somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশী ফরেইনার

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৩:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজকাল বন্ধু মহলে এই শব্দ দুটা খুব প্রচলিত। প্রথম প্রথম আমি শব্দ দুটার মানে ভালোভাবে বুঝতে পারতাম না কারণ বাংলাদেশী ফরেইনার হল তারা যারা বাংলাদেশী বংশদ্ভুত ব্রিটিশ অর্থাৎ যাদের জন্ম ব্রিটেনে। কিন্তু এদেরকে বাংলাদেশী ফরেইনার কেন বলতে হবে এটা বুঝতে পারছিলাম না।

যাই হোক আমি যখন শব্দ দুটার মর্ম উদ্ধারে ব্যস্ত তখন একদিন আমার ভাইয়ের নতুন অফিসে গেলাম। ওখানে আরও একজন বাংলাদেশী কাজ করে। তার ইংরেজি উচ্চারণ দেখেই আমি বুঝতে পারলাম এ হল সেই বাংলাদেশী ফরেইনার। আমার ভাই আমাকে তার ম্যানেজারের সাথে পরিচয় করিয়ে দিল। কথায় কথায় সে আমাকে বলল যে আমার ভাইকে দেখে নাকি তার মনে হয়েছে বাংলাদেশীরা বেশ পরিশ্রমী। আমিও তাকে হেসে উত্তর দিলাম, হ্যাঁ আর তোমার এখানে তো দুজন বাংলাদেশী আছে। সে একটু অবাক হয়ে বলল, দুজন না শুধু তোমার ভাই একাই এখানে বাংলাদেশী। আমি বললাম, কিন্তু ...... ছেলেটাও তো বাংলাদেশী। সে বলল, কিন্তু ও তো বলেছে ওর অরিজিন সিলেট। আমি মোটামুটি লজ্জিত বোধ করলাম এবং তাকে বোঝানোর চেষ্টা করলাম যে সিলেট হচ্ছে বাংলাদেশের একটা অঞ্চল।

এই ঘটনার কিছুদিন পর বাবার একজন দূরসম্পর্কের চাচা বাসায় আসলেন, সাথে তার স্কুল পড়ুয়া নাতি। এই ছোট বাচ্চাটা একটা বাংলা কথাও বলতে পারে না এবং কিছুক্ষণের মধ্যই জানা গেল যে সে তার জীবনে কখনো বাংলাদেশে যায়নি এমনকি সে বলেই ফেলল সে নাকি শুনেছে যে বাংলাদেশ খুব নোংরা একটা জায়গা আর সেখানে নাকি শুধু মারামারি হয়।

পহেলা বৈশাখে আমাদের বাসায় সবসময় একটু খাওয়া দাওয়ার আয়োজন করা হয়। এ বছরও হয়েছিল এবং তরুণ প্রজন্মের কেউ আসেনি। আমার মা বরাবরের মত এবারও জিজ্ঞেস করেছিলেন ওদের কথা এবং এক প্রতিবেশী বললেন যে, আসলে ওরা তো এদেশে জন্ম তাই বাংলাদেশের কালচার সম্পর্কে ওদের তেমন একটা আগ্রহ নেই আর তাছাড়া দরকারও নাই, ওরা তো আর কখনো বাংলাদেশে যাবে না।

উপরের এই ঘটনাগুলোতে আমি কাউকে ছোট করতে চাইনি বরং বার বার নিজের কাছে প্রশ্ন করেছি আর আমার বাবার একটা কথা মনে করেছি। বাবা বলেছিলেন ১০ বছর আগে তিনি যখন এদেশে এসেছিলেন তখন নাকি কেউ এটা বলতে চাইত না যে সে বাংলাদেশী, সবাই বলত তারা ইন্ডিয়ান। ১০ বছর পরেও কেউ বলতে বা ভাবতে চায় না যে সে বাংলাদেশী। ১০ বছরে আরও নতুন প্রজন্ম এসেছে কিন্তু আমাদের মন মানসিকতায় কোন পরিবর্তন আসেনি।

বাংলাদেশী ফরেইনার শব্দটা যখন আমার কাছে মোটামুটি স্পষ্ট তখন এক বন্ধু বিয়ে করল এক ব্রিটিশকে। ভদ্রলোকের সাথে কথা বলে আমি অবাক হয়ে গেলাম, কিছুটা পুলকিতও কারণ উনি ভাঙ্গা ভাঙ্গা বাংলায় আমাদের সবার সাথে কথা বলছিলেন এবং ইতিমধ্যে বাংলাদেশে ঘুরেও এসেছেন। আমার নিজের দেশের যা কিছু আমার দেখা হয়নি তাও দেখে এসেছেন বলে কিছুটা হিংসাও হচ্ছিল কিন্তু সবচেয়ে বেশী হচ্ছিল গর্ব ওনার কথা শুনে। আমার দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, মানুষের আতিথেয়তা এবং সারল্যের কথা একজন বিদেশীর মুখে শুনতে খুব ভালো লাগছিল। ভদ্রলোক সবার সাথে আমাদের পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিলেন এই বলে যে এরা সবাই বাংলাদেশী, সেই একটি জাতি যারা ভাষার জন্য যুদ্ধ করেছিল।

ফুরফুরে একটা মন আর মাথায় অনেকগুলো প্রশ্ন নিয়ে বাসায় ফিরলাম।

আমরা যারা বিদেশে থাকি আমরা কি বাংলাদেশী না? এই যে নতুন প্রজন্ম যাদের আমরা মনে করি আগামী দিনের বাহক তাদের মাঝে কি কোন বাংলাদেশী থাকবে না? একদিন কি তাহলে আমার সন্তানও বাংলাদেশী ফরেইনার হয়ে যাবে?

আড্ডায় বন্ধুদের সাথে বসে যখন প্রশ্নগুলো নিয়ে আলোচনা করছিলাম তখন দেখা গেল অধিকাংশের মনেই এই একই প্রশ্ন। দু একজন বলার চেষ্টা করল যে কিন্তু ইংল্যান্ডে তো প্রচুর বাংলাদেশী ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন আছে আর তারা বেশ ভালভাবে নানা উৎসব পালন করে সংস্কৃতিকে ধরে রাখার চেষ্টা করছে যদিও সেসব অনুষ্ঠানে অধিকাংশ বাচ্চাই বাংলা কবিতা পড়ে ইংরেজি হরফে লিখে। তাই অযথা আর ঘাঁটাঘাঁটি না করে সবাই বুঝে গেলাম যে বাহ্যিক আবরণে যতোই ঘষাঘষি করা হোক না কেন যদি ভেতরের কাঠামো শক্ত না হয় তাহলে ভবিষ্যৎ কি হবে তা শুধু সময়ই বলতে পারবে।
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৫



সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×