একদিন খুব ভোরে আমরা পালিয়ে যাব
এক অজানা পাহাড়ের দেশে – কথা ছিল
ছুটন্ত লঞ্চের পাটাতন থেকে বুড়িগঙ্গার ঢেউয়ে
দুজনে একসাথে ঝাঁপ দিব - কথা ছিল
কথা ছিল - একদিন সারাদিন
ডিঙ্গিনৌকায় আড়িয়াল বিলের বর্ষা দেখবো-
আমি বাইব, আপনি উবু হয়ে শাপলা তুলবেন,
কলমিলতা, কচুরিফুলে আপনার টোপড় ভরে যাবে
রক্তে এখনো প্রচণ্ড ঝড়, অথচ হায়, আমাদের ইচ্ছেগুলো
অপূর্ণই রয়ে গেল।
জীবন কত ক্ষুদ্র, মৃত্যু এখন অতীব আকস্মিক-
সুঠাম, তরতাজা, ‘উজ্জ্বল’ মানুষগুলো হঠাৎ হঠাৎ
খবর হয়ে উঠছেন – ‘তিনি বা তারা আর নেই।’
আপনি কিংবা আমিও নিশ্চিত নই, ইতিমধ্যেই
আমাদের ফুস্ফুসে পঁচন ধরেছে কিনা।
আমাদের ইচ্ছেগুলো কি অপূর্ণই রয়ে যাবে?
আপনার পরনে থাকবে একটা কলাপাতা-রঙ শাড়ি,
যে-রঙ আমার অতি প্রিয়, এবং আপনারও।
কপালে থাকবে সবুজ একটা টিপ। দু কানে শিমের মতো
দুটো দুল, আর মটরদানার মতো
একটা নাকফুল থাকবে নাকে। আপনার রেশমি চুলগুলো
বাতাসে উড়বে পতাকার মতো ঢেউ খেলে।
পাঞ্জাবি কদাচিৎ পরি, ভালো লাগে না বলে।
আজ পরবো আপনার উপহার পাতাছাপের লাল পাঞ্জাবিটা।
আমার প্রবাসী বন্ধুরা অনেকেই, যেমন করিম, কিংবা
জসীম, অথবা মান্নান বা নূরু বহুদিন পূর্ণিমা দেখে না; সূর্যাস্ত কিংবা
সূর্যোদয়ের রূপ ওরা শেষ কবে দেখেছে, তা ভুলে গেছে।
নির্মম কথাটা কি শুনবেন? আমিও এসব দেখি নি,
কম করে হলেও চল্লিশ বছর।
এই অন্তরীণকালে কোথায়ই বা যাওয়ার আছে?
এই যে একুটুকরো ঘর, আর তার একটুকরো বিনম্র ছাদ
আজ এই ছাদের দেশে আমরা অনাবিল ঘুরে বেড়াবো
পুরোটা বিকেল; চোখ উজাড় করে
সূর্যাস্ত দেখবো, হালকা বাতাসে গা ভিজিয়ে রাতভর
আকাশের তারা গুনবো;
কোথায় যেন চলে গেল টগবগে দিনগুলো! ঘুরেফিরে
চোখে ভাসে জয়পাড়া-বান্দুরার পথ, ইছামতি নদী,
সুনসান রাতদুপুরে
ভুতুড়ে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে বাড়ি ফেরা;
ছুটি শেষে চলে যাচ্ছি, যতদূর দেখা যায়, গ্রামের শেষ মাথায়
দাঁড়িয়ে দুটো চোখ নীরবে অশ্রু ফেলছে।
আজ আমরা সেইসব পুরোনো গল্প পাড়তে পাড়তে
উদ্দাম চব্বিশে ফিরে যাব।
তারপর সকালের সূর্যোদয় কপালে মেখে ঘরে ফিরবো।
অপূর্ণ অযুত ইচ্ছেগুলো থেকে অন্তত এই ইচ্ছেটুকু
পূর্ণ করা যাক।
বলুন, আপনি কি রাজি?
৯ এপ্রিল ২০২১
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই এপ্রিল, ২০২১ রাত ১:৪৯