somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রক্ষক এখন ভক্ষক: মানবপাচারে উপমন্ত্রী

১৩ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ৮:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


যারা দেশের রক্ষক তারাই যদি ভক্ষক হয তাহলে দেশের বারোটা বাজতে সময় লাগেনা। আমাদের দেশেরও বারোটা বাজতে মনে আর বেশি নেই। কারণ মানবপাচারে স্বয়ং ক্রীড়া উপমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযােগ।

গত ১২ ই আগষ্ট আমাদের সময় পত্রিকায় এমনই একটা রিপোর্ট ছেপেছে। যেখানে এই মন্ত্রী সরাসরি সংশ্লিষ্টতার বিষয় উঠে এসেছে।

রিপোর্টটি হুবহু তুলে দেয়া হলোঃ

গত কয়েক বছরে দেশে আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে গেছে মানবপাচার। নানাভাবে পাচারকারীদের শিকারে পরিণত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। বিষয়টি আমলে নিয়ে সরকার এরই মধ্যে নানা কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে। কিন্তু সর্ষেতেই যে ভূত! সরকারের একজন উপমন্ত্রীর বিরুদ্ধেই উঠেছে মানবপাচারে জড়িত থাকার অভিযোগ। তিনি যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়।

জানা গেছে, উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়ের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল চলতি বছরের ২৬ থেকে ৩০ মে পর্যন্ত সুইজারল্যান্ডের জুরিখে ফিফার ৬৫তম কংগ্রেসে অংশ নেয়। কংগ্রেস শেষে প্রতিনিধিদলের অন্যরা দেশে ফিরলেও ফেরেননি মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন নামে এক ব্যক্তি। তাকে বিয়ানিবাজার স্পোর্টিং ক্লাবের সদস্য পরিচয়ে সুইজারল্যান্ডে নেওয়া হয় এবং তার ‘গ্যারান্টার’ ছিলেন উপমন্ত্রী জয়। এদিকে নির্দিষ্ট সময়ে সেলিম ফিরে না আসায় সুইজারল্যান্ড দূতাবাস দুই দফা চিঠি দিয়ে বিষয়টি অবহিত করে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। এর পরিপ্রেক্ষিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী এবং ক্রীড়া মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি জানালেও এর কোনো সুরাহা হয়নি।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব (ইউরোপ উইং) তন্ময় মজুমদার বলেন, সুইস দূতাবাস থেকে অভিযোগ পাওয়ার পর তারা বিষয়টি ক্রীড়া মন্ত্রণালয়কে জানায়। কিন্তু ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এখনও তাদের কিছু জানায়নি। তাই তারাও সুইজারল্যান্ড দূতাবাসকে কিছু জানাতে পারেননি।

একটি সূত্র জানায়, বিষয়টি নিয়ে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব নূর মোহাম্মদের মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের সঙ্গে আলোচনা করে করণীয় ঠিক করার কথা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, টাকার বিনিময়ে সেলিম উদ্দিনকে সুইজারল্যান্ডে নিয়ে যান উপমন্ত্রী জয়। সেলিমকে বিয়ানিবাজার স্পোর্টিং ক্লাবের সদস্য বলা হলেও এ তথ্য সঠিক নয় বলে জানান আমাদের সময়ের বিয়ানিবাজার প্রতিনিধি।

আরও জানা যায়, উপমন্ত্রী জয় নিজের প্যাডে ওই ব্যক্তির ‘গ্যারান্টার’ হয়ে বিমান ভাড়া, হোটেল, খাবারসহ সব ধরনের খরচ বহন করার দায়িত্ব নিয়ে তাকে ভিসা দিতে ঢাকাস্থ সুইজারল্যান্ড দূতাবাসকে অনুরোধ করেন।

ফিফার ওই কংগ্রেসে মন্ত্রীসহ পাঁচজন ছিলেন। তারা হলেন বাফুফে চেয়ারম্যান কাজী মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক মো. আবু নাঈম সোহাগ, প্রতিনিধিদলের সমন্বয়ক ও বিয়ানিবাজার স্পোর্টিং ক্লাবের সদস্য মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন এবং বাফুফে মেডিক্যাল কমিটির চেয়ারম্যান ডা. মো. ফারুক রেজা আওলাদ। তাদের মধ্যে অভিযুক্ত সেলিম বাফুফের কেউ নন। ভিসার আবেদনের জন্য বাফুফের দেওয়া চিঠিতেই বিষয়টি স্পষ্ট।

ভিসা দেওয়ার ক্ষেত্রে শর্ত ছিল, ২০১৫ সালের ৯ জুনের আগে সেলিম উদ্দিনকে দেশে ফিরে সুইস দূতাবাসে সশরীরে রিপোর্ট করতে হবে। এ ব্যাপারে গত ১৮ জুন সুইজারল্যান্ড দূতাবাস পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি দেয়। এতে বলা হয়, ২০১৫ সালের ১০ মে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নোট নং- ঈ্ড/ঈড়হং/ঘঠ/গধু/১৫/ঐ-১৬০৪-এর পরিপ্রেক্ষিতে মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিনকে ‘সেনজেন’ ভিসা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেননি, দূতাবাসে রিপোর্টও করেননি।

এ চিঠির কোনো উত্তর না পাওয়ায় গত ৯ জুলাই সুইস দূতাবাস আরেকটি চিঠি দিয়ে জানায়, অভিযোগের বিষয়ে তারা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সাড়া পায়নি। বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দূতাবাস মন্ত্রণালয়কে বিষয়টির দিকে নজর দেওয়ার অনুরোধ জানায়।

এ দুটি চিঠি পাওয়ার পর গত ২১ জুলাই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চিঠি দেয় ক্রীড়া ও যুব মন্ত্রণালয়কে। চিঠিতে সুইস দূতাবাসের অভিযোগ সম্পর্কে দ্রুত তথ্য গ্রহণ সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানাতে বলা হয়। চিঠিটি দেওয়া হয় যুব ও ক্রীড়া সচিব বরাবর।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে গতকাল রাতে বাফুফে চেয়ারম্যান কাজী সালাহউদ্দিন আমাদের সময়কে জানান, বিষয়টি কয়েকদিন আগে তার নজরে এসেছে। ওই ব্যক্তি বাফুফের কেউ নন বলেও জানান তিনি।

এদিকে আমাদের সময়ের বিয়ানিবাজার প্রতিনিধি জানান, সরকারের ভেতরে এ নিয়ে আলোচনা শুরু হলে সেলিম উদ্দিনের গ্রামের বাড়িতে নিজ এপিএসকে পাঠান আরিফ খান জয়। যে কোনো উপায়ে সেলিমকে দেশে ফেরত আনতে তার পরিবারের সহায়তা চাওয়া হয়। কিন্তু সেলিমের অবস্থান সম্পর্কে তার পরিবারও কিছু জানাতে পারেনি।

বিয়ানীবাজার পৌর এলাকার কসবা (মোল্লার গোষ্ঠী) গ্রামের মৃত রকিব উদ্দিনের পুত্র সেলিম উদ্দিন। তিনি ৪ ভাই ১ বোনের মধ্যে তৃতীয়। সেলিম ইউরোপের একটি দেশে থাকতেন। কয়েক মাস আগে তিনি দেশে ফেরেন। ফের ইউরোপ যেতে বড় অংকের টাকায় ক্রীড়া উপমন্ত্রীর সঙ্গে সুইজারল্যান্ড যান। বিয়ানিবাজার ক্লাবের অস্তিত্ব নেই।

বছর পাঁচেক আগে বিয়ানীবাজার স্পোর্টিং ক্লাব বিক্রি করে দেওয়া হয়। এটি এখন ঢাকা স্পোর্টিং ক্লাব নামে পরিচিত। একসময়কার বিয়ানীবাজার স্পোর্টিং ক্লাবের চেয়ারম্যান খসরুল হক খসরু বলেন, সেলিম নামে কেউ তাদের ক্লাবে কখনো ছিলেন না। ২০১১ সালে ঢাকার ফুটবলার সাব্বিরসহ কয়েকজনের কাছে ক্লাবটি হস্তান্তর করা হয়। বর্তমানে ঢাকা স্পোর্টিং ক্লাব নামে সেটি পরিচালিত হচ্ছে।
জয়ের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ উপমন্ত্রী হওয়ার পর জয় তার ভাই শামীম খান টিটোকে বাংলাদেশ উশু অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হিসেবে নিয়োগ দেন। তার ভাই দায়িত্ব পাওয়ার পর এক বছরে কার্যনির্বাহী কমিটির সভা ডাকেননি, দেড় বছরের মধ্যে কোনো প্রতিযোগিতার আয়োজনও করতে পারেননি। এক বছরের মধ্যে উশু অ্যাসোসিয়েশনের মালামালের তালিকা ও চেক বই প্রদান না করায় অ্যাসোসিয়েশনের কোষাধ্যক্ষ পদত্যাগ করেন।

আরো জানা যায়, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ থেকে ট্রেনিংয়ের জন্য বরাদ্দ পাওয়া এক লাখ টাকা ব্যক্তিগত খরচের জন্য নেন টিটো। এক সপ্তাহের মধ্যে তা ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও তা আর ফেরত দেননি বলে জানিয়েছেন এক কর্মকর্তা।


অভিযোগ আছে, উপমন্ত্রীরা ৬ ভাই। জয় উপমন্ত্রী হওয়ার পর তার ভাইয়েরা জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ও যুব উন্নয়নের টেন্ডারবাজিতে জড়িয়ে পড়েন। যুব উন্নয়নের টেন্ডারবাজি করেন তার ভাই খান শুভ্র। যুব উন্নয়নের একটি টেন্ডার তার ভাইকে না দিতে চাইলে সেখানকার প্রকল্প পরিচালক হারুনুর রশীদের উত্তরার বাড়িতে সশস্ত্র হামলা চালানো হয়। পরে হারুনুর রশীদ যুব উন্নয়নের পদ স্বেচ্ছায় ছেড়ে দেন।

নবীরুল ইসলাম নামে আরেক পিডিও ‘অতিষ্ঠ’ হয়ে যুব উন্নয়ন ছেড়ে দেন।

জানা গেছে, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের পিএনডি (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) রেজাউল হক রেজাও ক্রীড়া উপমন্ত্রীর অন্যায় ‘আবদার’ মেটাতে না পেরে স্বেচ্ছায় অন্যত্র চলে যান।
সূত্র-
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ৮:০৪
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×