শেখ হাসিনা সরকারের প্রতি অনেকের অনেক রাগ। তারা বলছে এ সরকার পাল্টাতে হবে। এ সরকার এর মধ্যে একাধারে এক যুগ পার করেছে। কিন্তু এ সরকার পরিবর্তন করলে উপকার হবে কি?
আরব বসন্ত হলো। দখিনার মিস্টি হাওযায় যুগ পার করা সাদ্দাম, মোরাবরক ও গাদ্দাফী সরকার পাল্টে গেল। কিন্তু আরবরা বুঝতে পারেনি বসন্তের পরেই কাল বৈশাখী শুরু হয়। সেই ঝড়ে ইরাক, সিরিয়া, মিশর ও লিবিয়া লন্ড-ভন্ড হয়ে গেল। বসন্তের কালো কোকিলেরা কুহু কুহু করে তাদের জাতির ভীষন উপকার করলো! এতে ইরাক, সিরিয়া ও লিবিয়ার যা ক্ষতি হলো তা’ একশ বছরে পূরন হবে কিনা সন্দেহ।
হযরত ওসমানের (রা.) সরকারের বয়স হয়ে ছিল বার বছর। তাঁর সরকার পরিবর্তন করে বিদ্রোহীরা হযরত আলীর (রা.) সরকার স্থাপন করলো। তাদের খায়েস অনুযায়ী হযরত আবু বকরের (রা.) ছেলে মোহাম্মদকে মিশরের গভর্ণর করা হলো। মিশরের জনগণ তাকে পা দিয়ে মাড়িয়ে মেরে ফেল্ল। অতঃপর হযরত ওসমান (রা.) হত্যা সৃষ্ট ফিতনায় হাজার হাজার মুসলমান যুদ্ধ করে নিহত হলো। খেলাফত ভেঙ্গে দু’ভাগে বিভক্ত হলো। অতঃপর সেই বিদ্রোহীদের ঘাড়ে নব্বই বছরের জন্য উমাইয়া শাসন চেপে বসলো। সুতরাং পরিবর্তনকারীদের কপালে হাহাকার ছাড়া কিছুই ঝুটে নাই। শেখ হাসিনা সরকার পরিবর্তনে আমাদেরকে হাহাকার উপহার দিবে কি? আফসুস করে লোকে বলবে কি, শেখ হাসিনা সরকার পরিবর্তন করার চেয়ে না করাই ভালো ছিল।শেখ হাসিনা সরকারের পরিবর্তনের ডাকে পাবলিক এখন সেটাই ভাবছে। মরার কোকিল যতই পাকলিকের ঘুম ভাঙ্গানোর চেষ্টা করছে ততই পাবলিক যেন আরো বেশী ঘুমিয়ে পড়ছে। শীতের পরেই বসন্ত এবং বৈশাখ। পাবলিক তা’ ঘুমিয়ে পার করে হয়ত শরতে বলবে, হাই শেখ হাসিনা সরকার সামনে বাড়াও। রাস্তা এখনো অনেক দূর।
সরকারের কিছু ভুল আছে। সভাসমাবেশ করে সরকারকারকে সেসব কথা জানিয়ে দেওয়াতে কোন সমস্যা নেই। রাজনৈতিক দল জাতির মঙ্গলের জন্য কাজ করবে তাতে সমস্যা নেই। তা’ না করে ক্ষমতার দড়ি ধরে টানাটানি কেন? কথায় বলে লোভে পাপ পাপে মৃত্যূ। এরা খেয়েছে। পেট ভরা আছে। সামনে কম খাবে। সে স্থানে একযুগের বেশী সময়ের অভূক্ত বসিয়ে দিলে ঘটনা কি হবে? তারা খাবে না জাতিকে দিবে?
এরপর আছে ইসলাম কায়েমের বিষয়। তো ইসলামের পঞ্চ ভিত্তি কালেমা, নামাজ, রোজা, হ্জ্জ ও যাকাত কায়েম হয়েছে কি? তাহলে ইসলাম কিসের উপর কায়েম হবে? তারা বলছে ইসলাম কায়েম করে তারপর ভিত্তি কায়েম করবে। তারমানে কিছু দূর গিয়ে তারপর রওয়ানা হবে? আরে খুঁটি দাঁড় না করে কখনো ঘর তৈরী হয় কি? রাসূল (সা.) মদীনার জনগণের সর্ববৃহৎ দলের মধ্যে ইসলামের ভিত্তি কায়েম করেছেন তারপর সেথায় দীন কায়েম করেছেন। রাসূলের (সা.) তরিকা ছাড়া পৃথিবীর কোথাও ইসলাম কায়েম হয়নি এবং হবেও না। এখন ইসলাম কায়েম কারীদের কাজ হলো রাসূলের (সা.) তরিকায় প্রতি মসজিদে প্রতি নামাজের পর সময় উপযোগী কোরআন ও হাদিসের তালিম করা। অতঃপর দেশের জনগণের সর্ববৃহৎ দলের মধ্যে নামাজ পাকাপোক্তভাবে কায়েম হলে দেখতে হবে দেশ থেকে অপছন্দনীয় কাজ দূর হয়েছে কি? তেমন পরিবেশ সৃষ্টির পর ইসলাম কায়েমের চেষ্টা চলবে। তার আগে ইসলাম কায়ের চেষ্টা পন্ড শ্রম ছাড়া কিছুই নয়। আপাতত ইসলাম কায়েমের জন্য শেখ হাসিনা সরকারের পরিবর্তনের মূলত কোন দরকার নেই। কারণ শেখ হাসিনার সরকারের পরিবর্তনের পর ঐরকম আরেকটা সরকার ক্ষমতায় আসলে ইসলাম পন্থীদের লাভ কি?
তারা ইসলাম পন্থীদেরকে খোঁচায় আর বলে, ইসলাম পন্থীরা শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে কিছু বলে না কেন? অমনি ইসলাম পন্থীদের কিছু আবেগী শুরু করে মানি না মানি না। কাছে যদি গিয়ে কেউ জিজ্ঞাস করে কি মানিস না? তখন বলে জানি না জানি না। এরপর সরকার তাদেরকে নিয়ে খাঁচা ভরে। তখন জনগণ কাঁদে। আহারে কি সরল লোক ছিল, তাকে কেন খাঁচা ভরলো? সরল তো বুঝলাম তবে মানি না বলে কান ঝালাপালা করছিল কেন? সুতরাং কয়দিন সরকারী খানা খেয়ে আসুক! আর তাতে জানুক কেন মানি না বলে ছিল।
সাকুল্য কথা হলো উত্তম জীবনের সম্ভাবনা না থাকলে সরকার পরিবর্তনের মূলত কোন দরকার নাই। কূ-লোকের কথায় কান দিয়ে দেশের ক্ষতি করা জনগণের সঠিক কাজ হবে না। শেখ হাসিনা সরকারের পর কারা সরকারে আসবে তারা জনগণের কি উপকার করবে তারা আগে জনগণকে সেটা বুঝাক। জনগণ যদি বুঝে যে তারা সঠিক বলছে তাহলে জনগণ না হয় তাদের কথায় সাড়া দেবে। ভোট একটা দিতে না পারলে এমন মহাভারত অশুদ্ধ হয় না। এরজন্য একটা সরকার টেনে ফেলে দেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ নয়।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জানুয়ারি, ২০২৩ সকাল ১০:৪১