somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিরাট বড় অপমানের হাত থেকে বেঁচে গেলাম!

২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পৃথিবীর বুকে সম্ভবত বাংলাদেশই একমাত্র দেশ, যে দেশের সরকার জানে না, বিশ্ববিদ্যালয় জিনিসটা কী, এর সংজ্ঞা কী, কাজ কী, এর গুরুত্বই বা কী! কিংবা জেনেও না জানার ভাণ করছে অথবা পরিকল্পিতভাবেই এর ধ্বংসে মেতে উঠেছে! বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের জন্যে নতুন কিছু নীতিমালা ঠিক করে দিয়েছে সরকার! একটা স্কুল পড়ুয়া ছাত্রও বুঝবে এর পেছনের গভীর ষড়যন্ত্র!
.
আন্দাজ করুন তো, নতুন নিয়ম গুলো কী কী! "ইন্টারন্যাশনাল জার্নালে কমপক্ষে দুইটি গবেষণা পত্র প্রকাশ হতে হবে, শিক্ষা জীবনের কোথাও ৭৫ পার্সেন্টের নিচে মার্ক থাকতে পারবে না, টিচিংয়ের উপর উচ্চতর ডিগ্রী লাগবে, অবশ্যই পিএইচডি করতে হবে!"
..না জনাব, এতক্ষণ আপনি স্বপ্ন দেখছিলেন। এধরনের কোনো নিয়মের কথা বলা হয়নি!
নতুন নীতিমালায় "বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগে লিখিত পরীক্ষা হবে" "প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অনুমতি লাগবে" "সরকারবিরোধী কর্মকান্ডে জড়িত থাকলে নিয়োগ দেওয়া যাবে না!"
.
প্রথমে আসি লিখিত পরীক্ষার ব্যাপারে। একজন পিএইচডি করা ক্যান্ডিডেট এসে লিখিত পরীক্ষা দিবে, সদ্য অনার্স পাশ ছাত্রের সাথে! প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগের মতো হয়ত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ গাইডও বেরুবে! এমনকি কোচিং সেন্টার চালু হলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই। :P
তারপর পছন্দের প্রার্থীর হাতে পরীক্ষার আগের রাতে প্রশ্ন পৌঁছে যাবে! দারুণ না!
অনেকে ভাবতে পারেন, লিখিত পরীক্ষায় মেধা যাচাই হবে, মন্দ কী! জনাব, আপনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংজ্ঞাই জানেন না। শুধু মুখস্থবিদ্যা ছাড়াও আরো অনেক কিছু আছে। দয়া করে সারাবিশ্বের ভার্সিটিগুলোর শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ার ব্যাপারে খোঁজ নেন, তারপর তর্ক করতে আসবেন!
.
এতদিন ভাইভায় অপেক্ষাকৃত বেশি কোয়ালিফাইড প্রার্থীকে বাদ দিতে বেগ পেতে হতো, চক্ষু লজ্জা লাগতো! এবার আর সেই ঝামেলা নেই, বলা হবে লিখিত পরীক্ষায় ভালো করতে পারেন নি, আমাদের আর কী করার আছে!
.
তারপর "প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অনুমতি, সরকারবিরোধী কর্মকান্ডে জড়িত আছে কী না" আমাদের দুর্ভাগ্য, একবিংশ শতাব্দীতে এসেও আমরা একটা জঙলি রাষ্ট্রে বাস করছি বোধহয়! পৃথিবীর আর কোনো দেশে এধরনের নিয়মের কল্পনাও করতে পারবে না!
এই শর্তের অর্থই হচ্ছে সরাসরি ছাত্রলীগ ক্যাডাররাই এখানে শিক্ষক হিশাবে নিয়োগ পাবে। হয়ত দেখা যাবে সিদ্দিকী নাজমুলরা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ দিচ্ছে!
.
প্রশ্ন আসতে পারে, সব সরকারই তো দলীয় ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছে। হ্যাঁ, এর আগের বিএনপি- আওয়ামীলীগ সরকারে দলীয় সমর্থনে অনেক শিক্ষক নিয়োগ পেয়েছেন। তবে অরাজনৈতিক কিন্তু যোগ্যতাসম্পন্নরাও চাকরি পেয়েছেন, এমনকি ভিন্ন দলের এরাও চাকরি পেয়েছেন। কিন্তু এবারের শর্তানুযায়ী যে, ছাত্রলীগ ক্যাডার ছাড়া অন্যরা নিয়োগ পাবে না, এটা দিবালোকের মতোই স্পষ্ট!
.
আর এরা না পারবে শিক্ষার্থীদের কিছু শিখাতে, না পারবে উচ্চতর কোনো গবেষণা করতে! যেটা পারবে, তাহলো তা হলো বিভিন্ন ইস্যুতে মানববন্ধন, কালো ব্যাজ ধারণ, দিবস পালণ, দোয়া মাহফিল, শহীদ মিনারে ফুল দেওয়া ইত্যাদি ইত্যাদি!
কিন্তু জনাব! শুধু চেতনা দিয়ে কতোদিন!
.
কিছু বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকেরা মৃদু প্রতিবাদ করলেও এখন পর্যন্ত সেরকম শক্ত কোনো প্রতিবাদ দেখি নি। আর আমাদের নতুন প্রজন্ম অবশ্য তাসকিন-সানি নিয়ে ব্যাস্ত!
নি:সন্দেহে কয়েকবছর পর এর ফলাফল হবে ভয়াবহ। আমরা ইতোমধ্যে প্রায় মেরুদণ্ডহীন হয়ে গেছি। সরীসৃপ হয়ে বুকে ভর দিয়ে চলছি। কিছুদিন পর বুকের চামড়াও নষ্ট হয়ে যাবে! গড়িয়ে চলতে হবে তখন।
.
একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের লেখায় পড়লাম উগান্ডার একটা ইউনিভার্সিটি, র‍্যাংকিংয়ে ৫০০ এর মধ্যে এসেছে, বাংলাদেশের কোনোটি নেই ২০০০ এর মধ্যে! এভাবে চলতে থাকলে হয়ত পেছন দিকে র‍্যাংকিংয়ে বাংলাদেশ হবে এক নাম্বার!
ভালো ছাত্র ছিলাম না। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক হবার ধারে কাছের রেজাল্টও আমার নেই। তবে নতুন নীতিমালা দেখে, খুব ভালো লাগছে। বিরাট বড় অপমানের হাত থেকে বেঁচে গেলাম!
view this link
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:১৪
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×