পূর্ণিমার খলখলে জোছনায় শানবাঁধানো পুকুরের ঘাটে
একদিন একটা পারিবারিক জলসা বসবে
সেখানে এ বাড়ির সবাই থাকবে :
ছেলেবুড়ো, বউঝিরা, সবাই
সেই আসরে কেউ নাচবে, হয়ত এ বাড়ির সবচেয়ে আদুরে,
সবচেয়ে চঞ্চলা, ফুটফুটে, কনিষ্ঠা মেয়েটি
কোনো এক বউ কণ্ঠের সবটুকু মধু ঢেলে গাইবে রবীন্দ্র সংগীত
একদল পুরুষ দরাজ গলায় গাইবে কোরাস, জারিগান,
সুরের মূর্ছনায় ভারী হয়ে উঠবে আকাশ-বাতাস-তরুলতা : চারিদিক
জনৈকা দাদিমা তাঁর গল্পের ঝাঁপি খুলে বসবেন :
এক যে ছিল বিরাট বড়ো দৈত্য, ইয়া লম্বা হাত-
বিশাল তার দন্তরাজি- খুনমাখা লকলকে জিহ্বা,
প্রকাণ্ড তার মুখ, এক লহমায় গিলে খায় চন্দ্র-সূর্য-পৃথিবী
সেই যে ছিল মস্ত দানব এক
ভয়ে বিষম খেয়ে শিশুরা আরো শক্ত করে মায়েদের ধরবে জড়িয়ে
এলোমেলো সমাহারে আরো কত না আয়োজন থাকবে
আসর শেষ হলে সবাই যখন উঠি উঠি- কেউ একজন হঠাৎ
ভাববে, কী যেন এখনো বাকি রয়ে গেল
তারপর দ্রুতপায়ে ছুটবে ঘরমুখে, রুদ্ধশ্বাসে ফিরবে
হাতে চেপে বহু-প্রাচীন একটি বই- যার মলাট খসে গেছে,
উঁই আর পিঁপড়ায় বিদীর্ণ করেছে যার প্রতিটি পাতা
বইটির ধুলো ঝেড়ে ধীরে ধীরে পৃষ্ঠা উলটাবে সে-
ক্ষত-বিক্ষত অক্ষরেরা মৃত-বিকলাঙ্গ,
তবু সে প্রতিটি শব্দোদ্ধারের জন্য অতিশয় ব্যস্ত হবে
অসীম উৎসাহে খুঁজবে ইতিহাস :
এক যে ছিলেন কবি, সেই বহুদিন আগে,
তিনি ছিলেন
আমাদেরই পিতা-পিতামহ, প্রোপিতা, প্রোপিতামহ...
তারপর অস্ফুট স্বরে সে শুরু করবে পাঠ :
পূর্ণিমার খলখলে জোছনায় শানবাঁধানো পুকুরের ঘাটে
একদিন একটা পারিবারিক জলসা বসবে,
সেখানে এ বাড়ির সবাই থাকবে :
ছেলেবুড়ো, বউঝিরা, সবাই...
• ২০০০
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জুন, ২০২১ রাত ১১:২৪