কি দোষ করেছি, মনে নাই। আব্বা পিটানোর জন্য লাঠি নিয়ে তাড়া করলেন। ঘরের জানালায় একটা রড ছিলো না। আমি সেই ফাঁকে পলায়ন করলাম। আব্বার থেকে দূরত্ব বেড়ে যাওয়ায় তিনি তাড়া করে আর ধরতে পারলেন না। তিনি বেশ হাঁফিয়ে উঠে থেমে গেলেন। তারপর দাঁড়িয়ে বললেন, এই এদিকে আয় কইলাম, নইলে ভালো হবে না। আমি বললাম, আপনার কাছে গেলেই বা কি ভালো হবে? পিটাবেন তো আচ্ছা রকমে। আব্বা বললেন, তুই দোষ করবি, আর আমি পিটাব না? আমি বললাম, পারলে তো পিটাবেন? তিনি বললেন, কতক্ষণ পালিয়ে থাকবি? আমি বললাম, আপনি মারবেন না এটা বুঝা পর্যন্ত আর আপনার কাছে যাচ্ছি না। আব্বা বললেন, ঠিক আছে মারব না। এবার কাছে আয়। আমি বললাম আপনার হাতে লাঠি থাকতে আমি আপনার কাছে যাই কেমন করে? আব্বা লাঠি ফেলে দিয়ে বললেন, এবার কাছে আয়। আমি বললাম, লাঠি তো আপনার কাছেই আছে; কাজেই আমি আপনার কাছে যাচ্ছি না। লাঠিটা আগে অনেক দূরে ফেলে দিয়ে আসেন তারপর আপনার কাছে যাব। আব্বা, লাঠি অনেক দূরে ফেলে দিয়ে আসলেন। তারপর থেকে তিনি আমাকে পিটাবার জন্য তাড়া করাই ছেড়ে দিলেন।
পিটুনিকে ভয় পেতাম বলে পিটুনি যেন খেতে না হয় সেভাবে চলার চেষ্টা করতাম। অবশেষে রেজাল্ট ভালো হয়ে ক্লাশ ক্যাপ্টিন হয়ে গেলাম। পড়তাম টিপু সুলতান রোডে অবস্থিত গ্রাজুয়েটস উচ্চ বিদ্যালয়ে। ক্যাপ্টিন হিসাবে দায়িত্ব ছিল কেউ দুষ্টামি করলে তাদের রোল নাম্বার লিখে রাখা এবং স্যার আসলে তাঁদের নিকট সে রোল নম্বর জমা দেওয়া। সেকালে স্যারেরা ছাত্রদেরকে শাসন করার জন্য পিটাতেন। তো ক্লাশের ধেড়ে ছাত্ররা বলল, আমাদের রোল কিন্তু লিখতে পারবি না। আমি বললাম, কেন? এক ধেড়ে ছাত্র বলল, কেন টেন বুঝি না। আমার নাম লিখলে তুই মাইর খাবি। আমি বললাম, তুই আমাকে মারতে পারবি? আমি তাকে শাসানোর কারণ, আমার ছোট খাট একটা দল ছিল। সে বলল, তুই কেরে তোদের ফাস্ট বেঞ্চের সব গুলারে চ্যালেঞ্জ। আমরা সবাই ছিলাম আকারে বেশ ছোট, আর সে ছিল অনেক ধেড়ে বালক। আমাদের বেঞ্চের পিচ্চি আনোয়ার বলল, দোস্ত চ্যালেঞ্জ গ্রহণ কর; আমরাই জিতব। বেঞ্চের ছয় জনের তিন জন বলল, তারা মাইরপিটে নাই। আমি বললাম, তিনজনে জিতব কেমন করে? আনোয়ার বলল, আমি ওর হাত পেঁচিয়ে ধরব। তুই ওর চাপায় ঘুষি মারবি, আর দেলোয়ার ওর পিঠে কনি মারবে। আমি বললাম, ঠিক আছে রাজি। স্কুল ছুটির পর ক্লাশের সবাই স্কুলের পিছনে চলে গেলাম। পরিকল্পনা মত কাজ হলো। ধেড়েটাকে তিন জনে মিলে সাইজ করে দিলাম। তারপর আর কোন সহপাঠি আমার আনুগত্যের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেনি।
এরপর একতাই বল, রচনা পড়লাম। যার প্রাকটিক্যাল অভিজ্ঞতা আগেই হয়েছে। তারপর থেকে আমার একটা দল ছিল এবং আছে। আব্বার মৃত্যুর পর মেঝভাই বললেন, আমি তোমাকে সম্পত্তির কোন ভাগ দেব না। আমি বললাম, আপনাকে আমাকে সম্পত্তির কোন ভাগ দিতে হবে না। কারণ আমার ভাগের সম্পত্তি আমি নিয়ে নেব। তারপর আমি যখন আমার সম্পত্তি নিলাম তখন সবচেয়ে ভালোটাই নিলাম। তথাপি ভাইদের সাথে আমার সম্পর্ক চমৎকার আছে। কারণ কারো সাথে মন্দ আচরন করা আমার চরিত্র বিরোধী।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই মে, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:৪২