প্রায় ৫০০০ বছর আগে মিশরীয়গণ ‘প্যাপিরাস’ গাছ থেকে মসৃণ ও সমতল পৃষ্ঠ বিশিষ্ট বস্তু আবিষ্কার করেন, যার উপর লেখাজোখা করা যেতো। দ্বিতীয় শতকের গোড়ার দিকে চীনে কাগজ প্রস্তুতপ্রণালি শুরু হয়; এবং চীন থেকেই মুসলমানদের দ্বারা কাগজের ব্যবহার ছড়িয়ে পড়ে; ইউরোপে কাগজ প্রস্তুত শুরু হয় দ্বাদশ শতকের শুরুতে। ১৮৪৪ সালে কানাডা ও জার্মানে যুগপৎভাবে কাগজের মেশিন আবিষ্কৃত হবার ফলে ব্যাপক হারে কাগজ প্রস্তুত হতে থাকে এবং গোটা বিশ্বে একটা সাংস্কৃতিক পরিবর্তন সাধিত হয়।
১৮১৪ সালে প্রথম ক্যামেরাবন্দি সাদাকালো ছবি তোলা হয়; পৃথিবীর প্রথম রঙিন ছবি তোলা হয়েছিল ১৮৬১ সালে। ১৯০২ সালের আগে কোনো রঙিন চলচ্চিত্র ছিল না।
৩২০০০ বছর আগেও মানুষ গুহার দেয়ালে চিত্রাঙ্কন করতো।
লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি ১৫০৩ সালে মোনালিসা আঁকতে শুরু করেন, এবং ১৫১৯ সালে মৃত্যুর কিছুদিন আগে তাঁর মোনালিসা-অঙ্কন শেষ হয় বলে ধারণা করা হয়। প্রথম সর্বাধুনিক শিল্পকর্মটি পাবলো পিকাশোর বুরুশ থেকেই সৃষ্টি হয় ১৯০৭ সালে।
কাগজ, আর্টওয়ার্ক আর ক্যামেরা আবিষ্কৃত হবার আগে ভূমিষ্ঠ হওয়া সৌন্দর্যদেবীগণ কেবল লেখকের বর্ণনার গুণেই শ্রেষ্ঠত্ব পেয়েছেন।
আমরা যাঁদেরকে সাম্প্রতিককালে সামনাসামনি বা চলচ্চিত্রে কিংবা স্থিরচিত্রে দেখেছি, অথবা সৌন্দর্যের বর্ণনা পড়ে প্রেমে পড়েছি- এঁদের চেয়ে এনসাইক্লোপিডিয়ার ক্লিওপেট্রা আর মোনালিসাগণ অধিক সুন্দরী ও আবেদনময়ী ছিলেন– তা প্রমাণিত নয়।
ঐশ্বরিয়া রাই অথবা এলিজাবেথ টেইলরের প্রগাঢ় চোখের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করুন। অড্রে হেপবার্নের হাড়বেরুনো ঘাড়ের দিকে তাকান। আর এই যে কিছুকাল আগে বাঙালি মেয়ে কবরী’র একজোড়া ধ্যানমগ্ন চোখ ও অবয়ব দেখলেন– চোখে-না-দেখা কোনো দেবীই এর চেয়ে অধিক মাদকতাময়ী নয়।
মোনালিসার সৌন্দর্যের শাশ্বত্ব এখন শুধু কবিতায়ই পাবেন, তেমনি বনলতা সেনের কথাও বলা যায়। সুচিত্রা সেনের কতটুকু শিল্পই বা ভিঞ্চি’র আর্টিফিশিয়াল মোনালিসায় খুঁজে পাবেন? নার্গিস– এই কিছুদিন আগেও তাঁকে বলা হতো এ উপমহাদেশের সুন্দরীতমা নায়িকা; ঐশ্বরিয়া রাইয়ের ঔজ্জ্বল্যের কাছে প্রিন্সেস ডায়ানা এবং সমগ্র বিশ্ব ক্রমশ বিমর্ষ ও ম্লান হয়ে গেল। হয়তবা প্রতিবাদের ঝড় তুলে বলবেন – মানি না, মানি না, এ কথা ভয়ংকর মিথ্যা! বরঞ্চ, প্রিন্সেস ডায়ানার কাছে বিগতা-অনাগতা উর্বশীগণের বিপুল ঔজ্জ্বল্য আঁধারে হারিয়ে গেল নিদারুণ অবলীলায়!
এই যে কম্পিউটার আর এনিমেশনের যুগ চলে এসেছে, সত্যিকারের সুন্দরীদের অনন্ত মহাকাল অবধি অনায়াসে ধরে রাখা যাবে একচিলতে মেমোরি কার্ড বা ডিভিডি–লেন্সের ভেতর।
কাগজ, আর্টওয়ার্ক আর ক্যামেরা আবিষ্কৃত হবার পর ভূমিষ্ঠ হওয়া সৌন্দর্যদেবীগণই প্রমাণিতভাবে পৃথিবীর সর্বকালের শ্রেষ্ঠ সুন্দরী।
৫ এপ্রিল ২০১০ ভোর ৪:৩২
দেখতে পারেন :
পুরোনো পোস্টের লিংক-১
পুরোনো পোস্টের লিংক-২
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জুন, ২০২৩ রাত ৮:৪৫