ভূত বলতে নাকি পৃথিবীতে কিছু নেই। আমি কখনই দেখিনি তাই এসবে একদমই বিশ্বাস করিনা আমি। তবে বিশ্বাস যে করিনা, এটা মন থেকে জোর দিয়ে বলতেও পারবোনা। ছোটবেলায় নানীর কাছে অনেক ভুতের গল্প শুনেছি। অজানা এক অনুভুতি কাজ করতো মনের ভেতর। গা ছ ছম করত। ভয়ে ভয়ে নানী'র কাছে জানতে চাইতাম, "নানু, ভুতের বাড়ি কৈ? কোথায় থাকে ওরা? অজ পাড়াগায়ের শিক্ষাহীন, কুসংস্কারাছন্ন নানী আমার হাসতো। বলতো, ভুতের আবার বাড়ি! আচ্ছা শোন, আমাদের বাড়ির পিছনটায় ঐ তেতুল গাছটায় একটা ভুত আছে। ভরদুপুরে আর রাতে একদমই একা ওদিকে যাবিনা। শেওড়া, তাল, দেবদারু, বেল, অশ্বত্থ, বাঁশঝাড়, শশ্মানঘাট আর কবরস্থানেও ভুত থাকে। একলা কখনোই এসব জায়গায় যাবিনা। সুযোগ পেলেই মানুষের রুপ ধরে ডেকে নিয়ে যাবে আর ঘাড় মটকাবে।
সেই থেকেই মনের ভেতর দানা বাঁধতে থাকে ভুতের ভয়। রাতে কখনোই একা বেরোতাম না। এমনকি প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে হলেও মাকে অনেক কষ্ট দিতাম। কি শীত আর কি ভারী বর্ষণ মাকে আমার সঙ্গে উঠতেই হবে। আমার দেয়া এই সীমাহীন কষ্ট একমাত্র মায়ের দ্বারাই সম্ভব ছিলো সহ্য করা। রাতের বিদঘুটে অন্ধকার আর ঝিঁঝিঁ পোকার আওয়াজে ভয় পেতাম আমি। বিছানায় বাবা-মার মাঝে শুয়েও কাঁথামুড়ি দিয়ে মাথা ঢেঁকে ঘুমাতাম। কখনো কোনো আত্মীয় বেড়াতে গেলে, রাতে বাবার কাঁধে চড়ে বাড়ি ফিরতাম। রাতের আঁধারে গাছগুলো দিকে তাকালে মনে হতো, এই বুঝি ভূত দেখে ফেলি। ভূতের ভয়ে তাই চোখ মুদে রাখতাম। আমার এই পূর্বপ্রস্তুতি দেখে ভূত বেচারী সাক্ষাত দেয়নি আমাকে। তাই ভূত জিনিসটা কেমন তা দেখাও হলো না । কেমন চেহারা ভূতের? নখ গুলো কি বড় বড়, দাঁতগুলো কি হাতির দাঁতের মত সাদা বাঁকা লম্বা। মুখটা কি বন মানুষের মত চেঁপটা পোড়া মুখ। পা আছে, না নাই, থাকলেঁও কি মাটিতে হাঁটে, না আকাশে উড়ে। নাকি জলের মধ্যে সাঁতার কাটে । আসলে ভূত দেখতে কেমন হয় কল্পনায় আবিস্কার করা ভূতের সঙ্গে তা মিলিয়ে দেখা হলোনা আমার।
এভাবেই শৈশব কাটিয়ে কৈশোরে পা দিলাম আমি। পেলাম না কোনো ভূত, প্রেত বা কোনো প্রেয়সী লাস্যময়ী পেত্মীর দেখা। তবুও মনের ভিতর ভয়টা রয়েই গেলো। কিন্তু কোনো এক মাঝরাতের ভয়ংকর বিঁদঘুটে অন্ধকার, ঝিঁঝির আওয়াজ, শশ্মানঘাট, কবরস্থান, শুকনো পাতার মর্মর শব্দ, শিয়ালের হুক্কাহুয়া ডাক, আর ভূতুরে পায়ের আওয়াজ সব কিছু উপেক্ষা করে এই ভীতু আমি যেদিন মানুষ নামের ঘৃণ্য এক শয়তানের বাড়িতে গিয়ে হাজারো অনুনয় বিনয় করে ফিরে পেতে চেয়েছিলাম আমার আমিকে। কিন্তু নিষ্ঠুর স্বার্থপর গাদ্দার ঐ শয়তান আমার শত কান্না সত্ত্বেও রিক্তহস্তে ফিরিয়ে দিয়েছিলো আমায়, ঠিক সেদিনই ভূতের ভয়টা দুর হয়ে গেছে আমার মাঝ থেকে। আমি ভূতে ভয় পাইনা। ভয় পাই মানুষ নামের শয়তানদেরকে। যারা মানুষের ক্ষতি করতে একটুও দ্বিধাবোধ করেনা।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ২:৩৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




