somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এইচএসসি’র ফলাফল এবং উচ্চশিক্ষা

২৫ শে আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১২:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


“উচ্চশিক্ষা” শব্দটি বাংলাদেশে বেশ আকাঙ্ক্ষিত এবং পছন্দের একটি শব্দ। প্রায়ই পত্রিকায় ব্যাক্তিগত উদ্যোগে দেয়া কিছু বিজ্ঞাপন দেখা যায় ‘উচ্চশিক্ষার্থে বিদেশ গমন, সকলের নিকট দোয়াপ্রার্থী’ – এই জাতীয়।

সাধারণত এইচএসসি’র পর থেকেই উচ্চশিক্ষা নিয়ে ভাবনার পর্বটি শুরু হয়ে যায়। উচ্চশিক্ষা অনেকটাই মেধা এবং সামর্থ্য নির্ভর একটি সিদ্ধান্ত। বিগত কয়েক বছরের মতো এই বছরেও জিপিএ ৫ এর বন্যা বয়ে গেল। ফলাফলের দিন টিভি খুললেই দেখেছি কলেজগুলতে সদ্য জিপিএ ৫ পাওয়া ছাত্রছাত্রীদের মুখে বিশ্বজয়ের হাসি, হাতে ‘ভি’ চিহ্ন। শিক্ষাজীবন পার করার পর এরকম দৃশ্য দেখতে ভালই লাগে। কিন্তু ২০০৯ থেকে অদ্যবধি অভিজ্ঞতার আলোকে কিছুটা শঙ্কিতও বোধ করি! এই হাসির স্থায়িত্ব আসলে কতদিন!

উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় এবছর ৭৮.৩৩% পরীক্ষার্থী পাশ করেছে। জিপিএ ৫ পেয়েছে ৭০,৬০২ জন। পাশ এবং জিপিএ ৫ এর হার উভয়ই বেড়েছে। এরা সবাই এখন উচ্চশিক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। বাঙালিদের আসলে উচ্চশিক্ষার প্রতি যতনা আসক্তি, ‘উচ্চতর ডিগ্রী’র প্রতি আসক্তি তার চেয়ে অনেকটাই বেশী। অভিভাবকেরা একটা সহজ সত্য বুঝতে দেরী করেন, তাহোল, সব ছাত্র সব বিষয়ে সমান পারদর্শী হয়না, উচ্চশিক্ষা সবার জন্য না।

এসএসসি বা এইচএসসি ডিগ্রীধারী ছাত্রদের আর পরিশ্রমের কাজে ফেরানোই যায়না। আজীবন কেরানীগিরি করবে তবু স্বাবলম্বী হবার চেষ্টা করবে না। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাই এমন, ছাত্রদের শুধু ভালো সার্টিফিকেট পাওয়াটাকেই ‘অর্জন’ হিসাবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। যেনতেনভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা ডিগ্রী পেয়েই চাকরীর বাজারের একজন প্রতিদন্ধি হিসাবে আবির্ভূত হয় এবং কিছুদিন ঘরাঘুরি করে ‘’আজকাল মামা চাচা না থাকলে কিছু হয়না’’ এই উপসংহারে এসে ‘’বেকার’’ নাম ধারণ করে নৈরাশ্যর জগতে প্রবেশ করে। সেই বিষাদময় এবং অন্ধকার জগতে রয়েছে অপরাধ এবং মাদকের মতো মরামারির ছড়াছড়ি!!

ভালো ফলাফল প্রাপ্ত ছাত্রছাত্রীর তুলনায় মানসম্মত বিশ্ববিদ্যালয়য়ের সংখ্যা অনেক কম। একারনে অনেকটা বাধ্য হয়ে তারা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দ্বারস্থ হয়। এই বেসরকারি শিক্ষা তুলনামুলক ব্যায়বহুল। উচ্চশিক্ষার প্রতি আসক্তি এবং এই অনিশ্চয়তার সুযোগে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে কিছু অখ্যাত এবং ভুয়া বিশ্ববিদ্যালয়। সত্যিকার মেধাবী অনেকে চলে যাচ্ছেন বিদেশে, মেধার মূল্যায়ন পাচ্ছেন, আর ফিরছেন না। নিরবে ঘটছে মেধাপাচার!! তাঁরাই বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ে সুনামের সাথে কাজ করছেন, গড়ে তুলছেন মানব সম্পদ। আর আমাদের নিজের দেশের যুবসমাজ আজ ভালো শিক্ষক আর দিকনির্দেশনার অভাবে বিপন্ন!!

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় গুলতে সেশনজট কমিয়ে, মানসম্পন্ন শিক্ষক আর শিক্ষার মান নিশ্চিত করে অখ্যাত ভুয়া বিশ্ববিদ্যালয়য়ের সার্টিফিকেট বাণিজ্যের আগ্রাসন থামানো সম্ভব। পাশাপাশি বোঝাতে হবে স্বনিয়োজিত কর্মসংস্থানের জন্য কারিগরি শিক্ষার মূল্য। সারাদেশব্যাপী হাতেকলমে কাজ শেখার পক্ষে প্রচারণা প্রয়োজন। শ্রমের মূল্য এবং শন্মান নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

এই বয়সী যুবসমাজকে প্ররোচিত করা খুব সহজ। আমরা সহজেই তাদের উচ্চতর ডিগ্রী আর সার্টিফিকেট দিয়ে অর্জিত চাকরির অবাস্তব স্বপ্ন থেকে সরিয়ে স্বনির্ভর হবার বাস্তব স্বপ্ন দেখাতে পারি। আমি নিশ্চিত, ফলাফল ভালো হবে, বেকারত্তের হার কমবে, অনিশ্চয়তা এবং অস্থিরতাও কমবে। হয়তো জিপিএ ৫ এর মতো এক্সসেলেনট ফলাফলও কিছুটা কমে আসবে, আসুক না! ক্ষতি কি!!

ফারজানা আলম
এসিসট্যানট প্রোফেসর
ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ।


সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১২:৩২
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×