনারে ফুল রেখে বেড়িয়ে আশার সময় পেছন থেকে আমাদের এক ভাইয়ের উপর অতর্কিত হামলে পড়ে তাকে মাটিয়ে ফেলে দেয়, পুলিশ তাকে ঘিরে রাখায় এবং সামনে যেতে না দেয়ায় তার বিষয়ে জানতে পারি নি।
এরপর পার্ক থেকে বেড়িয়ে আশার পর পেছন থেকে আরেক ভাইয়ের উপর আরেক শিবির কর্মী এসে হামলে পড়ে তাকে মাড়তে উদ্যত হয় এবং সর্বশেষ জানতে পাড়ি সমাবেশের পর একা পেয়ে আমাদের এক ভাইকে জামাত ধরে নিয়ে গেছে । এ ব্যাপারে পুলিশের সাথে কথা হয়েছে নিশ্চই এ ব্যাপারে ব্যাবস্থা নেয়া হবে।
লক্ষনীয়ঃ- পুরো সমাবেশের সময় জুড়ে জামাতের কর্মকান্ড ছিল বেশ আক্রমনাত্মক এবং জামাত আমাদের উপর আক্রমন করেছে শত শত পুলিশের সামনে।