(গল্পের শেষ পর্ব...)
পুরোনো স্মৃতি মনে করে অপলা আর কেয়া হাসে খিলখিলিয়ে। এই মুহুর্তে অপলা তার ব্যাথা আর যন্ত্রনা ভুলে গেছে। আজ দু'বোনে মিলে কতদিনের জমানো গল্প করবে। দুজনে আরো কাছাকাছি ঘেষে বসে।
হঠাৎ কেয়ার মুখটা বিষন্ন হয়ে যায়।
- কতো স্বপ্ন নিয়ে চাচাজান পথ হেটেছেন, নারে আপা? এবং আমাদের নিজেদেরও কত স্বপ্ন ছিলো অথচ লাজরাঙা চাচাজানের সেই ভাগলক্ষী অপলা আজ চোরাবালির অক্টোপাশের হাতে বন্ধি।
- ওসব কথা থাক অন্য কিছু বল, অপলা প্রসঙ্গ বদলাতে চায়।
- আচছা আমাদের মা দেখতে কেমন ছিলোরে আপা ?
কেয়ার প্রশ্নটা অপলার বুকের পাঁজর বিদীর্ন করে দ্রুত রক্ত শিরায় পৌছে যায়। কখনোতো এ প্রশ্ন করেনি কেয়া? তার জন্মের আজ ১৮ বছর তিন মাস হতে চলেছে মায়ের মৃত্যুর দিনের ও এতোটা সময় পার হয়েছে। অপলার চোখদুটিতে স্পর্শ করে কেয়া কান্না মিশ্রিত সুরে বলে,
- তোর এই চোখদুটি দিয়ে তুই মাকে দেখেছিস নারে আপা? বলনা কেমন ছিলেন আমাদের মা ?
অপলার গাল বেয়ে অবিরল ধারায় পানি গড়িয়ে পড়তে থাকে অনেকক্ষন কোন কথা বলতে পারেনা।
কতক্ষন মৌন মুহুর্ত কেটৈ যায় ওরা তা জানেনা, শিতল ভাবনার অতলে থেকে দুজনেই চোখের পানি মুছে অনবরত দুহাতের তালুতে তারপর অপলা অনেকটা অনাড়ম্বর ভাবে বলে,
- ঠিক আমার মত ছিলেন আমাদের মা, সবাই বলতেন আমি আর মা নাকি একে অনেক কার্বন কপি।
হঠাৎ বদলে যায় কেয়া। মুখটা রক্তবর্ন করে সাপের মত ফুস করে উঠে বলে,
- মা কি তোর মতই বোকা ছিলেন ? তোর মতই গিনিপিগ ?
অপলা কেয়ার চোখের দিকে তাকিয়ে স্তব্ধ হয়ে যায়। কোন কথা বাড়ায়না, সে জানে একথাটির কোন মানে ।
- চল ঘরে গিয়ে বসি বাইরে প্রচন্ড অন্ধকার। এছাড়া রাতও অনেক হয়েছে। অপলা ক্ষিনপায়ে বারাšদা থেকে ঘরে চলে যায়। আর দুহাতে মুখ ঢেকে ডুকরে কাঁদতে থাকে কেয়া।
রাতের নিস্তব্ধতায় ক্লান্ত শরীরটাকে বিছানায় এলিয়ে দেয় সুজিত। ঘরে ফিরে প্রচন্ড বমি হবার পর মদের নেশাটা কেটে গেলেও তখনো খানিকটা ঘোর রয়েছে তার ভেতর। পাশে বালিশে নাক গুজে নিথর হয়ে পড়ে আছে অপলা। নিজের প্রয়োজনে দুএকবার অপালার কাধ ধরে নাড়া দেয় সুজিত, সাড়া না পেয়ে একটু জোরেই ঝাকিয়ে বলে কি হলো মরার মত পড়ে রইলে যে? ব্যাথায় কেকিয়ে উঠে অপলা, কথা বলেনা। বেশ কিছুক্ষন চুপ করে পাশ ফিরে থেকে পায়ের আংগুল দিয়ে সামান্য নাড়া চাড়া করে অপলার পা দুটিকে সুজিত, কিšতু অপলার মধ্যে পিন পতন নিস্তব্ধতা। সুজিত রাগে ফুসতে থাকে তারপর জোরে চিৎকার দিয়ে উঠে,
- কি হলো তোমার, খুবতো বেশী সাহস দেখাচেছা,এতো সাহস তোমার হলো কি করে ? মনে হচেছ আমার উপর বিদ্রোহ করেছো? ও বুঝেছি সারাদিন বোনের ফুসুর ফাসুরে হরতাল ডেকেছো তাইনা? বেশ দেখাচিছ তোমার হরতাল। শালী আমার সাথে বজ্জাতি, আমার সাথে বিদ্রোহ ।
ক্যাচ করে দেয়াশলায় জেলে সিগারেট ধরায় সুজিত, তারপর অপলার ডান হাতের পেশিতে চেপে ধরে সিগারেটের মুখ।
হঠাৎ আগুনের ফুলকি শরীরের চামড়ায় লাগতেই অপলা আকাশ কাপানো চিৎকার দিয়ে উঠে। আবার সাথে সাথে মুখে কাপড় জড়িয়ে নিজেই শব্দ বন্ধ করে দেয়। সুজিত ক্রমাগত সিগারেটের মুখ এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় চেপে ধরে। একসময় অপলা সুজিতের পা জড়িয়ে ধরে বলে,
- পাশের রুমে কেয়া শুয়ে আছে, জেগে গেলে সব শুনতে পাবে। তুমি আমাকে মাফ করো, আজকের মত আমাকে ছেড়ে দাও, আমি কথা দিচিছ কেয়া চলে যাবার পর তুমি আমাকে যত খুশি শাসি দিও আমি নিষেধ দেবো না। শুধু আমার কেয়া-----।
অপলার একটি চিৎকার শুনে সারা বাড়ীর লোকজনই জেগে গেছে আর কেয়াতো শুয়েছে অপলার পাশের রুমে। সে একবার অপলার দরজার কাছে আসে আবার ফিরে যায় বিছানায়, আবার আসে আবার ফিরে যায়। ঘরের ভেতরকার সকল কথায় কেয়ার কানের কাছে পষ্ট শুনা যাচেছ। কেয়া তখন কি করবে বুঝে উঠতে পারেনা, দ্রুত টেনে টেনে শ্বাস নিচেছ কেয়া। সিগারেটের আগুন তার বোনের শরীরকে নয় তার নিজের শরীরটা জ্বালাচেছ। একসময় কাথা দিয়ে কান চেপে ধরে, চোখের পানিতে আললাকে ডাকে, আললাহ আমি যে আমার বোনের কষ্ট আর সহ্য করতে পারছিনা, তুমি আমার এই সরল বোনটিকে এতো বোকা কেনো বানালে ? বলো কেনো বানালে ?
সকালে উঠে অপলা নিজের হাতে নাসা বানিয়ে এনে সুজিতকে ডাকে.
- এ্যাই শুনছো, তোমার নাস্তা রেডি, উঠে ফ্রেস হও তাড়াতাড়ি, তানা হলে আবার অফিসের দেরি হয়ে যাবে।
সুজিতকে ডেকে ঘর থেকে বের হবার সময় অপলা দেখে দরজার কাছে কেয়া দাড়িয়ে আছে, রক্তবর্ন কেয়ার চোখ। জোরে হ্যাচকা টান মারে অপলার হাত ধরে কেয়া। টেনে নিয়ে যায় পাশের ঘরে।
- ছিঃ আপা ছিঃ, কাল সারারাত যে লোকটি তোর শরীর পুরলো সিগারেটের আগুনে, সকালে উঠেই তা ভুলে গেলি? আর তারই উদরপুর্তির জন্য নিজের হাতে নাস্তা বানিয়ে আনলি ? সত্যি ধন্নি মেয়ে তুই।
অপলা লজিজত হয়ে বলে
- কেয়া-!
- আমি সব শুনেছি, এমনকি তুই যে আমার কানে শবদ না পৌছানোর জন্য আচল চেপে গোংরাচিছলি, দরজায় দাড়িয়ে আমি সে শবদও শুনেছি। আর এখানে নয়, আজই তোকে নিয়ে যাবো আমার সংগে ।
- কিসব পাগলামো করছিস।
- কোন পাগলামো করছিনা, জীবন দুদিনের কথাটি সবাই বললেও জীবন দুদিনের নয় , জীবন অনেক বড়।
কেয়ার দুখানা হাত চেপে ধরে অপলা,
- তোর দুলাভাই শুনতে পাবে আসে বল পিজ।
- আপা চাচাজানের অসুখ তিনি আসতে পারবেন না. তুই স্রেফ উত্তর দিবি, বল তুই কি যাবি আমার সংগে। আজ এবং এক্ষনি ?
- কেয়া এটা সম্ভব নয় ,বুঝতে চেষ্টা কর।
- কার জন্য তোর এই করাবাস, বল আমাকে ?
- কেয়া কিসব আবোল তাবোল বকছিস,তোর বয়স কম, অনেককিছুই তুই বুঝবিনা,
- বল কার জন্য এই কারাবাস ?
অনেক্ষন চুপ করে থাকে অপলা তারপর ডুকরে কেঁদে উঠে,কাপা কাপা কন্ঠে বলে
- আমার জন্যে, তোর জন্যে, চাচাজানের জন্যে।
- তুই এভাবে বেচেঁ আছিস জানলে চাচাজান আর আমি কতটা সুখে থাকবো তুই কি বুঝতে পারছিস সেটা? চল আবার নতুন করে জীবন শুরু করবি, আবার নতুন করে সব হবে।
- না তা হয়নারে। এ অনুরুধটা আমাকে করিসনা।
এবার অগ্নিকন্যার মত ফুসলে উঠে কেয়া,
- একটা মানুষ দিনের পর দিন তোকে কষ্ঠ দিচেছ, অত্যাচার করছে, তোকে বোকা পেয়ে বাইরে মেয়েদের সাথে রাত কাটাচেছ, এতসব জেনেও তুই তার জন্য---।
- বলেছিতো তার জন্য নয়।
- তবে -- ? আপা শোন যদি তুই আমার সাথে আজ না যাবি তবে কক্ষনও আমার মুখ তোকে আর দেখাবোনা। তুই সেটার প্রমান দেখতে চাস ?
নিশ্চুপ অপলা ঠাঁই দাড়িয়ে থাকে। কোন কথা বলেনা।
অনেকক্ষন পর কেয়ার ধর্যচ্যুত হলে দ্রুতপায়ে চোখ মুছতে মুছতে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামে সে। তারপর ধীরে ধীরে সামনের গেট পেরিয়ে বড় রাস্তায় পা রাখে। অপলা বারান্দার রেলিংয়ে দাড়িয়ে নিস্ফলক তাকিয়ে থাকে কেয়ার চলে যাওয়া পথের দিকে। দুগাল বেয়ে অবিরত ধারায় পানি গড়িয়ে পড়তে থাকে। বুকের নিঃশব্ধ আকাশটাতে বজ্রধ¡নি শুরু হয়ে যায় অথচ নির্বাসিত সমুদ্রের মত একাকী দাড়িয়ে চেয়ে থাকে পিছনে। আরো কতক্ষন কেয়াকে দেখা যায়, তারপর --- তারপর ধীরে ধীরে মিলিয়ে যায় রাস্তার ওপাশে তার প্রিয় ছোট বোনটি।
রেলিংয়ের শক্ত সিমেন্টের উপর মাথাটাকে জোরে জোরে আঘাত করে অপলা, দুরের আকাশ পানে তাকিয়ে স্মৃতির আয়নায় দেখতে চেষ্টা করে কষ্টের অক্টোপাশে তার শৈশব, কৈশর এবং আজকের জীবন। হাউ মাউ করে কেঁদেই চলে অপলা!
তারপর ভুপেনের একটি গান মনের উদ্যানে ভেসে আসে অপলার-----
”ও মালী সারাজীবন কাঁদালে যখন এবার মেঘ করে দাও, এবার মেঘ করে দাও, মানুষ যেনো করোনা আমায় ,
কাঁদতে পারবো মনের সুখে অনেক ভালো তাও । এবার মেঘ করো দাও------। '
আলোচিত ব্লগ
বিসিএস-পরীক্ষার হলে দেরিঃ পক্ষ বনাম বিপক্ষ
বর্তমানের হট টপিক হলো, “১ মিনিট দেরি করে বিসিএস পরীক্ষার হলে ঢুকতে না পেরে পরীক্ষার্থীর স্বপ্ন ভঙ্গ।” প্রচন্ড কান্নারত অবস্থায় তাদের ছবি ও ভিডিও দেখা যাচ্ছে। কারণ সারাজীবন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।
আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন
মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার
মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন
জব্বারের বলীখেলা ও বৈশাখী মেলা-২০২৪
ছবি সৌজন্য-https://www.tbsnews.net/bangla
ছবি- মঞ্চে তখন গান চলছে, মধু হই হই আরে বিষ খাওয়াইলা.......... চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী গান।
প্রতি বছরের মত এবার অনুষ্ঠিত হল জব্বারের বলীখেলা ও বৈশাখী মেলা-২০২৪। গত ২৪/০৪/২৪... ...বাকিটুকু পড়ুন
ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান
উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন