আমি খুব ক্লান্ত। এক গুন কাজের জন্য আমাকে তিন গুন বিশ্রাম নিতে হয়। পাঁচ বছর আগে আমার একটা স্ট্রোক হয়েছিল। পরে হিন্দু ডাক্তার বলেছিলেন, আমি মরে গিয়ে ছিলাম; আল্লাহ আমার আত্মা ফেরৎ দিয়েছেন। সেদিন মাসিক সমম্বয় সভায় এক অফিসার বললেন, তাঁরা মনে করেছেন, আমি মৃত। কয়েক জন মিলে আমার বুকে চাপ দিয়ে ছিল। তাতে কোন কাজ হয়নি। তারপর স্ত্রী ম্যাশিন দিয়ে প্রচন্ন্ড হিট দেওয়ার পর নাকি আমি একটা শব্দ করে ছিলাম।তারপর ডাক্তারগণ আমার চিকিৎসা অব্যাহত রেখেছেন। জ্ঞান ফিরার পূর্বে আমি দেখেছি, আমার আল আসমাউল হুসনা সংক্রান্ত কবিতাগুলো আরশে আজীমে বিশাল পর্দায় দেখানো হচ্ছে। আমি কবিতা গুলো স্ক্রলিং করার জন্য মাউস নাড়াচ্ছিলাম। কিন্তু আমার মাউস কাজ করছিলো না। পরে আমি দেখলাম, সেগুলো এক এক করে উপরে উঠছে। আমার মনে হলো আল্লাহ কবিতাগুলো দেখছেন। তারপর আমি জেগে উঠলাম। দেখলাম দেহের সমস্ত কাপড়-চোপড় প্রচন্ড রকমে ভিজা। এভাবেই আমার দেহ খুব ঘেমেছিল।মেঝ মেয়ে বলল, আমি মাউস নাড়ানোর মত করে হাত ঘুরাচ্ছিলাম। আমি তখন মৃদৃ হেসে তাদেরকে ঘটনা বললাম। তাদের মুখগুলো শুকনো ছিল। তাদের মুখে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের আশংকা ছিল। কারণ আমি পরিবারের একমাত্র রোজগেরে সদস্য ছিলাম।
আমাদের কোন টাকা ছিল না। প্রথম টাকা দিলেন বাড়ী ওয়ালা। তারপর কলিগ। তারপর আত্মিয়-সজন। কিন্তু তা’ আমার চিকিৎসা, মেয়েদের পড়ার খরচ ও সংসার খরচের জন্য যথেষ্ট ছিল না। চাকুরীর বেতন তখন বন্ধ ছিল। আমার স্ত্রী আমাকে নিয়ে বেহুলার মত ঘুরে বেড়ালেন। তার সংসার তখন প্রায় অচল। তখন এক গরীব মেয়ে বলল, তার ঘরের পাশের আমার একটা জায়গা সে কিনবে। তার স্বামী বিদেশ গিয়েছে। সে আমাকে আস্তে আস্তে টাকা দিবে। প্রায় পোনে এগার লক্ষ টাকা। আমি দেখলাম এ টাকা ছাড়া আমার চলার উপায় নেই। আমি সম্মতি জানালাম। স্ত্রী বললেন, একটা বিল্ডিং কর। মেয়ে বলল, বিল্ডিং করে দেন তাহলে আপনি মরে গেলেও আমরা টিউশনি করে ও ছাদে মুরগী পালন করে বেঁচে থাকার চেষ্টা করতে পারব। কিন্তু বিল্ডিং করতে আরো টাকা লাগবে। তখন আরেক গরীব লোক বলল, সে আমার অন্য একটা জায়গা কিনবে। দাম সোয়া দশ লক্ষ। ছয়মাসে আমি ও সংসারে চার লক্ষ টাকা খরচ হলো সতের লক্ষ টাকা গেলো বিল্ডিং এর পেটে। তারপর বিল্ডিং এর কাজ থেমে গেলো। সেই বিল্ডিং দেখিয়ে দুই মেয়ের বিয়ে দিলাম। অন্য খাত থেকে কিছু টাকা পেলাম এবং মোটা অংকের ঋণের টাকায় মেয়েদের বিয়ে হলো।
ঢাকায় একটা এজমালী জায়গা ছিল অন্যের দখলে।অন্য লোক জায়গাটা তাদের দাবী করে আমাদের বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দিলো। এগার বছর মামলা চলার পর আমরা মামলায় হেরে গেলাম। সুবিধা বুঝে অন্য ছাব্বিশ সদস্যের আরেকটি দল আমাদের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা ঠুকে দিলো। আমাদের জমির কিছু কাগজ ছিল এবং কিছু কাগজ ছিল না। পাওনা দারের জ্বালায় আমার স্ত্রী বড় মেয়ের জামাইকে বললেন, জায়গাটা বিক্রির ব্যবস্থা করতে। জামাই সব জেনে অবশিষ্ট কাগজ সংগ্রহে নামলো। ভাগিনা নামলো ক্রেতা সংগ্রহে। অবশেষে ক্রেতা সব জেনে-শুনে মামলার দায়িত্ব নিয়ে আমাদের জমি কিনে নিলো। অনেক টাকা হতে আসলো। জামাইকে বললাম, বিল্ডিং এর অবশিষ্ট কাজ সম্পন্ন করার দায়িত্ব তোমার। জামাই কাজ করাচ্ছে। আমার ভাই-বোন স্বীকার করলেন, আমার মেয়ের জামাই না হলে, তারা জমি বিক্রির এতটাকা পেতেন না। কারণ জমির কাগজ সংগ্রহের যোগ্যতা তাদের কারো ছিল না। আর সেই কাগজের বলেই জমি বিক্রি হলো। জামাই কিন্তু পেয়েছিলাম অর্ধসস্পন্ন বিল্ডিং দেখিয়ে।
ডাক্তার বলেছেন স্ট্রোকে আমর ৯০% মেমোরী হারিয়েছে। তাতে আমি ব্লগের দু’টি আইডি হারিয়েছি। তারপরেই আমি হলাম মহাজাগতিক চিন্তা। এখন আমার আর মরতে ইচ্ছে করে না। অনেকে বলছে, ঈশ্বর হলেন মানুষের বানানো একটি কাল্পনিক চরিত্র। কিন্তু শৈশব থেকেই বিভিন্ন ঘটনায় আমার ঈশ্বরকে মানব সৃষ্টি কাল্পনিক চরিত্র মনে হয়নি। মুসলিমগণ ঈশ্বরকে আল্লাহ বলেন। আল্লাহর সঠিকতায় আমার বিশ্বাস শতভাগ। অনেকে অনেক চেষ্টা করেও এটাকে ৯৯% নামাতে পারেনি। সেটা এখনো ১০০% আছে বহাল তবিয়তে। অনেকে বলে এটা অন্ধ বিশ্বাস। আমি বলি তাদের অবিশ্বাস বরং অন্ধ অবিশ্বাস। আমার বিশ্বাসকে প্রতিষ্ঠিত না করে আমার মরতে ইচ্ছে করছে না। একজন বললেন, তিনি আমাকে শতভাগ নিশ্চয়তা দিচ্ছেন, ঈশ্বর বলতে কেউ নেই। কিন্তু তার কথায় আমি একভাগ নিশ্চয়তাও পাচ্ছি না। সেজন্যই আমার বিশ্বাস শতভাগই অটুট আছে। মরার আগে আমি আমার এ অটুট বিশ্বাস প্রতিষ্ঠিত করতে চাই।তার আগে আমার মোটেও মরতে ইচ্ছে করে না।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মে, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:৫২