somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইসলামে বহুগামীতা - (পর্ব-১)

০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সকাল ৮:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ইসলামে নারীর বহুগামীতা নিষিদ্ধ। কারণ সন্তানের পিতা নির্ণয় সংক্রান্ত সমস্যা এবং বহুগামী নারীর সাথে দৈহিক সম্পর্কের কারণে জটিলরোগে আক্রান্ত হওয়ার সমস্যা। ইসলামে পুরুষের বহুগামীতা নিষিদ্ধ নয়। কারণ সন্তানের মাতা নির্ণয় সংক্রান্ত সমস্যা নেই এবং এতে জটিলরোগে আক্রান্ত হওয়ার সমস্যাও নেই।তবে কোন স্ত্রী স্বামীর বহুগামীতা পছন্দ করেনা।অনেক পুরুষ বহুগামীতার ঘোর বিরোধী। অনেক পুরুষ বহুগামীতা পছন্দ করেনা। অনেক পুরুষ বহুগামীতা পছন্দ করলেও এ সংক্রান্ত অশান্তির ভয়ে সে পথে হাঁটে না। বহুগামী পুরুষ বহু স্ত্রীর দেহ লাভে ধন্য হলেও স্ত্রীদের মন পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়। এটা বাস্তবতা। এ জন্য যে সব পুরুষ স্ত্রীর মন পেতে চায় তারা বহু বিবাহের পথে হাঁটে না।তবে ইসলামে বহুগামীতা বাধ্যতা মূলক নয়।জান্নাতে উহা কি বাধ্যতা মূলক? অনেকের মতামত থেকে মনে হয় জান্নাতে এটা বাধ্যতা মূলক। আবার অনেকের মতামত থেকে মনে হয় জান্নাতে এটা বাধ্যতা মূলক নয়।

কেউ কেউ বহুগামীতা পছন্দ করেনা। এটা যদি তাদের জন্য বাধ্যতা মূলক করে দেওয়া হয় তবে তো এটা তাদের জন্য শাস্তি হয়ে গেল। আর জান্নাততো শাস্তির স্থান নয়।সংগত কারণে জান্নাতে বহুগামীতা বাধ্যতা মূলক এমন ধারণা অমূলক। হুর তাহলে কোন কাজে লাগবে? এমন প্রশ্নের জবাবে এ ক্ষেত্রে বলা যায় তারা থাকবে জান্নাতের শোভাবর্ধনকারিনী হিসেবে।আর তারা যে দেখতে খুব সুন্দরী কুমারী মেয়ে সে কথা কোরআনে বলা আছে।তবে তাদের সাথে দৈহিক সম্পর্ক গড়তে পুরুষেরা বাধ্য থাকবে সে কথা কোরআন হাদিসের কোথাও নেই।

অনেক বহুগামী মনে করে সবাই তাদের মত বহুগামীতা পছন্দ করে। বাস্তব আসলে এমন নয় বরং অনেকে বহুগামীতা প্রচন্ডভাবে ঘৃণা করে, এমন কি তারা বহুগামীকেও ঘৃণাকরে।যে নারী বহুগামী পুরুষ ঘৃণাকরে তাকে কি বহুগামী পুরুষের সাথে থাকতে বাধ্য করা হবে? যদি তেমনটা করা হয় তবে এটা হবে তার জন্য শান্তি। আর জান্নাত শাস্তির স্থান নয়। সংগত কারণে নারীকে বহুগামী পুরুষের সাথে থাকতে বাধ্য করা হবেনা বরং সে যেমন চায় তেমন বহুগামীতা পছন্দ করেনা এমন পুরুষের সাথে থাকতে দেওয়া হবে।

জান্নাত অনন্ত বসবাসের স্থান। পুরুস্কার হিসেবে এখানো কারো মনকষ্টের মাধ্যমে জীবন যাপনের ব্যবস্থা হবে এমন ধারনা অবাস্তব।বলা হলো পুরুস্কার, কিন্তু দেখা গেল সেটা আসলে শাস্তি। তবেতো সেটা মারাত্মক প্রতারণা। আর আল্লাহর ক্ষেত্রে প্রতারণা অসম্ভব।

জান্নাতে হুর ও গেলমান থাকা সমস্যার বিষয় নয়। হুরেরা নারীদের সখি হিসেবে বিদ্যমান থাকা চমৎকার বিষয়। আর গেলমানেরা পুরুষদের আড্ডার আসরের সদস্য থাকাও চমৎকার বিষয়।হুর ও গেলমানের পুত্র-কন্যার মত বিদ্যমান থাকাও চমৎকার বিষয়।তবে তাদের সাথে যৌনতার বিষয় জড়ালে সেটার ব্যখ্যা অবশ্যই প্রয়োজন হবে।

হুর ও গেলমান জান্নাতে থেকে জান্নাতের শোভা বর্ধন করুক তাতে কারো আপত্তি নেই। কিন্তু তাদের দ্বারা জান্নাতের চমৎকার পরিবেশ নষ্ট হলে মানুষ প্রতিবাদ না করে চুপ করে বসে থাকবে বলে মনে হয়না। আর আল্লাহ তাদের উপর জোর করে নিশ্চয়ই সৈরাচারী খেতাব গ্রহণে সম্মত হবেন না।কিন্তু জাহান্নামের বিষয় ভিন্ন। সেটা দন্ড ভোগের স্থান। কাজেই তাদের প্রত্যাশা মূল্যহীন। কিন্তু পুরস্কার প্রাপ্ত জান্নাতিদের ইচ্ছার প্রতি সমিহ প্রদান করা হবে না, এমনটা ভাবা যায় না।

যারা বহুগামীতা পছন্দ করে তারা তাদের বহুগামীতা নিয়ে থাকে থাকুক। যারা বহুগামীতা পছন্দ করেনা তারা এ বিষয়ে না ভাবলেও পারে যদি এ বিষয়ে তাদেরকে জোর করা না হয়। যদি এ বিষয়ে জোর করা সংক্রান্ত কিছু থাকে তবে এ বিষয়ে আমিও তীব্র প্রতিবাদ জানাই। কারণ বহুগামীতা আমার নিকট প্রচন্ড বিরক্তিকর বিষয়। নবি (সা.) সহ অনেকে বহুগামীতায় যুক্ত ছিলেন আমি এটা তাঁদের ব্যক্তিগত বিষয় বলে মনে করি। তবে নবি (সা.) বহুগামীতাকে উম্মতের জন্য বাধ্যতামূলক করেননি। তিনি এটা বলেননি যে এটা না হলে জান্নাতে যাওয়া যাবেনা। তিনি এটাও বলেননি যে বহুগামীতা থেকে এখানে রেহাই পাওয়া গেলেও, জান্নাতে রেহাই পাওয়া যাবেনা।

আল্লাহ মানব সমাজ গড়ে তোলার শুরু করেছেন এক স্বামী ও এক স্ত্রীর মাধ্যমে। যেমন আদম (আ.) ও হাওয়া (আ.)।কাজেই এটাই আল্লাহর অধিক পছন্দ। তবে অধিক স্ত্রী বিষয়ে আল্লাহ জোরাল আপত্তি তোলেননি।তবে সূরা নিসার তিন নং আয়াতে তিনি চারের অধিক স্ত্রী থাকা নিষেধ করেছেন। তবে সমতা বিধান করতে না পারলে একের অধিক স্ত্রী নিষিদ্ধ করেছেন। এ বিধানের আগেই যারা অনেক বিবাহ করেছেন তাদেরকে আবার চার স্ত্রী রেখে বাকীদের বিদায় করে দিতে বলেননি। সেজন্য মহানবির (সা.) চারের অধিক স্ত্রী ছিল।আর ইসলামে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করা যায় বয়ঃপ্রাপ্তির পর, বয়ঃপ্রাপ্তির আগে নয়।তবে বালিকা অবস্থায় বিবাহ নিবন্ধন করা যায়।

নবীগণের মাঝে হজরত ইব্রাহীম (আ.), হজরত ইয়াকুব (আ.), হজরত মুছা (আ.)দুই স্ত্রীর স্বামী ছিলেন।হজরত দাউদ (আ.), হজরত সুলাইমান (আ.), হজরত আইউব (আ.) ও হজরত মোহাম্মদ (সা.) বহু স্ত্রীর স্বামী ছিলেন। এ চার জন আবার রাষ্ট্র নায়ক ছিলেন। আর রাজাদের বহু স্ত্রী প্রচলিত রীতি ছিল। তারমানে রানীর সুবিধা ভোগকরতো সতীনের অসুবিধাও ভোগ কর। তবে কোরআন ও হাদিস মিলে যে পঁচিশ জন নবির (আ.) কথা রয়েছে তাদের ষোল জন এক স্ত্রীর স্বামী ছিলেন। আর দুই জনের স্ত্রী ছিলনা। এ ক্ষেত্রে এক স্ত্রীর সংখ্যা দ্বিগুণের বেশী।

এক স্ত্রী তাঁর দায়িত্ব পালনে অপারগ হলে অন্য স্ত্রী প্রয়োজন। দুই স্ত্রী তাদের দায়িত্ব পালনে অপারগ হলে তৃতীয় স্ত্রী প্রয়োজন। তিন স্ত্রীও যদি এমন হয় তবে চতুর্থ। তবে কোনক্রমেই তারপর আর নয়।তবে সমতা বিধান করতে না পারলে ভোগান্তির শিকার হলেও একের অধিক বিবাহ চলবে না। এ নীতির মাঝে মন্দ কিছু পরিলক্ষিত হয় কি? যদি তেমন হয় তবে সেটা কিভাবে সেটা আমাদের বোধগম্য নয়।

মানুষের সম্পর্কগুলো ইহকাল ও পরকালে রুচি সম্মত থাকুক। নারী হোক আর পুরুষ হোক কোন পুরুস্কার প্রাপ্তের উপর জবরদস্তি না করা হোক। আল্লাহর নিকট এটাই আমাদের একান্ত কাম্য। আশাকরি বান্দার ইচ্ছার মূল্য অবশ্যই তাঁর নিকট থাকবে। বান্দা তাঁর অবমূল্যায়নের শিকার হবেন না।যা খুশি করতে পারেন বলেই তিনি যা খুশি করবেন, বান্দা এমন প্রত্যাশা করেনা।অন্তর্যামী বিষয়টা সুবিবেচনায় রাখবেন বলে সবাই আশা করে।জান্নাতী নারী-পুরুষ সবার জীবন সুখময় হোক এটুকুই আমাদের কাম্য।মহানবির (সা.) আবেদনের ভিত্তিতে আল্লাহ অনেক কিছু করেছেন। তাঁর উম্মত হিসেবে আমরাও আমাদের কিছু আবেদন নিবেদন মঞ্জুর হওয়ার প্রত্যাশা করি।বন্ধ হোক বহুগামীতা। অটুট থাকুক ভালবাসায় ভরপুর সুন্দর দাম্পত্য এবং তা’ সকল স্থানে ও সকল কালে। ইসলাম সর্ব বৃহৎ ধর্ম হওয়ার দিকে যাত্রা শুরু করেছে, এজন্য ইসলামকে বহুগোমীতা থেকে দূরে থাকা আবশ্যক। তাহলে তারা বহু মানুষের সহমর্মিতা প্রাপ্ত হবে।

বিঃদ্রঃ ‘ইসলামের সঠিকতার অকাট্য প্রমাণ’ গ্রন্থের একটি অধ্যায় হিসেবে লেখাটি লেখা হয়েছে।
ইসলামের সঠিকতার অকাট্য প্রমাণ
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৫:৫৫
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×