প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে সৌন্দর্যমন্ডিত এক ভয়ানক স্থান তার নাম হচ্ছে হাজী-মাঝির বিল। প্রায় দেড়শত বছর আগে এর নামকরন করা হয়েছে হাজী-মাঝির বিল। কথিত আছে তার আগে এটি একটি ফসলের মাঠ ছিল। এই মাঠটির আয়তন ছিল এই গ্রামের এক দশমাংশ অর্থ্যা প্রায় ষাট একর। এই বিলটি নিয়ে আরও কথিত আছে এটি নাকি এক রাত্রিতে খনন করা হয়েছে। আগেকার মুরুব্বিরদের কাছে শুনা যেত এটি নাকি কোনো এক রাত্রিতে জীন ও দৈত্য দানবেরা খনন করেছে। এই বিলের দুটি অংশ এক অংশকে বলা হয় কোদাল দুয়া বা ভয়ানক স্থান আর এক অংশকে বলা হয় মাছের ভান্ডার। এই বিলটির মোট আয়তন ষাট একর যার মধ্যে কোদাল দুয়ার পরিমান হচ্ছে প্রায় পাঁচ একর। কোদাল দুয়া নিয়ে এরকম কথা শুনা যায় জীনেরা নাকি এই বিলটি খনন করে এই জায়গায় এসে কোদাল দুয়েছে ফলে এর নামকরন করা হয় কোদাল দুয়া। এখন বলা যাক এটিকে কেন ভয়ানক আশ্চর্যের লীলাভূমি হাজী-মাঝির বিল বলা হয়? এটি এমন একটি বিল যেখানে প্রায় সব প্রজাতির মাছ পাওয়া যেত। বহু দূরদুরান্ত থেকে অনেক মাঝিরা এখানে মাছ ধরতে আসতো। আমি এরকম শুনেছি কোনো একদিন কোনো এক মাঝি এই বিলে মাছ ধরতে আসে এবং যথারিতি জাল ফেলে মাছ ধরার জন্য। জাল ফেলা শেষ হলে মাঝি কিনারায় উঠে সামনে তাকাতেই দেখে বিলের মাঝখানে দ্বীপ এবং এই দ্বীপে লম্বা দাড়িওয়ালা ও আলখাল্লা পরিহিত এক লোক তার দিকে অপলকে তাকিয়ে রয়েছে। মাঝি তখন মনে মনে ভাবতেছিল এই দ্বীপ কখন উঠল আর ঐ দাড়িওয়ালা লোকিবা কখন ঐ দ্বীপে গেল কিসের মাধ্যমে মাঝির মনে হাজার প্রশ্ন জাগল। মাঝি কোনো প্রশ্নের সহজ উত্তর না পেয়ে একটু সংকিত হল ও ভয় পেল। মাঝি ভাবতেছে কি করে এখান থেকে যাওয়া যায় এই ভেবে সামনে তাকাতেই দেখে একটি কলসি ভাসছে। পরক্ষনেই বিলের মাঝখানে তাকাল। এখন দেখে সেখানে সেই দ্বীপও নেই আর দাড়িওয়ালা লোকটিও নেই। তখন মাঝি আর বিলম্ব না করে কলসিটি পানি থেকে উঠিয়ে বাড়িতে ফিরে এল। বাড়িতে ফিরে এসে ঘরের দরজা দিয়ে কলসির ঢাকনা খুলতেই দেখে কলসি ভরাসোনা আর রুপা। রাত্রি ঘনিয়ে আসলে মাঝি ঘুমানোর জন্য বিছানায় গেল। কিন্তু মাঝির ঘুম ধরেনা। অনেক রাত্রিতে একটু ঘুম আসতে না আসতেই মাঝি স্বপ্নে দেখলো সেই দাড়িওয়ালা লোকটিকে সে যেন তাকে বলছে তুই যা দেখছস আর পাইছিস তা ভাল দেখছস ভাল পাইছিস কিন্তু সাবধান তা আর কাউকে বলবিনা এমনকি ঘরের স্ত্রীকেও না। আর যা পেয়েছিস তা থেকে গরিবদের মাঝে কিছু বিতরন করে দিবি। এই দেখে তার স্বপ্ন ভেঙ্গে গেল আর পাখির কিচির মিচির শব্দে তার ঘুম ভেঙ্গে গেল। সকাল হইতে না হইতেই মাঝি স্বপ্নে দেখা কথা বিশ্বাস না করে তার গতকালের ঘটে যাওয়া সমস্ত ঘটনা গ্রামবাসীর মাঝে প্রচার করতে শুরু করলো যে রকম রাজা বাদশারা ডাক ঢোল বাজিয়ে প্রচার করে অনেকটা ঐ রকম। মাঝির এ কথা শুনে গ্রামবাসীরা অনেকে অনেক ধরনের মতামত ব্যক্ত করে। কেউ বলে এ লোকটি জীনদের সরদার , কেউ বলে ভূত, প্রেত্নী , কেউ বলে খারাপ জীন আবার কেউবা বলে ধার্মিক জীন এরকম আরও অনেক ইত্যাদি। আর এই ঘটনার পর থেকেই গ্রামবাসী সকলে মিলে এই বিলটির নামকরন করে হাজী-মাঝির বিল। তার কয়েকদিন পরে মাঝি ঐ বিলে আবারও মাছ ধরতে যায় এবং যথারিতি জাল ফেলে। জাল পা দিয়ে মাটিতে গুজে দেওয়ার সময় তার পায়ের তলে একটা মাছ পড়ে ঐখানে তার বুক পানি সে মাছ ধরার জন্য ডুব দেয় সেই যে ডুব দিল আর ফিরে এলনা। ঐখানে অন্যান্য যারা ছিল তারা অনেক খোঁজাখুঁজি করলো কিন্তু তাকে আর পেলনা। এই ঘটনার পর থেকে এই স্থানটি একটি ভয়ানক জায়গা হিসেবে সবার নিকট পরিচিত লাভ করলো। আর তার পর থেকেই এই বিলটিকে শুধু হাজী-মাঝির বিল না বলে তার আগে এই বিশেষনটি যোগ করে ভয়ানক আশ্চর্যের লীলাভূমি। অর্থ্যাৎ ভায়ানক আশ্চর্যের লীলাভূমি হাজী-মাঝির বিল। এই ঘটনার দিন পেড়িয়ে রাত্রি আসতেই গ্রামের পাঁচজন শেষ বয়সি লোক অর্থ্যাৎ সবার বয়স আশির বেশি তারা স্বপ্ন দেখলো যে আমি তোদের কোনো অমঙ্গল করতে চাইনা কিন্তু তোরা এই বিলে মাছ ধরতে এসে যদি কোনো আশ্চার্য জিনিস বা আশ্চার্য ঘটনা দেখিস তা প্রকাশ করতে পারবিনা। আর যদি প্রয়োজন হয় তাহলে মাগরিব বাদ বিলের পূর্ব-দনি কোনে এসে প্রয়োজনীয় জিনিস প্রার্থনা করবি তাহলেই পরদিন সকালে পেয়ে যাবি। আর প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে যায়গা মত রেখে যাবি। এভাবেই চলতে লাগল অনেক দিন। প্রায় দশ বছর এভাবে চলার পর এক বৃদ্ধা তার নাতনীর বিবাহ অনুষ্ঠানে প্রয়োজনীয় সাজসরঞ্জাম চেয়ে আনে এই বিল থেকে। কিন্তু কাজ শেষে ফেরত দেওয়ার সময় বৃদ্ধা তার লোভ সামলাতে না পেরে একটি সোনার চামচ রেখে দেয়। ঐদিন পেরিয়ে রাত্রি আসতেই বৃদ্ধাকে স্বপ্নে দেখায় যদি খারাপ না চাও তাহলে আগামিকাল সূর্য উঠার আগে চামচটি রেখে যাবি। তারপরও বৃদ্ধা চামচটি ফেরত দিল না। এই ঘটনার পর থেকে দেত্যটি তার খারাপ আচরন দেখাতে শুরু করল। প্রথমেই দেত্যটি বৃদ্ধার নাতনীকে পানিতে ডুবিয়ে মারল। এরপর বৃদ্ধাকে দেত্যটি স্বপ্ন দেখাল এবং বলল কি দেখছস তো আমার নীলা? এবং আরো বলল ভবিষ্যৎ পরিনতির জন্য প্রস্তুত থাকিস। বৃদ্ধা স্বপ্নের মধ্যে চেচিয়ে উঠল এবং বলল আমিও তোকে দেখে নিব। বৃদ্ধার এই কথাটি বলার পেছনে যে শক্তিটি কাজ করছে তা হচ্ছে বৃদ্ধা কিছু কাটিকুটি জানতো। এরপর থেকে বেশ কিছুদিন বৃদ্ধা এবং দেত্যের আক্রমন ও পাল্টা চলতে লাগল। বৃদ্ধা ও দেত্যের বেশ কিছু আক্রমন হয়েছে এর মধ্যে সর্বশেষ আক্রমনটি ছিল এরকম বৃদ্ধা তার কাটিকুটির সাহায্যে দেত্যটিকে একটি লোহার খাঁচার মধ্যে বন্দী করল। সারাটিদিন দেত্যটিকে নানাভাবে শাস্তি দিতে থাকে। সারাদিন শাস্তি দিতে দিতে বৃদ্ধা কান্ত হয়ে যায় এবং যথারিতি বিশ্রামের জন্য বৃদ্ধা তার বাশভবনে চলে আসে। কিন্তুু বৃদ্ধার এ কথা মনে ছিলনা যে ঘুমনোর আগে আরও কিছু কাটিকুটি পরে ঘুমাতে হবে। তাই বৃদ্ধা কোন কাটিকুটি না পরে ঘুমিয়ে পরল। তাই বৃদ্ধাকে এ ভুলের খেশারত দিতে হল তার জীবন দিয়ে। বৃদ্ধা ঘুমানোর পর তার মন্ত্র কোন কাজ না করায় দেত্যটি খাঁচা ভেঙ্গে বের হয়ে বৃদ্ধাকে তার বিছানা থেকে উঠিয়ে এই বিলে নিয়ে আসে এবং তাকেও ডুবিয়ে মারে। এভাবে অনেক মানুষ অকালে তাদের জীবন দেয় এই দেত্যের কাছে। এরকম হাজার ঘটানা ঘটেছে এই হাজী-মাঝির বিলে। আর একটি ঘটনা বলেই আমি এর ইতি টানবো। এটি হচ্ছে কোদাল দোয়া নিয়ে। এই কোদাল দোয়ায় নামার মত হিম্মত খুবি কম মানুষের ছিল। কারন এই কোদাল দোয়ায় আশেপাশের দশ-পনের টি গ্রামের ৭০-৮০ জন মাঝি ও সাধারন মানুষ অকালে তাদের জীবন দিয়েছে তাদের র্নিবুদ্ধিতার কারনে। যদিও তারা জানতো জোহরের নামাজের ৩০-৪৫ মিনিট পূর্বে এই কোদাল দোয়ায় একাকি আসলে তারা তাদের জীবন নিয়ে ফিরে যেত পারতো না। তারপরও যারা অকালে তাদের জীবন দিয়েছে তাদের সকলেই প্রায় নামাজের ৩৫ মিনিট পূর্বে জীবন দিয়েছে। অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে যে যারা জীবন দিয়েছে তারা পূর্ব থেকে জানতো কি করে? তাদের অবগতির জন্য জানানো হচ্ছে এখানকার যে জ্বীন বা দেত্য আছে সে নাকি গ্রামের প্রতিটি পরিবার থেকে একজন করে লোককে স্বপ্নে দেখিয়েছে যে জোহরের নামাজের প্রায় ১ ঘন্টা পূর্ব থেকে নামাজের জন্য প্রস্তুুতি গ্রহন করি সুতরাং এই সময় যদি কেউ এখানে কাজ করতে আসে তাহলে আমার প্রস্তুুতি গ্রহনে ব্যঘাত ঘটে। যার জন্য আমার প্রস্তুুতি গ্রহনে ব্যঘাত ঘটবে তাকে আমি জীবন নিয়ে ফিরে যেত দিব না। তোমরা সকলেই মনে রেখ। তোমাদের জন্য এটাই আমার সতর্ক বানী। আর এ কারনেই মানুষকে জীবন দিতে হয়েছে এবং এখানে নামার দুঃসাহস খুব কম লোকি দেখিয়েছে। যারা এখানে জোহর বাদ নেমেছে তাদের কাছে শুনা গেছে ১৫-২০ ফিট গভীরে নাকি ইটের দালান আছে। আর ঐ দালানের এক জানালা দিয়ে দেখা যেত ভিতরে কি কি আছে। অনেকেই দেখেছে ভিতরে দাড়িওয়ালা এক বৃদ্ধ প্রায় ৩০ ফুট লম্বা লোক জায়নামাজ বিছিয়ে বসে বসে তজবি গুনছে। এর থেকে প্রমান পাওয়া যায় যে ঐ বৃদ্ধটি জ্বীনই ছিল। কারন এটা তো আমরা সকলেই জানি একমাত্র জ্বীন ও মানব জাতিকেই আল্লহতাআলা তাঁর ইবাদতের জন্য প্রেরণ করিয়াছেন। আবার অনেকে নাকি এর ভিতরে শত শত লাসও দেখিয়াছিল। ঐখানে যে সত্যি সত্যিই দালান ছিল তার নজির বা নিদর্শন এখনোও পাওয়া যায়। এখন তো সে বিল আর বিল নেই বা কেউ আর তাকে হাজী-মাঝির বিল বলে ডাকে না। সেই বিল এখন ফসলের মাঠে রুপান্তর হয়ে গেছে প্রায় গত ১০-১৫ বছর ধরে। তবে কোদাল দোয়ায় চৈত্র মাসে এখনোও হাটু পানি থাকে। আর বৈশাখ-জৈষ্ঠ্য মাসে যখন পুরাপুরি শুকিয়ে যায় তখন কিছু ইট জেগে উঠে। এখান থেকে পাঁচ বছর আগেও কোদাল দিয়ে মাটি কুপিয়ে শত শত ইট উঠিয়ে অনেকেই তাদের ইটের চাহিদা মিটিয়ে থাকতো। তবে এখনো কিছু কিছু ইট পাওয়া যায় তবে সেটা অতি সামান্য আকারে। যদি কেউ এটা বাস্তবেদেখতে চান তাহলে চলে আসুন আমাদের গ্রামে। এখন এর আশেপাশে অনেক আবাসভূমি স্থাপিত হয়েছে। এর বুকের উপর দিয়ে বয়ে গেছে কাঁচা মেঠো পথ। যে রাস্তায় প্রায় প্রতিদিন আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে সন্ধ্যার পর থেকে এশা পর্যন্ত সময় অতিবাহিত করে থাকি। এখন এ রাস্তার বা বিলের নতুন নামকরন করা হয়েছে শান্তি নগর। যদিও এখানে সন্ধ্যার পর থেকে রাত্রি ৯-১০ পর্যন্ত মানুষের কোলাহল লেগেই থাকে। তারপরও এটাকে শান্তি নগর বলা হয়ে থাকে কারন আশেপাশের ২-৩ গ্রামের অধিকাংশ মানুষই সন্ধ্যার পর থেকে এখানে সময় কাটাতে পছন্দ করে। তাই বলা যায় এর নামকরন যথার্থয় করা হয়েছে শান্তি নগর। অনেকের কাছেই এটা এখন অজানা যে এটা এত ভয়ংকর জায়গা ছিল বা এর নাম ছিল ভয়ানক আর্শ্চযের লীলাভূমি হাজী-মাঝির বিল। এখানেই ইতি আর নয়। মনযোগ সহকারে পড়লে আমার মনে হয় সকলেরি ভাল লাগবে। পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




