সূরাঃ ৩৩ আহযাব, ৩২ নং ও ৩৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩২। হে নবী পত্নিগণ! তোমরা অন্য নারীদের মত নও। যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর তবে পর পুরুষের সহিত কোমল কন্ঠে এমনভাবে কথা বলবে না, যাতে অন্তরে যার ব্যাধী আছে, সে প্রলুব্ধ হয়। আর তোমরা ন্যায় সঙ্গত কথা বলবে।
৩৩। আর তোমরা নিজগৃহে অবস্থান করবে এবং প্রচীন যুগের মত নিজদিগকে প্রদর্শন করে বেড়াবে না।তোমরা সালাত কায়েম করবে ও যাকাত প্রদান করবে। আর আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অনুগত থাকবে। হে আহলে বায়াত (নবি পরিবার)! নিশ্চয়ই আল্লাহ চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদেরকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র করতে।
সূরাঃ ৪ নিসার ৩৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩৪। পুরুষ নারীরকর্তা। কারণ আল্লাহ তাদের একজনকে অন্যের উপর মর্যাদা দান করেছেন।আর তা’ এজন্য যে তারা তাদের সম্পদ ব্যয় করে। সুতরাং নেককার স্ত্রীগণ অনুগত, আল্লাহর অদৃশ্য হেফাজতের বিষয়ের হেফাজতকারী। তাদের যাদের অবাধ্যতার আশংকা করবে তাদেরকে সদুপদেশ দাও, তারপর তাদের বিছানা আলাদা কর, আর তাদের প্রহার কর।তারা যদি তোমাদের অনুগত হয়ে যায় তবে তাদের বিরুদ্ধে কোন পথ তালাশ করবে না।নিশ্চয়ই আল্লাহ মহান শ্রেষ্ট।
৩৫। তাদের মধ্যে বিরোধের আশংকা করলে তার পরিবার হতে একজন এবং ওর পরিবার হতে একজন সালিস নিযুক্ত করবে।তারা উভয়ে নিস্পত্তি চাইলে আল্লাহ তাদের মধ্যে মীমাংসার অনুকূল অবস্থা সৃষ্টি করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব জানেন, সব কিছুর খবর রাখেন।
সূরাঃ ৬২ জুমুআ, ১০ নং আয়াতের অনুবাদ।
১০। সালাত সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়বে এবং আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান করবে। আর আল্লাহর অধিক যিকির করবে যাতে তোমরা সফলকাম হও।
সূরাঃ ২ বাকারা, ২৮৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৮৬। আল্লাহ কারোউপর এমন কোন কষ্ট দায়ক দায়িত্ব অর্পণ করেন না যা তার সাধ্যাতীত।সে ভাল যা উপার্জন করে তার প্রতিফল তার। সে মন্দ যা উপার্জন করে তার প্রতিফল তার। হে আমাদের প্রতিপালক যদি আমরা ভুলে যাই অথবা আমাদের ত্রুটি হয় তবে আমাদেরকে পাকড়াও করো না। হে আমাদের প্রতিপালক আমাদের পূর্ববর্তিগণের উপর যেমন গুরু দায়িত্ব অর্পণ করেছিলে আমাদের উপর তেমন দায়িত্ব অর্পণ করবেন না।হে আমাদের প্রতিপালক এমন ভার আমাদের উপর অর্পণ করবেন না যা বহন করার শক্তি আমাদের নেই।আমাদের পাপ মোছন করুন, আমাদেরকে ক্ষমা করুন, আমাদের প্রতি দয়া করুন, আপনিই আমাদের অভিভাবক। সুতরাং কাফির সম্প্রদায়ের উপর আমাদেরকে জয়যুক্ত করুন।
সূরাঃ ২ বাকারা, ১৪৩ নং আয়াতের অনুবাদ
১৪৩। এইভাবে আমি তোমাদিগকে এক মধ্যমপন্থী উম্মতরূপে প্রতিষ্ঠিত করেছি।যাতে তোমরা মানব জাতির জন্য সাক্ষীস্বরূপ এবং রাসূল তোমাদের জন্য সাক্ষীস্বরূপ হতে পারেন।তুমি এ যাবত যে কিবলা অনুসরন করতেছিলে উহা আমরা এ এ উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত করে ছিলাম যাতে আমরা জানতে পারি কে রাসূলের অনুসরন করে আর কে ফিরে যায়? আল্লাহ যাদেরকে সৎপথে পরিচালিত করেছেন তারা ছাড়া অন্যদের নিকট এটা (সৎপথ)কঠিন।তোমাদের ঈমানকে ব্যর্থ করে দিবেন আল্লাহ এমন নন।আল্লাহ মানুষদের প্রতি স্নেহশীল-দয়াদ্র।
সূরাঃ ৮ আনফাল, ৩৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩৯। আর তোমরা তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে থাকবে যতক্ষণ না ফিতনা দূরীভূত হয় এবং আল্লাহর দীন সর্বত্র প্রতিষ্ঠিত হয়।অতঃপর যদি তারা বিরত হয় তবে তারা যা করে আল্লাহতো এর দর্শক।
সহিহ আল বোখারী, ৬৫৭২ নং হাদিসের (কিতাবুল ফিতান)-
৬৫৭২। হযরত ওসামা ইবনে যায়েদ (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা নবি করিম (সা.) মদীনার এক সুউচ্চ অট্টালিকার উপর আরোহন করে বললেন, আমি যা কিছু দেখছি, তোমরা কি তা’ দেখছ? তারা বলল, জী না। তিনি বললেন, আমি দেখছি যে, তোমাদের ঘরের ভিতরে বৃষ্টি পাতের ন্যায় ফিতনা পতিত হচ্ছে।
* নারীর জন্য ঘরে থাকা উত্তম। কারণ নারী ঘরে বেশী নিরাপদ থাকে এবং নারী ঘরে থাকলে শিশু ও বৃদ্ধরা নিরাপদ থাকে।তবে প্রয়োজনে নারী ঘর থেকে বের হতে পারবে। পুরুষের মত নারীর আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধানের অধিকার রয়েছে। আল্লাহ তাঁর অনুগ্রহ একা পুরুষকে দিয়ে দেননি। আল্লাহর অনুগ্রহ তালাশে পুরুষ যা করতে পারবে নারীও সেটা করতে পারবে। সুতরাং যারা নারীর আল্লাহর অনুগ্রহ তালাশ বিঘ্নিত করে তারা ফিতনা। মহানবির (সা.) ইন্তেকালের পর এ ফিতনা বাজেরাই নারীকে অবরুদ্ধ করতে মহানবির (সা.) নামে নারী বিরোধী হাদিস বানিয়ে প্রচার করেছে।কোরআনের অবব্যাখ্যা করে বলা হয় পুরুষকে নাকি নারীর কর্তা বানানো হয়েছে। অথচ এ পুরুষ হলো স্বামী। সুতরাং ছেলে মায়ের কর্তা নয়। দেবর ভাবীর কর্তা নয়। এক ঘরের পুরুষ অন্য ঘরের নারীর কর্তা নয়। আয়তটি দাম্পত্য সংক্রান্ত। সেটাকে নেতেৃত্বের ক্ষেত্রে চালিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা করা হয়।
যাদেরকে নাম ধরে ঘরে থাকতে বলা হয়েছে সেই নবির (সা.) পত্নিগণ নবির (সা.) সাথে ঘর থেকে বের হয়েছেন। নবির (সা.) ইন্তেকালের পরেও তাঁরা তাঁকে ছাড়া ঘর থেকে বের হয়েছেন। হযরত আয়েশা (রা.) জঙ্গে জামালে অংশগ্রহণ করতে ইরাকের বছরা গেছেন। যুদ্ধ পুরুষের কাজ বলে মনে করা হয়। নবি (সা.) পত্নি সেটা করে বুঝালেন পুরুষের কাজ বলে কোন কাজ নেই এবং কোন কাজেই ইসলামে নারীর জন্য বারণ নেই। নারী নেতৃত্ব বিরোধী হাদিস উপস্থাপন করা হলে হযরত আয়েশা (রা.) তা’ ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি সেটা রাসূলের (সা.) হাদিস হিসাবে মেনে নেননি। ছফরের দূরত্বে ছফর করলে নারী মোহরম সাথে নিয়ে ছফর করার বিধান রয়েছে।তাতেও অপারগ হলে আল্লাহ ক্ষমা করবেন।সুতরাং ইসলামের নামে নারীকে অবুরুদ্ধ করার সুযোগ নেই। ইসলামের নামে নারীকে অবরুদ্ধ করা হলো সুস্পষ্ট ফিতনা। এ ফিতনার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করা মুসলিম জাতির দায়িত্ব। মুসলিম জাতির প্রতিনিধি হয়ে বেগম রোকেরা সে দায়িত্ব পালন করেছেন। কোরআন প্রদত্ত সুবিধা নারীকে ভোগ করতে দেওয়া হলো ইসলামের মধ্যম পন্থা। বানোয়াট হাদিস বা কারো ব্যক্তিগত রুচি নারীর উপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হলো চরম পন্থা। আর চরম পন্থা কোনভাবেই ইসলামে স্বীকৃত নয়। নারী কোরআন মেনে পারলে হযরত ফাতেমাকেও (রা.) মেনে চলবেন। তবে হযরত ফাতেমার (রা.) মত চলতে নারীকে বাধ্য করা যাবে না। কারণ হযরত ফাতেমার (রা.) মত হযরত আয়েশাও (রা.) চলেননি। তবে কোন নারী হযরত ফাতেমার (রা.) মত চলতে চাইলে তাকেও বাধা দেওয়া যাবে না। কেউ যদি সেটা করে তবে সেটাও হবে চরম পন্থা। আর সেটাও ইসলাম স্বীকৃত নয়।
যখন কোরআন নাযিল হয়েছে তখন নারী মসজিদে নামাজ পড়তো। সুতরাং নামাজ শেষে আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান করা থেকে নারীকে কোন ভাবে বাধা দেওয়া যাবে না। উচ্চ শিক্ষা আল্লাহর অনুগ্রহর বাইরের কিছু নয়। সুতরাং নারীর জন্য উচ্চ শিক্ষার দার রুদ্ধ করা যাবে না। নারী শিক্ষায় প্রাইমারীর দেয়াল ডিঙ্গাতে পারবে না জাতীয় ফতোয়া ইসলামী ফতোয়া নয়। সুতরাং এমন ফতোয়া মানতে কোন নারী বাধ্য নয়। শিক্ষা পুরুষের মতই নারীর জন্য ফরজ করা হয়েছে। সুতরাং পুরুষ যা শিখতে পারবে নারী তা শিখতে পারবে না এটা মোটেও ইসলামের কথা নয়।
নারীরা ঘর ছেড়ে কিভাবে বের হবে সেটা আল্লাহ বলেছেন। এর বাইরে কড়কড়ি করা আল্লাহর সীমালংঘন হিসাবে গণ্য হবে। এমন লোকদেরকে আশ্রয় ও প্রশ্রয় দেওয়া মোটেও সঠিক কাজ নয়।
সূরাঃ ২৪ নূর, ৩০ নং ও ৩১ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩০। মুমিনদেরকে বল, তারা যেন দৃষ্টিকে সংযত করে এবং তাদের লজ্জা স্থানের হেফাযত করে। এত তাদের জন্য উত্তম পবিত্রতা রয়েছে। তারা যা করে সে বিষয়ে আল্লাহ অবহিত।
৩১। মুমিনা বা মুমিন নারীদেরকে বল, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে। তারা যেন যা সাধারণত প্রকাশমান তা’ ব্যতীত তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে। তাদের ঘাড় ও বুক যেন মাথার কাপড় দ্বারা ঢেকে রাখে। তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভাই, ভাইয়ের পুত্র, বোনের পুত্র, নিজস্ব নারীগণ, মালিকানাধীন দাসী, যৌন কামনা রহিত পুরুষ এবং নারীদের গোপনাঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ বালক ব্যতিত কারো নিকট আভরণ (সাজ এবং সাজের পোশাক) প্রকাশ না করে। তারা যেন তাদের গোপন পোশাক প্রকাশের জন্য সজোরে পা না ফেলে। (এমন পা ফেলার কারণে শাড়ী, ওড়না বা চাদর খসে যেন শাড়ী, ওড়না বা চাদরের নীচের পোশাক দেখা না যায়)।হে মুমিনগণ তোমরা সবাই আল্লাহর দিকে ফিরে আস, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।
* নারীরা অসভ্যের মত কোন পুরুষের দিকে তাকাবে না। পুরুষও অসভ্যের মত কোন নারীর দিকে তাকাবে না। নারী-পুরুষ তাদের লজ্জাস্থান বেরিয়ে পড়ে বা লজ্জাস্থান বুঝা যায় এমন পোশাক পরবে না। যা দেখালে নারীকে আরো সুন্দরী মনে হয় নারী তার এমন সুন্দর্য প্রকাশক কিছু দেখাবে না। তারা তাদের মাথা, ঘাড় ও বুক ঢেকে রাখবে। তারা তাদের মাথা, ঘাড় ও বুক আবৃতকারী শাড়ীর আঁচল, চাদর ও ওড়না খসে পড়ার মত করে চলাচল করবে না। নারীর গায়ে থাকা ব্লাউজ, পেটি কোট, কামিচে ঢাকা সেলোয়ারের অংশ (হাঁটুর নীচ পর্যন্ত) এবং ওড়নায় ঢাকা কামিচের অংশ পর পুরুষকে দেখাবে না। পোশাকের যাতীয় ঝামেলা দূর করতেই নারী হিজাব ও বোরকা পরে বাইরে বের হয়। কিন্তু কোন কারণে নারী হিজাব ও বোরকা পরতে অপারগ হলে কোরআন যেভাবে বলেছে সেভাবে নারী বাইরে বের হতে পারবে।
সূরাঃ ২৪ নূর, ২ নং আয়াতের অনুবাদ-
২।জেনাকারিনী ও জেনাকারী- উহাদের প্রত্যেককে একশত কশাঘাত করবে। আল্লাহর দীন (বিধান) কার্যকরীকরনে উহাদের প্রতি দয়া যেন তোমাদিগকে প্রভাবান্বিত না করে, যদি তোমরা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী হও।মুমিনদের একটি দল যেন উহাদের শাস্তি প্রত্যক্ষ করে।
* নারী অথবা পুরুষ কেউ জেনায় লিপ্ত হলে এর জন্য দন্ড প্রাপ্ত হবে।
সহিহ মুসলিম, ১০২ নং হাদিসের (কিতাবুল ঈমান) অনুবাদ-
১০২। হযরত তামিমদারী (রা.) থেকে বর্ণিত। নবি করিম (সা.) বলেছেন, কল্যাণ কামনাই দীন। আমরা আরয করলাম, কার জন্য কল্যাণ কামনা? তিনি বললেন, আল্লাহ, তাঁর কিতাবের, তাঁর রাসূলের, মুসলিম শাসক এবং মুসলিম জনগণের।
সহিহ আবুদাউদ, ৪৮৬০ নং হাদিসের (কিতাবুল আদাব) অনুবাদ-
৪৮৬০। হযরত তামীম দারী (রা.)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন! দীন হলো নসীহত, দীন হলো নসীহত, দীন হলো নসীহত। তখন সাহাবায়ে কেরাম (রা.) বললেন, কোন কোন ব্যক্তিদের জন্য? জবাবে নবি করিম (সা.) বললেন, আল্লাহর জন্য, তাঁর কিতাবের জন্য, তাঁর রাসূলের জন্য, মুসলিম শাসকের জন্য এবং সমস্ত মুসলমানের জন্য।
* নারী ইসলামী রীতি মেনে ঘর থেকে বের না হলে তারজন্য কল্যাণ কামনা ও নছিহত বরাদ্ধ। কেউ বলবে, আল্লাহ তাকে হেদায়াত দান করুক। অথবা কেউ তাঁকে এমন না করার নচিহত করবে। জেনায় লিপ্ত না হলে নারীর প্রতি আর কারো বাড়তি দায়িত্ব নেই। যদি কেউ এ ক্ষেত্রে বাড়তি কিছু করে তবে সেটা হবে সীমা লংঘন। সেটা ইসলাম নয় বরং ফিতনা।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ রাত ৮:২৬