somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পানির মত ঈমান

০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সকাল ৭:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



অনেকের ঈমান পানির মত।সহজে পায়। আবার তাদের ঈমান সহজে তাদেরকে ছেড়ে চলে যায়।সুযুক্তির শীতলতার সাথে সুখের শীতলতা যোগে তাদের ঈমান জমে কঠিন বরফে পরিণত হয়। আবার অযুক্তির উত্তাপের সাথে কষ্টের উত্তাপ যোগে তাদের ঈমান বাস্প হয়ে তাদের ছেড়ে শূণ্যে মিলিয়ে যায়।এরপর যদিও সে বাস্প আবার বৃষ্টিহয়ে ঝরে পড়ে নদী হয়ে সমূদ্রে চলে যায় তথাপি তারা আর তা’খুঁজে পায় না। অবশ্য সত্যের সাগরে ভ্রমণে গেলে তারা আবার হারানো ঈমান খুঁজে পায় যদিও তা’ আবারো হারানোর সম্ভাবনা থাকে।আর এর জন্য কষ্ট ও অযুক্তির উত্তাপ যথেষ্ট।অথচ অনেকের ঈমান লৌহের মত। উত্তাপে উত্তপ্ত হলেও গলেনা। আর গললেও বাস্পহয়ে হারিয়ে যায় না বরং ক্ষণিকেই আবার তা’ শক্ত হয়ে যায়।

অযুক্তি হলো মানুষ এমাইনো এসিড বানাতে পারে সুতরাং সৃষ্টিকর্তা নেই। অথচ এখানে যুক্তি হলো যেহেতু মানুষ এমাইনো এসিড বানাতে পারে। এমাইনো এসিড নিজে নিজে হয়না। সেহেতু কেউ একজন এমাইনো এসিড বানিয়ে এর থেকে প্রাণের উৎপত্তি ঘটিয়েছে।সংগত কারণে মানুষের এমানো এসিড বানাতে পারা সৃষ্টিকর্তার থাকা প্রমাণ করে, মানুষের এমাইনো এসিড বানাতে পারা সৃষ্টিকর্তার না থাকা প্রমাণ করেনা।অথচ ওদের যুক্তি কি? এমানো এসিড বানাতে মানুষের দরকার হলো কিন্তু এমাইনো এসিড নিজে নিজে হয়ে হয়ে তার থেকে নিজে নিজে প্রাণ সৃষ্টি হলো। কি যুক্তি কি যুক্তি! আর মানুষ কি এমাইনো এসিড শূণ্য থেকে বানালো? তাহলে শূণ্য থেকে এমাইনো এসিড হলো কেমন করে? ধরে নিলাম এমাইনো এসিড কিছু থেকে হলো। কিন্তু সেটা কি থেকে হলো? এভাবে প্রশ্নের ধারাবাহিকতায় শূণ্য আসবেই আসবে। এখন প্রশ্নহলো শূণ্যে আল্লাহ হলেন কেমন করে? এর উত্তরে আল্লাহ বলেছেন, ‘কুল্লুমান আলাইহা ফান ওয়া ইয়াবকা অজহু রাব্বিকা যুল জালালি ওয়াল ইকরাম-তাতে সব কিছু বিলিন হয়, আর বাকী বা অবশিষ্ট থাকে তোমার মহিমাম্বিত ও মেহেরবান প্রতিপালকের সত্ত্বা’- সূরা আর রাহমান, ২৫ ও ২৬ আয়াত।তারমানে এমন শূণ্যের মধ্যে যাতে ডিফেন্ড বা অবস্থান করার মত কিছু থাকে না (আমাদের মহা শূণ্যে ডিফেন্ড বা অবস্থান করার মত উত্তম ব্যবস্থা রয়েছে, যে ব্যবস্থা আল্লাহ গড়ে তুলেছেন) তেমন শূণ্যে কোন কিছু নিজে নিজে হতে গেলে, যদি সেটা সসীম হয়, তবে সেটা অবস্থানের স্থান না পেয়ে সীমা হারিয়ে বিলিন হয়ে যায়।কিন্তু যদি নিজে নিজে হতে যাওয়া অসীম হয় এবং যেহেতু অসীমের সীমা হারানো সম্ভব নয় সেহেতু অসীম তাতে বিলিন না হয়ে বাঁকী থকে।আমাদের প্রতিপালক অসীম বিধায় শূণ্যে নিজে নিজে হতে গিয়ে বিলিন না হয়ে বাঁকী থেকেছেন। আর এটাই তাঁর মহিমা।আর তাঁর মেহেরবানী হলো তিনি মেহেরবানী করে অনেক অস্তিত্বহীনকে অস্তিত্বে এনেছেন। তো আল্লাহ শূণ্যে নিজে নিজে কিভাবে হলেন সে কথা তিনি নিজেই খোলাসা করে বলে দিলেন। এরপরো কারো তা’ বুঝে না আসলে কিছুই করার নেই। আমরা যে প্রকৃতি প্রকৃতি বলে চিৎকার করি সে প্রকৃতির নিয়মে নিজে নিজে শুধু অসীম হতে পারে। অসীম শুধু একজন হতে পারে। তারমানে নিজে নিজে শুধু একজন হতে পারে। নিজে নিজে একাধীক হতে পারে না। নিজে নিজে সসীম হতে পারে না। কাজেই সকল সসীমের সৃষ্টিকর্তা একজন অসীম, যাঁকে কেউ সৃষ্টি করেনি, যিনি নিজে নিজে হয়েছেন।

শূণ্য থেকে অসীম একা এসেছেন। তারমানে শূন্যে অসীম একা ছিলেন, আর কেউ ছিল না।যেহেতু শূণ্যেও অসীম একেও অসীম। আর অনেকের মাঝে অসীম তাদের সৃষ্টিকর্তা। সেহেতু অসীম বা আল্লাহ চিরবিদ্যমান।এমন কোন সময় নেই যখন তিনি ছিলেন না।

নিজে নিজে কিছু হতে কেউ দেখে না। কেউ বানালে কিছু হয় সেটাই সবাই দেখে। কাজেই প্রকৃতির সাধারণ ও প্রত্যক্ষ নিয়মে সৃষ্টিকর্তা ছাড়া কিছু হয়না। কিন্তু সৃষ্টিকর্তা নিজে, নিজে নিজে সাধারণ নিয়মে নয় বরং বিশেষ নিয়মে। সেই বিশেষ নিয়মটা হলো। নিজে নিজে যা হয় তা’ ছোট হয় না, তা’ বড় হয়। সসীম ও অসীমের মধ্যে অসীম বড়। সংগত কারণে নিজে নিজে সসীম হয়না বরং অসীম হয়। আর অসীম একাধীক হয় না। কাজেই নিজে নিজে শুধু একজন অসীম হয়। প্রকৃতির এ বিশেষ নিয়মের অস্বীকারের কোন উপায় আছে কি? সুতরাং যুক্তির ফল হলো সৃষ্টিকর্তা আছেন, আর অযুক্তি বা যুক্তিহীনভাবে খামখেয়ালি কথা হলো সৃষ্টিকর্তা নেই। যা বোধসম্পন্ন মানুষের স্বীকার করা অসম্ভব।

অযুক্তি হলো মানুষ ল্যবরেটরিতে বিবর্তন ঘটিয়েছে। তো বিবর্তনের মাধ্যমেই সব হয়েছে। বিবর্তন ঘটালো কে মানুষ, এরপর বিবর্তন হলো কেমন করে নিজে নিজে বা আপনা আপনি। হিসেব কিছু মিলল কি? বিবর্তন ঘটতে মানুষের প্রয়োজন হওয়াতো প্রমাণ করে একদা যে বিবর্তন ঘটেছে তাতেও কেউ একজন ছিল। তো সেই একজনকেইতো লোকে সৃষ্টিকর্তা বলে। তো ঘুরে ফিরে বিবর্তনওতো সৃষ্টিকর্তাকেই প্রমাণ করে। তো বোধহীনেরা কি যুক্তি দিয়ে তবে কি প্রমাণ করে? বিবর্তন কখনোই প্রমাণ করে না সৃষ্টিকর্তা নেই।

মানুষ শুধু মানুষ নয় যদি একটা মহাজগৎও সৃষ্টিকরতে পারে তবে এর দ্বারা প্রমাণ হবে সে সহ তার আগের মহাজগৎ কারোনা কারো সৃষ্টি। তারমানে তাতেও প্রমাণ হবে না সৃষ্টিকর্তা নেই।

অযুক্তি হলো সৃষ্টিকর্তা থাকলে নাস্তিকেরা সুখে আছে কেন? সৃষ্টিকর্তা না থাকলেতো আলাদাভাবে নাস্তিকের সুখে থাকার কথা নয় আস্তিকেরও সুখে থাকার কথা। কারণ সৃষ্টিকর্তাতো নেই তো কে নাস্তিককে সুখে রেখে আস্তিককে কষ্টে রাখছে? সৃষ্টিকর্তা আছেন বলেই তিনি নিজের লোককে কষ্টে রেখে শত্রুকে সুখে রাখছেন। আর তিনি নিজের লোকদেরকে বুঝিয়েছেন, এ কষ্টের বিনিময়ে পরকালে তিনি তাদেরকে মহা পুরস্কার প্রদান করবেন। আর বলেছেন নাস্তিকের সুখের বিনিময়ে তাদেরকে কঠিন শাস্তি প্রদান করবেন। তবে যে সব আস্তিক এখনো সুখে আছে পরকালে তাদের সুখের মাত্রা কষ্টে থাকা লোকেদের থেকে কম হবে। আর যে সব নাস্তিক এখন কষ্টে আছে তাদের শাস্তির মাত্রা এখন যারা সুখে আছে তাদের চেয়ে কম হবে। আর এভাবে আল্লাহ ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত করবেন।

এভাবে সকল যুক্তি সৃষ্টিকর্তার স্বপক্ষ্যে বিদ্যমান। কোন যুক্তি সৃষ্টিকর্তার বিপক্ষে বিদ্যমান নেই। শুধুমাত্র বদলোকেরা সৃষ্টিকর্তার বিপক্ষে সব অযুক্তি উপস্থাপন করছে।যাদের ঈমান পানির মত তাদের ঈমান যুক্তির সংস্পর্শে আসলে জমে কঠিন বরফ হয় আবার অযুক্তির উত্তাপ পেলেই তাদের ঈমান কঠিন বরফ থেকে তরল পানি অতঃপর বায়বীয় জলীয় বাস্প হয়ে আকাশে উড়ে যায়। শেষমেস এদের কপালে কি আছে আল্লাহ মালুম।

কতিপয় বসে বসে আল্লাহ, মহানবি ও ইসলামের দোষ হিসেব করতে বসে। মনে হয় যেন ওটাই তাদের প্রধান কাজ। আরে বাপু তুমি বরং নিজের দোষ হিসেব কর এবং আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাও। আল্লাহর দোষ থাকলেও তো তুমি তাঁর বিচার করতে অপারগ। তবে আর সে দোষ হিসেব করে লাভ কি? নবির (সা.) দোষ থাকলেও আল্লাহ যদি তাঁকে ক্ষমা করে দেন তবে তুমি আল্লাহর কি করতে পারবে? ইসলামের দোষ থাকলেও যদি সেটাই আল্লাহর পছন্দ হয় তবে তোমার তাতে কি করার আছে? কোরবানীর পশুর রক্তে ভেসে কি তুমি জাহান্নামে যেতে চাও? তবে যাও কেউ মানা করবে না। হুরের ভয়ে কি তুমি জান্নাত ছেড়ে জাহান্নামে যেতে চাও? তবে যাও কেউ মানা করবে না। নবি (সা.) আয়েশাকে (রা.)বিয়ে করেছেন বলে কি রাগে তুমি জাহান্নামে যেতে চাও তবে যাও কেউ মানা করবে না। বনু কোরায়জার লোকদেরকে নবি (সা.) হত্যা করেছেন বলে কি তুমি অভিমানে জাহান্নামে যেতে চাও তবে যাও কেউ মানা করবে না। আমার মা বলতেন আল্লার সাথে কি আমাদের মামলা আছে? তার যা ইচ্ছা তিনি করবেন, সেটা দেখার দায়িত্ব আমাদের নয়। আমরা তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে লাভবান হতে পারব না। তারপরেও যদি কেউ নিজের ক্ষতি স্বীকার করে আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে তবে আর তাকে কি বলার থাকতে পারে? যেমন ইবলিশ বিদ্রোহ করেছে আর ইয়াজিদি সম্প্রদায় এখন ইবলিশের এবাদত করে তার পক্ষ নিয়েছে। এভাবে যার ভাল-মন্দ সে বুঝুক। অন্যদের দায়িত্ব নিজেদের মঙ্গল সাধান।তবে কেউ যদি নিজের ক্ষতির সাথে অপরের ক্ষতি করার চেষ্টা করে তবে তাকে বারণ করতে হবে। বেশী দরকার মনে করলে অপরের ক্ষতির কাজে বাধাও দিতে হবে।

সাকুল্যে ঈমান হতে হবে লৌহের মত ইস্পাত কঠিন যা সব সময় একরূপে বিদ্যমাণ থাকবে। পানির মত বহুরূপি ঈমানের কোন নিশ্চয়তা নেই। এমন ঈমানে থাকে চরম অনিশ্চয়তা। আল্লহ আমাদেরকে এমন নড়বড়ে ঈমান থেকে হেফাজত করুন। কপালপোড়াদের ঈমান এমন নড়বড়ে হয়।

বিঃদ্রঃ ‘ইসলামের সঠিকতার অকাট্য প্রমাণ’ গ্রন্থের একটি অধ্যায় হিসেবে লেখাটি লেখা হয়েছে।

ইসলামের সঠিকতার অকাট্য প্রমাণ
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সকাল ৮:৪৮
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×