গণতন্ত্র বা ভোটাভুটি, সরকার গঠন এবং দেশ পরিচালনার ব্যাপারে দুটি জিনিসই মুখ্য জনসাধারণ এবং নেতা। নেতারা প্রতক্ষভাবে দেশ পরিচালনা করে আর জনসাধারণ ভোট দিয়ে তাদের দেশ চালাবার ব্যবস্থা করে দেয় অর্থাৎ দেশ চালানোর ব্যাপারে এরাও পরোক্ষভাবে যুক্ত। জনসাধারণ যদি ভালো মানুষকে ভোট দিয়ে নির্বাচন করে তবে সেও সেই ভালো কাজে যুক্ত হল আর দুর্নীতিবাজ নেতাকে নির্বাচন করলে সেও দুর্নীতিতে শামিল হল।
একটা দেশ চালানো মুখের কথা না। কোটি কোটি লোকের নেতা হওয়াও মুখের কথা না। নেতাদের গুণ সম্পর্কে একবার টাইম ম্যাগাজিনে একটা লেখা ছেপেছিল। সেই লেখায় বলা হয়েছে, ‘নেতাদের অবশ্যই তিন ধরনের কাজ সম্পাদন করতে হয় – অনুসারীদের মঙ্গলের ব্যবস্থা করা, এমন একটি সামাজিক প্রতিষ্ঠানের সৃষ্টি করা যেটাতে সাধারণ লোকজন তুলনামূলকভাবে নিরাপত্তা বোধ করে এবং অনুসারীদের জন্য একটি পূর্ণাংগ বিশ্বাসের যোগান দেয়া’।
এখন প্রশ্ন হল, সকলেই কী এমন গুণের অধিকারী?! এটা কী সকলেরই জন্মগত স্বাভাবিক গুণ? নিশ্চয় নয়। এমন গুণ সকলের থাকেনা এবং এমন গুণ আয়ত্ত করতে অনেক কাঠ খড় পোড়াতে হয়। অনেক কষ্ট করতে হয়। তাহলে কেন যে কেউ ভোটে দাঁড়াবে? যে কেউ যখন আমলা হতে পারে না, পুলিশ-আর্মি হতে পারেনা তবে যে কেউ কেন নেতা হতে পারবে? কবি ইকবাল বলেছেন, ‘গণতন্ত্রে মাথা গোনা হয় মাথার মুল্যায়ন করা হয়না’। আর তা হয়না বলেই বেশির ভাগ গণতন্ত্র মুখ থুবড়ে পড়েছে/পড়ছে।
দ্বিতীয়্ত, যারা ভোট দেবে তাদেরও কিছু কোয়ালিটি থাকা দরকার। একজন সমাজসেবী, সাংবাদিকি-সাহিত্যিক, সচেতন, শিক্ষিত লোক এবং একজন মাতাল, নেশাখোর, ধর্ষক, অসচেতন, দেশদ্রোহি, খুনির ভোটের মুল্য এক এটা কোনভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। ৪৯ টা ঘোড়ার থেকে ৫১ টা গাধার মতের মুল্য বেশি এটাও মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। ১০ জন মানুষ যদি আলোচনায় বসে যে মদ খারাপ না ভালো আর ৭ জনই মদখোর হয় তবে তো মদকে ‘ভালো’ বলে সিদ্ধান্ত আসবেই। তাই ভোটারদেরও একটা যোগ্যতা থাকা দরকার। ক্রিকেট/ফুটবল টিমের সদস্য বা ক্যাপ্টেন নির্বাচন করার জন্য একদল যোগ্য নির্বাচকমন্ডলী থাকে। যারা নির্বাচন করেন কে কে খেলবে এবং কে অধিনায়ক হবে। এক্ষেত্রে মাঠে উপস্থিত দর্শকদের ভোট নেওয়া হয়না। একটা অফিসের ক্লার্ক নিয়োগের জন্যও তো যোগ্য লোকেদের দ্বারা নির্বাচিত হতে লাগে আর দেশের ক্লার্ক নির্বাচন করবে এমন লোক যারা জানেই না দেশ কিভাবে চালাতে হয়??!! বড়ই অদ্ভুদ ব্যাপার।
আমরা গণতন্ত্রের পক্ষে তো অনেক কিছু শুনে থাকি কিন্তু বিপক্ষে খুব কম লোকই জ্ঞান রাখে বা জানার চেষ্টা করে। দুইজন দার্শনিক এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞানীর মতামত জানানোর লোভ সামলাতে পারছি না।
জর্জ বার্নাড শ' বলেছেন --
✒ ‘স্বল্প সংখ্যক দুর্নীতিপরায়ণ নিয়োগ ব্যবস্থা বিকল্প হিসেবে গণতন্ত্র দান করেছে; অসংখ্য অযোগ্য ব্যক্তির নির্বাচন ব্যবস্থা।’
কার্লাইল বলেছেন –
✒ ‘গণতন্ত্র হল মুর্খদের দ্বারা পরিচালিত, মুর্খদের জন্য এবং মুর্খদের শাসন’ [Democracy is a goverment of fools for the fools and by the fools]
এমিল ফাগুয়ে বলেছেন –
✒ ‘গণতন্ত্র হ’ল অনভিজ্ঞদের শাসন। কেননা বিজ্ঞ ও জ্ঞানী লোকেরা কখনো দুয়ারে দুয়ারে ধর্ণা দিয়ে ভোট চায় না। ফলে শুধু লোভী ও অপদার্থরাই ভোট নিয়ে ক্ষমতায় আসে। তারা অগ্নিঝরা ভাষণে মানুষকে ভুলিয়ে ভোট নেয়। অথচ শাসনকার্য এত সহজ নয় যে, কয়েক দিনের মধ্যেই সে সবকিছু রপ্ত করে নিবে। এজন্য দক্ষ ও নিপুণ হাতের প্রয়োজন’।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৫:৫১