ধর্মের সামাজিক প্রকাশে সেকুলাঙ্গারদের বিশেষ চুলকানি ঘটে।
আপনি বাসায় চুপচাপ নামাজ পড়েন সমস্যা নাই কিন্তু জুমার নামাযের জন্য সপ্তাহে একদিন আধাঘন্টার জন্য রাস্তা বন্ধ করে নামাযের কাতার দাড়ালে তাদের মাথা খারাপ হয়ে যায়।
কোরবানী যেহেতু প্রকাশ্যে দেয়া হয়, অনেকের সম্মিলিত অংশগ্রহণ ঘটে তাই এইটা নিয়ে তাদের অনেক মনোকষ্ট আছে। এর সাথে বুষ্টার হিসেবে যোগ হয়েছে হিন্দু ধর্মের এক অংশের সাম্প্রদায়িকতাযুক্ত নাাড়ির টান। সুতরাং সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশে কোরবাণীর সময় বিচিত্র সব লাফালাফি দেখা যাচ্ছে।
এইসব লাফালাফি আট দশ বছর আগেও ছিলো না। অল্প অল্প করে শুরু হয়েছিলো ব্লগে খোঁচাখুচি করে। তারপর এখন সরকার কোরবাণী জবাইকারীর বয়স ঠিক করে দিয়েছে। সামনের বছরগুলোতে আরো নানারকম রেষ্ট্রিকশন আসবে এটা বুঝাই যায়।
.
তো এইসব লাফালাফির মাঝে একটা বিশেষ লাফ দেখে কৌতুক লাগলো। এনারা এই লাফের মাঝে মানবতার একটা এঙ্গেল মেরেছেন। তাদের কথা হলো, বিশ পঞ্চাশ হাজার টাকা এক লাখ টাকা দিয়ে কোরবানী করছেন? তারচেেয়ে এই টাকা দিয়ে পাশের বাড়ির গরীব পরিবারটির মাথার উপর চাল তুলে দিন। অথবা একটা রিকশা কিনে দিন। বেশি ফায়দা হবে। আল্লাহ বেশি খুশি হবেন!!
রবীন্দ্রসঙ্গীত শুনে শুনে ওরা এখন বেশি জানে আল্লাহ কিসে খুশি হবেন। জয় বাংলা।
.
কথা হলো মানবতার সেবা যত ইচ্ছা করেন অসুবিধা নাই কিন্তু কোরবানীর টাকার দিকে নজর কেন? কোরবানী করা যদি আমার ধর্মীয় বাধ্যবাধকতা হয় তাইলে সেই টাকা কোরবানীতেই যাবে, অন্য টাকা দিয়ে চাল তোলা হবে রিকশা কেনা হবে। জনসেবা যত ইচ্ছা করো কিন্তু নজর শুধু এই কোরবানীর দিকে কেন? পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে যত টাকা খরচ হয় সেইগুলা দিয়ে জনসেবা করার কথা তো কেউ বলেনা।
.
এইসব সেকুলাঙ্গারদের যুক্তির কোন অভাব নাই। এরা সুযোগ পেলেই বলবে নামায পড়তে আধা ঘন্টা সময় নষ্ট হয় তারচাইতে বরং সেই সময়ে এইসেই মানবতা করলে আল্লাহ বেশি খুশি হবেন!!
.
সুতরাং সেকুলাঙ্গারদের যুক্তির বদলে যুক্তি দেয়াতে সময় নষ্ট না করে তাদের যুক্তি তাদেরই পেছনে ঢুকিয়ে দিন। কোরবানীতে গরীব মানুষদের অর্থনীতিতে কি গতি আসে সেইসব আলোচনায় গিয়ে লাভ নাই। ওরা এইসব বুঝবে না বলে সংকল্পবদ্ধ হয়েই রাস্তায় নামছে। বরং বেঁচে যাওয়া সময়টুকু ঈদ উদযাপনে খরচ করুন।
.
ওদেরকে যদি আপনার ধর্মশিক্ষক বানান তাইলে কিন্তু মুশকিল। আজকে ওরা বিডিনিউজে বয়ান দিছে ইসলাম অনেক করুণার ধর্ম সুতরাং 'প্রাণি কুরবানি ইসলামের মূল আধ্যাত্মিক সত্যের অংশ নয়'। এইসব টাকা সুবিধাবঞ্চিত শিশু আর দরিদ্রদের জন্য কাজে খরচ করলে অনেক ফায়দা হবে। অর্থ্যাৎ তাদের কথা হলো কোরবানী না করে ওদের 'এনজিও'কে বিকাশ করুন আর কি। এতে অনেক আধ্যাত্মিকতা হবে।
.
সুতরাং এইসব চেতনাধর্মাবলম্বীদের কাছ থেকে ইসলাম ধর্ম না শিখে বরং যেসব কাজে ওদের চুলকানির উদ্রেক হয় সেসব কাজ বেশি বেশি করুন। তাদের লম্ফঝম্ফ কৌতুক নিয়ে উপভোগ করুন।
.
কোরবানীর পশুকে জবাই করার সময় শিশুদের ওখানে নিয়ে যান। তাদেরকে বিষয়টার গুরুত্ব ও মর্মার্থ বুঝান। এ নিয়ে তাদের সাথে কথা বলুন। পৃথিবীর পথে হাঁটার জন্য তাদের উপযুক্ত করে তুলুন।
.
দুনিয়ার এক কোণায় লাফালাফি করা এইসব গাধাগুলোকে বেশি পাত্তা দেয়ার কিছু নাই। দুনিয়া অনেক অনেক বড়। বরং আপনি পৃথিবীব্যাপি এক সভ্যতার অংশ, অনেক লম্বা সময়জুড়ে টিতে থাকা এবং সমৃদ্ধ হওয়া এক সংস্কৃতির মানুষ এবং সে সংস্কৃতির কারণেই আপনি কোরবানী করছেন এ বিষয়টা বুঝে গর্ববোধ করুন।
.
আপনার মানবতা ও 'প্রাণীয়তা' এইসব দুইদিনের বৈরাগির চেয়ে অনেক অনেক বেশি অর্থবহ। এদের মুখোশপরা লাফালাফির চেয়ে এই পৃথিবীর প্রাণবৈচিত্র্যের সাথে আপনার সম্পর্ক অনেক বেশি। সুতরাং বিন্দুমাত্র চিন্তিত হবেন না।
বেশি বেশি কোরবানীর পশুর ছবি দিন, কেবলমাত্র খেয়াল রাখবেন প্রদর্শেনেচ্ছাটা যেন একদম না থাকে। এটা উৎসবের আনন্দ ও অনুষঙ্গ সবার সাথে ভাগাভাগি করা।
.
ধর্মকে যত বেশি সম্ভব প্রাত্যাহিক জীবনের সাথে সহজাতভাবে আনুষঙ্গিক করে তুলুন। ধর্মকে সম্ভবপর সব উপায়ে প্রচন্ড সামাজিক করে তুলুন। ঈদ মোবারক।
.
- Aman Abduhu
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ৯:৪২