একটা বড়ো কবিতায় যেমন ছোটো ছোটো অনেকগুলো
কবিতা শেকলের মতো পর পর সাজানো, কিংবা থরে থরে
অগোছানো থাকে, তেমনি অনেকগুলো ছোটো, বিক্ষিপ্ত
কবিতাও একত্র হয়ে গড়ে তুলতে পারে একটা দীর্ঘ পূর্ণাঙ্গ
কবিতা। একটামাত্র শব্দ, কিংবা ক্ষুদ্র একটা বাক্যও একটা
পূর্ণাঙ্গ কবিতা হয়ে উঠতে পারে। আবার, কয়েক পৃষ্ঠাব্যাপী
সুদীর্ঘ কবিতাটি অসমাপ্ত থেকে যাবে কবির অক্ষমতার কারণে।
প্রতিটি কবিতার প্রতিটি শব্দ ও বাক্য আলাদা ভাব প্রকাশ
করে। ভাবগুলো জোড়া দিয়ে কবিতাটি সমাপ্ত করা হয়। এ
জোড়বন্ধন কখনো সার্থক হয়, কখনো হয় না। কবি কী বলতে
চান, কবিতায় কখনো তা অস্পষ্ট থেকে যায় কবির অদক্ষতায়;
কখনো কবি ইচ্ছে করেই কিছু অভিব্যক্তি উহ্য রাখেন (অদক্ষ
কবিরা কেউ কেউ অদক্ষতা-জনিত উহ্যতাকে নিজের কৃতিত্ব
ভেবে বসেন)।
কেউ কেউ যা মনে আসে, পূর্বাপর সম্পর্কবিহীন অভিধানসর্বস্ব
গুচ্ছ গুচ্ছ শব্দাবলি, পঙ্ক্তির পর পঙ্ক্তিতে বসিয়ে ভাবেন-
‘বেশ ঘোর লাগিয়ে দিলাম কবিতায়!’ হয়ত তিনি নিজেও
জানেন না কী লিখেছেন, বা কী বলতে চেয়েছেন। এসব পাঠ
করে অন্তর্নিহিত ভাব উদ্ঘাটনের চেষ্টা পণ্ডশ্রমের নামান্তর।
তবে, কোনো কোনো পাঠকের কাছে তা শ্রেষ্ঠ কবিতা হিসাবে
প্রতিভাত হবে; জেনে রাখুন, কবিতার উৎকর্ষের জন্য পাঠক
হিসাবে তাঁরা বড্ড অবিজ্ঞ।
কেউ কেউ মগজে 'কবিতা' নিয়ে ভূমিষ্ঠ হোন। লিখতে লিখতে,
পড়তে পড়তে, ঘুরতে ঘুরতে, ভাবতে ভাবতে, আবার লিখতে
লিখতে কেউ কেউ কবিতায় দক্ষ হয়ে ওঠেন। তবে, কেউ কেউ
অনেক বছর লিখেও নিজের প্রথম কবিতাটা থেকে তেমন এগোতে
পারেন নি। কারণ কী? কারণ হলো, কবিতা লেখবার জন্য কিছুটা
'প্রতিভা'ও থাকা চাই। প্রতিটা 'বৃষ্টি' কিংবা 'বসন্ত' নিয়েই কবিতা
লিখে ফেললে তাতে কতটুকু 'কবিত্ব' প্রস্ফুটিত হয়, তা নিরীক্ষা না
করেও একজন প্রাজ্ঞ পাঠক বলে ফেলবেন।
পাঠকেরা প্রায়শ কবির চাইতে অধিক প্রাজ্ঞ; ফলে হয় কী, যেটা
কবি বলেন নি, বা বলতে চান নি, এমনকি, উহ্যও রাখেন নি, তারা,
মানে প্রাজ্ঞ পাঠকেরা নিপুণ সার্জনের মতো কবিতার শরীর ব্যবচ্ছেদ
করে নাড়িভুঁড়ি সমেত জনসমক্ষে তুলে ধরেন। এ দেখে স্বয়ং কবিও
চমৎকৃত হয়ে হয়ত-বা বলে উঠবেন, 'বাহ! কী দারুণ কবিতাই না
লিখে ফেলেছি!'
০৫ সেপ্টেম্বর ২০২০
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৪:২১