মাতৃত্ব ধ্রুব সত্য, যা সব সময়ই থাকে
মাননীয় প্রধান মন্ত্রী,
সালাম নিবেন। মাসুদ সেজানের বক্তব্য “কোথায় ছিল ওর মাতৃত্ব” বিষয়ে কয়েকটি কথা বলতে চাই। প্রথমত কোন প্রমান ছাড়াই যে কোন বক্তব্যকে মানুষ কিভাবে সত্য হিসেবে চালিয়ে দিতে পারে তার জলজ্যান্ত প্রমান মাসুদ সেজানের লেখা “কোথায় ছিল ওর মাতৃত্ব।”
আমি যখন লন্ডন যাই র্পাবণরে বয়স তখন ২ বছর ৩ মাস। বাচ্চারা মায়ের দুধ খায় সাধারনত ২ বছর পর্যন্ত। পার্বন সে সময় খিচুড়ি ও হালকা খাবারই খেত। মায়ের দুধের শিশু বলে যে নাকি কান্না সেজান করছে তা মূলত অবান্তর।
এক সকালে ঘুম ভেঙ্গে সেজান দেখলো আমি দিনাজপুরে চাকুরি নিয়ে চলে গেছি। কতটো অসহায় আর অসহ্য হলে আমি আমার বচ্চা, মা বাবা, সংসার ছেড়ে একা দিনাজপুরে চলে গিয়েছিলাম তা কেবল আমি জানি। সে ঘুমিয়ে আর আমি দিনাজপুরে চলে গেলাম, তাহলে তার সাথে আমার তখনকার সম্পর্কের অবস্থা নিশ্চয়ই কারো না বোঝার কথা নয়। মূলত আমি যখন দিনাজপুরে যাই তখন আমাদের কেবল কাগজ কলমে ডির্ভোস হয় নি। বস্তুত তার প্রায় বছর খানেক আগ থেকেই আমরা একই ছাদের নিচে আলাদা।
সেজানের বক্তব্য অনুসারে সে তিনদিন তিনরাত আমাকে শতশতবার ফোন করেছে। আমাকে যদি এতোটাই প্রয়োজন ছিল তো দিনাজপুর গিয়ে আমাকে নিয়ে আসতে পারতো। দিনাজপুর যেতো তো ভিসা, পাসপোর্ট লাগে না, আমাকে গিয়ে নিয়ে আসলেই হয়, আইনত তখনো আমি তার স্ত্রী।
বিয়ের আগে আমি রাম, সামদের সাথে প্রেম করেছি কিন্তু সেজানের প্রেম ছিল বিয়ের পরে। আমি সে সব মেয়েদের নাম লিখে তাদের বিব্রত করবো না, যে কারনে মূলত আমি তাকে ডির্ভোস দিয়েছি।
সেজান কোটেশন সহ যে কথা গুলো লিখেছে তার পুরোটা বানোয়াট। আমি যদি কাউকে কথা দেই বোকার মতো আমি কেন তা বলে যাব। কেউ যদি আমার জন্য বাসা ভাড়া করে তা কোন দু:খে আমি সেজান কে বলবো। কি হাস্যকর ডায়ালগ। সেজান আসলেই ভালো স্ক্রিপ্ট রাইটার তাই সে তার নিজের মতো করে নাটক সাজিয়েছে।
২০১০ এর অক্টোবর পর্যন্ত আমার সাথে পার্বনের যোগাযোগ ছিল। সেজান সে সময় পর্যন্তও আমার সাথে পার্বনকে ফোনে কথা বলতে এবং দেখা করতে দিতো কিন্তু ২০১০ এ যখন তার দ্বিতীয় বউ/ প্রেমিকা তাকে ছেড়ে চলে যায় তখন কোন এক জেদে সে আমার সাথে পার্বনের যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় তাই বাধ্য হয়ে ২০১১ তে দেশে এসে আমি মামলা করি। তাই বলতে চাই, মায়ের মাতৃত্ব সব সময়ই ছিল তা কোথাও যায় নি। মা হলে না মায়ের মাতৃত্ব বুঝবে। একজন শুক্রানু দাতা কেমন করে বুঝবে ১০ মাস পেটে রাখতে, ২ বছর সারারাত জেগে দুধ খাওয়াতে। সিজারের ইনফেকশনের কষ্ট সহ্য করতে কেমন লাগে সেটা মাসুদ সেজানের জানার কথা নয়। কারন, তার সাথে যখন একই ছাদের নীচে থেকেছি সিজারের ইনফেকশনের কষ্টে সারারাত জেগে কাটালেও তিনি ফিরে তাকান নি, ছেলেকে কোলে তুলে দেখেন নি।
আমার যখন সিজার হয় তখন সব খরচ আমি বহণ করেছি। চাকরী করে সেই টাকা পর্যন্ত আমি জমিয়েছিলাম। তখন আমি ম্যাস লাইন মিডিয়া সেন্টারে কাজ করতাম, আর আমার মায়ের ফ্ল্যাটে আমরা থাকতাম। তাই সেজানকে বাচ্চা জন্মের খরচ দিতে হয় নি এমন কী বাসা ভাড়াও দিতে হয় নি।
অযৌক্তিক মিথ্যা বলে মেয়েদের চরিত্রের প্রতি আঙ্গুল ওঠানো এ সমাজে নতুন নয়। আর এ সমাজে এ রকম মানুষের সংখ্যাও বেশি যারা সেজানকেই সার্পোট করবে।
সবশেষে বলতে চাই, ধরে নিলাম সেজানের সব বক্তব্য সত্য, আমি পৃথিবীর সবচেয়ে খারাপ মা। কিন্তু তারপরও আমার অধিকার আছে আমার ছেলেকে দেখবার, তার সময় কাটাবার, তার সাথে ফোনে নিয়মিত যোগাযোগ করার।
পার্বণকে লুকিয়ে রেখে কিভাবে সেজান ওর মানষিক বিকাশকে অবরুদ্ধ না এ বিষয়টি আমি জানতে চাই।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমার আবেদন, আপনি নিশ্চয়ই এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীকে অযথাই বিব্রত এবং কলংকিত করার কায়দা জানেন। এই অবস্থায় আমার ছেলের কথা বিবেচনা করে আমার ছেলেকে আমার কাছে ফিরিয়ে দেবার আকুল আবেদন জানাই।
ফ্লোরা ফেরদৌসী

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




