somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

Know Your Heroes, Part# 01: বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী মোস্তফা কামাল

০৬ ই মে, ২০১৬ দুপুর ১২:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



জন্মঃ
---------
মোহাম্মদ মোস্তফা কামালের জন্ম ১৯৪৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর ভোলা জেলার দৌলতখান থানার পশ্চিম হাজীপুর গ্রামে। তার বাবার নাম হাবিলদার (অবঃ) হাবিবুর রহমান ।

সেনাবাহিনীতে যোগদানঃ
------------------------------
পারিবারিক অনিচ্ছার কারণে ১৯৬৭ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়ে যুবক মোস্তফা কামাল সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। প্রশিক্ষণ শেষে তাঁকে কুমিল্লায় নিয়োগ দেওয়া হয় ৪র্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের একজন সিপাহী হিসেবে।

মুক্তিযুদ্ধে যোগদানঃ
------------------------
১৯৭১ সালে পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ ৪র্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও সিলেটে মোতায়েন করে । কিন্তু পাকিস্তানি চক্রান্ত বুঝতে পেরে মেজর শাফায়াত জামিল এর নেতৃত্বে ৪র্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট বিদ্রোহ করে এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অবস্থান নেয়। তারা মেজর খালেদ মোশারফের নেতৃত্বে আশুগঞ্জ, উজানিস্বর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এন্ডারসন খালের পাশ দিয়ে প্রতিরক্ষা অবস্থান নেন। সিপাহী মোস্তফা কামাল ছিলেন গঙ্গাসাগর প্রতিরক্ষা অবস্থানের দরুইন গ্রামে নিয়োজিত আলফা কোম্পানির ২নং প্লাটুনের একজন সেকশন কমান্ডার।

যেভাবে শহীদ হলেনঃ
-------------------------
১৯৭১ সালের ১৪ এপ্রিল পাকিস্তানিরা হেলিকপ্টার গানশীপ, নেভাল গানবোট ও এফ-৮৬ বিমান যোগে ত্রিমুখী আক্রমণ চালায় মুক্তিবাহিনীর ৪ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের প্রতিরক্ষা অবস্থানের উপর। মেজর শাফায়াত জামিল ২ নং প্লাটুনকে অনতিবিলম্বে প্রতিরক্ষা অবস্থানে যেতে নির্দেশ দেন। ১৬ এপ্রিল পাকিস্তান সেনাবাহিনী কুমিল্লা-আখাউড়া রেললাইন ধরে উত্তর দিকে এগুতে থাকে। ১৭ই এপ্রিল পরদিন ভোরবেলা পাকিস্তান সেনাবাহিনী দরুইন গ্রামে মুক্তিবাহিনীর অবস্থানের উপর মর্টার ও আর্টিলারীর গোলাবর্ষণ শুরু করলে মেজর শাফায়াত জামিল হাবিলদার মুনিরের নেতৃত্বে ১১ নম্বর প্লাটুনকে দরুইন গ্রামে আগের প্লাটুনের সাথে যোগ দেয়ার নির্দেশ দেন।
শত্রুরা মূল আক্রমণ শুরু করে ১৮ এপ্রিল দুপুর ১২টায় পশ্চিম দিক থেকে। আরেকটি পাকিস্তানী দল পিছন দিকে থেকে মুক্তিবাহিনীর অবস্থানকে ঘিরে ধরতে থাকে । প্রতিপক্ষের তীব্র আক্রমণে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈন্যরা বিহবল হয়ে পড়ে এবং পিছু হটার সিদ্ধান্ত নেয়।
কিন্তু নিরাপদে সেখান থেকে সরে আসতে হলে তাদের প্রয়োজন ছিলো নিরবিচ্ছিন্ন কাভারিং ফায়ার। মোহাম্মদ মোস্তফা সহযোদ্ধাদের জানান তিনি নিজে এই কাভারিং ফায়ার প্রদান করবেন এবং সবাইকে পেছনে হটতে নির্দেশ দেন। সহযোদ্ধারা মোস্তফাকেও পশ্চাদপসরণের অনুরোধ করেন। কিন্তু কর্তব্যের টানে মোস্তফা ছিলেন অবিচল।
মোস্তফা কামালের এল এম জির ক্রমাগত নিখুঁত ফায়ারে পাকিস্তানিদের প্রায় ২০-২৫ জন হতাহত হন এবং তাদের সম্মুখ গতি মন্থর হয়ে পড়ে। পাকিস্তানিরা মরিয়া হয়ে মোস্তফার অবস্থানের উপরে মেশিনগান এবং মর্টারের গোলাবর্ষণ করতে থাকে। তাঁর ৭০ গজের মধ্যে শত্রুপক্ষ চলে এলেও তিনি থামেননি। এতে করে শত্রু রা তাঁর সঙ্গীদের পিছু ধাওয়া করতে সাহস পায়নি। এর ফলে মুক্তিবাহিনীর অধিকাংশ সদস্যই নিরাপদ অবস্থানে সরে আসতে সক্ষম হন।
এক পর্যায়ে মোস্তফা কামালের মেশিনগানের গুলি নিঃশেষ হয় এবং তিনি মারত্মক ভাবে জখম হন। তখন পাকিস্তান বাহিনীর সৈনিকরা ট্রেঞ্চে এসে তাকে কাপুরুষের মত বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে।

পাদটীকাঃ
------------
বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী মোস্তফা কামাল তাঁর নিজের প্রাণ উৎসর্গ করেছিলেন সহযোদ্ধাদের জীবন রক্ষা করার জন্য। আপনার সন্তানদের তার অসীম সাহসের গল্প শোনান। তারা বেড়ে উঠুক এই মহান বীরের বীরত্বের অনুপ্রেরণায়।

রেফারেন্সঃ
--------------
https://en.wikipedia.org/wiki/Mostafa_Kamal_(Bir_Sreshtho)
http://www.jamuka.gov.bd/…/2013-07-10-04-4…/61-mostafa-kamal
http://www.somewhereinblog.net/blog/ragibhasanblog/28773802
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই মে, ২০১৬ দুপুর ১২:৪৫
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×