somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

“মানুষ খুঁজিয়া ফিরি জনতায়, মানুষ কই?”

১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ রাত ১২:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(আজ আমার জন্মদিন।
জন্মদিনে আমি জনতার মাঝে মানুষ খুঁজে বেড়াই।)


“……… আমি জানি তুমি ব্যাপারটা মেনে নিতে পারছোনা। এটা তোমার ঈমানী দূর্বলতা”
“আই ডোন্ট থিংক সো স্যার। আমি সবচে খারাপ মুসলিমদের দলে তা মানি, কিন্তু একজন মুফাসসির (যে/যারা কোরান interpret করেন) যা বলবেন তাই আমাকে মানতে হবে এটা আমি বিশ্বাস করিনা। হারাম হালাল কোরান ও হাদীসে স্পষ্ট। এর বাইরে মুফাসসির তার নিজস্ব লজিক থেকে অনেক মত দিতে পারেন। কিন্তু তিনি তো আর নবী নন যে তার লজিক আমাকে মেনে নিতে হবে!”
“……… দেখো ফারজানা, তুমি নিজে নেকাব পড়না তাই তোমার কাছে এটা ভালো লাগছেনা। কিন্তু সত্য হল নেকাব পড়া ওয়াজিব। মেয়েদেরকে এমনভাবে পুরো শরীর আর চেহারা ঢেকে ফেলতে হবে যেন তার কিছুই দেখা না যায়। এমনকি চোখ পর্যন্ত”।'
“হোয়াট দ্য হেল স্যার! সে তাহলে দেখবে কী করে?”
“ওড়নার ফাঁক দিয়ে শুধু এক চোখ দিয়ে”।'
“আই জাস্ট কান্ট বিলিভ ইট স্যার! মেয়েরা মানুষ, তারা জন্তু নয়। হতে পারে এটা আপনার অভিমত……”
“ডোন্ট আর্গু লাইক আ ফুল……”
আমিতো বোকাই। তাই থামিনা। তর্ক চলতেই থাকে।
কিন্তু একসময় বুঝি, এইসব পুরোহিতেরা আমার মত মেয়েদের কথা শুনবেনা কোনোদিনও। ওরা তো এটাই বিশ্বাস করতে পারেনা যে মেয়েরা কথা বলতে পারে,নিজেরা চিন্তা করতে পারে!!
আমি আমার সামনে খোলা ঐশী গ্রন্থের দিকে তাকিয়ে থাকি। লেখাগুলো অস্পষ্ট হয়ে যায়। স্রস্টা, তুমি কি ক্ষমা করবে এদেরকে? ওরা আমার পাখির মত উড়তে চাওয়া মনকে শেকল পড়াতে চায়। ওরা যদি ক্ষমতা পায়, আমার মাথার স্কার্ফকে টেনে আমার মুখের উপর নিয়ে আসবে। আমার মুখ বন্ধ করে দেবে। আমার চোখ বন্ধ করে দেবে। প্রভু, আমি যে তখন শেকলের ঝনঝন আওয়াজে পাগল হয়ে যাব!
ওদেরকে ক্ষমা করোনা প্রভু, প্লীজ………

ছোট্ট শহর মারদানের সেই মেয়েটার কথা মনে পড়ে যায়।
প্রথমে যখন তাকে আমি বিরাট আলখেল্লার মত বোরকার ভিতরে দেখি, তখন কল্পনাও করিনি এই আলখেল্লার ভিতরেই লুকিয়ে আছে আমার চে’ তিন/চার বছরের ছোট চঞ্চল এক কিশোরী। ও এই প্রথম কোনো বিদেশী মেয়ের এত কাছাকাছি আসার সুযোগ পেয়েছে, তাই আমার জন্যে কাহওয়া বানাতে ব্যাস্ত! বিদেশী একটা মেয়ে কীভাবে মাথায় স্কার্ফ পড়ে, লম্বা হাতার টিশার্টে দু’হাতের তালুর কাছাকাছি পর্যন্ত ঢেকে রাখে, ওর বুঝে আসেনা!
আমাকে দেখে ওর প্রথম অবাক প্রশ্ন- “আপ মুসলিম হ্যায়?!”
বিদেশীরাও মুসলিম হয় এই তথ্য জেনে ও হয়রান।
আর আমি হয়রান ওর ছোট্ট জীবনের ছোট্ট গন্ডী দেখে।
“স্কুল কিউ নেহী গ্যায়ি? ক্যায়া স্কুল বান্ধ হে আজ?”
“আব্বাজী স্কুলমে জানে নেহী দেতে। ম্যায় থার্ড ক্লাস তাক পাড়ি হে। আব্বাজী নে কাহা স্কুল মে লাড়কো নে মুঝে দেখ লিয়া তো গুনাহ হোগি”।'
আমি ওর চেহারায় স্কুলে যেতে না পারার দুঃখ বোধ খুঁজতে থাকি। পাইনা। জন্ম থেকেই ও অভ্যস্ত এই আচারে। ও শুধু উর্দূতে নিজের নামটা লিখতে পারে।এই দুনিয়ার বাইরে অন্য কোনো দুনিয়া সম্পর্কে ধারনা নেই ওর।
দেয়ালে ঝুলানো ওর আলখাল্লাটা একটু পড়ে দেখতে চাই কৌতুহলে। আলখাল্লাটার হাতা পর্যন্ত নেই। চোখের জায়গায় নেট লাগানো। মাথায় ঢুকানোর সাথে সাথে তীব্র আতংকে নীল হয়ে যাই আমি।আমি যেন পড়ে গেছি কোনো গহীন অন্ধকূপে! ঝটকা মেরে খুলে ফেলি ওটা।
“কেয়া হুয়া? আচ্ছা নেহি লাগা?”
আমি ফ্যাকাশে হাসি।
“মে আপকি লিয়ে নয়্যি খরিদ কার ভেজ দুংগি, তোহফা!”
আমার ফ্যাকাশে হাসি আরো ফ্যাকাশে হয়ে যায়। দ্রুত মাথা নাড়ি, “কোয়ি জরুরত নেহি, বহত বহত শুকরিয়া!”
কাহোয়ার বাটি চেপে ধরি দু’হাতে। আমার ঠান্ডা দু’হাতে একটু উষ্ণতা চাই।

জীবনকে চিনতে চেয়ে মানুষের সাথে তো কম মিশিনি। যেখানেই দেখেছি মানুষ, এক বা একাধিক, ভয় পাইনি, ঢুকে গিয়েছি। যদি কারো ভিতর থেকে এক ফোঁটা আলোও বেরিয়ে আসে?
আলো প্রভু, এক বিন্দু আলো!
আমি যে ভীষন অন্ধকারে…
গ্র্যান্ড মসজিদের সেই বিশাল চত্বরে মার্বেল পাথরের উপর হাঁটুতে মুখ গুঁজে বসে থাকি। দাদূর বাড়ির সেই পুকুর আর গাছগাছালিতে ঘেরা রান্নাঘরের পাশের খোলা জায়গাটুকুর পর এটাই আমার সবচে’ প্রিয় জায়গা।
বসে থাকি চুপচাপ। পাশেই পাহাড়। মসজিদের বিশালতা আর পবিত্রতা আমাকে মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখে। দেশে গেলেতো আর মসজিদের ত্রিসীমানায় ঘেষতে পারবোনা…
হঠাত একদিন, আসরের শেষে এইরকম বসে থাকা অলস সময় সেই ঠাকুরমা’র ঝুলির মত নানীর বয়সের মহিলাটা…… “………মাই চাইল্ড, নেভার ফেয়ার আ শ্যাডো, ইট অলওয়েজ টেলস ইউ দেয়ারজ আ লাইট আহেড………চীয়ার আপ মাই চাইল্ড, ইউ আর স্টিল জাস্ট আ বেইবি ডিয়ার!”
আমার সে মসজিদের খোলা চত্বর ফিরিয়ে দাও প্রভু। ঘরের কোনের এই নামাজ আমার ভালো লাগেনা।ফিরিয়ে দাও সেই ঠাকুম্মা…… আবার গল্প শুনতে শুনতে আমার ঘুম যাওয়ার দিনগুলো ফিরে আসুক।

জেনি’র ইমেইলে কান্না আর কান্না……
‘শেষ পর্যন্ত পাপা ডিভোর্স নিয়েই নিলো!’
‘ক্লাসে যেতে পারিনি, রাতে বেশী ড্রিংক করে ফেলেছিলাম… হ্যাংকড হয়ে গিয়েছি…’
‘……… না, পার্টিটা ইনজয় করিনি। ড্যান্স, ড্রিংক এন্ড সেক্স… আই নিড সামথিংক এলস… সুইসাইডের কথা ভাবছি……’
‘মম গট আ নিউ বয়ফ্রেন্ড। তোমার বাবামা এতবছর ধরে একসাথে থাকে কীভাবে?!...... তোমাদের ওখানে একটা ছেলে বিয়ে করব, কামিং নেক্সট ইয়ার… নো সী ইউ ফর লং টাইম….’
ইমেইলের পর ইমেইল জমা হয়। আমার রিপ্লাই দেয়া হয়না।
রাতের আকাশ আমাকে শাপ-গ্রস্থ করে রাখে। এখানেই কোথাও আছো তুমি, এখানেই। আমার বুকের ভিতর। তবুও কি তুমি আমার আর আমাদের কান্নার শব্দ শুনতে পাওনা প্রভু?
কেন যে পাশের বাড়ির চাচীর সেই লাজ-রাঙ্গা চেহারাটা ভুলতে পারিনা…
বাড়িতে একবার ব্যাডমিন্টন খেলার সময় চাচী লজ্জায় লাল হতে হতে ফিসফিসিয়ে বলেছিলেন, ‘ আমার তোমার মত খুব খেলতে ইচ্ছা করে। আমাকে শিখায়ে দিবা? তোমার চাচাকে বলবানা কিন্তু! শুনলে খুব রাগ করবে’।'

একটু আগে বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিলাম।
ঘুটঘুটে রাতের অন্ধকার।
এমনকি একটা তারাও নেই এত বড় আকাশে!

অন্ধকারে আমার ভীষন ভয় প্রভু!
এই ভীষন অন্ধকারে কোনদিকে গেলে আমি মানুষের দেখা পাবো?
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে জুলাই, ২০০৯ সকাল ৭:৫২
৮৮টি মন্তব্য ৪০টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২২



১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজনীতির পন্ডিত, ব্লগার তানভীর জুমারের পোষ্টটি পড়েন, জল্লাদ আসিফ মাহমুদ কি কি জানে!

লিখেছেন জেন একাত্তর, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:৪৯



সামুর রাজনীতির ডোডো পন্ডিত, ব্লগার তানভীর ১ খানা পোষ্ট প্রসব করেছেন; পোষ্টে বলছেন, ইউনুস ও পাকিসতানীদের জল্লাদ আসিফ মাহমুদ ধরণা করছে, "সেনাবাহিনী ও ব্যুরোক্রেটরা বিএনপি'কে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নীল নকশার অন্ধকার রাত

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:১৬


কায়রোর রাস্তায় তখন শীতের হিম হাওয়া বইছিল। রাত প্রায় সাড়ে এগারোটা। দুইটা বড় সংবাদপত্র অফিস: আল-আহরাম এবং আল-মাসরি আল-ইয়াউম—হঠাৎ করেই আগুনে জ্বলে উঠলো। কিন্তু এই আগুন কোনো সাধারণ দুর্ঘটনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদি ভাই, ইনসাফ এবং একটা অসমাপ্ত বিপ্লবের গল্প

লিখেছেন গ্রু, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৮



ইদানিং একটা কথা খুব মনে পড়ে। হাদি ভাই।

মানুষটা নেই, কিন্তু তার কথাগুলো? ওগুলো যেন আগের চেয়েও বেশি করে কানে বাজে। মাঝেমধ্যে ভাবি, আমরা আসলে কীসের পেছনে ছুটছি? ক্ষমতা? গদি? নাকি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৩২

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে[

স্বাধীন সাংবাদিকতার কণ্ঠরোধে রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা, মব-রাজনীতি ও এক ভয়ংকর নীরবতার ইতিহাস
চরম স্বৈরশাসন বা ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রেও সাধারণত সংবাদমাধ্যমের কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার সাহস কেউ করে না। কারণ ক্ষমতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×