somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ডিটেক্টিভ প্রদোষ চন্দ্র মিত্র

১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ডিটেক্টিভ প্রদোষ চন্দ্র মিত্র উরফে ফেলুদার সাথে আমার পরিচয় আজ থেকে তেরো বছর আগে ঠিক এরকম সময়েই । মানে বর্ষাকালে । জুন-জুলাই ২০০২ । হালকা বৃষ্টি হচ্ছিল সেই দিন । আনন্দমেলার স্পেশাল সংখ্যায় ছাপা হয়েছিল ‘শেয়াল দেবতার রহস্য’ । আমি আনন্দমেলা কিনে শার্টের নিচে ঢুকিয়ে ভিজতে ভিজতে বাড়ি এসেছিলাম। এসেই পড়তে শুরু করি ফেলুদা । পড়ে মুগ্ধ হয়েছিলাম বটে কিন্তু তারপর আর পড়ায় হয়নি ফেলুদার রহস্য কাহিনী । ব্যাপারটা ভেবে সত্যিই হজম হয় না ।

এরপর মাধ্যমিকের সময় পেলাম ব্যোমকেশ বক্সিকে । আনন্দ পাবলিশার্স থেকে প্রকাশিত ব্যোমকেশ সমগ্র কিনে পড়তে থাকলাম আর মুগ্ধ হতে থাকলাম । এতটাই মুগ্ধ হলাম যে অন্য গোয়েন্দার প্রতি কোন টান-ই থাকল না । পরে ফেলুদার উপর করা সন্দীপ রায়ের মুভি গুলো দেখলাম । সব্যসাচী ফেলুদার ভুমিকায় । একটু ইন্টারেস্ট বাড়ল । তার অনেক দিন পর বইয়ের দোকানে আনন্দ পাবলিশার্সের ‘ফেলুদা সমগ্র’ দেখলাম । দু খন্ড । দাম হাজার টাকা । নিলাম ।

শুরু হল ফেলুদা পড়া । প্রথম দু-একটি গল্প পড়ে মন খারাপ হয়ে গেল । কারন ফেলুদাকে নিয়ে যত মাতামাতি হয় তার জন্য ঐ গল্পগুলো যথেষ্ট নয় । বাদশাহী আংঠি প্রথম হেব্বি লাগল । মনে হল আহা! এই না হলে আডভেঞ্চার। তারপর সোনার কেল্লা মাথা ঘুড়িয়ে দিল । মছলি বাবা মানে জয় বাবা ফেলুনাথের তো জবাবই নাই । ঘুরঘুটিয়ার ঘটনা আর গোঁসাইপুর সরগরম এর তুলনা কোন রহস্য গল্পের সাথেই হয় না । এভাবেই আমি ধীরে ধীরে ফেলুদা ভক্ত হয়ে উঠলাম ।

ফেলুদা গল্পের প্রধান আকর্ষন আমার কাছে থ্রি মাস্কিটিয়ার্সের উপস্থিতি । মানে ফেলুদা, তোপসে আর জটায়ুর ক্যামেস্ট্রিটা চমৎকার । যে কাউকে ভালো লাগবেই । তিন রকম বয়সের তিনজন । তোপসে হল কিশোর, ফেলুদা যুবক আর লালমোহন গাঙ্গুলী উরফে জটায়ু মধ্য বয়স্ক । এই তিন জনের একেক জন একেক রকমের । জটায়ু চরিত্রটা খুবই ইন্টারেস্টিং । উনি না থাকলে ফেলুদা গল্পে হাসির খোড়াক খুবই কম থাকত । তাই হয়ত সোনার কেল্লার পর এক দুটি গল্পে না থাকলেও বাকি সব গল্পেই জটায়ুর আবির্ভাব দেখা যায় ।

কিছু দিন আগে ‘কলেজ স্ট্রীট’ নামের একটি পুরোনো ম্যাগাজিনে শার্লক হোমসকে নিয়ে প্রবন্ধ পড়লাম । লেখক লিখেছেন বাংলা সাহিত্যে ব্যোমকেশ বাদে সকল গোয়েন্দা লেখকই পাঠককে ভুলিয়ে রেখে চমক দিয়েছেন। ফেলুদার ক্ষেত্রে আদতেই সত্যজিত রায় এমন করেছেন কিনা তা তর্কের ব্যাপার । সেটা বাদ’ই দিই । তবে ফেলুদার গল্প গুলো থেকে অনেক কিছু শিক্ষার আছে । এক একটি গল্প রহস্য আর আডভেঞ্চারের পাশাপাশি ভ্রমন কাহিনীও বটে । সোনার কেল্লায় রাজস্থানের, গ্যাংটকে গন্ডগলে গ্যাংটকের, দার্জিলিং নিয়ে গল্প গুলোই দার্জিলিং-এর, বাদশাহী আংঠিতে লাকনৌর, জয় বাবা ফেলুনাথে কাশি-বেনারসের, যত কান্ড কাঠমুন্ডুতে নেপালের বিস্তারিত বর্ণনা পাওয়া যায় । এছাড়া বিভিন্ন বিষয় যেমন প্যারা-সাইকোলজী, টেলিপ্যাথি, সংখ্যা তত্ত্ব, ইতিহাস, সার্কাস প্রভৃতি বিষয়ে অনেক জ্ঞান পাওয়া যায় ।

প্রথম দিকে ফেলুদার প্রতি তেমন আকর্ষন না থাকলেও পরে খুব ভালো লাগতে লাগে ফেলুদাকে । সাথে আবিস্কার করি ফেলুদার সাথে আমারও কয়েকটা অভ্যেস বেশ মিলে যাই । এক, চা খাওয়া । ফেলুদা চায়ের ব্যাপারে খুব বাড়াবাড়ি করে । মানে চা ভালো লাগেই । যেমন গোসাইপুরের গল্পটিতে দেখি ফেলুদা গ্রামে এসেছে বলে নিজে চা পাতা এনেছে । আমিও ঠিক তেমনি । আর যাকিছু যাই হোক কিন্তু চা ভালো লাগবেই । দুই, ফেলুদাকে খাওয়ার পরে ‘মিষ্টি পান’ লাগেই । লাখনৌ হোক বা কাঠমান্ডু পান ছাড়া মুশকিল ! আমারও ঠিক তাই । আর তিন নম্বরটা হল রাতে ঘুমানোর আগে একটু বই পড়ার অভ্যেসটা । এই সাদৃশ্যর কারনে ফেলু মিত্তিরের প্রতি টানটাও আরো বেড়ে গেছে বৈ কি !

সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:৩৪
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩


বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×