somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মৃত্যু, এক অলঙ্ঘ্য অভিযাত্রা

০৫ ই মে, ২০২১ রাত ১:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রতিটা মৃত্যু আমাদের চোখ আর্দ্র করে
হৃৎপিণ্ড ফালি ফালি করে
হোক সে আপন অথবা পর, প্রতিটা মৃত্যুসংবাদ
আমাদের বুকের ভেতর ছুরির ফলার মতো গেঁথে যায়।
মৃতব্যক্তি জানিয়ে যান- আমিও তোমাদের
রক্তের অংশ ছিলাম।

টেলিভিশনে ‘লাইভ’ কণ্ঠে ঝরে পড়ছিল অবিরল মধুরতা।
সস্ত্রীক আমি বুঁদ ছিলাম রাত্রিভূক স্নিগ্ধ মূর্ছনায়।
হায়, একদিন সকালে চমকে উঠলো বুক, তখনো মন জুড়ে
‘শুয়াচান পাখি’র মুহুর্মুহু সুরের রেশ, আর স্ক্রলে
দ্রুত ভেসে যাচ্ছে – ‘বারী সিদ্দিকী আর নেই’।
আমাদের রক্তসম্পর্কের কেউ তো নন তিনি, তবু কেন হায়,
হুহু করে বুক, চর চর করে পাঁজর ফেটে যায়!
এভাবে নিভৃতে কবিতায় ঘুমিয়ে পড়েন অনাত্মীয় বারী সিদ্দিকী,
অনাত্মীয় সকল সুজনেরা।

কখনো কি ভেবেছেন - মৃত্যু এত বেদনাময় কেন!
অর্থাৎ, কারো মৃত্যুতে আমরা কীজন্য কাঁদি!
যিনি চলে যান, চলে গেলেন যিনি, পৃথিবীতে আর
কোনোদিন তাঁর মুখ দেখা হবে না,
তাঁর হাসি আর ভাসবে না সকালের রোদে,
চাঁদের জোসনায়; তাঁর সুমিষ্ট ভাষ্যে কারো
হৃদয় বিগলিত হবে না। দিনে দিনে, জনে জনে
যত জড়িয়েছিলেন মায়া, বুনেছিলেন মমতার বীজ
অজস্র মননে - সকল বন্ধন ছিঁড়ে উড়ে যাবে পাখি
অনন্ত দূরের অসীম ভুবনে- আর কোনোদিনই ফিরবে না, হায়

যখন এরোপ্লেন বা টেলিফোন ছিল না,
হয়ত যুগ যুগ ধরে পৃথিবীর অন্য প্রান্তে প্রবাসী ছিল
মায়ের কোলছেঁড়া সন্তান; সর্ববিষণ্ণা জননী
সন্তানবিহনে সতত চোখ ক্ষয় করেন,
তবু তাঁর সান্ত্বনা - সর্বাঙ্গ আনন্দে
ঝলসে দিয়ে কোনো একদিন আদরের সন্তানেরা
খলবল করে নেচে উঠবে।
- মা একদা চিঠি পান, বহুকাল আগেই
শূন্যের সমীপে সমর্পিত হয়েছে কলজের ধন।
তাঁর আহাজারিতে পৃথিবী আকুল হয়, হায়,
আত্মার অংশেরা আর কোনোদিন আত্মার স্পর্শে ফিরবে না।

আমরা হাসি। আড়ালে দুঃখ কাঁদে।
অন্তরের খবর কতটুকু জানি?
আমরা হাসতে হাসতে ছুটে চলি
পরম গন্তব্যের দিকে- সে খবর রাখি না।

প্রতিটা মৃত্যু আমাদের জানিয়ে দেয় চিরায়ত
অমোঘ সত্য- জন্মের মতোই এ এক
অলঙ্ঘ্য নিয়তি- প্রতিটা বস্তু, জড় বা জীবন্ত প্রাণী,
সৃষ্টির পরই প্রতিনিয়ত ধাবিত হতে থাকে অনিবার্য
বিনাশের দিকে। মৃত্যুহীন বা অবিনশ্বর কিছুই
সৃষ্টি করেন নি তিনি।

পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ডাক্তারেরাও কারো মৃত্যু ঠেকাতে পারে না,
পথের ধুলোয় সম্পদ মিশে যায়; মানুষ শূন্যহাতে জন্মায়,
ফিরে যায় শূন্য হাতে। সারা বিশ্ব জয় করে মহামতি আলেকজান্ডারও
শূন্যহাত দেখিয়ে মাটির গর্ভে নিমজ্জিত হলেন,
শীর্ষ ঐশ্বর্যশালী স্টিফ জবস তেমনি পাহাড়প্রমাণ সম্পদের চূড়া হতে
গড়িয়ে গড়িয়ে ভূপাতিত হলেন; তাঁর স্থাবর-অস্থাবর
সমুদয় বৈভব ভেসে যাচ্ছে সাগরের স্রোতে।

মৃত্যুর জন্য আমাদের প্রস্তুতির প্রয়োজন। পার্থিব সঞ্চয়
সঙ্গে যাবে না। এগুলো অপরে খাবে।
ইঁদুরে কাটবে। আগুনে পুড়বে।
কিছু কিছু সম্পদ হয়ত অভিশাপ দেবে।

বয়োক্লিষ্ট সোনাভান আলয় অভিমুখে অস্থির হাঁটছেন,
কুঞ্চিত চোখে পড়ন্ত সূর্যের দিকে তাকান। অল্প কিছু আলোর
পরই ছায়াহীন সন্ধ্যা, তারপর নিকষ রাত্রি। দীপহীন
ঘোর অন্ধকারে কে তাঁকে দেখাবে পথ!

চিন্তাগ্রস্ত সোনাভান অস্থির। অস্থির পায়ে আলয় অভিমুখে
ছুটছেন। তাঁর অন্তর জুড়ে বিগত দিনের শোচনা।
কতটুকুই বা তাঁর ‘সম্পদ’! আদৌ কি আছে কোনো সঞ্চয়!!

২৪ নভেম্বর ২০১৭
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই অক্টোবর, ২০২২ দুপুর ২:২৩
১২টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×