আওয়ামী লীগ কি শুধু বিএনপিকে অবিশ্বাস করছে?
দীর্ঘ গাড়ির লাইনে আটকে গরমে যে শিশুটি হাঁসফাস করছে, সে কিন্তু বিএনপির কর্মী নয়।
অফিসে জরুরি কাজ থাকা সত্ত্বেও সরকারী হরতালের শিকার হয়ে যে তরুণটি আজ কর্মস্থলে যেতে পারল না, সেও কিন্তু বিএনপির কর্মী নয়।
সরকারের বাকশালী কায়দার শিকার হয়ে বিভিন্ন মসজিদের যেসব মুসল্লী কাল ও আজ বিতাড়িত হয়ে মনে কষ্ট পেলেন, তারাও কিন্তু বিএনপির কর্মী নন।
সুতরাং আওয়ামী লীগ আজ শুধু বিএনপিকে নয়, প্রত্যেকটি বাংলাদেশিকে অবিশ্বাস করছে। তারা ধারণা করছে বিএনপির এই চলো চলো, ঢাকা চলো, ১২ মার্চ ঢাকা চলো-র সাথে তাল মিলিয়ে মানুষ আজই তাদেরকে ক্ষমতা থেকে নামিয়ে দিবে।
এর একমাত্র অর্থ হচ্ছে, আওয়ামী লীগ জনরোষের কথা জানে, তাদের প্রতি মানুষ শতভাগ অনাস্থার কথা জানে। তাদের নৈতিক পরাজয় ঘটে গিয়েছে। এখন শুধু গণতন্ত্রের বৃহত্তর স্বার্থে কিছু মৌলিক পরিবর্তনের দাবী। তারপরই আপনার রায়ে তাদের বিদায় ঘটবে। ইনশাল্লাহ।
সোমবার সকাল থেকেই বাদকদল, ঘোড়ার গাড়ি, ব্যানার, ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ড নিয়ে নয়াপল্টনে হাজির হতে থাকে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা।
বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মহাসমাবেশের জন্য পুলিশ নির্ধারিত স্থান পেরিয়ে যায় জনসমাগম। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে দলীয় নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে সমাবেশে যোগ দিচ্ছেন।
নওগাঁ থেকে আসা শবনাম মুস্তারি কুলি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ১০ মার্চ ঢাকা এসেছেন তিনিসহ ৩৫/৩৬ জন নারী। হোটেলে জায়গা না পাওয়ায় সবাই ঢাকার আত্মীয়ের বাড়িতে ছিলেন।
মহাসমাবেশের প্রসঙ্গ তুলেই নিজের আঞ্চলিক ভাষায় তিনি বলেন, “আমরা সাকসেস, বিএনপি সাকসেস।”
মহাসমাবেশের পরেই সরকার নিপাত যাবে বলে মনে করেন তিনি।
বগুড়া থেকে আসা শফিউর রহমান ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, “রাস্তায় আমাদের চার্চ করিচে পুলিশ। বলিচে কুনে যাচ্ছে। অন্য কথা বলে চলে এসেছু।”
রোববার রাত ৩টায় কমলাপুর রেলস্টেশনে নেমে সেখানেই বাকী রাত কাটিয়েছেন বলে জানান তিনি। স্থানীয় বিএনপি নেতা জহিরুলের নেতৃত্বে তারা ঢাকা এসেছেন বলে জানান।
গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে আসা জামায়াত কর্মী আসলাম-উদ-দৌল্লা মনে করেন, “সরকারের পায়ের তলায় মাটি নেই। তারা তা বুঝতেও পেরেছে।”
বেলা ১২টার দিকে রাজমনি ঈশাখাঁ হোটেলের সামনে বসে শুকনা চিড়া আর গুড় খাচ্ছিলেন কয়েক জন যুবক।
তাদেরই একজন শরিফুল ইসলাম নিজেকে দিনাজপুর জেলা ছাত্রদলের কর্মী দাবি করে বলেন, “অনেক কষ্ট হলেও এতো লোক সমাগম দেখে ভালো লাগছে।
“সরকারের হাজারো বাধা উপেক্ষা করে এতো মানুষের সমাগম প্রমাণ করে সরকারের অবস্থা ভালো না,” বলেন তিনি।
পুটয়াখালীর সদর উপজেলা থেকে আসা আব্দুল খালেক জানান, রোববার বিকেলে রওনা দিয়ে সকালে ঢাকায় এসেছেন। রাতে ঢাকার জিনজিরায় আত্মীয়র বাসায় থেকে মঙ্গলবার ভোরে বাড়ি ফিরবেন।
মহাসমাবেশে এসে কেমন লাগছে? জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এত মানুষ দেখে মনে হচ্ছে সরকার আর টিকতে পারবে না। সরকার পড়ে যাবে।”
কিছু জিনিস খারাপ লেগেছে উল্লেখ করে বরিশাল থেকে আসা হুমায়ুন কবীর ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, “শনিবার বিকেলে সদরঘাটে নামার পরেই আওয়ামী লীগের গুন্ডারা মেরেছে। দুই দিন উত্তরায় এক আত্মীয়র বাড়িতে ছিলাম।”
“বাধা পেরিয়ে সমাবেশে এসে ধন্য মনে করছি,” অনেকটা গর্বের সঙ্গে বলেন এই বিএনপির সমর্থক।
এটি ছিল বিএনপির একটি কর্মসূচী, সরকার পতনের আন্দোলন নয়। এতেই যদি এভাবে শেখ হাসিনার হাঁটু কাঁপে, তাহলে ভবিষ্যতে সরকার পতনের আন্দোলনের ডাক দিলে তারা কী করবে? দেশে থাকবে তো?
---------------------------------------------------------------------------
বি.এন.পি র সমাবেশের ছবি দেখতে ক্লিক করুনঃ