ছাত্ররা নতুন রাজনৈতিক দল ঘোষণা করতে যাচ্ছেন। ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫-এ এ দলের নাম ও গুরুত্বপূর্ণ পদের ঘোষণা আসবে বলে খবরে প্রকাশ। ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫-এ ছাত্র উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম তাদের পূর্ব-ঘোষণা অনুযায়ী উপদেষ্টার পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। তিনি নতুন রাজনৈতিক দলের আহবায়কের পদ পেতে যাচ্ছেন। দলের শীর্ষপদটি তিনিই পাবেন বলে সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচনা হচ্ছে।
ছাত্রদের নতুন দল ঘোষণা ও নাহিদ ইসলামের পদত্যাগের খবরে সারাদেশের জনগণ ব্যাপক উৎফুল্ল ও চাঙ্গা হয়ে উঠেছেন। ছাত্ররাই এদেশের আপামর জনসাধারণকে সঙ্গে নিয়ে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করে দেশের স্বাধীনতা ফিরিয়ে এনেছেন। রাজনৈতিক দলগুলো দীর্ঘ ১৫-১৬ বছরে যা পারে নি, ছাত্ররা সেটা করে ফেলেছে। জনপ্রিয়তরা শীর্ষে অবস্থান করছেন ছাত্ররা। ঠিক এ মুহূর্তে নির্বাচন হলে ছাত্ররা ব্যাপক ভোটে জয়লাভ করবেন বলে আমার ধারণা। ঠিক এখান থেকেই মূল প্রসঙ্গে যাচ্ছি।
স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার আমলে যেমন আমরা কথা বলতে পারি নাই, কথা বললেই গুম, খুন অবধারিত ছিল, তার বিপরীতে একটা গোষ্ঠী ছিল যারা শেখ হাসিনার কাছ থেকে সকল সুবিধা ভোগ করতেন, শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে যাবতীয় কলাকৌশল অবলম্বন করতেন। আমরা যারা নিরপেক্ষ, অরাজনৈতিক জনগোষ্ঠী আছি, যারা ছাত্রদের অবিস্মরণীয় বিজয়ে নতুন বাংলাদেশ গড়ে ওঠার স্বপ্নে বিভোর, তাদের খেয়াল রাখতে হবে, আমরা যেন শেখ হাসিনার পদলেহী, কদম্বুচি খাওয়া, তোষামোদকারী সুবিধাভোগী শ্রেণিতে পরিণত না হয়ে যাই। শেখ হাসিনার আমলে যারা হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি করেছেন, সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে দিনের পর দিন আপনাকে বঞ্চিত করেছিলেন, আপনি-আমি-আমরা যেন কোনোভাবে ঐরকম দুর্নীতিপরায়ণ শ্রেণির খপ্পরে না পড়ি, আমরা যেন কোনোভাবে ঐরকম ভয়ঙ্কর শ্রেণির অংশে পরিণত না হয়ে যাই, সেটা অত্যন্ত যত্ন ও সতর্কতার সাথে খেয়াল রাখতে হবে। আওয়ামী আমলের ঐসব দুর্নীতিগ্রস্ত পাণ্ডাদের কারো রেহাই নাই, তারা তাদের পরিণতি ভোগ করছেন, কেউ কারাগারে, কেউ দেশ থেকে বিতাড়িত হয়ে ভিনদেশে আস্তানা গড়েছেন। শেখ হাসিনার পট পরিবর্তন হয়েছিল মাত্র একদিনে। ঐ ইতিহাস মনে রাখুন, আবার যারা শেখ হাসিনার মতো ফ্যাসিস্ট হয়ে উঠবেন, তাদের পট পরিবর্তন হতেও একদিনই লাগবে, তাদেরও শেখ হাসিনার পা-চাটা গোষ্ঠীর মতো একই পরিণতি ভোগ করতে হবে।
শুনতে খারাপ লাগলেও কথাগুলো মনে রাখা খুব জরুরি, আমাদের ভবিষ্যত সুরক্ষিত রাখার স্বার্থেই। বেশি খুশিতে, বেশি আবেগে কেউ কেউ অত্যধিক লম্ফঝম্ফ করে ফেলতে পারেন, নিজেকে ভেবে বসতে পারেন যে ক্ষমতার কেন্দ্রে পৌঁছে গেছেন, কিংবা ক্ষমতার কাছে বসে পড়েছেন তিনি, আর ধরাকে গামলা (সরা অর্থ অনেকে জানেন না বলে গামলা বললাম) মনে করে সবাইকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা শুরু করতে পারেন। এক সময় আপনি নিজেকে দেখতে পাবেন শেখ হাসিনার চারপাশ পরিবেষ্টনরত ক্রিমখাওয়া দুর্নীতিগ্রস্ত মহারথীদের মতো। এই যদি আপনার দশা হয়ে ওঠে, তখন শেখ হাসিনাকে দোষ দেয়ার সকল অধিকার তো আপনি হারাবেনই, আপনিও শেখ হাসিনার দোসরদের মতো একই, কিংবা আরো ভয়াবহ পরিণতি ভোগ করবেন, ইনশা'ল্লাহ।
ভালো থাকুন সবাই।
খলিল মাহ্মুদ
২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ সকাল ১০:৫৫