somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যে মেয়েটি আমাকে প্রথম প্রেম শিখিয়েছিল

২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ দুপুর ২:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সে আমার দু বছরের বড় ছিল আর স্কুলে এক কাস উপরে পড়তো। সে খুব মারকুটে ও ডানপিটে ছিল; আমি খুব গোবেচারা ছিলাম। আমাকে দু চোখে দেখতে পারতো না।
সে পড়ালেখায় ব্যাকবেঞ্চার ছিল, আমি নাকি খুব মেধাবী ছিলাম মেয়েটার চেয়ে; এজন্য আমার প্রতি তার প্রচণ্ড ক্ষোভ ছিল; অবশ্য এটা আমি জানতে পেরেছিলাম অনেক অনেক দিন পর- সে যখন মুচকি মুচকি হাসছিল, আর তার স্বামীর কাছে অনুযোগ করছিল, অনেক অনেক দিন পর পথে যেতে যেতে হঠাৎ দেখা হয়ে গেলে।

তার সাথে একদিন স্কুলে ঝগড়া হয়েছিল। আমি শিক্ষকের কাছে নালিশ করেছিলাম। শিক্ষক তাকে ভর্ৎসনা সহ বেত্রাঘাত করেছিলেন। আমার প্রতি মেয়েটার প্রচণ্ড ক্ষোভ ছিল।
তারপরের দিন একটা বেদনাদায়ক ঘটনা ঘটেছিল। স্কুল ছুটির পর। আমাদের বাড়িতে আসতাম মেয়েটার বাড়ির পাশের রাস্তা দিয়ে। ওত পেতে থাকা মেয়েটা আমাকে দেখেই আমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, এবং ছুটে পালাবার আগেই বাঘিনীর মতো আমার পিঠের উপর বড্ড একটা কামড় দিয়েছিল। হৃদয়বিদারক কান্নায় মেয়েটার মা ছুটে এসে আমাকে আদর করেছিলেন, আর মেয়েটাকে মারবার জন্য তাড়া করেছিলেন। এই মর্মান্তিক ঘটনার কথা জানতে পেরে আমার মা খুব মর্মাহত হয়েছিলেন।

এ ঘটনার পরের বছর আমি দ্বিতীয় শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হলাম, আর ফাঁকিবাজ, দজ্জাল মেয়েটা ফেল মেরে দ্বিতীয় শ্রেণীতেই রয়ে গেলো। প্রকৃতি মানুষকে এভাবেই শিক্ষা দিয়ে থাকে।
আর প্রাকৃতিক নিয়মে মেয়েটা আমার প্রতি নরম হতে থাকে। আমার জন্য সে গাছপাকা বড়ই নিয়ে আসতো; ওদের আমতলায় ঝড়ের দিনে আম কুড়োনোর দাওয়াত দিত; চড়ুইভাতিতে আমাকেও সঙ্গে নিত। পুতুল বিয়ের সময় ছেলে হিসেবে একমাত্র আমাকেই ডাকতো মেয়েটা ওদের দলে। প্রথম বৃষ্টির নতুন পানিতে পুকুর ভরে যেতো, রাতভর ব্যাঙ ডাকতো; সকালে আমরা একসাথে সেই ব্যাঙ তাড়াতাম, আর সারা দুপুর ভরা পুকুরে ডুবসাঁতার খেলতাম।

আরও কিছুকাল পর মেয়েটা বলেছিল, তোকে একদিন একটা জিনিস দেখাবো, কাউকে বলবি না তো?

আমি সে কথা কাউকে বলি নি।


একদিন মেয়েটা শাড়ি পরেছিল; পুতুলবিয়ের দিনে। আমাকে পাঞ্জাবি আর পায়জামা পরতে বলে নি; এসব কি ছাই আমরা জানতাম? তেঁতুলখোসায় ভাত রেঁধে দিয়েছিলেন ওর মা; পুরো একতেঁতুল ভাত সে আমাকেই দিয়েছিল। তারপর মুখ টিপে হেসে বলেছিল, ‘দেখবি?’
‘দেখবো’- বলতেই ‘আয়’ বলে ইশারায় ডেকে নিয়ে যায় ওদের কোণার দিকের অন্ধকার ঘরটায়। খুব আলগোছে দরজা ভেজিয়ে দিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে, ‘কাউকে বলবি না তো?’
‘না।’ আমিও ফিসফিস করে জবাব দিই। মেয়েটা কাঁপা হাতে খাটের উপর জাজিমের নিচ থেকে কী যেন বের করে এনে আমার হাতে তুলে দেয়।
‘পড়্। কাউকে বলবি না তো?’
‘না।’ বলে আমি পড়তে থাকি। এক আনা যদি পড়তে পারি, ষোল আনা তার অর্থ বুঝি না।
‘প্রেমপত্র। বুঝলি?’
‘তুই লিখেছিস?’
‘না। বকুলা ম্যাডামকে দিতে বলেছিল, তুহিন স্যার। দিই নি। কাউকে বলবি না তো?’
‘না।’
‘আমিও একটা লিখবো। তুই নিবি?’
‘নিব।’

তারপর মেয়েটা একদিন আমাকে একটা ‘প্রেমপত্র’ লিখেছিল; আর একটা অনবদ্য জিনিস দেখিয়েছিল।

আমি সে কথা কাউকে বলি নি।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই অক্টোবর, ২০০৯ রাত ১:৪১
১৪টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×